পানি পড়া
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:২০:০১ রাত
পানি পড়া
পানি পড়া বা পড়া পানি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে খুবি জনপ্রিয় একটি ধর্মীয় বিশ্বাসের নাম। আর এর পিছে আছে আমাদের মহান ইসলাম ধর্মের নামে , বিশ্বাসের নামে মহা মহা ধোঁকাবাজি।
যদিও গ্রামের অল্পশিক্ষিত মানুষজন ধর্মের নামে বছরের পর বছর তাদের আকিদার একটি অংশ বানিয়ে ফেলেছে। আর তার ফায়দা তুলে নিচ্ছে অল্প শিক্ষিত কিছু মৌলভি। তাদের প্রচার প্রচারনায় এটি ভাল একটা ধর্মীয় ব্যবস্যায় পরিণত করেছে কিছু জালিয়াত মৌলভি।
ছোটতে প্রায় দেখতাম গ্রামের মহিলারা কাচের গ্লাসে কুয়োর পানি নিয়ে গ্রামের মসজিদে হাজির। আর মসজিদের ইমাম( মৌলভি ---) সেই গ্লাস হাতে নিয়ে বিড় বিড় করে দোয়া পড়ে সেই গ্লাসের পানিতে ফু-দিয়ে মহিলার হাতে ফেরত দিয়ে দিচ্ছে। আর মহিলা পরম বিশ্বাসের সঙ্গে তা হাতে নিয়ে শাড়ির আঁচলে বাঁধা ৫-১০ টাকার ময়লা এক খানা নোট বাড়িয়ে দিচ্ছে মৌলভির দিকে। পান খাওয়া দাতে দেতল হাসি দিয়ে সেই টাকা জুব্বার( পাঞ্জাবি) পকেটে চালান করে দিচ্ছেন তিনি।
আমিও যে দুই একবার সেই পানি খাইনি তা বলা যাবে না( সঠিক মনে নেই, খেলে খেতেও পারি) ।
এই পড়া পানি এখনকার হুমিয়/ইউনানি... (যারা প্রচার করে তাদের ঔষধ সব রোগের জন্য অব্যর্থ ) ঔষধের মত সব রোগ নিরাময় করতে পারে। আর সত্যি সত্যি কেও কেও ভালও হয়ে যেতেন।
এই ১৫ সালে এসেও গ্রামে গিয়ে এই পড়া পানির কেরামতি এখনো মহা সমারোহে চলছে এবং চলবে।
এবার একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করি---
এই ঘটনাটা বলছি ১৯৮০ দিকের। তখন আমার জন্মও হয়নি। একবার আমার দাদীর কি যেন অসুখ। তো তিনি আমার বড় ভাই কে পাশের গ্রামের বিখ্যাত মৌলভি সাহেবের নিকট হতে তার জন্য পানি পড়া আনতে বললেন। ও তখন আবার ডাক্তার আর ঔষধের খুব একটা চল ছিলনা আমাদের অঞ্চলে। তো আমার বড় ভাই বদ, পাশের গ্রামের মৌলভির কাছে না গিয়ে, বাড়িতে থাকা বোতলে খাটি কুপের পানি এনে দাদীকে দিয়ে বললেন এই নাও ( --- ) মৌলভির পানি পড়া। আর আমার দাদী মহা সমারহে খাটি বিশ্বাস নিয়ে পানি পড়া খেয়ে যেতে লাগলেন, এবং বিস্ময়ের ব্যপার পরের দিন দুপুরে তিনি মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠলেন। পরের দিন একেবারে সুস্থ।
বিঃদ্রঃ আমার দাদী ২ বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন। সকলে তার জন্য দোয়া করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১২২২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
عن علي - رضي الله عنه - قال : ( لدغت النبي صلى الله عليه وسلم عقرب وهو يصلي فلما فرغ قال :" لعن الله العقرب لا تدع مصليا ولا غيره " ثم دعا بماء وملح وجعل يمسح عليها ويقرأ بـ } قُلْ يَاأَيُّهَا الْكَافِرُونَ { و } قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ { و } قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ { ) ( السلسلة الصحيحة 548 ) 0
* عن محمد بن يوسف بن ثابت بن قيس بن شماس عن أبيه عن جده عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه دخل على ثابت بن قيس – قال أحمد : وهو مريض – فقال : ( اكشف الباس رب الناس عن ثابت بن قيس بن شماس ، ثم أخذ ترابا من بطحان - أحد أودية المدينة الثلاثة ، العقيق ، وبطحان - فجعله في قدح ثم نفث عليه بماء وصبه عليه ) ( السلسلة الصحيحة 1526 ) 0
قال صالح بن الإمام أحمد رحمه الله تعالى: اعتللت مرة فقرا لي أبي في ماء ونفث فيه ثم أمرني بشربه وأن أغسل رأسي،
2- شيخ الإسلام ابن القيم : ( ولقد مر بى وقت بمكة سقمت فيه وفقدت الطبيب والدواء فكنت أتعالج بالفاتحة آخذ شربة من ماء زمزم وأقروءها عليها مراراً ثم اشربه فوجدت بذلك البرء التام ثم صرت أعتمد على ذلك فى كثير من الأوجاع بها غاية الإنتفاع)0 (زاد المعاد ج3 ص 188
3-سماحة الوالد محمد بن ايراهيم آل الشيخ
سئل سماحة الشيخ محمد بن إبراهيم آل الشيخ – رحمه الله :
عن النفث في الماء ثم يسقاه المريض استشفاء بريق ذلك النافث وما على لسانه حينئذ من ذكر الله تعالى أو شئ من الذكر كآية من القرآن أو نحو ذلك ؟
فـأجــاب : لا بأس بذلك فهو جائز ، بل قد صرح العلماء باستحبابه .
বিনে পয়সায় পানিপড়া দিতেন আমার এক শিক্ষক, কাজ হতো!
কর্মজীবনে একজন বর্ষিয়ান মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম যিনি মহল্লায় নিজের ভিটায় ওয়াক্তিয়া মসজিদ করেছিলেন- পরে সেটা জামে মসজিদ হয়ে যায়- নিজেই ঈমামতি করতেন! একদিন ফজরে অসুস্থতার কারণে মসজিদে আসেননি, পানিপড়ার প্রার্থীরা আমাকে জেঁকে ধরলো, নিরুপায় হয়ে সবার পানিতেই নিজের জ্ঞানমত পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলাম!
কৌতূহলী হয়ে পরে খোঁজ নিলাম- সবাই উপকৃত হয়েছে!
========
এটি একদিকে যেমন মানসিকতার ব্যাপার, অপরদিকে আল্লাহতায়ালার আয়াত ও রসুলেরﷺ শিখানো দোয়ার কার্যকারিতাও নিঃসন্দেহে!
তাই "পানিপড়া"কে তাচ্ছিল্য করার অবকাশ নেই!
তবে এটা নিয়ে ব্যবসা করা অবশ্যই নিন্দনীয়! কিন্তু সম্মানসূচক হাদিয়া গ্রহন করাকে "হারাম" বলার সুযোগ নেই!
গ্রামের সহজ-সরল মানুষেরা স্থানীয় ঈমামকে অত্যন্ত ভক্তি-শ্রদ্ধা করেন, এবং ভালো-ও বাসেন, এমন কি অল্পবয়সী হলেও! তাই ভালো তরকারীটা, গাছের ফলটা তাঁকে ছেড়ে খেতে চাননা!
তাছাড়া গ্রামের মানুষেরা এটাকে "ডাক্তারের ফিস" মনে করেননা, বরং "হাল জাযাউ ইহসান ইল্লাল ইহসান" থেকে এটির প্রচলন! যদিও ক্রমে বিকৃত হয়েছে, অনেকে আল্লাহর জন্যই হাদিয়াগ্রহন ছাড়া এসবের প্রয়োগ এখনো করে আসছেন!
বিষয়টি সঠিকভাবে বুঝতে হলে আমাদের উপমহেদেশের পৌত্তলিক সংস্কৃতিকে ইসলামী সংস্কৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপনের বিষয়টি সামনে রাখতে হবে! সামাজিক বন্ধন ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের যাদুঘরে ঘুরে আসতে হবে ইসলামের অবদান জানতে বুঝতে!
ইসলামী সংস্কৃতির এসব বিষয় যতই পরিত্যক্ত হয়েছে, সমাজে পারস্পরিক সহমর্মিতা ততটাই নির্বাসিত হয়েছে এবং অশান্তির বিস্তৃতি ঘটেছে!
আপনার লেখাটিতে ইসলামের গায়ে চিমটিকাটা হয়ে গেছে- হয়তো আপনার অজান্তেই! তাই
অনেক কথা বলতে হলো! দুঃখিত!!
আল্লাহতায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন (নাস্তাগফিরুল্লাহ)
মন্তব্য করতে লগইন করুন