হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যিকঃখান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:৩২:৩৫ সকাল
হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যিকঃখান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন
আশরাফ আলী খান
হা লেখকের নাম দেখে যার কথা ভাবছেন ইনি তিনিই। সবার শৈশবের প্রিয় ছড়া ঐ দেখা যায় তালগাছা এর লেখক। কিছু পুরানো বই এর সাথে কাগজের দোকানে পেয়ে গেলাম নয়া সড়ক উপন্যাস টি । আর লোভ সামলানো কঠিন হল তার সম্পর্কে কিছু না লিখে থাকা। ঐ দেখা যায় তালগাছ আমরা শিশু বয়সে সব্বাই পড়ি, কিন্তু এর লেখক সম্পর্কে কিছু জানিনা। কে ই --খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন—তাই বেশ কিছুদিন থেকে তার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিলাম। গ্রাম পাঠাগার এর সংগঠক আবদুস ছাত্তার খান ভাই শুধু জানিয়েছিলেন তার জন্ম স্থান মানিকগঞ্জ। আর তার চাচার শশুর বাড়ি কবির এলাকায়।তিনি তার চাচাকে বলে কবি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেবার বেবস্থা করবেন। আর তার কাছেই কবির লিখিত একটি বই সম্পর্কে শুনি আর তা হল--- কবি নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের উপর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ । এর পর মানিকগঞ্জ এর কিছু সাহিত্য সংগঠক এর সাথে আমার কথা হয়। তারা আমাকে কিছু ইনফরমেশান দিতে চান। তাদের কাছে জানতে পারি তার মেয়ে পুরান ঢাকায় একটা পত্রিকা চালান।
খুব আশ্চর্জ হয় যার কবিতা আমাদের বাংলাদেশের ১০০% শিশু তাদের শৈশবে পড়ে, আবৃত্ত করে সেই লেখক সম্পর্কে আমরা কেন কিছু জানি না। সেই আগ্রহ কিছুটা স্থিমিত হয়েছিল, কিন্তু মনের কোনে ছিল একটু বাতি।
আসুন জেনে নিই এই প্রিয় কবির কিছু প্রিয় বিষয় সম্পর্কে।
>>খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন(১৯০১-১৯৮১)
জন্ম চারিগ্রাম, মানিকগঞ্জ, ৩০শে অক্টোবর ১৯০১ । সাহিত্যিক। স্থানীয় পাঠশালায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাঠকালে মাতার ও পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠকালে পিতার পরলোকগমন। চরম দারিদ্যে নিপতিত হয়ে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় গমন ও বই বাধাইয়ের কাজ গ্রহণ। কলকাতায় একটি নাইট স্কুলে কিছুকাল অধ্যয়ন। অতঃপর কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদান ও সাহিত্যসাধনায় আত্মনিয়োগ।
১৯২৩-এ সাপ্তাহিক মুসলিম জগৎ' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত। এ পত্রিকায় বিদ্রোহ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। হুগলী জেলে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে একই কামরায় বাস । এ সময়ে উভয়ের মধ্যে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপিত। পাকিস্তান সৃষ্টির (১৪ আগষ্ট, ১৯৪৭) পর কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় আগমন । ঢাকার বাংলাবাজারে পুস্তক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলহামরা লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা (১৯৪৮)। পাকিস্তানের অস্তিত্ব ও এর আদর্শের প্রতি অত্যুৎসাহী মনোভাব প্রকাশ। পূর্ববঙ্গ সরকার কর্তৃক গঠিত ভাষা কমিটির (১৯৪৯) সদস্য হিসেবে তৎকর্তৃক বাংলা ভাষার অনৈসলামিক অনুষঙ্গ দূর করার সুপারিশ। রবীন্দ্র সাহিত্য পাকিস্তানের তাহযিব-তমদ্দুনের পরিপন্থী—এ বক্তব্য উপস্থাপন করে ১৯৬১তে পূর্ব বাংলায় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনের বিরোধিতা করে বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান । ১৯৬৭তে পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্র-সঙ্গীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন।
>> সাহিত্যঃ
কবি নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের উপর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ (১৯৫৭) রচনা করে খ্যাতি অর্জন।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলি :
শিশুতোষ গ্রন্থ-মুসলিম বীরাঙ্গনা (১৯৩৬),
আমাদের নবী (১৯৪১),
খোলাফায়ে রাশেদিন (১৯৫১),
সোনার পাকিস্তান (১৯৫৩),
বাবা আদম (১৯৫৭),
আরব্য রজনী (১৯৫৭),
স্বপন দেখি (১৯৫৯),
শাপলা শালুক (১৯৬২),
>>কাব্য :
পালের নাও (১৯৫৬),
আর্তনাদ (১৯৫৮),
হে মানুষ (১৯৫৮);
>>উপন্যাস :
অনাথিনী (১৯২৬),
নয়া সড়ক (১৯৬৭);
>>গল্পগ্রন্থ :
ঝুমকোলত (১৯৫৬)।
শিশু-সাহিত্য রচনায় কৃতিত্ব প্রদর্শন। তার প্রত্যেকটি রচনা ভাবে ও ভাষায় সমৃদ্ধ। সরল ও প্রাণস্পশী ভাষায় তার শিশুতোষ গ্রন্থের কাহিনিগুলো বর্ণিত। হে মানুষ’ তার শ্রেষ্ঠ কবিতাগ্রন্থ। এতে মানুষের জয়গান সাবলীল পদ্যে বাণীমণ্ডিত।
>>পুরস্কার
যুগ-স্রষ্টা নজরুল গ্রন্থের জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০), শিশুসাহিত্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০) ও একুশের পদক (১৯৭৮) লাভ। মৃত্যু, ঢাকায় ১৬.২.১৯৮১ ৷
--- সূত্রঃ খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন জীবনী ও সাহিত্য—ইসলামি ফাউন্ডেশান
বিষয়: বিবিধ
১৩১০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খান মুহাম্মদ মইনুদ্দিন আরেকটি পত্রিকারও মনে হয় সম্পাদক ছিলেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন