গ্রামীণ দেশী শাক
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:২৭:৫১ রাত
গ্রামীণ দেশী শাক
গ্রামে গরিব মহিলারা গ্রামের পতিত জমি, পুকুর পাড় সহ বিভিন্ন স্থান হতে নানা ধরনের শাক সংগ্রহ করে তা পরিবারের জন্য রান্না করে থাকেন। এ সব শাক প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে এবং যুগ যুগ ধরে এদের বংশবিস্তার হয়ে চলেছে প্রকৃতির নিয়মে। মাঠে গরু, ছাগল চরানোর সময়/ ছেড়ে দিয়ে বাড়ির আশ-পাশ থেকে গ্রামের মহিলারা অতি যত্নে তিন আঙুলের মাথা দিয়ে শাক ছিড়ে শাড়ির আঁচলে করে শাক তোলেন। । কারন পরবর্তীতে যেন ঐ গাছ থেকে আবার শাক সংগ্রহ করা যায়। প্রত্যেক মৌসুমে গ্রামের পতিত জমি, পুকুর পাড় জমির আইলে কোন না কোন প্রকার শাক পাওয়া যায়। আর গ্রামের মহিলারা এগুলি সংগ্রহ করে খান। বিশেষ করে শীত মৌসুমে গম,খেসারী ক্ষেতে অনেক শাক পাওয়া যায়।বর্ষা মৌসুমে গ্রামে প্রচুর কলমি শাক, শাপলা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয় তারা শালুক, কচুর লতি সংগ্রহ করে খান। কচুর মুখি, কচুর লতিসহ এসব শাকে আয়রন, পুষ্টি ও ভিটামিন ভরপুর।
প্রতি বছর চৈত্র মাসে গ্রামের নারীরা ১৩ রকমের শাক সংগ্রহ করে খান(তের রকম শাকের মধ্যে রয়েছে-১.হেলেঞ্চা ২. কলমি ৩. নেটাপেটা ৪.ঢেঁকিশাক ৫.দন্ডকলস ৬. তেলাকুচা ৭. বাইতা ৮. খৈরাকাঁটা/খুড়াশাক ৯. মোরগশাক ১০.থানকুনী পাতা,১১. গিমা ১২. কচুশাক ১৩.কস্তুরী শাক)
। এই ১৩ রকমের শাক একত্রে মিশিয়ে রান্না করে খেলে শরীরে রোগ- ব্যাধি হয় না এবং ওষুধি গুনাগুণও আছে বলে গ্রামীণ একটা বিশ্বাস প্রচলিত আছে।
এসব শাক খেলে মাথা ব্যাথা সেরে যায়। গর্ভবতী মায়েরা বাচ্চার পুষ্টির জন্য এসব শাক খান।
গ্রামের মহিলাদের তোলা শাকঃ
১। গিমা শাক
২।তেলাকুচা পাতার শাক
৩।ঢেঁকি শাক
৪।কলমি শাক
৫। খৈরাকাঁটা/খুড়া শাক
৬। হেঞ্চি/হেলেঞ্চা শাক/হাচি শাক/গোল হাচি শাক/সেচি শাক/ হেচি শাক/চিড়া শাক/ইছা শাক
৭।কস্তুরী শাক
৮।শ্বেতদ্রোণ/ দন্ডকলস/দল কলস/ ধুবরি/দোর কলস/ কান শিশা/ কাউন শিশা/ধুরপ/ দুলফি শাক
৯।ভেঙ্গরাজ শাক,
১০।থানকুনী পাতা,
১১।বাদলা পাতা শাক
১২। কচু শাক,
১৩। চটা শাক
১৪।সাজনা পাতা শাক
১৫। উষনি শাক/ ওজোন শাক/কালানাগুনি/ উখলি পাতা/ দুরুখ বাকু
১৬।বাইতা/ বতা শাক
১৭। নেটাপেটা
১৮।মোরগ শাক
১৯।আদাবরুন/বিলশাক
২০। ঘুমশাক
২১।গাদামনি শাক
২২।মাটিফোড়া শাক
২৩।খুদকুড়ো
২৪।হাতিশূর
২৫।সেঞ্চি শাক/ঘোড়া সেঞ্চি
২৬।কাটানটি
২৭।মেথি শাক
এবার এক নজরে দেখে নিই এই শাক গুলির উপকারিতাঃ
>হেঞ্চি শাক শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।
> খৈরাকাঁটা/খুড়া শাক শরীরের ব্যথাবেদনার উপশম করে।আমখৈরা/খুড়া শাক গর্ভবতী মায়েদের ভীষণ উপকার করে।দাই মায়েরা এই শাক খেতে বলেন গর্ভবতী মেয়েদের।
>তেলাকুচা শাক/ভর্তা ডায়বেটিকস রোগীর জন্য মহৌষধ এবং এর স্বাদে রুচিও ফেরে।তেলাকুচা পাতার শাক খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে।
>গিমা শাক খেলে পেট ফাঁপা, পেটের গ্যাস ভাল হয়।
>ঢেঁকি শাক মাথা ও গা ব্যাথা উপশম করে।
>কলমি শাক খেলে মাথা ব্যাথা কমে এবং রাতকানা রোগ হতে বাঁচায়।
>কস্তুরী শাক খেলে আমাশা রোগ ভাল হয়।
>শ্বেতদ্রোণ শাক গর্ভবতী মা ও শিশুদের খিচুরি ও জাও ভাতের সাথে সিদ্ধ দিয়েও এই শাক খাওয়ানো হয়।স্থানীয় মানুষের মতে ছোট শিশুদের সর্দি, কাশি, পেটে কৃমি হলে এই শাক ভেজে খাওয়ালে তার উপশম হয়। শরীরের বাত রোগ জনিত ব্যাথা অনুভব হলে এই শাক ভেজে খেলে সেই ব্যাথা অনেকাংশেই ভালো হয়। এই গাছ পাটায় বেটে রস বের করে হালকা গরম করে বাচ্চাদের বুকে মালিশ করে দিলে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যায়।। গবাদিপশু বিশেষ করে ছাগলের পেটে পীড়া ও মুত্র রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে দলকলস শাকের পাতার রস পিষে খাওয়ালে উপকারপাওয়া যায়।
>>উষনি শাক/ ওজোন শাক সাধারনত শরীরে বিষ ব্যাথা হলে এই শাক খেলে উপকার পাওয়া যায়। এই শাক আতুঁর ঘরে সন্তান প্রসবের পরে মাকে খাওয়ানো হয় শরীরের ব্যাথা কমানোর জন্য। দাঁত ব্যাথা সারাতে এই শাকের ফুলের রস ব্যবহার করা হয়।
এসব শাক যেন হারিয়ে না যায় তার প্রতি খেয়াল রাখা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
২৬২০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসাধারণ পোস্ট। ভালো লাগলো।
সুন্দর পোস্টটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন
মন্তব্য করতে লগইন করুন