হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যিকঃআশরাফ আলী খান
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৫৮:৪২ রাত
>>হারিয়া যাওয়া লেখক -- দুই
**হারিয়ে যাওয়া সাহিত্যিকঃঅধ্যাপক ডক্টর শেখ গোলাম মকসূদ হিলালীClick this link
**আশরাফ আলী খান (১৯০১-১৯৩৯)
----------------------------------
কবি ও সাংবাদিক আশরাফ আলী খান ‘কংকাল’-এর কবি নামে প্রসিদ্ধ।
-- দারিদ্র ও ক্ষুধার জুলায় সমাজকর্মী এই কবি অতি অল্পবয়সেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।---
বিদ্রোহী এই কবি মুসলমানের অধিকার আদায়ের নিমিত্ত কলকাতা ও ঢাকায় “জেহাদ কমিটি” গঠন করে অবহেলিত মানুষের মংগল সাধনে নিয়োজিত হন। মুসলমান সাহিত্যিকদের শিশু-সাহিত্য রচনায় উদ্ধ ন্ধ করার জন্য তিনি কয়েকটি শিশুসাহিত্য গ্রন্থও রচনা করেন। আশরাফ আলী খান বড়দের বেশ ক’টি পত্রিকা সম্পাদনা করলেও শিশু পত্রিকা সম্পাদনা করেন নি। কিন্তু কিছু কিছু শিশু রচনা প্রকাশ করেন আব্দুল ওহাব সিদ্দিকী সম্পাদিত শিশু মাসিক গুলবাগিচা’ ও মোহাম্মদ নাসির উদদীন সম্পাদিত শিশু সওগাত-এর পাতায় ।
>>এই লেখকের নিম্নলিখিত বইগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়ঃ
মোয়া ( শিশু ছড়া ও গল্প, ১৯৩৮)
ভোরের কুহু (গজল গান )
টুকরী (ছোটদের ছড়া কবিতা)
মেওয়া ("ছাটদের গল্প)
আনোয়ার পাশা ( জীবনী)
উপরোক্ত বইগুলোর নামকরণের মধ্যেই যেন শিশুমনের ঝংকার প্রতিধ্বনিত হয়েছে ! ছেলে-মেয়েরা যা ভালোবাসে—খেতে-নিতে-পেতে—আশরাফ আলী খান প্রথমেই সেই নামে তাদের কাছে ডেকে ছড়া গল্প শুনিয়েছেন। লেখক ছড়া-গল্পগুলোর মধ্যে দিয়ে শিশুমনস্তত্বের সন্ধান লাভ করেছেন। কতকগুলো রংগীন খেলনা দিয়ে খোকাখুকুদের আহবান করেছেন স্বপ্নখেলায়। প্রাণদোলানো মন ভরানো কথার নুপুর ঝংকৃত তাঁর এই সব শিশু-সাহিত্য রচনায়। যেন খেয়াল-খুশী সফুতির প্রবাহ অবারিত ধারায় বয়ে চলেছে কোন শাশ্বতকালের সুর নিঝরিণী হয়ে। তিনি শিশুদের প্রিয় জগৎ থেকেই শিশু-সাহিত্যের উপকরণ আহরণ করেছেন ।
আশরাফ আলীর কবিতার ভাষা সাবলীল নয়, স্বচ্ছন্দ না হয়ে হোচট খেয়েছে মাঝে মাঝে । গতি একেবারে হারিয়ে ফেলে নি সেই বলে—সামান্য ব্যাহত বিপর্যস্ত। ছন্দোদোষও অস্বীকার করা যাবে না এসব কবিতা-ছড়ায়।
চলিত ভাষায় আটপৌরে মেজাজ বজায় রাখতে গিয়ে লেখক আড়স্ট হয়ে পড়েছেন কখনোবা। গ্রাম্যতা দোষ-দুচট শব্দচয়ন এবং কবিতায় মিলের আত্যন্তিক অপপ্রয়াস শিশুদের রসপরিগ্রহণে বাধা সৃষ্টিট করে বৈকি। নিজ বাসভূমি যশোর এবং কর্মস্থল কলকাতার ভাষার টানাপোড়েনে আশরাফ আলীর শিশু রচনাবলীর ভাষা অনেক স্থলে কৃত্রিম বলে মনে হতে পারে। একদিকে প্রমথ চৌধুরী অপরদিকে রবীন্দ্রনাথের রচনাশৈলীর দুই দিগন্তের আচ্ছাদনে তিনি শিশুদের কাছে যতটা না স্বচ্চন্দ হতে পেরেছেন তার চেয়ে অনেক বেশী হয়েছেন প্ৰগলভ ও অপরিচিত। কোরে (ক’রে), হোয়ে (হ’য়ে) । হোতে (হতে), হোলে (হ’লে), লাগলো, ফিরলো প্রভূতি ক্রিয়ার ব্যবহারে তিনি রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করেছেন ‘ও’ করে ভক্তির ব্যাপারে। কোন কোন স্থলে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। অন্তত ভাষার এই মুদ্রাদোষগুলো বাদ দিলে আশরাফ আলীর শিশুরচনাগুলো ছোটদের নিকট উপাদেয় ও আনন্দ নিষ্যন্দী।
>>‘মোয়া’ মখদুম লাইব্রেরী ও আহছান উল্লা বুক হাউস লিঃ-এর ‘আবাল
বলো’ সিরিজ-এর এক নম্বর বই। এতে আছে ছোটদের উপযোগী গল্প ও কবিতা।
>সূচীপত্রঃ
শিয়ালের বুদ্ধি (গল্প),
লোভের ফল (কবিতা),
বাহাদুর মজুর (গল্প),
ঘুম পাড়ানী গান (কবিতা),
মায়াকুতি (গল্প),
খোকাবাবুর বক্তৃতা (কবিতা),
আজব থলে (গল্প),
টুকুর জয় (কবিতা),
মাটির শক্তি (গল্প),
তিন কড়ি রায় (কবিতা),
বিপদের বন্ধু (গল্প),
খেক শিয়ালের বিয়ে (কবিতা)।
“মোয়া’ ব্যতীত অন্যান্য শিশু পাঠ্য বই-এর খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও গ্রন্থের বিজ্ঞাপন থেকে। আদৌ সেসব গ্রন্থ প্রকাশিত কিনা সঠিক জানা যায়নি। তবে বিজ্ঞাপনে ‘মেওয়া’ ও ‘আনোয়ার পাশা’র মূল্য পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এ দুটো বই প্রকাশিত হয়েছিল বলে মনে হয়।
--আশরাফ আলী খানের শিশু-সাহিত্য রচনার নিদর্শনঃ
“সত্যিই ভোমর দেখে, সে মুক্তি পেয়ে গেছে। কিন্তু মুক্তি পেলে কি হয় ? চাপার জন্যে তার বুক ফেটে যেতে লাগলো। সে আর বাড়ী ফিরলো না, সেই জংগলেই থেকে গেল। বুনো গাছের ফল পাতা খায়, আর রাতের বেলায় জংগলেই শুয়ে থাকে। এইভাবে কেটে গেল অনেক বছর। একদিন সে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে,—এক গাছে একটা চমৎকার সাদা ফুল ফুটে আছে। সেই ফুলটি তুলে নিয়ে সে যেন পরীর কুঠতে গিয়ে যার গায়ে ছু ইয়ে দিচ্ছে, সেই যাদু থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছে।” ['মায়া কুঠ’---মায়া ]
--“ছু চো আর ইদুরদের কথা শুনে কাঠবিড়ালীরা তো রেগে আগুন । তারা ছু চো-ইদুরদেরকে শাসিয়ে বলে—-“ওরে ছোটলোক ব্যাটারা, আমাদের জ্ঞাতি হতে চাস--তোদের তো ভারী আসপধা। আমরা থা। স্বগে, আর তোরা থাকিস মাটিতে, বেড়াস ধুলো কাদা খেয়ে, গায়ে তোদের বিশ্রী দুর্গন্ধ ; তোদের ছুলেও আমাদের জাত যায়।”
কাঠবিড়ালের দেমাগের কথা শুনে ছু চো-ই দুররাগু এ চটে । তারা বলে—‘বটেরে পাজির দল। রাখ, তোদের ভদ রলে বের কোরে
দিচ্ছি, দেখি মাটি না হোলে তোদের স্বর্গ কোথায় থাকে ” [‘মাট শক্তি’—মোয়া ]
----“ঐ উড়ে বেহারা—
ঝুটিবাঁধা চেহারা,
বয়ে যায় পালকি ।
গানের সে তাল কি !
হে ইও কি হে ইও,
গায়ে জোর নেই-ও,
চল চলু জলদি,
কাল হবে হলদি,
পর দিন বিয়ে সিন্দুর দিয়ে,
তারপর বেীটি— টুকটুকে রঙ টি !! ["ঘুম পাড়ানী গান’--মোয়া ]
“তিনুর ছিল নাড়া মাথা—
টিকি ছিল মোটা,
শিয়াল ভাবে—“এই পেয়েছি তরমুজ এক গোটা।”
অন্ধকারে চোখ বুজে সে
কামড় দিল জোরে,
তিনকড়ি রায় আৎকে ওঠে— ‘গেছিরে বাবা ওরে ।
” দারুণ ব্যথায় চৌদিকে যে
দেখে কেবল ধোয়া,
চালিয়ে যেতে যেতে শিয়াল বলে—“হুকা-হুয়া।” [ ‘তিন কড়ি রায়?—মোয়া ]
বিষয়: বিবিধ
১৩০৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খায়রান
মন্তব্য করতে লগইন করুন