আমার পড়া দেশ ভাগ নিয়ে কিছু বই: রিভিউ

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৮ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৫২:৪২ দুপুর

আমার পড়া দেশ ভাগ নিয়ে কিছু বই: রিভিউ



ইতিহাসকে জার্মাণ দার্শনিক হেগেল (Hegel) তিনভাগে ভাগ করেছেন। মৌলিক ইতিহাস (Original History), ভাবমূলক ইতিহাস (Reflecting History) এবং দার্শনিক ইতিহাস (Philosophical History)। মৌলিক ইতিহাস হিসাবে হেগেল চিহ্নিত করেছেন গ্রিক ইতিহাসবিদ হিরোটাস বা থুকুডিডিসদের।

আর সেই ইতিহাসের পাতা থেকে আজ দেশ বিভাগ নিয়ে কিছু মিছু।

২রা সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ জাপানের আত্মসমপর্ণের সাথেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। যুদ্ধোত্তর ব্রিটেনে তখন শ্রমিক দলের সরকার ক্ষমতাসীন ছিল। ক্লিমেন্ট এটলি সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত ব্রিটেনের সরকার ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে উদ্গ্রীব হয়ে পড়ে। সে জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিশন ভারতে পাঠানো হয়। সেই তিন সদস্যরা ছিলেন- লর্ড পেথ্রিক লরেন্স, স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস্ ও মিঃ এ. ডি. আলেক্সজান্ডার। ক্যাবিনেট মিশনের পক্ষ থেকে ১৬ই মে ১৯৪৬ এক ঘোষণায় জানানো হয়- পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে মুসলিম লীগের দাবী অনুযায়ী পাকিস্তান সৃষ্টি করলেই সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান হবে না। সেটাকে মাথায় রেখেই ক্যাবিনেট মিশন ভারতের অখণ্ডতা বজায় রেখে ক্ষমতা হস্তান্তরের এক পরিকল্পনা তৈরী করে। সেটিই ইতিহাস খ্যাত ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি মৌলানা আজাদ ছিলেন তার রূপকার। প্ল্যানের এক নম্বর সুপারিশ ছিল-ব্রিটিশ ভারত ও করদ রাজ্যগুলো নিয়ে একটিই ভারত ইউনিয়ন গঠিত হবে। প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ এই তিনটি দপ্তরই শুধু ইউনিয়ন সরকারের হাতে থাকবে। উক্ত তিনটি বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের ক্ষমতাও ইউনিয়ন সরকারের হাতে থাকবে। বর্ণিত তিনটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয় তথা উদ্বৃত্ত ক্ষমতা থাকবে প্রদেশ সমূহের।

প্রদেশগুলো এ-বি-সি এই তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ সংবিধান তৈরী করবে। প্রস্তাবিত তিনটি গ্রুপের এ-গ্রুপ ছিল অমুসলিম প্রধান প্রদেশগুলো নিয়ে। বি-গ্রুপ ছিল মুসলিম প্রধান প্রদেশগুলো নিয়ে। বাংলা ও আসাম নিয়ে ছিল সি-গ্রুপ। ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যানে ইউনিয়নস্তরে পাকিস্তান দাবী-আগ্রাহ্য হলেও-প্রদেশ স্তরে মুসলিম লীগের দাবী অনেকটাই মানা হয়ে যায়।

যে কয়টি প্রদেশ নিয়ে মুসলিম লীগ পাকিস্তান দাবী করছিল- ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যনে আসাম সহ তার সব কয়টিই দুটি গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়। (গ্রুপ-বি ও গ্রুপ-সি)। ওই সব প্রদেশের স্বতন্ত্র সংবিধান তথা শাসন ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার বিষয়টা সুস্পষ্ট অবস্তুায় আসাতে মুসলিম লীগ ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান গ্রহণ করে।

(Mr. Jinnah had to admit that there could be no fairer solution of the minority problem than that presented in the Cabinet mission plan. He told the Council that the scheme presented by Cabinet mission was the maximum that we could secure. As such, he advised the muslim league to accept the scheme and the Council voted unanimously in its favour. India wins freedom. Revised version)

মুসলিম লীগ স্বতন্ত্র পাকিস্তান দাবী থেকে সরে আসায় দেশব্যাপী স্বস্তির বাতাবরণ তৈরী হয়। কিন্তু সেই স্বস্তির ছিল বিজলীর ক্ষণিক চমকের মতো ক্ষণস্থায়ী। গ্রুপ সি-তে বাংলা ও আসাম যুক্ত হলে মুসলিম জনসংখ্যা সামান্য বেশী হয়ে যেত। হিন্দু গরিষ্ঠ আসামের কংগ্রেস নেতৃত্ব ওই রকম গ্রুপিং-এ অন্তর্ভুক্ত হয়ে সংখ্যালঘু হতে রাজী ছিলেন না। এ বিষয়ে জাতীয় কংগ্রেসের ব্যাখ্যা ছিল-ক্যাবিনেট মিশন পস্ন্যান অনুযায়ী প্রদেশগুলো ইচ্ছে করলে গ্রুপিং থেকে বের হয়ে যেতে পারে। মুসলিম লীগের ব্যাখ্যা ছিল তার বিপরীত। লীগের মতে একবার গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হলে আর বের হওয়া যাবে না। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের অভিমত মুসলিম লীগের পক্ষে যায়। এই টানাপোড়েনের ফলে শেষ পর্যন্ত ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান পরিত্যক্ত হয়। পরবর্তী ইতিহাস ক্ষমতা হস্তান্তরের অনিৱম অধ্যায়। সেই অধ্যায়টি ছিল বেপরোয়া ক্ষিপ্রগতির। ক্যাবিনেট মিশন প্ল্যান ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ সরকার নিঃসন্দেহ হয়ে যায়- ভারত বিভাগ এড়ানো যাবে না। পরবর্তী ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন। ভারতে আসার আগেই মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের নিকট আর্জি জানান। এটলি সরকার সেই মতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ইঙ্গিত দেন- ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে। মাউন্টব্যাটেন ভারতে আসেন ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে। ভারত ভাগ এড়াতে মাউন্টব্যাটেন এক অদ্ভুত প্রস্তাব উপস্তুাপন করেন। সেটি ‘প্ল্যান বলকান। তার সারমর্ম ছিল- ইউরোপের বলকান দেশগুলোর মতো ক্ষমতা হস্তান্তর করা। মাউন্টব্যাটেনের পূর্বসূরী লর্ড ওয়াভেলও ‘অপারেশন ব্রেকডাউন নামে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন। তাতে ভারতকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে সে সব অঞ্চলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা ছিল। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয় দল দ্বারাই ওই অবাস্তব পরিকল্পনা দুটি বাতিল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অপারেশন ব্রেকডাউন ও পস্ন্যান বলকান দুটিই ছিল ‘আই ওয়াশ্’ গোত্রীয়। ব্রিটিশ সরকার আন্তরিকভাবেই ভারত বিভাগ চায় না- এরকম একটা ভনিতার প্রয়োজনে ওই অবাস্তব পদক্ষেপ দুটি নেয়া হয়েছিল। ক্যাবিনেট মিশন পস্ন্যান, অপারেশন

ব্রেকডাউন ও পস্ন্যান বলকান দুটিই ছিল ‘আই ওয়াশ্’ গোত্রীয়। ব্রিটিশ সরকার আন্তরিকভাবেই ভারত বিভাগ চায় না- এরকম একটা ভনিতার প্রয়োজনে ওই অবাস্তব পদক্ষেপ দুটি নেয়া হয়েছিল। ক্যাবিনেট মিশন পস্ন্যান, অপারেশন ব্রেকডাউন ও প্ল্যান বলকান ফলপ্রসূ না হওয়ায় দেশবিভাগ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকারের সেই প্রকৃত অভিপ্রায়কে ফলতি রূপ দিতে মাউন্টব্যাটেন এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন। মাউন্টব্যাটেন জানতেন- কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে মুসলিম লীগ সুপ্রিমো জিন্নার যে সুদীর্ঘ টানাপোড়েন চলছে তাতে উভয় অংশই ত্যাক্তবিরক্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের ধৈর্যচ্যুতি ক্রমশই বাড়ছে। তা পরিলক্ষিত করে মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তর দশ মাস এগিয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট করায় কৌশল নিলেন। সেটাকে সন্দেহ মুক্ত তথা বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেস নেতৃত্বের সামনে একটি ‘টোপ’ রাখেন।

সেটি ছিল- কংগ্রেস যদি কমনওয়েলথে থাকতে প্রথমাবধিই রাজী থাকে তা হলে ক্ষমতা হস্তান্তর দশ মাস আগেই হবে। চরম ধৈর্যচ্যুত কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব তাতে রাজী হয়ে যান। মুসলিম লীগের কমনওয়েলথে থাকতে প্রথমাবধিই আপত্তি ছিল না। তাছাড়া পাকিস্তান হাতের মুঠোয় চলে আসায় জিন্না আর দর কষাকষিতে না যাওয়াই ভাল মনে করেন। তাই খন্ডিত ও পোকায় খাওয়া (জিন্নার ভাষায়) পাকিস্তানেই রাজী হয়ে যান। জিন্নার রাজী হবার আরেকটি গুরুতর কারণ ছিল। আর কেউ না জানুক জিন্না নিজে জানতেন তাঁর দূরারোগ্য ক্ষয়রোগ হয়েছে। চিকিৎসক তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি আর ছয় মাস বাঁচবেন। জিন্না এটাও জানতেন তিনি যদি পাকিস্তান সৃষ্টি করে না যেতে পারেন তা হলে পাকিস্তান বাস্তবায়িত হবে না। ভারত উপমহাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বের ধৈর্যচ্যুতির সুযোগটাকে কাজে লাগাতে মাউন্টব্যাটেন ঘড়ির কাঁটাকে এগিয়ে আনেন। এতেই তাঁর তথা ব্রিটিশ সরকারের অভীষ্ট সিদ্ধ হয়। মাউন্টব্যাটেনের কৌশল মাফিকই ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট মধ্য রাতে দেশ বিভাগ, ক্ষমতা হস্তান্তর ও ভারত ও পাকিস্তান দুটি ডমিনিয়নের সৃষ্টি হয়।

>বই: পূর্ব-পশ্চিম

>লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগ নিয়ে বাংলায় মনে হয় সেরা উপন্যাস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব-পশ্চিম। শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে আর রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য যুগ যুগ ধরে একসাথে মিলে মিশে বাস করা মানুষগুলো একে অপর থেকে আলাদা হয়ে গেল। মর্মান্তিক ও ঐতিহাসিকও বটে।

লেখক মূলত 'পূর্ব-পশ্চিম' দুই বাংলার বিভাজন নিয়ে লিখেছেন। যাদের মুখের ভাষা ছিল এক, সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার অনেকটা একই। তারপরেও তারা আলাদা হতে বাধ্য হলেন ধর্মের জন্য।

অনেকেই তাদের বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে চলে গেলেন ওপার বাংলায় আবার কেউ আসলেন এপার বাংলায়। যাদের পরিচিতজন কেউ নেই তারা হয়ে গেলেন উদ্বাস্তু। হঠাৎ করে ঠিকানা পরিবর্তন করায় অনেকেই হয়ে পড়েন গৃহহীন, কর্মহারা। তাছাড়া সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাও তাদের সহায়তায় হিমশিম খেয়ে যান। পথে পথে অন্নহারা মানুষের হাহাকার। সব মিলিয়ে অত্যন্ত করুণ অবস্থা।

এমনই সময়ে দুই বাংলায় কয়েকটি পরিবারের কাহীনি নিয়ে উপন্যাস 'পূর্ব-পশ্চিম'। দেশ ভাগ নিয়ে তাদের বিড়ম্বনা, আপনজনদের সাথে বিচ্ছেদ সব কিছুই দারুণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন সুনীল অত্যন্ত নিপুন হাতে। তাছারাও সেই সময়ে আমাদের বাংলায় রাজনীতিতে মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু সহ দেশবরণ্যে নেতাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড, ৫২'র ভাষা আন্দোলনের কথাও উঠে এসেছে লেখকের বর্ণনায়।

৫০০ পাতার বড় একটি বই হলেও এমন নেশা লাগানো গল্প যে পুরোটা পড়ে শেষ না করা পর্যন্ত ছাড়া যায় না। সাদা কাগজের জমিনের উপর কালো কালির রেখা মানুষকে কাদাতেও পারে! উপসংহারটা পড়ে আমারও এই দশা হয়েছিল। এমন একটা বই বার বার পড়লেও কেমন যেন প্রত্যেকবারই নতুন মনে হয়।

**ডাউনলোড লিংক:

http://www.amarboi.com/2011/12/sunil-gangopadhyay-purbo-poshchim.html?m=1

>বই:দেশ বিভাগ : ফিরে দেখা’

>লেখক:আহমদ রফিকের

দেশ ভাগ এমন একটি ট্র্যাজেডি আমরা তার পরিমাপ এখনও করতে পারিনি। এটা অনিবার্য ছিল না, তারই বহির্প্রকাশ এই বই। তিনি নিরপেক্ষভাবে তথ্যসংবলিত অনুসন্ধানে বইটি লিখেছেন। এটা কোন ইতিহাসের বই নয়, এটা ইতিহাসের বিশ্লেষণ।, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এই তিনটি প্রেক্ষাপট নিয়ে বইটি লেখা হয়েছে। এতে গান্ধীজীসহ অনেকের প্রচুর সমালোচনাও আছে। কয়েকজনের ভুলের মাসুল এই দেশ ভাগ এটা তুলে ধরা হয়েছে। সকল ধর্মের প্রতি স্বচ্ছ দৃষ্টিতে একই রকম উপমা বিন্যাস করা হয়েছে।

>বই:কেয়াপাতার নৌকা

>লেখক:প্রফুল্ল রায়

এ উপন্যাসটিতে ঔপন্যাসিক দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) ত্যাগ করে পশ্চিম বঙ্গে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের নিদারুন কষ্ট। বাংলার বাঙালেরা ওপার বাংলার ঘটিদের কাছে কীভাবে তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছেন তা ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে, আরো ফুটে উঠেছে গত শতাব্দির চল্লিশ থেকে ষাট দশকের পূর্ব বাংলার অপূর্ব চিত্রায়ন।

কেয়াপাতার নৌকা’ (২০০৩), ‘শতধারায় বয়ে যায়’ (২০০৮), ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ (২০১৪), ‘নোনা জল মিঠে মাটি’ (বাং ১৩৬৬)। ‘কেয়াপাতার নৌকা’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’ আকারে এবং নামে আলাদা হলেও আসলে তিনটি উপন্যাস মিলেই একটি উপন্যাস, ‘কেয়াপাতার নৌকো’র পরবর্তী খণ্ড ‘শতধারায় বয়ে যায়’ এবং তারও পরবর্তী খণ্ড ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’। তিনটি উপন্যাসই আকারে মহাকাব্যিক।

>বই:আগুনপাখি

>লেখক:হাসান আজিজুল হক

গাঁয়ের একটি মেয়ে, বাপের বাড়ি শ্বশুরবাড়ির বাইরে সে জানে চারপাশের মানুষজনকে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু । হিন্দু বলে তারা যে আলাদা, তেমন তো কিছু বোঝেনা সে । গভীর মমতায় সে গড়ে তোলে তাদের বড় একান্নবর্তী সংসার, আর রাতের নিরালায় স্বামীর কাছে শিখে নেয় অল্পসল্প লেখাপড়া । সুখ দুঃখ এর নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সে দেখে কেমন করে তার স্বামী জড়িয়ে পড়ে সামাজিক কাজে, হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায় এর কাছেই কতটা প্রিয় এক নেতা হয়ে ওঠে সে। কিন্তু হঠাত যেন পাল্টে যায় সব। তাদের একান্নবর্তী সংসারেও ধরে ভাঙ্গন, আর বাইরেও কোথা থেকে রব ওঠে যে দেশটাও নাকি ভাগ হয়ে যাবে । তা কি করে হয় ? দেশ আবার ভাগ হয় কেমন করে ? অবিশ্বাস্য সেই ঘটনাও সত্য হলো একদিন। মুসলমান পাড়া প্রতিবেশীরা চলে যেতে লাগলো ভিটে ছেড়ে । পরিজনেরাও । কিন্তু সে? না , সে কিছুতেই যাবেনা, কেননা, সে বলে "আমি আমাকে পাবার লেগেই এত কিছু ছেড়েছি। আমি জেদ করি নাই। কারুর কথার অবাধ্য হই নাই। আমি সবকিছু শুদু লিজে বুঝে নিতে চেয়েছি। আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না ক্যানে আলেদা একটা দ্যাশ হয়েছে গোঁজামিল দিয়ে যিখানে শুধু মোসলমান থাকবে কিন্তুক হিঁদু কেরেস্তানও আবার থাকতে পারবে। তাইলে আলেদা কিসের? আমাকে কেউ বোঝাইতে পারলে না যি সেই দ্যাশটা আমি মোসলমান বলেই আমার দ্যাশ আর এই দ্যাশটা আমার লয়।’ (পৃ. ১৫৮)

**ডাউনলোড লিংক:

http://www.amarboi.com/2013/05/aagun-pakhi-hasan-azizul-hoque.html?m=1

>বই:নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে

>লেখক:অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’, যার মধ্যে তার পুরো স্বত্তা ডুবে আছে। একই সিরিজের আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলো হোল, ‘মানুষের ঘরবাড়ী’, ‘অলৌকিক জলযান’ এবং ‘ইশ্বরের বাগান’। দেশভাগ নিয়ে অতীন উদ্বাস্তু পরিবারগুলোকে নিয়ে লিখেছেন, জন্ম দিয়েছেন নানা অভিনব চরিত্র।

বিপুল বাংলাদেশের ছোট্ট একটি গ্রামের কথা। আর সেই ছোট্ট গ্রামটির মধ্যে দিয়েই গোটা বংগদেশকে এঁকেছেন লেখক। প্লট স্বাধীনতার আগে থেকে শুরু। আছে রায়টের ক্ষুদ্র প্রচ্ছদ, মুসলিম লীগের তৎপরতার কথা। আর সেই সাথে ধানের শীষে আর নদীর বহমানতায় বাঙালির জীবন, বৃহৎ অর্থে বাংলাদেশের জীবন এবং তার রঙ।

এইবার আবার পাড়ি দিতে হবে কোন গভীর অরণ্যে! যেখানে কবরে শুয়ে আছে চির দুঃখিনী জালালি, যেখানে সামসুদ্দিন আর রঞ্জিত মালতীকে নিয়ে ছুটছে ধানের শীষ কুড়াতে, যেখানে দুর্গাপুজোর দিনে অমলা আর কমলা পরী সেজে ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে বড় বৌমণি ঠাকুর বাড়িতে সন্ধ্যায় ধুপ দেয় আর ধন বৌ গেছেন রান্নার আয়োজনে। এখনো হয়তো কাঁঠাল গাছটঠালনীচে অপেক্ষা করছে ফতিমা তার প্রিয় সোনা ঠাকুর আসবে বলে, তারপর ওরা ছুটবে ধান খেতের আল ধরে। সেখানে হয়তো স্থির হয়ে আছে ফকিরসাবের কিংবদন্তি বনে যাওয়া দেহটা, জুটন বসে আছে চুপচাপ, নরেন দাস এখনো বেঁচে আছে একটা শূন্য দৃষ্টি নিয়ে, আবেদালি এখনো কাঁদে তার কুলাঙ্গার ছেলের অসভ্য নষ্ট কাজের জন্য, আন্নুকে এখনো সন্দেহ করে ফেলু আর তার পঙ্গু হাতটা নিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠে – হালার কাউয়া... সেই মাঠ, পাটক্ষেত, চারিদিকে সবুজ ধান আর নদীর জীবনে মানুষগুলির জীবন সংগ্রাম। সোনা জোড়ে জোড়ে পড়ছে – পাতায় পাতায় পরে নিশির শিশির।

চলে যাবো সেই পথ ধরে...

পথেই দেখা হয়ে যাবে পাগলা ঠাকুরের সাথে, উনার সাথে আমি পলিন'কে খুঁজতে বেরুব কিংবা সোনালি বালির চরে হারিয়ে যাবো রোদ দেখতে দেখতে, আর তারপর গল্পের খাতার বাইরে এসে উল্টো সুরে আমাদের পথ দেখাবে ছোট্ট সোনা আর তার পাশে পায়ে পায়ে হাঁটবে আশ্বিনের কুকুর । ঘাটে তখন পাটাতনের উপর অপেক্ষা করছে ঈশম, চলো এবার সোনালি বালির নদীর তলে হারিয়ে যাই, হারিয়ে যাই রূপকথার নৌকা তুলে আনার জন্য। বিশাল দৈত্যের হাত থেকে উদ্ধার করলেই ভেসে উঠবে সোনার নৌকা, রুপার বৈঠা, এবং ভেসে বেরাতে বেরাতে অনেক দূরের খোয়াই দেখা যাবে আর উপরে নীল আকাশ, উড়ছে হাজার হাজার নীলকণ্ঠ পাখি।

এ ছাড়া পড়তে পারেন ****

সমরেশ বসুর ‘সওদাগর

’রমেশচন্দ্র সেনের ‘পুব থেকে পশ্চিমে’,

জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর ‘বারো ঘর এক উঠান’,

প্রফুল্ল রায়ের ‘কেয়াপাতার নৌকো’,

মাহমুদুল হকের ‘কালো বরফ’,

হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’,

মিহির সেনগুপ্তের ‘বিষাদবৃক্ষ

বিষয়: সাহিত্য

২৪১৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

336652
১৮ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:১৩
নাবিক লিখেছেন : রিভিউ ভালো লাগলো
১৮ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:০৮
278465
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
336708
১৮ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : ইসলাম শুুধু আচরণেই সীমাবদ্ধ থাকতে দুনিয়ায় পাঠানো হয়নি৷তা প্রতিটি পদপেই প্রতিফলিত করে দেখাতেই হবে, এটিই ইসলামের চাহিদা যা নবী করিম বাস্তবে দেখিয়ে গেছেন৷ ভারত ছিল হিন্দু প্রধান দেশ৷ সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাছিল সুদূর পরাহত৷ তাই মুসলীম প্রধান এলাকা নিয়ে আলাদা মুসলীম রাষ্টের চাহিদা মুসলীম নেতাদের মাথায় আসে৷ তাদের নিয়তে ছিল তারা তাদের রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম করে নমুনা স্থাপন করবে৷ কিন্তু সংখ্যায় এ মনোভাবে মুসলীম অত্যন্ত কম ছিল৷ যার কারণে তা সম্ভব হয়নি৷ রাষ্ট্রটির এক অংশ তাদের কপালে বাঁধা ব্যাজটিও বঙ্গোপসাগরে ফেলেদিয়ে ৪৭ পূর্ববর্তিতে ফিরে যাবার পাঁয়তারায় রত৷
বিভাজনে দেশ ছাড়তে হবে এমন সিদ্ধান্ত না থাকলেও হিংসুক সম্পদ সম্পত্তি লোভী িছু মানুষ তা ঘটিয়ে অসহায় মানুষকে দেশান্তরিত করেছে৷ উদবাস্তু মূহাজির কারে নিঃস্ব করে ছেড়েছে৷
১৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০১:২৩
278516
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ইতিহাস এর সাক্ষী ---
336718
১৮ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : যে উপন্যাস গুলির কথা লিখেছেন সেগুলি পড়লে পুরাপুরি বিভ্রান্ত হবেন। উপন্যাস ইতিহাস নয়। উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার কারন জানতে প্রকৃত ঐতিহাসিক বই পড়তে হবে।
১৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০১:২২
278515
গোলাম মাওলা লিখেছেন : এগুলি ইতিহাসের সাক্ষী কিছু ঘটনা তুলে আনা হয়েছে। এগুলি ইতিহাস নয়। তবে তখন কি ঘটেছিল তার কিছু প্রমান। ইতিহাস জানতে পড়তে হবে ইতিহাসের বই।

ধন্যবাদ
১৯ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৩৭
278553
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সেই তথ্যগুলিও বেশিরভাগই বিকৃত। বিশেষ করে পুর্ব-পশ্চিম এর কলকাতার দা্ঙ্গা বিষয়ে এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন বিষয়ে সব তথ্্যই মিথ্যা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File