পরওয়ানা ************
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:৫৩:০৫ দুপুর
পরওয়ানা
************
প্রথম পর্ব
-------------
জন স্যাডিন।
দীর্ঘদেহী মানুষ সে। লালচে হ্যাটের ব্রিমের নিচে রোদে পোড়া মুখ কেমন শান্ত নির্লিপ্ত। চোখ জোড়া কালো কুচকুচে , আর সবসময় কেমন একটা হাসি হাসি ভাব খেলা করে।প্রশস্ত কাঁধ, সুঠাম দেহের সঙ্গে মানানসই লম্বা হাত। ভেষ্টের নিচে হালকা আকাশী সার্ট পরনে, গলায় কাল ব্যান্ডনা পেঁচানো। পায়ে রং জ্বলা বুট। কোমরে দুই পাশে হোলস্টারে বাঁধা নেভি কোল্ট। আর পিছনে বেডরোলের সঙ্গে বিশেষ ভঙ্গিতে বাঁধা স্ক্যাবার্ডে স্পেন্সর পয়েন্ট ফাইভ-সিক্স রাইফেল।
সান্তাফে পার হয়েছে ও চার দিন হল। শুনেছে সামনেই ছোট একটা শহর আছে। ওর গন্তব্য সেখানেই। অনুমান মতে শহরটার খুব কাছে পৌঁছানোর কথা ওর আজ। আর তখনিই দুই তিন মাইল দূরে শহরের ঝাপসা বাড়ি ঘরের আভাস ।
ওহ আর একটি নতুন শহর, নতুন মানুষ, নতুন কিছু দেখা। মনে মনে কেমন এক ধরনের থ্রিল অনুভব করল জন স্যাডিন। সঙ্গে মনের অতি পরিচিত ভাবনা ---
ওর ভবঘুরে দীর্ঘ পথ চলা শেষ হবে কি এই কাঙ্ক্ষিত শহরে?
না আবার ছুটে চলা।
ক্যানসাস সিটি ,এবিলিন, ডজ সিটি মাঝে আরও বেশ কয়েকটা ছোট বড় শহরে ওর পায়ের ধুলো পড়েছে প্রায় এই এক বছর হতে চলা সময়ে।
চারদিন আগে সান্তাফেতে কিছু খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছে জন । ওর টার্গেট নেই এখানে। তবে এমন কিছু প্রমাণ পেয়েছে যা প্রমাণ করে মাস তিনেক আগেও সান্তাফেতে দেখা গেছে টার্গেট কে। তার পর স্রেফ উধাও হয়ে গেছে। কারও কাছে আর কিছু জানতে পারে নি । তাই আবার বের হয়ে পড়েছিল।
আর সামনেই ওর কাঙ্খিত রিক সিটি। জনশূন্য শহরটার একমাত্র ধূলি-ধূসর রাস্তা। দূর হতে কেমন মরা মরা খাঁ খাঁ নির্জন লাগছে শহরটাকে। ভর দুপুর বলেই কি?
বাতাসে সূর্য তাপের দাহ। মাথার উপর সূর্যও যেন আগুনের গোলা নিক্ষেপ করে চলেছে।
শহরের মাঝ বরাবর এসে জন তার সোরেল ঘোড়া সহ থেমে দাঁড়াল।পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে চারপাশ দেখছে জন ।
এই সময় শহরের নিরবতা ভেঙ্গে খান খান করে রাস্তার অদূরে একটি নেড়ে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ওর উপস্থিতি জানিয়ে দিল শহরময়।
আসলে শহরটা দেখার ফাঁকে ফাঁকে খাবার পাওয়া যায় এমন কুকশ্যাক আর আস্তাবলটা খুঁজছে।
কারণ পেটে আগুন জ্বলছে ক্ষুধায়।সেই সূর্য উঠার আগে শুকনো জার্কি আর কড়া এক কাপ কফি খেয়েছে।
সোরেলটাও কাহিল। নিজের আর ঘোড়ার জন্য পানি আর খাদ্য ছাড়া ওর মাথায় এখন আর অন্য কিছু কাজ করছে না। একপলকে দেখা শহরটাকে তেমন সমৃদ্ধ মনে না হলেও খারাপও না। পশ্চিমের গড়পড়তা শহরগুলির মতই।
ঘোড়াটাকে হাঁটিয়ে আস্তাবল লিখা সাইনবোর্ডের দিকে এগিয়ে চলল জন। চলার ফাঁকে পকেট হতে দোমড়ান একটা সিগেরেট ধরিয়ে গল-গল করে নাকমুখ দিয়ে ধোয়া ছেড়ে দিল। আর কেমন এক প্রস্থ স্বস্থির ভাব ফুটে উঠল চোখে মুখে। আস্তাবলে বৃদ্ধের কাছে ঘোড়াটা গছিয়ে সামনের স্টার স্যালুনে গিয়ে ঢুকে পড়ল জন।
(চলমান---------------)
নতুন শব্দঃ
হ্যাট-—টুপি
ব্যান্ডনা--- রুমাল বিশেষ
ভেষ্ট—পাতলা সাটের উপর পরার এক ধরনের জামা। মুজিব কোটের মত।
সোরেল—এক জাতের ঘোড়া।
আস্তাবল—ঘোড়া রাখার স্থান ।সঙ্গে ঘোড়ার যত্ন ও খাবার সার্ভিস দেয়।
স্যালুন—মদ, খাবার আর আড্ডা দেবার স্থান। আমাদের বর্তমান খাবার হোটেল গুলির মত।
জার্কি---- প্রক্রিয়া জাত গরু/মহিশ এর শুকনা মাংশ।
কুকশ্যাক—শুধু খাবার পাওয়া যায় এমন হোটেল।
বেডরোলের—রাত কাটাবার বিছান, কাপড়, বর্ষতি ইত্যাদি নিয়ে বাঁধা পোটলা/ব্যাগ।
>>> কেমন লাগল জানাতে কিন্তু ভুলবেন না।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন