কবি হে ----- শুভ জন্মদিন

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৬ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:১৬:২০ সকাল

কবি হে ----- শুভ জন্মদিন



আজ ১৬ই অক্টবর কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর ৫৮ তম জন্মবার্ষিকী। তাই আজ কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিয়ে পেশ করলাম এই লিখা:

কবি হে

কবি হে জন্মেছিলে ক্ষণ জন্মা হয়ে

তাতে কি ?

তুমি যা দিয়েছ মোদের

ভুলবনা মোরা সারাটি জীবন।

কি ছিল তোমার লিখনিতে

প্রেমে পড়েছিল আপামর

জনতা যে।

তুমি হারিয়ে গেছ অজানায়

তাতে কি?

তোমার লিখনির মাঝে

থাকবে তুমি বেঁচে

কবিতা প্রেমীদের হৃদয়ে।

কবি হে

তোমার লিখা পড়লে

এখনো প্রেমে পড়তে

ইচ্ছে করে

নাম না যানা কোন তরুণী প্রেমে।

তায় ছোট এই শ্রদ্ধার্ঘ

তোমার প্রতি

এই কবিতা প্রেমীর।

কবি সম্পর্কে:



১৯৫৬ সালের ১৬ই অক্টোবর তাঁর পিতার কর্মস্থল জীবনানন্দের রূপসী বাংলার বরিশালের আমানতগঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন কবি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। পিতা ডাঃ শেখ ওয়ালীউল্লাহ এবং মাতা শিরিয়া বেগম। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রুদ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় তাঁর কেটেছে নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে (বাগেরহাট জেলার মোংলা থানার অন্তর্গত)। সুন্দরবনের কাছাকাছি থাকলেও সবাই বাঘ হয় না, কিন্তু রুদ্র বাঘের চেয়ে শক্তিমান ছিলেন। এখানকার পাঠশালাতেই তাঁর পড়াশুনা শুরু। ১৯৬৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন সাহেবের মেঠ গ্রামে তাঁর নানার নামে প্রতিষ্ঠিত “ইসমাইল মেমোরিয়াল স্কুলে। এর পর ৯৬৬ সালে মোংলা থানার “সেন্টপলস উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু। শহিদুল্লাহ তখন মাত্র নবম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৭২ সালে ঢাকায় এসে ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল" ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে এস.এস.সি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে মুহম্মদ শহিদুল্লাহ নামের সঙ্গে যুক্ত করেন ‘রুদ্র’। নাম হয় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। চার বিষয়ে লেটার মার্কস-সহ এস.এস.সি-তে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ। এর পর ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। অতঃপর ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বি এ এবং ১৯৮৩ সালে এম এ ডিগ্রি লাভ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বচনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মনোনীত পরিষদে সাহিত্য সম্পাদক পদপ্রার্থী হন। অবশ্য নির্বাচনে বন্ধু আলী রীয়াজের কাছে পরাজয় বরণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে চূড়ান্ত বাউন্ডুলে এই কবি জীবন নিয়ে যতো হেলা ফেলাই করুক, কবিতা নিয়ে কখনো তা করেননি। কবিতায় তিনি সুস্থ ছিলেন, নিষ্ঠ ছিলেন, স্বপ্নময় ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বের হয় তার প্রথম বই “উপদ্রুত উপকূলে” । প্রথম বইতেই “বাতাসে লাশের গন্ধ” লিখে সব মনোযোগ, পাঠক আর কবিশত্রু কেড়ে নেন। বলেন- “আমি কবি নই- শব্দশ্রমিক/শব্দের লাল হাতুড়ি পেটাই ভুল বোধে ভুল চেতনায়।” তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মাত্র ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।

কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রকাশিত গ্রন্থ সমুহঃ

১। উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ২। ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম ১৯৮২, ৩। মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪), ৪। ছোবল (১৯৮৬), ৫। গল্প (১৯৮৭), ৬। দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮), ৭। মৌলিক মুখোশ (১৯৯০), ৮। ছোটগল্প- সোনালি শিশির এবং তার মৃত্যুর পর বের হয় নাট্যকাব্য “বিষ বিরিক্ষের বীজ”।

প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। এছাড়া স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বিরুদ্ধে তাঁর কণ্ঠ ছিল উচ্চকিত। কবিকন্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি কবিতাকে শ্রোতাপ্রিয় করে তোলেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। ১৯৮৯ সালে গান রচনা ও সুরারোপে আত্ম নিয়োগ করেন রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর বিখ্যাত ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি এসময়ে লেখা। উল্লেখ্য, পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরনোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।

ভীষণ এক খামখেয়ালীর জীবন ছিলো তাঁর। অনেক ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে তবে সে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ৯০’র শেষদিকে তসলিমার সঙ্গে আবার প্রেম শুরু হয়েছিলো। কিন্তু সেটা ছিলো তসলিমার দ্বিতীয় বিবাহ থেকে তৃতীয় বিবাহে উত্তরণের মধ্য সময়ে। ফলে সে প্রেমও টিকলো না।এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিমুল নামের এক তরুণীর সঙ্গে প্রেম হলেও তার অভিভাবক রাজী না হওয়ায় সে সম্পর্কও চুকে যায়। সেই থেকে রুদ্র আরো বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে যেতে থাকেন। পারিবারিক স্বচ্ছলতা ছিলো, সেপথে যাননি। চাকরির প্রাতিষ্ঠানিকতায় নিজেকে বাঁধেননি । কয়েকটা রিক্সা ছিলো, তা থেকে যা আয় হতো তাতেই চলতেন। ঠিকাদারী করেছেন, চিংড়ির খামার করেছেন। আর দুহাতে টাকা উড়িয়েছেন। জল বিনা তার চলে না। প্রতিসন্ধ্যায় মদের দোকানে হাজিরা দিতেই হতো। তিনি হুইস্কির বাংলাকরণ করেছিলেন “সোনালী শিশির”। এই নামে একটা গল্পও লিখেছিলেন।

অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা ফলসরূপ আলসারে পেয়ে বসেছিল তাঁকে। পায়ের আঙ্গুলে রোগ বাসা বেধেছিল। ডাক্তার বলেছিলো পা বাঁচাতে হলে সিগারেট ছাড়তে হবে। কিন্তু তিনি পা ছেড়ে সিগারেট নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। স্থান হল হলি ফ্যামিলির ২৩১ নম্বর কেবিনে। ১৯৯১ সালের ২০ জুন ভালো হয়ে পশ্চিম রাজাবাজারের বাড়িতে ফিরেও গেলেন। কিন্তু পরদিন ২১ জুন ভোরে দাঁত ব্রাশ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে নিজ বাসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ১৯৮০ সালে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলা ভাষার অসামান্য কবি রুদ্র। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৩৪ বছর।

বিষয়: বিবিধ

১১৮১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

274874
১৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৪২
কাহাফ লিখেছেন :
নিজের জীবনকেই যে বদলাতে পারে না-
সে আবার সমাজ বদলে দিবে কিভাবে......!
এ সমস্ত 'নামধারী অসাম্প্রদায়িক মুক্তচিন্তার অধিকারী'রাই সমাজ কে অনৈতিকতার অতল গহবরে নিয়ের যায়।
নিজের পা থেকেও যার কাছে নেশে সিগারেট প্রিয় সে তো সমাজ কে মাদকতায় ভরবেই।
১৬ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৯
218866
গোলাম মাওলা লিখেছেন : হুম , ঠিক
274902
১৬ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:১৩
মাজহার১৩ লিখেছেন : তাসলিমার লেখামতে বাসর রাতে সে তাকে যৌনরোগী হিসেবে পেয়েছে। সাধারনতঃ এই রোগগুলো যারা বেশ্যালয়ে যায় তাঁদের হয়। বেশ্যালয়ে নিয়মিত যাতায়তকারী একজন কবিকে নিয়ে লেখা পোষ্ট করা তাকে সমর্থন করার নামান্তর।
১৬ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
218909
দিশারি লিখেছেন : Applause
274947
১৬ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০২:৫১
দিশারি লিখেছেন : Not Listening

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File