লুকিয়ে পড়া বই
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০২ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৩:৫৩:০০ রাত
আমরা অনেকে ক্লাসের পড়া ফাকি দিয়ে মা-বাবার চোখ বাচিয়ে লুকিয়ে নানা বই পড়েছি এবং সামনেও পড়ব। অনেকে ধরাও খেয়েছি হাতে নাতে। ধরা খেয়ে শাস্তি হিসেবে নানা শাস্তিও পেয়েছি অনেকে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই।
প্রথমে আমার একটা ঘটনা শেয়ার করি। স্কুলে আমি মাঝারি ধরনের ছাত্র বরাবরি। আর ক্লাসে বসতাম প্রথম ৪ বেঞ্চ বাদে ৫ম বেঞ্চে। আর তখন হাতখরচ পেতাম খুব অল্প। তাও প্রতিদিন না। মাঝে মাঝে। কারন স্কুল বাউন্ডারির পরেই ছিল বাড়ি, তাই টিফিন/দুপুরের খাবার খেতে আরামেই যেতে পারতাম বাড়ি। তখন বই পড়ার নেশাও ছিল ভারি। তাই বই কিনার জন্য স্কুল ফি( সেই ফুল ফ্রি স্টুডেন্টশিপ) ফ্রি করার জন্য কায়দা করে দরখাস্থ করে দিতাম প্রতিবছর। এ দুই টাকা জমিয়ে মার কাছ হতে পাওয়া টাকা, দাদির কাছে পাওয়া টাকা( মা বা দাদির কাছ হতে কিন্তু খুব বেশি টাকা পাওয়া যেত না) , মাঝে বাজার খরচ মেরে( যাহ গোপন কথা ফাঁস করে দিলাম) ভালই বই কিনা হত। আর ভাইদের চোখ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে পড়তাম সেই সব বই।মাঝে মাঝে স্কুলেও লুকিয়ে পড়তে হত সেগুলি। আর বন্ধুরাও অনেকে স্কুলে বই নিয়ে আসত। তাদের কাছ হতে নিয়ে নিয়ে বই পড়তাম এই শর্তে --যে স্কুল ছুটির পর বই ফেরত দিতে হবে। তাই এক এক টা বই ক্লাসে বসে ছারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পড়তে ২-৩ দিন লেগে যেত।
একদিন বন্ধুর কাছ হতে পাওয়া একটা তিন গোয়েন্দার( নাম মনে নেই) নতুন বই পেয়েছি। প্রথম ক্লাশে আরামেই পড়ে গেলাম। ২য় ক্লাশ উচ্চর গণিত। এসিস্টেন্ট হেড ছারের ক্লাশ। তিনি বেশ কড়া বলে সুনাম আছে। আমরা জমের মত ভয় পেতাম তার লাঠির বাড়ির।
{রাজশাহীর শিরোইল স্কুলে (বা কলেজিয়েট স্কুলের) সব্বাই তাকে চিনে থাকবেন তিনি শ্রদ্ধেয় ইয়াসিন ছার।(তিনি বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন- আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন)}
ভয়কে জয় করে টেবিলে বইকে দাড় করিয়ে তার মধ্যে তিন গোয়েন্দা বই ঢুকিয়ে পড়তে পড়তে পড়তে এমন আনমনা হয়ে গেছি যে, ছার আমাকে প্রশ্ন করেছেন সে দিকে আমার খেয়াল নেই।
ছার টেবিলের নিকট এসে আমাকে ডেকে উঠে বললেন—মাওলা দেখি তোমার বই টা।
আমি চমকে উঠে বই সহ দাড়িয়ে। পুরাই টাস্কি। ভয়ে কলজাতে পানি নেই।
দ্বিতীয়বার না চাইতেই তার হাতে দিলাম উচ্চতর বই সঙ্গে ভিতরে গল্পের বই।আসলে লুকানোর বা কোন ট্রিক্স করার কোন সময় পাইনি। যাকে বলে হাতে নাতে ধরা খেয়েছি।
ক্লাশের সবাই তখন এমন চুপ-- যাকে বলে পিনপতন নিরবতা। সকলেরই এবং আমার ১০০% ধারনা আমার কপালে খারাবি আছে। মানে লাঠির বাড়ি পিঠে পড়ছে।
তিনি বই খুলে গল্পের বইটা নিয়ে ম্যাথ বইটা ফেরত দিয়ে আবার সামনে চলে গেলেন। আবার অংক বুঝাতে লাগলেন।
আমার তো ১০০%, সঙ্গে ক্লাশের সকলেই গোপনে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বেচেছিল সেদিন। আমি পাক্কা বলতে পারি।
ক্লাশের ঘণ্টা বাজতেই তার অংক সেশ।তিনি যাবার আগে ঘুরে দাড়িয়ে আমাকে ছুটির পর টিচার্স রুমে তার সঙ্গে দেখা করতে। হাতে তার গল্পের বই।
এতক্ষণ স্বস্তির যা ছিল নিমিষেই মাটি।
যার বইটি গেল সে ছার বের হবার সঙ্গে হাউকাউ শুরু করে দিল—তোকে বারন করেছিলাম ইয়াছিন ছারের ক্লাশে পড়িস না। গেল আমার ২৫ টাকার বই।
আরেকজন ওকে ঝাড়ি মেরে বলল থামতো তুই। বেচারার কপালে কি শনি আছে। তা না ওর বই।
আরও হাও কাও চলতে থাকল ছুটি পর্যন্ত, ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে।কাছের প্রিয় কয়েকজন বন্ধু বার বার শান্তনা দিল। সাহস জোগাতে চাইল কিন্তু বিধি বাম। মনে মানে কলজে শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি।
ছুটির পর ভয়ে ভয়ে গেলাম ছারের রুমে। ঘাম শরীরে বলে উঠলাম—মেই এই কামিন ছার --------
>>ছার আমাকে সেদিন কি বলেছিল ও করেছিল তা আপনারা ভেবে বের করুন। এটিই ধাঁধা।
আপনারা ভাবতে থাকুন আর এবার আসুন দেখি আমরা যাদের বই লুকিয়ে পড়ি বা পড়েছি তারা কার বই লুকিয়ে পড়েছিলেন। আজ দেশসেরা এমন কিছু লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের জীবনে প্রথম লুকিয়ে পড়া বই সম্বন্ধে জেনে নিই।
১.সেলিনা হোসেন:
আমি জীবনে প্রথম যে বইটি লুকিয়ে পড়ি, সেটি ছিল শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ বইটি। আসলে আমার কিশোর বয়সে অর্থাত্ ওই সময়ে আমার মা চাননি যে, আমি কোনো প্রেমের উপন্যাস পড়ি। আর সেখানেই ছিল আমার মূল আগ্রহ। তবে সেই বয়সে প্রেমের উপন্যাস আমার চিন্তা, ভাবনা, ধ্যান, ধারণার
মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং দেবদাস-পার্বতীর বিশুদ্ধ প্রেম আমার কৈশোর মনে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। প্রতিহিংসা কিছুটা জন্মেছিল উপন্যাসটি পড়ে, তবে সেটার স্থায়িত্বও কম ছিল। বয়সের প্রভাবে একটু- আধটু যা হয় আর কী। তবে পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু তারও আগে থেকে অর্থাত্ ছোটকাল থেকেই।
২.রাবেয়া খাতুন:
আমাদের সময়টায় মেয়েদের জন্য অনেক কিছু করাটা অসম্ভব ছিল। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি, তো সেই সময়ে আমি লাল চিঠি নামে একটি বই পাই। মূলত সেই বইটা আমার জীবনে অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। সেই সময়ে প্রেমের বইয়ের চেয়ে গোয়েন্দা কাহিনী আমার বেশি ভালো লাগত। এ কারণেই আমি নীহাররঞ্জনের বই পড়তে বেশি পছন্দ করতাম। আমি নীহাররঞ্জনের মতো হতে চাইতাম। কখনও কখনও লুকিয়ে পড়তে গিয়ে মায়ের হাতে ধরা পড়ে যেতাম, তখন মা পাঠ্য বই পড়ার আদেশ দিতেন। কারণ, আমাদের সময়ে বাবা- মায়েরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাত ভালো ঘরে পাত্রস্থ করার জন্য। আজকালকার অভিভাবকরা যেমন পড়ালেখার ব্যাপারে উদার, তারা তা ছিলেন না। নীহাররঞ্জন পড়তে পড়তে যখন তার মতো হওয়ার জন্য লিখতাম, তখন মা খুব বকা দিতেন। আসলে আমার মা চাইতেন না যে, আমি লেখালেখি করি। শুধুমাত্র মেয়ে বলে বাবার সঙ্গে পাটুয়াটুলি যাওয়ার পরও মাত্র আট আনার বিপরীতে দুটা বই কিনে দিতে বাবা রাজি হননি। সেই সময়ে এ বইয়ের জন্য যে মন খারাপ হয়েছিল, তা প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না।
৩.সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী:
আমরা থাকতাম রাজশাহীতে। সেখানে একটা লাইব্রেরি ছিল। সেখান থেকেই প্রতি মাসে একটা করে বই এনে পড়তাম। বই পড়ার জন্য বাসা থেকে কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না। স্কুল জীবনে খুব অল্প বয়সে শরত্চন্দ্রের রামের সুমতি পড়েছি। আমার কৈশোরেও শরত্ খুব নাড়া দিত। রামের কৈশোরের প্রাণচাঞ্চল্য আমার কিশোর বয়সে দাগ কাটত। একাডেমিক বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। কারণ, আমার অভিভাবক মনে করতেন, বাজে আড্ডার চেয়ে বই পড়া অনেক ভালো। কারণ, বই নিদেনপক্ষে মানুষের ক্ষতি করতে পারে না। তবে ছোটবেলায় মোহন সিরিজের বইও পড়েছি। প্রত্যেক মাসেই একটা করে বই নিতাম লাইব্রেরি থেকে।
৪.সৈয়দ শামসুল হক:
আসলে লুকিয়ে আমাকে কখনও পড়তে হয়নি।ছেলেবেলায় পড়ার মধ্যে শিশু শিক্ষা অন্যতম।এছাড়া আলাদা করে বলার মতো তেমন কোনো বইয়ের কথা মনে পড়ছে না। তবে একটু বড় হয়ে মনে দাগ কেটেছে মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য।এছাড়া হাতের কাছে যে বই থাকত, সেটাই পড়তাম। মোটামুটি পড়ার দিকে একটা আগ্রহ সব সময়ই ছিল।
৫.নাসরীন জাহান:
বাসায় পরিবেশ ছিল সব সময় পড়ার। এটা মূলত আমার বাবার জন্য। বাবা চাইতেন আমি সাহিত্য পড়ি ও লেখালেখি করি। আসলে ছোটবেলা থেকে বই পড়ে পড়ে অনেকটা পরিকল্পনা ও পরিবারের ইচ্ছেতেই আমি লেখক হয়েছি। আর লুকিয়ে পড়া বইয়ের কথা বলতে হলে আমি একটা বইয়ের কথা বলব, যেটা আমার ছোটবেলার সময়টাতে খুব নাড়া দিয়েছিল। সেটা হলো ডি এইচ লরেন্স-এর ‘লেডি চ্যাটারলিজ লাভার’
বইটি। বইটি সেই সময়ে বড়দের মধ্যে খুব আলোড়ন তুলেছিল, বড়রা বলত, বইটিতে কিছু অশালীন বক্তব্য আছে। কিন্তু আমি যখন বইটি লুকিয়ে পড়েছি অতটুকু বয়সেও বইটিকে আমার কাছে একটুও অশালীন মনে হয়নি। বইটি পড়ে আমার দু’রকম অনুভূতি হয়েছিল। কখনও ইতিবাচক, কখনও নেতিবাচক। মজার ব্যাপার হলো, সে সময়ে এক রাতে আমি বইটি পড়ে শেষ করেছিলাম। তবে বড় হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি কেন ছোটবেলায় সবাই আমাকে বইটি পড়তে নিষেধ করেছিল।
৬.কেজি মোস্তফা:
স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আমি যখন সপ্তম কিংবা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, তখন ভূগোল ক্লাসে ‘বেঈমান’ নামে একটা বই লুকিয়ে পড়েছিলাম। কারণ, ভূগোল ক্লাস আমার ভালো লাগত না। হঠাত্ স্যারের কাছে ধরা পড়ে গেলাম। স্যার বললেন এত বই থাকতে তুমি বেঈমান পড়ছ কেন? মনে পড়ে, আমি তখন স্যারকে বলেছিলাম, স্যার বেঈমান পড়ছি ঈমানদার হওয়ার জন্য। আমার একথা শুনে স্যার খুবই অবাক হয়েছিলেন; কারণ, এতটুকু একটা ছেলের মুখে এ ধরনের কথা সে সময়ে খুবই বেমানান ছিল। এর কিছুদিন পরে অর্থাত্ আমি তখন নবম শ্রেণীতে, তখন ‘আনোয়ারা’
নামে একটা উপন্যাস লুকিয়ে পড়েছিলাম। সেই বয়সে আনোয়ারা উপন্যাসের প্রেম বিষয়টা আমাকে বেশি টেনেছিল। অর্থাত্ রক্ষণশীল একটি মুসলিম পরিবারের গল্প নিয়ে উপন্যাসটি তৈরি হলেও এর প্রেমের দিকটি সে সময়ে আমাকে খুব টেনেছিল।
৭.বদরুদ্দীন উমর:
আমার ছোটবেলায় বই পড়া নিয়ে পরিবারের কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। এ কারণে কখনও লুকিয়ে বই পড়তে হয়নি। তবে সেই বয়সে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে আমি সেই চরিত্রের মতো হতে চাইতাম। গোয়েন্দা কাহিনী পড়ে সেই চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতাম, তেমনটা হতে ইচ্ছা করত। নীহাররঞ্জনের লেখা খুব ভালো লাগত। বাড়িতে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থাকার কারণে পছন্দের বইটি খুঁজে নিতে খুব সমস্যা হতো না। আবার কখনও ‘পথের পাঁচালি’র অপু হতে ইচ্ছা করত। ছেলেবেলায় নজরুলের ‘লিচু চোর’ আবৃত্তি করে পড়তাম, খুব ভালো লাগত।
৮.ফয়েজ আহমদ:
আসলে আমাদের সময়ে লুকিয়ে পড়ার জন্য তেমন বই আমাদের নাগালের মধ্যে ছিল না। তাই
লুকিয়ে পড়ার জন্য তেমন বই আমি পাইনি। তাছাড়া বাড়ি থেকে বই পড়ার উপর কোনো বিধিনিষেধও ছিল না। তবে আমাদের সময় আর এখনকার সামাজিক অবস্থার অনেক তফাত্। আজ একটা বই খুবই স্বাভাবিক আকারে বাজারে পাওয়া যায়, বইমেলা হয়, ভালো- মন্দ সবার লেখাই ছাপা হয়, কিন্তু গত শতাব্দীর ৩০-এর গোড়ার দিকের সেই সময়টা মোটেই এমন ছিল না। তখন আমি সপ্তম কিংবা অষ্টম শ্রেণীতে, ‘কালো ভ্রমর’
নামে একটা বই তখন পড়ি, পাঠ্য বইয়ের বাইরে এ বইটি সে সময়ে আমার মনে খুব দাগ কেটেছিল, তবে সেটা কিন্তু আমাকে লুকিয়ে পড়তে হয়নি। এছাড়া নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা সেই বয়সে আমার মনে খুব দাগ কেটেছিল। একটা ভয়ানক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল আমার মধ্যে সেই বয়সে বিদ্রোহী কবিতা পড়ে।
৯.সাযযাদ কাদির:
টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী হাইস্কুলে আমি তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। ভালো ছাত্র হওয়ার সুবাদে সব সময়ই ক্লাসে প্রথম হতাম। ধর্ম রাজনীতির প্রতি ছিল অগাধ আগ্রহ। এ কারণেই তখন আমার বেশ কয়েকজন সিনিয়র আমাকে দেশ রাজনীতি সম্পর্কে জানতে আমাকে একটি বই দেন, বইটি দিয়ে আমাকে বলা হলো এটা একটা বিপজ্জনক বই, এটা সব জায়গায় দেয়া যাবে না। তখন তারা নির্দিষ্ট একটা দিনে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় আমাকে যেতে বললেন ওই বইটি দেয়ার জন্য।যথারীতি আমি গেলাম এবং বইটি নিয়ে এলাম। গোগ্রাসে আমি বইটি শেষ করলাম। বইটির নাম ছিল ‘ছোটদের অর্থনীতি’। সেই বয়সে এ ধরনের বই পড়াটা বাড়ি থেকে নিষেধ ছিল বলে আমাকে সেটি লুকিয়ে পড়তে হয়েছিল। মূলত সেই বইটি পড়েই আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসে। আমি ধর্ম, রাষ্ট্র, রাজনীতি সম্পর্কে বুঝতে পারি এবং মার্ক্সবাদী আদর্শের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হই।
১০.আল মাহমুদ:
আসলে আমার পড়ার উপর কোনো বাধানিষেধ ছিল না। খুব বই পড়তাম আমি, তবে কোন বইটা প্রথম পড়েছি, সেটা আমার মনে নেই। তবে আমার এত বই পড়া দেখে আমার মা বলেছিলেন, পড়তে পড়তে তুই অন্ধ হয়ে যাবি এবং সত্যি তাই পড়তে পড়তে একটা বয়সে এসে আমি অন্ধ হয়ে যাই। আমার শৈশব, অর্থাত্ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালমোহন পাঠাগারে বই পড়ে আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি, বইই ছিল আমার জীবনের সবকিছু। পারিবারিক বাধানিষেধ যেটা ছিল, সেটা হলো পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়া, কিন্তু সেটা আমার পড়ার ইচ্ছাকে দমাতে পারেনি। কারণ, এই বইই আমাকে কবি বানিয়েছে। আমি আজকের কবি এই বই পড়ার জন্য। পড়ার অদম্য ইচ্ছাও আমার এই অবস্থানের মূল কারণ। কিছু আদর্শিক, সমাজতন্ত্রবাদী বই আমার জীবনে ভূমিকা রেখেছিল। তবে সেই ধ্যান- ধারণা থেকে আমি পরবর্তী সময়ে সরে এসেছি। বিশেষ করে ধর্মীয় দিকে।
১১.বেলাল চৌধুরী:
ছোটবেলায় পাঠ্য বইয়ের বাইরে লুকিয়ে পড়েছি থ্রিলারধর্মী বই। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি লুকিয়ে লাইব্রেরি থেকে বই নিতাম, সেই বই রাতে বালিশের তলায় পাঠ্য বইয়ের নিচে লুকিয়ে রেখে পড়তাম, যাতে দেখা না যায়। নির্দিষ্ট করে বইটির নাম মনে নেই, তবে সেটা ছিল একটা থ্রিলারধর্মী বই সেটা মনে আছে। পরিবার থেকে অপাঠ্য বই পড়ার বাধা ছিল এই কারণে যে, অভিভাবকরা চাইতেন যেন সব সময় পাঠ্যবই পড়ি। কারণ, তাদের ধারণা ছিল অপাঠ্য বই কোনো কাজে লাগে না। তবে আমার ওই বয়সে গোয়েন্দা কাহিনীর বইগুলো আমাকে খুব টানত। কল্পনায় গোয়েন্দা কাহিনীর চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতাম। তাই সেই বইগুলোই বেশি পড়তে চাইতাম।
বিষয়: বিবিধ
৩৫৪৭ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেদিন ইয়াছিন স্যার হয়তো আপনাকে বলেছিলেন, বই পড়া ভালো তবে সেটা ক্লাশে নয়, সামনে থেকে এরকম আর করবা না, ঠিক আছে? আপনি মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে বললেন জীঁ ঠিক আছে। এরপর বইটা ফেরৎ দিয়ে দিলেন হয়তো!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। স্টিকি করা যায়।
তবে এই রকম কোন অভিজ্ঞতা আমার নাই। কারন বই পড়া বাসায় কোন নিষেধ ছিলনা!
গ্রামের ছেলে হিসেবে পড়া অবস্হায় থাকলে কাছেই আসতেন না অভিভাবকরা সহজে!
গল্প-উপন্যাস-নাটক বেশী পড়া হতো!
নসীম হিজাজী- শফি উদ্দিন সরদার- সাইমুম পড়তাম হাতে পেলেই!
লেখা দারুন লাগল
তবে আব্বু আম্মুর বকা তেমন স্বরণে আসছে না
তবে বেশ ভালই লাগে এখনও ভার্সিটির ক্লাসে মাথা না ঢুকলে বই ঘাটতে
।
আপনার শিক্ষক যদি আমার বাবার মত হয়ে থাকেন তাহলে তিনি আপনাকে বইটি ফেরত দিয়ে কিছু ভাল বইয়ের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে পড়ার তাগিদ দিয়ে থাকবেন। কি ঠিক বললাম?
মন্তব্য করতে লগইন করুন