রূপান্তর ফ্রান্‌জ কাফকা

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০২ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:১৮:৩৪ রাত

*বইঃ রূপান্তর

*লেখকঃ ফ্রান্‌জ কাফকা

*অনুবাদঃ কবীর চৌধুরী

*প্রকাশনীঃ শিল্প ত্রু/১৯৯৫

*মূল্যঃ ষাট টাকা{ কিনেছি ১৫ টাকায়}

>>ফ্রান্‌জ কাফকা:

আধুনিক বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ব্যতিক্রমী শিল্পী ফ্রান্‌জ কাফকা জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৩ শালে, প্রাগে, এক সচ্ছল মধ্যবিত্ত ইহুদী ব্যবসায়ী পরিবারে। প্রাগ তখন ছিল অষ্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সামাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রাগের জর্মন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের পাঠ সমাপ্ত করে ১৯০৬ সালে তিনি ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তী কয়েক বছর একটি বীমা কোম্পানীতে চাকরি করেন। কাফকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। জীবনের অনিশ্চয়তা, অর্থহীন বিষাদমাখা অযৌক্তিক কান্ডকারখানা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিঃসঙ্গতা তাঁকে পীড়িত করে। তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। মানসিক দিক থেকেও তিনি বিধ্বস্ত বোধ করলেন। তাঁর মনে হল এই জীবনের জন্য তিনি যথেষ্ট উপযুক্ত ও সক্ষম নন। তবে তাঁর হস্ব জীবনের শেষ দিকে কাফকা এই বোধ বহুলাংশে কাটিয়ে উঠেছিলেন। ১৯২৩ সালে ডোরা ডাইমান্ট নামী এক প্রতিভাময়ী ইহুদী অভিনেত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে। তিনি প্রাগ ত্যাগ করে ডোরাকে নিয়ে বার্লিনে বাস করতে শুরু করলেন। এই পর্বে তাঁর অস্থিরতা ও মানসিক অশান্তি প্রায় অপসৃত। কিন্তু ততদিনে তাঁর স্বাস্থ্য আরো খারাপ হয়েছে। দুরারোগ্য যক্ষ্মা শেষ পর্যন্ত কাফকার জীবনীশক্তি নিঃশেষ করে দেয়। অনেক কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগের পর ১৯২৪ সালের মাঝামাঝি মাত্র একচল্লিশ বৎসর বয়সে ফ্রানজ কাফকা মৃত্যু বরণ করলেন। কিন্তু তার পূর্বেই তিনি রচনা করে ফেলেছেন অসাধারণ কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটোগল্প ।

কাফকার শ্রেষ্ঠ রচনাবলির মধ্যে রয়েছে তিনটি উপন্যাসঃ “দি টায়াল--১৯২৫,“দি কাসল-- ১৯২৬, এবং "আমেরিকা -- ১৯২৭।

উপন্যাস ছাড়াও কাফকা বেশ কয়েকটি অত্যন্ত উন্নতমানের, শিল্পগুণসম্পন্ন, গভীর মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণসমৃদ্ধ, আবেদনময় ছোট গল্প রচনা করেছেন। এগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মেটামরফোসিস, এ হাঙ্গার আর্টিষ্ট, এ্যান ওল্ড পেজ এবং ‘দি হান্টার গ্র্যাকার্স মেটামরফোসিস অথবা 'রূপান্তর।

>>রূপান্তরঃ

মেটামরফোসিস অথবা 'রূপান্তর’ কে অবশ্য ছোটোগল্প না বলে উপন্যাসিকাও বলা চলে। বিশ্ব জুড়ে সাধারণ পাঠকের মনে ফ্রান্‌জ কাফকার নামের সঙ্গে এই রচনাটি প্রায় অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। কেউ কেউ এর প্রারম্ভিক বাক্যটি সম্পর্কে বলেছেন যে এটা হল আধুনিক বিশ্বসাহিত্যের সব চাইতে চমক জাগানো অবিস্মরণীয় বাক্য ।

রূপান্তর যথার্থই একটি অত্যাশ্চর্য গল্প, সেই সঙ্গে সঙ্গে কাফকার প্রতিনিধিত্বমূলক রচনাও বটে। কাফকা-সাহিত্যের সবগুলি প্রধান লক্ষণ এর মধ্যে বিদ্যমান। মানুষের জীবন, কর্ম ও ভবিষ্যত সম্পর্কে দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা-দুঃস্বপ্ন, মানুষের নিঃসঙ্গতা, বিচ্ছিন্নতা ও অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থতা; নিজেকে অপরের কাছে স্পষ্ট করে তোলার অক্ষমতা; নিজের আশা-আকাঙক্ষা ভয়-ভাবনার কথা অন্যকে

কিছুতেই বোঝাতে না পারা; মানুষের চরম ঔদাসীন্য ও নিস্পৃহতা; বর্তমানের বিরাজমান পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে অতীতের স্নেহ-মমতা-সহানুভূতির অবলুপ্তি, তারুণ্যের কাছে তাৎক্ষণিক জীবনের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ এবং তার ফলে জীর্ণ-অসুস্থ-মৃতকে দ্রুত বিস্মৃত হওয়া – এই সবই কাফকা তাঁর রূপান্তর গল্পে তুলে ধরেছেন। গল্পটি কাফকার অন্যান্য রচনার মতোই একাধিক স্তরে উপভোগ্য, বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ। এর মধ্যে ফ্যান্টাসি আছে, রূপক-প্রতীক আছে, আর তার আড়ালে আছে নির্মম সত্যের উদ্ভাসন। এখানে নাটকীয়তা আছে, নিখুত চরিত্র-চিত্রণ আছে, সর্বোপরি আছে বিশদ বাস্তববাদী বর্ণনার ঐশ্বর্য।

মেটামরফোসিস’-এর কাহিনী সংক্ষেপে এই রকম। যুবক গ্রেগর সামসা এক মধ্যবিত্ত ভ্ৰাম্যমাণ সেলসম্যান। কঠিন তার জীবন-সংগ্রাম। বৃদ্ধ মা-বাবা আর তরুণী ছোট বোনকে নিয়ে সে থাকে। সংসারের সব দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে। নানা দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা, আনন্দহীন ক্লান্তিকর কাজের বোঝা, চাকরি-ক্ষেত্রে উর্ধতন কর্মকর্তার ঔদাসীন্য প্রভৃতিতে সে বিপর্যস্ত। তবু এর মধ্যেও তার মনে একটা গোপন গর্ববোধও আছে। সে-ই সংসারটা চালাচ্ছে। ছোট বোনকে সে ভালোবাসে। তাকে সঙ্গীতবিদ হবার সুযোগ করে দিতে সে দৃঢ়সঙ্কল্প। এসব কথা অবশ্য আমরা গল্পের শুরুতেই জানতে পারি না। গল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নানা তথ্য আমাদের চেতনায় ধরা পড়ে। কাহিনী শুরু হয় অবিশ্বাস্য অদ্ভুত চরম নাটকীয় একটি বাক্য দ্বারা ঃ এক দিন নানা দুঃস্বপ্ন দেখার পর ভোরবেলা গ্রেগর সামসা যখন ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠলো তখন সে দেখলো যে সে একটা বিশাল পতঙ্গে পরিণত হয়ে তার বিছানায় শুয়ে আছে। প্রথমে গ্রেগর ভেবেছিলো যে এটা বোধ হয় তার ঘুমের মধ্যে দেখা কোনো স্বপ্নেরই সম্প্রসারণ, কিন্তু না, এ কোনো স্বপ্ন নয় সত্যিই সে বিরাট একটা আরশোলায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। এই অবিশ্বাস্য ঘটনার পটভূমিতে কাফকা তার কাহিনীতে এক বিস্ময়কর

বাস্তববাদী অনুপুঙ্খ বর্ণনার সমারোহ নিয়ে আসেন। আরশোলা হয়ে যাবার পর গ্রেগর কিভাবে বিছানা থেকে উঠলো, নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করার

ও রীতিনীতি কিভাবে আয়ত্ত করলো, কিভাবে চলাফেরা করলো, কি আহার ,

করলো ও কেমন করে – এসবের এমন বিশদ বর্ণনা কাফকা দিয়েছেন যে কাহিনীটি পাঠকচিত্তে অবাস্তববাদীর পাশাপাশি একটা বাস্তববাদী মাত্রিকতাও গড়ে তোলে। এপ্রসঙ্গে কারো কারো হয়ত মনে পড়তে পারে কোলরিজের দুঃস্বপ্নের স্মৃতিতাড়িত অদ্ভুত এক কাহিনী বর্ণনা করা বৃদ্ধ নাবিকের কথা।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344028
০২ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৭:৫৭
নাবিক লিখেছেন : চমতকার

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File