হারিয়ে যাচ্ছে -----বাঙ্গালী সংস্কৃতির চিরা চরিত দৃশ্যপট লাঙ্গল ও জোয়াল।
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০১:৫৬:৫৭ দুপুর
হারিয়ে যাচ্ছে -----বাঙ্গালী সংস্কৃতির চিরা চরিত দৃশ্যপট লাঙ্গল ও জোয়াল।
>>বাড়ির কাছে হাল চাষ, ঘন ঘন পানি পিপাস<<
উল্লেখিত প্রবচন টি। ইতিহাসের তৈরি এই প্রবাদ বাক্যগুলোর গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের পূর্ববর্তী মানুষরা আমাদের জন্য বাক্যগুলো গঠন করেছেন।
আজ আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবনেও এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। লেগেছে কৃষকের জীবনে।তাই তো কৃষি আন্দোলনের ছোঁয়ায় দেখে যায় বেশ পরিবর্তন। তাই আর সকালবেলা (বর্ষা মৌসুমে) পাকা কাঁঠাল দিয়ে- পান্তা খেয়ে কাধে নাঙ্গল-জোয়াল আর জোড়া গরুর দড়ি হাতে মাঠে আর যেতে দেখা যায়না কৃষকদের। জমি চাষের হাজার বছরের পুরানো কৃষি প্রযুক্তির(লাঙ্গল ও জোয়াল) পুরানো ধারা হারিয়ে জাচ্ছে।তার জায়গা দখল করছে নতুন প্রজুক্তি।
কৃষিপ্রধান আমাদের এই দেশ। বলা হয়ে থাকে কৃষকই জাতির মেরুদণ্ড। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ও গোয়াল ভরা গরু, গ্রাম বাংলার কৃষকদের প্রাচীন ঐতিয্য হলেও বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়া ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারনে, সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে । আবহমানকাল থেকে বাংলার কৃষক নানা ধরনের উপকরণ দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আসছে। জমি চাষ করতে লাঙ্গলের ব্যবহার সবার জানা।এক সময় বাংলার কৃষক শুধুমাত্র এই লাঙ্গলের সাহায্যেই অধিকাংশ জমি চাষ করত। গরু দিয়ে হাল চাষ করা বাঙ্গালী সংস্কৃতির চিরা চরিত দৃশ্যপট থাকলেও তা আজ কাল তেমন একটা চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগায় সেই পুরনো প্রথা গরু দিয়ে ফসলি জমিতে চাষাবাদ এখন আর খুব একটা হয় না; চোখেও পড়ে না সেসব পুরনো দৃশ্য। প্রযুক্তির আগমনে হারিয়ে যাচ্ছে জমিতে হালচাষে গরুর ব্যবহার। এছাড়া কৃষক পরিবারেও গরু পালার প্রচলন প্রায় উঠেই যাচ্ছে।গরু পালন এখন হয়ে উঠছে খামার প্রকল্পে।
গ্রামবাংলায় লাঙ্গলের এই ব্যবহারে রয়েছে অনেক চমত্কার তথ্য। লাঙ্গল সাধারণত দুই প্রকারের-
সেয়ামী
ও বাংলা লাঙ্গল।
>> হালঃ
"'হাল'" বা লাঙল এক ধরনের যন্ত্র যা সাধারণত কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়। বীজ বপন অথবা চারা রোপনের জন্য জমির মাটি তৈরি করবার ক্ষেত্রে হাল ব্যবহার করা হয়। কৃষি কাজের জন্য ব্যবহৃত এটি অন্যতম পুরাতন যন্ত্র। এটির প্রধান কাজ
হলো মাটিকে ওলট-পাল্ট করা এবং মাটির দলাকে ভেঙ্গে দেয়া যাতে করে মাটির নিচের লেয়ারের পুষ্টি গুন গুলো উপরে উঠে আসতে পারে এবং একই সাথে মাটির উপরের আগাছা ও ফসলের অবশিষ্টাংশ নীচে চাপা পরে জ়ৈব সারে পরিনত হতে পারে। এটি মাটিতে বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়ায় এবং মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে। চাষাবাদের মৌসুমে গ্রামে গ্রামে গরু নিয়ে হালচাষের দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দীর্ঘ সময়ে জমিতে গরুর লাঙ্গল দিয়ে কৃষক বা কৃষি শ্রমিক ক্ষেত প্রস্তুত করতেন। তবুও তাদের যেন ক্লান্তি ছিল না। যাদের হালের বলদ ছিল তাদের গর্বই ছিল অন্যরকম। তবে ক্ষুদ্র চাষীদের মধ্যে যাদের গরু ছিল না, তাদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হতো। অবশ্য সেই সমস্যার সমাধান হতো স্বজনদের সহযোগিতায় কিংবা টাকার বিনিময়ে গরু /হাল ভাড়া নিয়ে।
>> যা প্রয়োজনঃ
হাল আগে সাধারণত বলদ, ষাঁড়, মহিষ অথবা ঘোড়া দ্বারা পরিচালিত হতো। লাঙ্গল দিয়ে হাল-চাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও একজোড়া গরু অথবা মহিষ প্রয়োজন হয়। গরুগুলো হতে হয় বেশ প্রশিক্ষিত, যা হালের গরু হিসাবে পরিচিত। দুই গরুর দুই কাঁধে বসানো হয় জোয়াল। গরুগুলো যাতে পাশের ক্ষেতের কিছু খেতে না পারে সেজন্য ব্যবহার করা হয় এক ধরনের মুখবন্ধনী( যাকে বলে গুমই/গুমাই/গুমি) গরুগুলো শাসন করার জন্য এক ধরনের বেত বা লাঠি ব্যবহার করা হয়, যা হাল্যে ছোঁয়া/ পান্ঠি বলে পরিচিত। জমি চাষ করার সময় গরুকে বিভিন্ন সংকেত শেখাতে হয়। এসব সংকেত(যা যা—সামনে চলার ইঙ্গিত, ডায়ে ডায়ে, বাহে বাহে, চু চু/শ্চু শ্চু/আহ আহ— যা আস্থে বুঝাতে) শিখিয়ে গরুকে লাঙ্গল টেনে চাষ করার জন্য বেশ কিছু প্রশিক্ষণ দিতে হয়।
>> পেশা হিসেবে হাল চাষঃ
এক সময় বাণিজ্যিক ভাবে হাল চাষ করতে অনেক কৃষক বাড়ীতে গরু পালন করতো। কেও কেও(গৃহস্থ) এর ফলে গড়ে তুলত গরুর বাতানও (পাল) । লাঙ্গলের হাল যারা পরিচালনা করত তাদের রাগময় ভাষায় হাইলয়া বলা হতো। সেই হাইলারা ভোরে উঠে হাল চাষের সব প্রস্তুতি সেরে কোমরে গামছা বেঁধে এক হাতে হালের বলদের রশি ধরে কাঁধে লাঙ্গলের সাথে জোয়াল ও মই বাঁধিয়ে মাঠে যেত জমি চাষ করতে। কেউ কেউ আবার সঙ্গে নিত, সেই আগের যুগের হুক্কা। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে তাদের হাল চাষ।হাল চাষিরা ঝড়- বৃষ্টি আর রোদ গরম উপেক্ষা করে তারা সব সময় থাকত কাজে ব্যস্ত। হালচাষিরা গরমে নিকটতম গাছের ছায়ায় বসে মনের সুখে টানত বিড়ি আর মাথায় বেঁধে রাখত রঙ্গিন জাতের গামছা। একটু ঘামলে সঙ্গে সঙ্গেই গামছা দিয়ে মুছত মুখের ঘাম।
গ্রাম পাড়া মহল্লায় শুধু জমিতে হাল চাষ করার জন্য কিছু মানুষ গবাদি পশুর হাল/ গো-হাল চাষকে পেশা হিসেবে ব্যবহার করত। অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয় নির্বাহ হতো। অনেক সময় খন্ড খন্ড ভাবে বিভক্ত জমিতে হাল করতে গরুই ছিল একমাত্র মাধ্যম। গরু দিয়ে হাল চাষে সময় লাগলেও জমি মালিকরা অপেক্ষা করে হলেও পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চাল চাষের ব্যবস্থা করতো। সিরিয়াল মতো তারা জমিতে হাল চাষ দিয়ে নিত। হালের গরু কিনে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করেই তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে পেত। আজ সেই পেশা যেমন বিলুপ্ত তেমনি হারিয়ে যাবার পথে গ্রাম বাংলার বাঙ্গালী সংস্কৃতির চিরা চরিত দৃশ্যপট লাঙ্গল ও জোয়াল।তবে এর মাঝেই গ্রামের অনেক কৃষক জমি চাষের জন্য গরু দিয়ে হাল চাষের পদ্ধতি টিকিয়ে রেখেছে।
>>হাল চাষের ইতিহাসঃ
মানবসভ্যতার শুরুতে বলতে গেলে খাবার- দাবারের নিশ্চয়তা ছাড়া মানুষের কাছে বাড়তি আর কোনো চাহিদা ছিল না। তখন খাবার বলতে গাছের ফলমূল আর পশুপাখির মাংসই প্রধান ছিল। ক্রমে মানুষ বাড়তে থাকলে দেখা দেয় খাদ্য ঘাটতি। ফলে ফসল ফলানোর দিকে মানুষকে নজর দিতে হয়। রপ্ত করতে হয় শক্ত মাটি ঝুরঝুর করে ফসল ফলানোর কৌশল। প্রাচীনকালে শুধু শক্ত কিছু দিয়ে মাটি খুঁড়ে তাতেই বীজ রোপণ করতে হতো। হালচাষ বলতে ছিল ওইটুকুই। এরপরই প্রয়োজনের তাগিদে যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় বারোশ' বছর আগেই মানুষ উদ্ভাবন করে লাঙল। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি দুটি প্রাণী রেখে, দুটির ঘাড়ের ওপর জোয়াল চেপে লাঙলের লম্বা দণ্ড সেই জোয়ালের সঙ্গে বেঁধে শুরু করে ভূমিতে হালচাষ। তবে মাটি ভালোভাবে কর্ষণ করে অর্থাৎ লাঙলের সাহায্যে ঝুরঝুর করে ফসল ফলানো মানুষ শুরু করে মধ্যযুগে এসে। ভারী লাঙল দিয়ে মাটি ঝুরঝুর করে ফসল ফলানোর কাজটি প্রথম শুরু হয় ইউরোপের উত্তরাঞ্চল থেকে। অবশ্য অনেক গবেষকই বলে থাকেন, চীনে হানদের শাসনামলে [খ্রিস্টপূর্ব ২০২ থেকে ২২০ খ্রিস্টাব্দ] মানুষ প্রথম লাঙল ব্যবহার করে ভালোভাবে জমি চাষ শুরু করে। কাঠ দিয়ে লাঙল তারাই প্রথম তৈরি করে। লাঙলের ফলা তৈরিতে ব্যবহার করে লৌহদণ্ড। জোয়াল তৈরিতে ব্যবহার করত কাঠ। একজন হেলে জমিতে একজোড়া গরু, মহিষ, ঘোড়া কিংবা গাধা পাশাপাশি রেখে প্রথমে চেপে দিত জোয়াল। তারপর লাঙলের লম্বা কাঠের দণ্ড। এরপর জমির একপাশ থেকে অন্যপাশ, অন্যপাশ থেকে আবার আগের পাশ করে ভূমি কর্ষণ করত। বড় বড় চাপা ওঠা মাটি কয়েকদিন রোদে শুকাত। এরপর আবার চাষ করে মাটি ঝুরঝুরা করত। সেই মাটিতে বীজ বপন করে ফলাত প্রচুর ফসল। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ক্রমে বেড়ে গেলে হালচাষের এ প্রথাটি সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
>>হালোই গান ও হাল চাষঃ
কৃষকরা হাল বাহিতে বাহিতে গেয়ে উঠেন নানা ধরনের গান। গানের তালে তালে হুরররর যা যা ডাহে ডাহে বায়ে বায়ের সঙ্গে চলে গানের সুর। আর এই গান আবার পরিচিত হালোই গান নামে।(গানটির ইতিহাস হতে যানা যায় ‘হাল’ বা নাঙ্গল থেকে এই গানের নামকরণ হয়েছে। এটি কৃষি সমাজের গার্হস্থ্য জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই যারা হাল চাষ করে বা ‘হালি’ বা ‘হালোই’ তাদের গান বলেই এর নাম ‘হালোই গান’ হয়েছে।)
জমিতে হাল চষতে চষতে লাঙল টানা গরুর লেজ মোচড়াতে মোচড়াতে গান গাইতেনঃ
>> চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়
আজ যে রাজাধিরাজ কাল
সে কাঙাল ভিক্ষা চায়!
>> বেলা দুই প্রহরের কালে
বাঁশি বাজলো রাই বলে।
আমি কেমনে যাই বলো
ওই কদম্বের তলে ॥
বেলা দুই ... ... ...রাই বলে ॥
বাঁশির হলো মরণ দশা
ননোদিনী আমার পাশে বসা।
আমার মনের সকল আশা
দিলাম জলে এই অকালে ॥
বেলা দুই ... ... ...রাই বলে ॥
মরণ নাই তোর সর্বনাশা
আমার হলো মরণ দশা।
কুল গেলো আর ঘর গেলো মোর
দেখে পাড়ার লোকে বলে ॥
বেলা দুই ... ... ...রাই বলে ॥
>> বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে হাল দিয়ে চাষঃ
কৃষিকাজে লেগেছে প্রযুক্তির ঢেউ।এক সময় কৃষকের কাছে ‘হালের বলদ’ ছিল মূল্যবান সম্পদ। প্রযুক্তির কল্যাণে বলদের সেই হালেরলাঙ্গলের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে ‘কলের লাঙ্গল’। তাই কৃষক পরিবারও ছুটছে সেই প্রযুক্তির পেছনে। এটির ব্যবহারে কৃষকরা যেমন উপকার পাচ্ছেন, তেমনি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন প্রযুক্তির গড়া যন্ত্রের প্রতিই!কৃষিকাজে এখন জমি তৈরি(পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর),ধান রোপণের যন্ত্র , কীটনাশক ছিটানোর , সার প্রয়োগের, নিড়ানি,ধান কাটা, মাড়াই(হার্ভেষ্টার),ধান শুকানোসহ যাবতীয় কৃষি কাজই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। আর কৃষকরাও ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন।
আশির দশকের শুরুতেই আমাদের দেশের কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি শুরু হয় সামান্য। বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষিবিদ বিজ্ঞানীরা কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের কাজ হাতে নেয় আশির দশকের গোড়ার দিকে। পরে উন্নত ধরনের সংস্করণ করতে থাকে ধীরে ধীরে নব্বইয়ের দশকে তার পরিধি ব্যাপক আকার ধারণ করে। যা বর্তমানে ২২ ধরনের যন্ত্রপাতি কৃষি কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে কালের বিবর্তনে বদলে যায় আর বদলে যেয়ে আসে গরু টানা লাঙ্গলের পরিবর্তে আধুনিক কৃষি কাজে ব্যবহারের যন্ত্রপাতি।
প্রায় গৃহস্থ পরিবারেই এখন গরু পালা হয় না। কৃষি পরিবারে গরু না থাকায় ভোরে মাঠ চষে বেড়ায় না কোনো রাখাল বালকও।শোনাও যায়না তাদের বাঁশির শুর। কিংবা সন্ধ্যার গোধূলিলগ্নে সেই রাখাল বালকও গ্রামের মেঠোপথ ধরে বাড়ি ফেরে না কেবল প্রযুক্তির উৎকর্ষতায়!
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখন কৃষিকাজে গরুর পরিবর্তে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, কৃষকরাও এটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। আর কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেই গরু, লাঙল, জোয়াল ও মই বিলুপ্ত হতে চলেছে। জমিতে কৃষকের গরু, লাঙল ও মই দিয়ে চাষাবাদের দৃশ্য এখন যেন শুধু অতীত স্মৃতি। চাষাবাদে বহুল ব্যবহৃত বাঁশের তৈরি জোয়াল,মই , কাঠের তৈরি নাঙ্গল ও লোহার তৈরি ফলা আজ বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদের অন্যতম উপকরণ হিসেবে গরু, মই ও লাঙল ছিল কৃষকের একমাত্র ভরসা। এক সময় গরু ছাড়া গ্রামবাংলায় চাষাবাদের কথা চিন্তাই করা হতো না। কিন্তু কালের পরিক্রমায় চাষাবাদে এসেছে প্রযুক্তির সব উপকরণ। আর প্রযুক্তির কাছে হার মেনে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ওইসব লাঙল, জোয়াল, মই এবং হালের বলদ। এসবের ব্যবহার
স্বল্প আয়ের কিছু কৃষক পরিবারে কোনোরকমে টিকে থাকলেও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় কৃষিকাজে ঠাঁই করে নিয়েছে পাওয়ারটিলার ও ট্রাক্টর। এর ফলে কৃষকরা আগের তুলনায় সময়, শ্রম ও অর্থ উভয়ই সাশ্রয়ী হচ্ছেন। আধুনিক যুগে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর অনেক কৃষক পরিবার এটা ক্রয় করতে হিমশিম খেলেও বর্তমানে কৃষকদের কাছে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যন্ত্রটির ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমানে চাষাবাদের সব ধরনের কাজেই এটি ব্যবহার করছে কৃষক। অপরদিকে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কেউ কেউ আবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাওয়ার টিলার কিংবা ট্রাক্টর ভাড়াও দিচ্ছেন। এতে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এখনও গ্রামগঞ্জের অনেকেই কৃষি মৌসুমে গ্রাম্য হাটবাজারে বিক্রির উদ্দেশে চাষাবাদের পুরনো দিনের কালের সাক্ষী লাঙল, জোয়াল ও মই ইত্যাদি সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে বসেন।
যাঁরা এগুলোকে পেশা হিসেবে নিয়ে তৈরি করছেন, তাঁদের অনেককেই এ জন্য বেশিরভাগ সময় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে। তখনকার সময় এটিও ছিল কারও কারও পেশা। যার মাধ্যমে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। বেশ কিছু কাল আগেও গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা জমিতে চাষাবাদে হালের বলদ, লাঙল ও মইয়ের ব্যবহার ছাড়া জমিতে চাষাবাদের কথা কল্পনাও করতে পারত না। তখন লাঙল-মইসহ কৃষি সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত থাকত গ্রামাঞ্চলের অজগ্র শ্রমিক। সেই বাঁশের তৈরি মই যেন আজ ঐতিহ্য বহন করা আর স্মৃতি জাগানিয়া শুধুই কালের সাক্ষী।বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই চাষাবাদের গ্রামবাংলার পুরনো লাঙল, জোয়াল, মই ও গরুর ব্যবহার বন্ধসহ এর বিলুপ্তি ঘটবে এবং এক সময় তা কালের সাক্ষী হিসাবে স্থান পাবে কোন জাদুঘরে অথবা শুধুমাত্র বইয়ের পাতায়।
>> কারিগরদের দুরাবস্থাঃ
লাঙ্গল তৈরির মিস্ত্রিদের এখন অবস্থা সঙ্গিন। তাদের হাতে নেই কাজ।কারন এখন আর তেমন বিক্রি হয়না লাঙ্গল। তাই কাজ না থাকায় অনেকে অন্য পেষায় জুক্ত হচ্ছেন। কেও বা এখনো ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছেন এই পেশা।
>> দরদামঃ
লাঙ্গল বিক্রেতারা তাদের তৈরি লাঙ্গল বিক্রি করত নানা দামে। এলাকা ভেদে এর দামের হেরফের হলেও মোটামুটি সব এলাকায় বিক্রি হত এই দামে।
সেয়ামী লাঙ্গল ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা
ও বাংলা নাঙ্গল প্রতিটি ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা
তবে এখন আর সেই বাজার নেই লাঙ্গল বিক্রয়। গত ১০-১২ বছরে লাঙ্গল বিক্রির হার শতকরা ৮০-৯০ ভাগ কমে গেছে।
>> হাল ও যন্ত্র নির্ভর চাষের তুলনামূলক চিত্রঃ
একসময় যে জমিতে ৪/৫টি হালের লাঙ্গল দিয়ে সারাদিন যে পরিমাণ জমি চাষ করা যেত, তা এখন ‘কলের লাঙ্গল’ দিয়ে ২/৩ ঘণ্টাতেই করা যায়।
এখন কেবল জমি চাষই নয়, জমিতে নিড়ানি, ধান মাড়াই এসব কাজও যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয়। ফলে সময় কম লাগছে। ফসলও পাওয়া যাচ্ছে সঠিকভাবে। এছাড়া উন্নত বীজ ও সার ব্যবহার করায় ফলনও পাওয়া যাচ্ছে বেশি। যে জমিতে আগে ৭/৮ মণ ফসল হতো, সেখানে এখন আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় ৩৫/৪০ মণ ফসল উৎপন্ন হচ্ছে ।
বিষয়: বিবিধ
৩১২৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ট্রাক্টর দিয়ে চাষ রাতেও করা যায়, যা ২০ বছর আগে চিন্তাও করা যেতনা। এত সুন্দর পোস্ট কেন স্টিকি হয় নাই? আশ্চর্য! পোস্টটি স্টিকি করবার আবেদন করছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন