গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব:১১
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৩ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:২৮:৩৮ সকাল
টিপ খেলা বা বগের ঠোকা খেলা
পর্ব:১০
ছন্দ বা কবিতার উপকরণে বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে ছোট ছেলে মেয়েদের মাঝে জনপ্রিয় একটি খেলা। এই খেলার নাম অঞ্চল ভেদে নানা রকম কেও বলে টিপ খেলা, কেও বা বগের ঠোকা। ছোটদের জন্য খুব মজার ও আনন্দদায়ক এই খেলা। খেলার জন্য ৪-৫ জন হলে ভাল হয়। দিনের যে কোন সময় এই খেলা যে কোন জায়গায় খেলা যায়।
* খেলোয়াড় সংখ্যা: ৪/৫+ জন।
* খেলার ঋতু: যে কোন ঋতু (বর্ষায় ভাল জমে)
* খেলার সময়: যে কোন সময়।
* খেলার ধরণ: ইনডোর
* খেলার স্থান: ঘর, বারান্দা, বৈঠকখানা।
* খেলার প্রকৃতি: বিনোদন প্রধান খেলা।
এই খেলায় বিভিন্ন ছন্দের ব্যবহার হয়ে থাকে। অঞ্চল ভেদে এর ভিন্নতাও দেখা যায়।
ছন্দ-১.
অগের টগের বগের বাঁশি
কাঙ্গাল লয়ের কাঙ্গাল কাশি
দয়ার আগে পিলি পবন
হ্যাঞ্চা লবণ ত্রাস।
ছন্দ-২.
ইন্টি বিন্টি ছিন্টি ছাও
অটি আছে মাগুরের মাও
মাগুরের মাছ নড়ে-চড়ে
কাঁকড়া এ্যাসা কামড় মারে
চল কাকা হাটে যাই
গাই দুয়ে ভাত খাই
গাইয়ের নাম হামলা
বাছুর দিয়ে সামলা।
ছন্দ—৩
চম্পা ফুলের গন্ধ মৌ মৌ করে ,
হাতে তালি পিঠে কিল
এবার তোর আঙ্গুল তোল।
ছন্দ—৪
হলদি গুটি গুটি
চিরা কুটি কুটি।
আজ ফুতলির বিয়া
ফুতলিরি নিয়া যাবে
ঢাকে বাড়ি দিয়া।
ফেসী কান্দে ওসী কান্দে
কান্দে মাইয়ার মা
হোলা বিড়াল কাইন্দা মরে
ঢোক মেলায় না।
ছন্দ—৫
ফুলানো ফলানো ফুলানো টি
এ্যাকে দোগ্যানোটি / এ্যাকে তেগ্যানো টি
ঝ্যামানো ঝ্যামানো ঝ্যামানো টি
আটি টি টি / নাং-গোনাটি।
এ্যাক পইসা ত্যালের দাম
মনোরঞ্জন বেরাম্মন।
আদ্দু ভুবন পদ্দোবাসি
হে সুজ্জো তুমি সাককি।
হাইরের গলায়
পাঁচ পাট্টি
তোল ঝাটকি।
>> খেলার নিয়ম কানুনঃ
এই খেলার প্রথম ধাপ সাক্ষী বাটা। সাক্ষী বাটার নানা নিয়ম অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন । তার যে কোন একটি দিয়ে সাক্ষী বেঁটে প্রথমে এক জন নেতা নির্বাচিত করতে হবে। তারপর খেলোয়াড়রা টেবিল, চৌকি, খাট অথবা মাটিতে আঙুল ফাঁক করে দুই হাতের তালু রাখবে। নেতা রাখবে এক হাত। সবার হাত রাখা হলে এবার উপরের যে কোন একটি ছন্দ বা কবিতা ( ঐ দেখা যায় তাল গজায়শ যে কোন জনপ্রিয় কবিতা দিয়েও খেলা যায়) মুখে বলতে বলতে/মুখে কাটতে কাটতে নেতা তার অন্য হাতের তর্জনী ( প্রজাপতির বা মৌমাছির মত এক ফুল হতে অন্য ফুলে বসার মত) অন্য খেলোয়াড়দের হাতের এক এক আঙ্গুল ছুয়ে যাবে/ছন্দের প্রতিটি মাত্রায় সঙ্গীদের রাখা আঙুল স্পর্শ করবে।
যে আঙুলে যেয়ে ছড়া শেষ হবে, সে আঙুল ভাঁজ করে গুটিয়ে দিতে হবে। পরের আঙুল থেকে আবার ছড়া কাটা শুরু হবে। এভাবে শেষ পর্যন্ত থাকবে মাত্র দু’টি আঙুল। দুই আঙুলের মধ্যে একইভাবে ছড়া কাটা হবে এবং শেষ পর্যন্ত যার আঙুল অবশিষ্ট থাকবে সে হবে বুড়ি। বুড়িকে সবাই দশটি করে মৃদু কিল দিবে। কিল খাওয়ার পর বুড়িই হবে পরবর্তি নেতা।
সে একই প্রক্রিয়ায় খেলা চালিয়ে নিবে। যতক্ষণ ভাল লাগে, একই প্রক্রিয়ায় চলতে থাকবে খেলা। বর্ষার দিন অথবা যে কোন অলস অবসরে ঘরে বসে খেলার জন্য এটি একটি চমৎকার বিনোদনের খেলা।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন