>>জরাসন্ধ কার ছদ্মনাম?
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৭ জানুয়ারি, ২০১৫, ০১:৫৭:২৩ রাত
>>জরাসন্ধ কার ছদ্মনাম?
ক)আব্দুল করিম
খ)চারুচন্দ্র চক্রবর্তী
গ)নূরন্নেসা খাতুন
ঘ)যতীন্দ্রনাথ বাগচীকার ছদ্মনাম?
প্রশ্নটা মাঝে মাঝেই চাকরির পরীক্ষায় আসে। আর উত্তরটা আপনারা সকলেই জানেন।
আসুন এবার তার সম্পর্কে যেনে নিই কিছু অজানা বিষয়।
>>জন্ম,পড়াশুনা ও চাকুরী জীবনঃ
জরাসন্ধ ছদ্মনামের আড়ালে আসল মানুষটি হলেন চারুচন্দ্র চক্রবর্তী (১৯০২ - ১৯৮১)।তিনি ইস্ট বেঙ্গল এর ফরিদপুর জেলার একটি গ্রামে ২৩ মার্চ, ১৯০২ সালে এ জন্মগ্রহণ করেন ।
শিশু বেলায় তিনি হেয়ার স্কুল এ তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। আর ক্লাশে বরাবরই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন । এর পর, ১৯২৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে তাঁর এম এ সম্পন্ন করেন এবং এখানেও আবার শীর্ষস্থান অধিকার করেন।
অবশেষে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করার পর, ডেপুটি জেলার হিসেবে কর্মজীবন সুরু করেন। তিনি আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, কলকাতায় "জেলার-সুপারিনটেনডেন্ট" পদে নিয়োজিত হন । তিরিশ বছর নানা জায়গায় কাজ করার পর ১৯৬০ সালে আলীপুর সেণ্ট্রাল জেলের সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
>>সাহিত্য কর্মঃ
তাঁর লেখার বৃহত্তর অংশ জেলের বন্দীদের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত ।এছাড়া ছোটগল্প এবং ছোটদের জন্য লেখা গল্পও তার বেশ কিছু আছে। তার শিশুদের জন্য নিবেদিত কিছু বই এ প্রথমদিকে তার মূল নাম প্রকাশিত হয়েছিল । তাঁর প্রথম উপন্যাস "লৌহ- কপাট"১৯৫৩ সালে ১লা মে প্রকাশিত হয়।
তার লিখিত উপন্যাসঃ
'লৌহকপাট'
'তামসী',
'পাড়ি',
'মসীরেখা',
'ন্যায়দণ্ড',
'উত্তরাধিকার',
কাছাকাছি
নিঃসঙ্গ পথিক
ছায়াতীর
এবাড়ি ও বাড়ি
চলতি মেঘেরে ছায়াছবি
পরশমণি
একুশ বছর
মহাশ্বেতার ডায়েরী
পসারিণী
নমিতা
ভুল
জায়গা আছে
অভিযোগ না অভিনয়
তৃতীয় নয়ন
মানস কন্যা
সহচরী
আশ্রয়
বন্যা
নিশানা
প্রভৃতি।
তার আত্মজীবনীমূলক লেখা হল 'নিঃসঙ্গ পথিক' ।
>অজানা খবরঃ
'লৌহকপাট' সম্পর্কে একটা খবর হয়তো কিছু কিছু পাঠকের জানা নেই। দেশ পত্রিকার এককালের সম্পাদক সাগরময় ঘোষ তাঁর 'হীরের নাকছাবি' বইয়ে এটির উল্লেখ করেছেন। সাগরময় ঘোষের স্কুলের এক বন্ধু তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তার একটি পাণ্ডুলিপি এক সময়ে দেশ পত্রিকার অফিসে এসে জমা দিয়ে যান।
এক্সারসাইজ বুক বাঁধানো মোটায় রচনার নাম 'লৌহযবনিকা', লেখক 'বিশ্ববন্ধì'। লেখা বা লেখকের নাম কোনটাই সাগরময়বাবুর কৌতূহল জাগায় নি, পাণ্ডুলিপিটিকে তিনি ড্রয়ারে চালান করেন। এর চার-পাঁচ মাস বাদে বন্ধুর একটা চিঠি পান। একটু কাতরভাবেই বন্ধু লিখেছেন যে, যদি লেখাটা ছাপার অযোগ্য মনে হয়, তাহলে সেটা যেন রেজিস্ট্রিযোগে ওঁর কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে লেখাটার কথা সাগরময়বাবু বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন। বন্ধুর চিঠি পেয়ে একটু লজ্জিত হয়েই খাতা খুঁজেপেতে বার করলেন। ফেরত পাঠানোর আগে দুয়েকপাতা পড়তে গিয়ে কখন এক ঘণ্টা সময় কেটে গেছে খেয়ালও হয় নি। খাতাটা সেদিন বাড়ি নিয়ে রাত একটা পর্যন্ত পড়ে শেষ করলেন। তার পনেরো দিন পরেই 'লৌহযবনিকা' 'লৌহকপাট' নামে আর 'বিশ্ববন্ধু'র বদলে 'জরাসন্ধ' নাম দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতে আরম্ভ করে। এর কিছুদিন পরে ১৯৫৪ সালে 'লৌহকপাটে'র প্রথম খণ্ড গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৮ সালে তপন সিংহ সেটি চিত্রায়িত করেন।
বন্ধুর তাগাদা না পেলে 'লৌহকপাট' প্রকাশিত হত কিনা, আর হলেও এতজন লোক সেটি পড়তো কিনা, সেটা অবশ্যই একটা প্রশ্ন। তবে 'লৌহকপাট' অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকলেও অমনোনীত হয় নি।
>শোনা যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পথের পাঁচালী'র পাণ্ডুলিপি প্রবাসী পত্রিকায় ছ'মাস পড়ে থাকার পর অমনোনীত হয়ে ফেরত গিয়েছিল। পরে নিতান্ত ভাগ্যচক্রে সাহিত্যিক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় পাণ্ডুলিপিটি পড়েন, যার প্রচেষ্টার ফলে আমরা বিভূতিভূষণকে পাই।
চারখণ্ডের 'লৌহকপাটে'র তিনটি খণ্ডই লেখকের চাকুরিজীবনে লেখা। চতুর্থ খণ্ডটি লেখেন অবসর নেওয়ার পরে এবং কারো কারো মতে সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ খণ্ড।তাঁর বই আঞ্চলিক ও বিদেশী সহ প্রায় ৬টি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
৪৬৮৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন