দুই দেশের দুটি খবরে--- দুই রকম অনুভূতি
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:২৫:৩৫ রাত
দুই দেশের দুটি খবরে--- দুই রকম অনুভূতি
আমাদের দেশে আইন আসলেই ধনী এবং ক্ষমতাধরদের পকেটে এবং তা আরও কুক্ষিগত করার পাঁয়তারায় এই কয়েকদিন আগে অবৈধ সংসদদের দ্বারা সংসদে পাশ হল ১৬ষ সংশোধন ( ৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিল উত্থাপনের ১০ দিন পর ১৭ই সেপ্টেম্বর পাশ হয়েছে) । যা জনমনে যেমন প্রশ্ন উঠেছে তেমনি আইনের শাসন যে বড়লোক ও ক্ষমতাধরদের পকেটে তার আর এক বার প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।
এবার আসুন দেখে নিই বাংলাদেশ ও ভারতের দুটি ঘটনা আর মূল্যায়ন করি দুই দেশের আইনের শাসনের দুইরকম চিত্র।
জয়ললিতা এখন কয়েদি নাম্বার ৭৪০২
http://www.prothom-alo.com/international/article/331792/দুর্নীতির-দায়ে-জয়ললিতার-চার-বছরের-কারাদণ্ড
দুর্নীতির-দায়ে-জয়ললিতার-চার-বছরের-কারাদণ্ড
http://www.prothom-alo.com/international/article/332737/জয়ললিতা-এখন-কয়েদি-নম্বর-৭৪০২
http://www.prothom-alo.com/international/article/332737/জয়ললিতা-এখন-কয়েদি-নম্বর-৭৪০২ " target="_blank" target="_blank" rel="nofollow">জয়ললিতা এখন কয়েদি নাম্বার ৭৪০২
দুর্নীতির দায়ে সাজা পাওয়া ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রাম গতকাল শনিবার বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী শাখার বিশেষ সেলে প্রথম রাত কাটিয়েছেন। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে একটি কয়েদি নম্বর দেওয়া হয়েছে। তাঁর নম্বর ৭৪০২।
কারাগারে জয়ললিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা মন্ত্রী ও আইনপ্রণেতারা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী হাঁটু, বুক ও পাকস্থলিতে তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন। তাঁর ডায়াবেটিসও আছে। কারাগারের সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত নয়। তাঁর জন্য ভালো সুবিধা চাওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীকে কোনো বিশেষ চিকিৎসাসুবিধা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, জয়ললিতাকে কারা চিকিৎসকদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে।
কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য জয়ললিতা অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা তাঁকে কড়া জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি দণ্ডিত। তাঁর ক্ষেত্রে কারাবিধি মানতে হবে।
কারাবিধি অনুযায়ী রাতে জয়ললিতাকে খাবার দেওয়া হয়েছে বলে কারাগারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
হাই সিকিউরিটির ওই কারাগারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিভিআইপি) জন্য কোনো সেল নেই।
-------------------------------------------------
কারাগারে তারেক সাঈদের জন্য টিভি ফ্রিজ
http://www.jugantor.com/first-page/2014/09/29/154090
কারাগারে তারেক সাঈদের জন্য টিভি ফ্রিজ
কারাগারে আয়েশি জীবনযাপন করছেন নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় দায় স্বীকার করা সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ। কারা অভ্যন্তরে তার জন্য রয়েছে রঙিন টেলিভিশন, ফ্রিজ, দামি পানির ফিল্টার, উন্নত মানের এয়ারকুলার ফ্যান এবং আরও বেশকিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু কারাবিধি অনুযায়ী কোনো বন্দির এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা নয়। সরকারিভাবে এ ধরনের ব্যবস্থাও নেই। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিরা (প্রথম শ্রেণীর বন্দি) শুধু টিভি দেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তারেক সাঈদের জন্য এসব যন্ত্রপাতি ও উপকরণ বাইরে থেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
৭ জুলাই বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে এসব জিনিস কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকানো হয়। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পরিবারের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত কর্মচারী মোঃ জামান এগুলো কারা ফটকে নিয়ে যান। এরপর কারাগারের কিছু লোক তা তারেক সাঈদের সেলে পৌঁছে দেন। তারেক সাঈদ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা। বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ২৬ নম্বর সেলে (চম্পাকলি ভিআইপি সেল) বন্দি রয়েছেন। কারাসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। ত্রাণমন্ত্রী কারা প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আইনবহির্ভূতভাবে বিলাসবহুল এসব সরঞ্জাম কারাগারে ঢোকাতে বাধ্য করেছেন বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের খবর প্রকাশ করে আপনারা আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা দিতে চাচ্ছেন। এটা সাংবাদিকতা হতে পারে না। আসল সত্য উদ্ঘাটন না করে আপনারা এসব নিয়ে আছেন!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭ জুলাই দুপুরে পুরান ঢাকার একটি দোকান থেকে টেলিভিশন, ফ্রিজ, পানির ফিল্টার, এয়ারকুলার ফ্যানসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে যান মোঃ জামান। পথে যানজটের কারণে তার কিছুটা দেরি হয়। পরে দায়িত্বটি সম্পন্ন করে তিনি তা কয়েকজনকে নিশ্চিত করেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, বন্দি তারেক সাঈদ মোহাম্মদ বাইরে থেকে পাঠানো টিভি দেখে সময় কাটান। ফ্রিজসহ বিভিন্ন আধুনিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। তার বিরুদ্ধে কারাগারে আশপাশের সেলের বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যহারের অভিযোগও রয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পুরো এলাকা ও কারা অভ্যন্তর সার্বক্ষণিকভাবে সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফলে কারা প্রশাসনের অজান্তে বাইরে থেকে কারা অভ্যন্তরে টিভি ফ্রিজ পাঠানো অসম্ভব। বাইরে থেকে কারাগারের ভেতরে খাবার বা সাধারণ কোনো উপহার পাঠাতে হলেও কয়েক ধাপে তল্লাশি করা হয়। কারা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সহায়তা ছাড়া এসব ভেতরে পাঠানো সম্ভব নয়।
কারাগারে টিভি-ফ্রিজ পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে জানার জন্য যুগান্তরের প্রতিবেদক শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রী মায়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জামানের মুখোমুখি হন। মন্ত্রীর হজে যাওয়া উপলক্ষে ওইদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। দোয়া মাহফিলের আগে জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
তার সঙ্গে কথোপকথন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-
যুগান্তর : আপনি কারাগারে তারেক সাঈদের কাছে টিভি-ফ্রিজ পৌঁছে দিয়েছেন? কিভাবে দিলেন?
জামান : এটা আপনি কী বলছেন? কোথা থেকে এ খবর পেলেন?
যুগান্তর : আপনার নাম তো জামান, তাই না? আপনি তো মন্ত্রী মহোদয়ের খুবই ঘনিষ্ঠ?
জামান : হ্যাঁ, আমিই জামান। মন্ত্রী সাহেব আমার বাবার মতো। ১৫/২০ বছর ধরে আমি তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। আমি তার জন্য কয়েক দফা জেলও খেটেছি।
যুগান্তর : আপনিই তো টিভি, ফ্রিজ পৌঁছে দিয়েছেন। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।
জামান : থাকলে থাকতে থাকতে পারে... থাকতে পারে। কিন্তু আমি দিইনি। কোথাও আপনাদের ভুল হচ্ছে... (ফ্যাকাশে মুখে বারবার হাত বোলান)।
যুগান্তর : আপনি দিয়েছেন। পুরনো ঢাকার একটি দোকান থেকে এসব সামগ্রী আপনি কিনে এনেছেন।
জামান : ভাই, আপনারা কত তারিখের কথা বলছেন।
যুগান্তর : কেন, ৭ জুলাই।
জামান : সে সময় তো আমি দেশেই ছিলাম না। মালয়েশিয়ায় ছিলাম।
যুগান্তর : কত তারিখে আপনি মালয়েশিয়া গেলেন?
জামান : জুলাই মাসের ২৬ অথবা ২৭ তারিখ।
যুগান্তর : কিন্তু ঘটনা তো ৭ জুলাইয়ের। তখন তো আপনি দেশে।
জামান : ভাই, আমি জুলাই মাসেই দুবার বিদেশে গেছি।
যুগান্তর : আরেকবার কত তারিখে গেছেন?
জামান : আরেক বার... আরেকবার কত তারিখ যে গেলাম... এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে গিয়েছিলাম।
এরপর তিনি আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ভেতরে চলে যান।
কারাগারে টিভি-ফ্রিজ ঢোকানোর বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন রোববার তার কার্যালয়ে যুগান্তরকে বলেন, তারেক সাঈদ মোহাম্মদ প্রথম শ্রেণীর বন্দি হিসেবে কারাগারে টিভি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। তার সেলে ফ্রিজ বা অন্য কোনো উপকরণ থাকার কথা নয়। এ সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী যুগান্তরকে বলেন, জেল কোড অনুযায়ী তার যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা সেসবই তাকে দেয়া হচ্ছে। বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা তাকে দেয়া হচ্ছে না।
২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজন অপহরণ হয়। পরে শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়। ওই সময় র্যাব-১১ এর অধিনায়ক ছিলেন তারেক সাঈদ। ঘটনার পর তাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।
>>>তারেক সাঈদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
http://www.jugantor.com/current-news/2014/06/18/112656
>>> এই হল আমাদের আইন এবং আইন ব্যবস্থা। পাশের দেশে একজন মুখ্যমন্ত্রী জেলে যখন সাধারণ কয়েদির মর্যাদায় থাকে দুর্নীতির জন্য জেল হয় ৪ বছর। তখন আমাদের ডিয়ার লিডারদের জন্য দুর্নীতি তো পান্তা ভাত না না --- দুর্নীতি এদের কাছে পান্তা ভাতে ঘি খাবার মত উপাদেও । আর এই পর্যন্ত কোন ডিয়ার লিডারদের এই জন্য জেল তো দুরের কথা সাধারণ কান ধরে উঠ বস করতে দেখলাম না।
আর ৭ জন নিরীহ লোকের খুনি একজন মন্ত্রীর জামায় হয়ার জন্য সত্যি সত্যি জেলে বসে জামায় আদর পাচ্ছে এবং তা সবার চোখের সামনে।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন