সাপ ,সাপের খেলা ও সাপুড়ে বা বেদে সম্প্রদায় পর্ব – দুই(২)

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:২৩:০৮ দুপুর

সাপ ,সাপের খেলা ও সাপুড়ে বা বেদে সম্প্রদায় পর্ব – দুই(২)

পর্ব –এক(১)



“সাপ! সাপ! সাপ!” বলে হঠাৎ কেউ একজন যদি চিৎকার করে উঠে, সে চিৎকারে আশেপাশের পরোপকারী বীরজনতার প্রথম পদক্ষেপই হয়, যে যা পারে, তাই নিয়ে সাপ মারতে ঝাপিয়ে পড়া। দুঃখজনক হলেও সাপ সম্বন্ধে আমাদের সবার মনোভাব এমনই। এ কথা স্বীকার করি যে, পৃথিবীতে বহুলোক সাপের দংশনে মারা যায়। তবে তার চেয়ে কয়েকশ গুণ সাপ মারা যায় মানুষের হাতে, অকারনে। সাপের গুটিকয় প্রজাতি ছাড়া অধিকাংশ সাপই বিষহীন ও নিরীহ। উপমহাদেশে প্রাপ্ত সাপের ৭৬ শতাংশই বিষহীন। আর বাকি ২৪ শতাংশের গুটিকয় ছাড়া অধিকাংশই কম বিষধর। সে তুলনায় তাদের প্রতি আমাদের আক্ষেপের পরিমান অনেক বেশি। এই সাপ কিন্তু মানুষের খুবই উপকারি জীব। শস্যহানিকর ইঁদুর ও পোকামাকড় খাওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাপ মানুষের অনেক উপকার করে। তাই “সাপ মানুষের শত্রু”-এ কথা যারা বলে তারা সাপের শত্রু তো বটেই, মানুষেরও বন্ধু নয়।



এই উপকারি সাধারন জীবটি সম্বন্ধে আমাদের মনে অনেক ভ্রান্ত ধারনা বদ্ধমূল। যার মূল উৎস বলা যায় বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। এইসব পৌরাণিক কাহিনী থেকে নানান কাহিনী লোকগাঁথায় অনুপ্রবেশ করে মানুষের মনে সাপ সম্বন্ধে অনেক ভ্রান্ত ধারনার তৈরি হয়েছে। যা অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক তথা ভিত্তিহীন।



>>> বিজ্ঞানের যুক্তিঃ

ক)সাপ বিষধর হোক আর অবিষধর হোক সাপ দেখে ভয় পায় না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই। যে সাপুড়েরা খেলা দেখায় তারাও ভীত থাকে। শুধু কৌশল জানে বলে খেলা দেখাতে পারে। অনেকের ধারণা, সাপুড়েরা বীন বাজিয়ে (এক ধরনের বাঁশি) সাপ বের করে আনে, পরে তা ধরে বিষ দাঁত ভেঙ্গে দেয়।

------------------------------------- বিজ্ঞানের যুক্তি সরীসৃপ জাতীয় বুকের ওপর ভর করে চলা প্রাণী সাপ আসলে বাঁশির সুর শোনে না। বায়ুম-লের শব্দ অনুভূতির ক্ষমতা সাপের নেই। শুধু চোয়ালের নিচে ছোট্ট হাড়ের মাধ্যমে শ্রবণ স্পন্দন স্নায়ুতন্ত্রের সাহায্যে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এমন সূক্ষ্ম স্পর্শকাতরতা নিয়ে সাপ বের হয়ে এসে যখন দেখে সাপুড়ে বিশেষ ভঙ্গিতে বাঁশি বাজাচ্ছে তখন এগিয়ে আসে। সাপুড়ে সুযোগটি নিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সাপের সামনে নিয়ে এদিক ওদিক করে নাচায়। এই ছন্দে সাপও ফণা তুলে নেচে ওঠে। তাই সাপের খেলা দেখানোয় সাপুড়েদের ক্যারিশমা এটুকুই। এই বিষয়টি সম্বল করে লোক কাহিনীর কত গল্পই না সাজানো হয়েছে।



খ)গাল গল্প যতঃ

(l) সাপের দুধ কলা খাওয়াঃ সাপ দুধ বা কলা কোনটাই খায় না। সব প্রজাতিই মাংসাশী। সাপের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি করা একেবারেই অসম্ভব। সাপ যা কিছু খায় সব গিলে খায়।বেদে সম্প্রদায় ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে আলাদা জীবন নির্বাহ করে সাপকে ঘিরেই। সাপুড়েরা সাপের কথিত ওষুধ বিক্রির সময় নানা উপমা দেয় গল্পের ছলে। কখনও বলে সাপ গাভীর দুধ খায়। কেউ গল্প করে সাপকে গাভীর ওলানে দুধ চুষতে দেখেছে। অথচ সাপের ছোট্ট দাঁত বরশির মতো। চুষতে গেলেই আটকে থাকবে।

(II) সাপ-বেজি: সাপ-বেজি নিয়েও নানা কথা আছে। বলা হয়, বেজি সাপকে বধ করে। প্রকৃত বিষয় হলো সাপ বেজিকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বার বার ছোবল দেয়। আঘাত করে। বেজি তা কৌশলে প্রতিরোধ করতে ডানে বামে সামনে পিছনে দ্রুত ঘুরে যায়। বার বার ছোবলে থলি থেকে বিষ বের হয়ে যায়। সাপ দুর্বল হলেই বেজি ঝাপিয়ে পড়ে তার ওপর। সাপুড়েরা এই গল্পটি আড়াল করে নিজেদের মনগড়া গল্প করে বিষ নিরাময়ের ওষুধ বেঁচে।



(lll)সাপের মাথায় মনিঃ পুরনো দিনের মানুষ গল্প করতেন, সাপ গুপ্তধন পাহারা দেয়। আগের



দিনে অনেকে কলসিতে মুদ্রা ভরে মাটির নিচে রেখে দিত। সেখান থেকে এই গল্পের সূত্রপাত। বিজ্ঞান বলে সাপের মস্তিষ্ক কোন মণিমুক্তা চেনে না। অনেক বলেন, সাপের মাথায় মণিমুক্তা মেলে। আজ পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী বাস্তবে এই মণির সন্ধান পাননি।সাপের মাথায় মনি বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই বা হয় না।

(lv)সব সাপ ডিম পাড়েঃ সব সাপই যে ডিম পাড়ে তা ভুল ধারনা। অনেকে সরাসরি বাচ্চা দেয়। যেমনঃ অ্যানাকোন্ডা, চন্দ্রবোড়া।

( v)সর্পদৃষ্টির সম্মোহনী শক্তিঃ সাপের সম্মোহনী শক্তি বলতে কোন শক্তি নেই। সাপের চোখে কোন পর্দা নেই,তার চোখে তাই কোন পলক পড়ে না। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাপ দেখলে মানুষ ভয়ে স্তম্ভিত হয়ে যায়, যার কারনে সম্মোহীত হওয়ার ব্যাপারটি মনে হয়।

(Vl)সাপের প্রতিহিংসাপরায়ণতাঃ শত্রুকে চিনে রাখার ক্ষমতা কোনও সাপের নেই। তাই পরবর্তীতে সাপের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

(Vll)দু-মুখো সাপঃ দু-মুখো সাপ বলতে কোন সাপ নেই। যে সাপকে দু-মুখো বলে সংজ্ঞায়িত করা হয় আসলে এর মাথা একটিই। এর আকৃতি এমন যে, কোনটি মাথা আর কোনটি লেজ তা সহজে সনাক্ত করা যায় না। তাছাড়া পিছু হটার সময় এ সাপ পিছন ফেরে না, ব্যাক-গিয়ারে পিছিয়ে যায়। তবে নিতান্ত প্রকৃতির খেয়ালে একই সাপের দেহে দুটি মাথা গজিয়ে উঠতে পারে।



(Vll)সাপের পোষ মানাঃ ঘোড়া বা কুকুরের মত সাপ অনুগত হয় না বটে, কিন্তু কেউ যদি দীর্ঘ দিন তার খাদ্য জোগায় তবে তার পোষ মানে।

(Vll)শনি-মঙ্গলবারে বিষহীন সাপের বিষ হয়ঃ এই ধারনাও ভুল। জীবজগতে গ্রীষ্ম-বর্ষা, অমাবস্যা-পূর্ণিমা,সকাল-সন্ধ্যা, দিন-রাত ইত্যাদি আছে কিন্তু শনি-মঙ্গল-শুক্রবার, বছর-দিন-মাস-তারিখ আক্ষরিক অর্থে থাকলেও বাস্তবিক অর্থে কিছু নেই বা এর কোন প্রভাব নেই। এসব মানুষের কল্পনায় বানানো।

>>>চলচিত্রে সাপ ও সাপুড়েঃ

সাপ বিশ্ব চলচ্চিত্রে নানাভাবে এসেছে। 'অ্যানাকোন্ডা'কে যেভাবে আনা হয়েছে, সেভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে সাপকে চলচ্চিত্রে চিত্রিত করা হয়নি। এর কারণ একেক সমাজে সাপকে ঘিরে একেক ধরনের ধারণা বিদ্যমান। সাপ কোথাও যৌনতার প্রতীক, কোথাও সংহারদেবী, কোথাও উদ্ধারকর্তা, কোথাও ইচ্ছাপূরণের নিমিত্ত।

বাংলা চলচ্চিত্রে সাপ এসেছে দু'ভাবে---

১। চরিত্র হিসেবে এবং

২।মনুষ্যমূর্তি ধারণ করে।

উভয় ক্ষেত্রেই সাপ নির্দিষ্ট একটি ভূমিকা পালন করে। অবিভক্ত বাংলার পশ্চিম অংশে যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়, তখন কাহিনীর মধ্যে সামাজিক, ধর্মীয় ও কল্পনাশ্রিত বিষয় যেমন প্রাধান্য পায়, তেমনি পৌরাণিক, লোকজ ও অলৌকিক বিশ্বাসসঞ্জাত বিষয়ও স্থান পায়। সাপও তাই বাংলা চলচ্চিত্রের সেই শুরুর কাল থেকেই এর একটি উপাদান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলা ভাগের পর পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্রেও সাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ পর্বেও সেই একই ধারাবাহিকতা বজায় আছে।

চলচ্চিত্র শিল্পে সাপ একটি উপাদান হিসেবে আসার আগে তা এসেছে পুরাণ, লোকগাথা, মঙ্গলকাব্য তথা মৌখিক সাহিত্যে। মঙ্গলকাব্যের তিনটি ধারা খুব প্রবল_ চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল ও মনসামঙ্গল। এর মধ্যে সর্বপ্রাচীন হচ্ছে মনসামঙ্গল। আমাদের ভাটি বাংলায় চৌদ্দ থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত মনসামঙ্গল প্রভাবিত মঙ্গলগান, আখ্যানগীত, পদ্মাপুরাণভিত্তিক খণ্ডগান, পালাগান, ঢপযাত্রা, লোকায়ত নৃত্য প্রভৃতি চর্চিত হয়ে আসছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণ আরম্ভ হয় তখন থেকে তাতে মনসামঙ্গলের নানা উপকরণ যুক্ত হতে থাকে। মনসা হচ্ছে সর্পদেবী লক্ষ্মীর অন্য এক রূপ ও নাম। মনসা পদ্মা ও পদ্মাবতী নামেও পরিচিতা। জলা-জঙ্গলপূর্ণ ভাটি বাংলায় সাপের উপদ্রব খুব বেশি থাকায় এখানে সর্পদেবীর ধারণাটি পোক্ত হয়েছে এবং সাপ একদিকে যেমন একটি পূজনীয় বিষয় হয়েছে, অন্যদিকে লোকসাহিত্য, নৃত্য ও গীতের আধেয়ও হয়েছে। সবশেষে সাপ চরিত্র হিসেবে চলচ্চিত্রে এসেছে।

দেশের চলচ্চিত্রে সাপ এসেছে বহু বিচিত্ররূপে। সাপ প্রধানত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুসৃত বিশ্বাসের কাঠামো থেকেই চলচ্চিত্রে এসেছিল। পূর্ব পাকিস্তান পর্বে মুসলমান জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কারজাত কিছু উপাদনও চলচ্চিত্রে যুক্ত হয় : উড়ন্ত জায়নামাজ, দরবেশের হাতে লাঠি, গায়েবি আওয়াজ প্রভৃতি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই পর্বে শুধু সাপ নয়, যারা সাপখেলা দেখায়, যারা সাপ ধরে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে, তারাও চলচ্চিত্রের বিষয় হয়ে এসেছে। এখানে সাপ প্রকৃতির এমন একটি অংশ হিসেবে এসেছে, যে অংশ লৌকিক মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী। 'পদ্মা গোখরা'য় সাপ এসেছে আধুনিক সাহিত্যকর্মের সূত্রে। এখানে সাপকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ উপাদান হিসেবে দেখেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। এখানে সাপ ব্যবহৃত হয়েছে বেদেজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। বস্তুত বৃহত্তর লোকসমাজের মনের একটি বিশেষ রূপ পাওয়া যায় এসব চলচ্চিত্রে উপস্থাপিত সাপের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে। আর সেই বিশেষ রূপটি 'দুষ্টের দমন শিষ্টের জয়' শীর্ষক প্রবচনটির মধ্য থেকে উৎসারিত। উল্লেখ্য যে, উলি্লখিত প্রায় সব চলচ্চিত্রেই সাপ দুষ্টের দমনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের কাহিনীর মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে ভাটি বাংলার মানুষ কতকগুলো নীতিকথা, আপ্তবাক্য ইত্যাদি পাঠক ও দর্শক সমাজের সামনে তুলে ধরে। 'নাগ নাগিনী'র স্বপ্নতেও দুষ্টের দমনের প্রসঙ্গ এসেছে। ক্ষমতাধারী হয়ে অবৈধ কর্তৃত্ব করার বাসনা করলে কী পরিণতি হয়, তা-ও দেখানো হয়েছে। যৌন মিলনের প্রতীক হিসেবে সাপ যে এই অঞ্চলের জনমানসে স্তরীভূত হয়ে আছে, তাও আলোচ্য চলচ্চিত্রের কাহিনী সূত্রে প্রতীয়মান হয়।

সাপ নিজেও যে ক্ষমতা ও ভয়ের প্রতীক, তাও স্পষ্ট হয় সাপকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র গুলি লক্ষ করলে। বস্তুত ভৌগোলিক পরিবেশের কারণেই সাপ ভাটি বাংলায় ক্ষমতা ও ভয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে, যে প্রতীক এখনও চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য শিল্পমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সাপ আবার বাস্তুরক্ষার প্রতীকও_ স্মরণ হয় 'পথের পাঁচালী'র শেষ দৃশ্য যেখানে হরিহর তার পরিবারসহ নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছে। সে দৃশ্যে দেখা যায়, হরিহরের পরিত্যক্ত জীর্ণকুটিরে একটি সাপ প্রবেশ করছে_ এই সাপ বাস্তুসাপ; এই সাপ বাস্তু রক্ষার প্রতীক।

>পাকিস্তান আমলে নির্মিত বাংলা ছবিঃ

১।মহুয়া (১৯৬৬)

২।বেহুলা(১৯৬৬)

৩।অরুণ বরুণ কিরণমালা(১৯৬৮)

৪।পাতালপুরীর রাজকন্যা' (১৯৬৯)

, ৫।বেদের মেয়ে (১৯৬৯)

৬।নাগিনীর প্রেম (১৯৬৯)

৭।মলুয়া' (১৯৬৯)

৮।আমীর সওদাগর(১৯৭০)

৯।ভেলুয়া সুন্দরী (১৯৭০) প্রভৃতি।

>স্বাধীন বাংলাদেশে নির্মিত ছবিঃ

১।নাগ-নাগিনী (১৯৭৯)

২।শীষনাগ (১৯৭৯)

৩।নাগিনী কন্যা (১৯৮২)

৪। নাগ পূর্ণিমা (১৯৮৩)

৫।নাগরানী (১৯৮৩)

৬।পদ্মাবতী (১৯৮৪)

৭।রসের বাইদানী (১৯৮৪)

৮।চন্দনদ্বীপের রাজকন্যা (১৯৮৪)

৯।জিপসি সর্দার (১৯৮৪)

১০।সতী নাগকন্যা (১৯৮৫)

১১।নাগমহল (১৯৮৬)

১২।চাঁদ সওদাগর (১৯৮৬)

১৩পদ্ম গোখরা (১৯৮৭)

১৪।নাগিনা(১৯৮৭)

১৫।মহুয়া সুন্দরী (১৯৮৭)

১৬।নাগজ্যোতি' (১৯৮৮)

১৭।সর্পরানী'(১৯৮৮)

১৮।বেহুলা লখিন্দর(১৯৮৮)

১৯।জলপরী (১৯৮৯)

২০।বেদের মেয়ে জোসনা (১৯৮৯)

২১।সাপুড়ে মেয়ে (১৯৮৯)

২১।সাগরকন্যা (১৯৮৯)

২২।নাচে নাগিন (১৯৯১)

২৩।রাজার মেয়ে বেদেনী(১৯৯১)

২৪।শীশমহল'(১৯৯১)

২৫।বনবাসে বেদের মেয়ে জোসনা(১৯৯১)

২৬।রূপসী নাগিন' (১৯৯২)

২৭।নাগিনী সাপিনী (১৯৯২)

২৮।নাগ নাগিনীর স্বপ্ন(২০০৯)

প্রভৃতি ঊল্লেখ করার মত সাপ ও সাপুড়ের গল্প নির্ভর বাংলা চলচিত্র।



বাংলাদেশে এ যাবত কালের অন্যতম ছুপার ডুপার ছায়া ছবি বেদের মেয়ে জোসনা ১৯৮৯ সালে মুক্তি লাভ করে।বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সাপকে ও বেদে সম্প্রদায় কে নিয়ে অন্যতম ব্যবসাসফল ছায়াছবি।বেদের মেয়ে জোসনা' নির্মিত হয়েছে শতবর্ষের প্রাচীন এবং গ্রামগঞ্জে বহুল অভিনীত একটি যাত্রাপালা থেকে। এই ছবির একটি গান আজও মানুষের মনে দাগ কাটে।

-----------বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়ে-------------

জনপ্রিয় এই গানটি আজও গ্রামের মানুষের মুখে মুখে ফিরে। এই গানটি গেয়েছেন- রুনা লায়লা ও অ্যান্ড্রু কিশোর।‘

বেদের মেয়ে জোছনা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অঞ্জু রাতারাতি সুনাম অর্জন করেন। এপার-ওপার বাংলায় ছবিটি ব্যাবসা সফল হয়।রতার অভিনীত এই ছবিটিকেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে ধরা হয়।

বীন বাদ্যের আলাদা একটা সুরই আছে। একটা সময় সিনেমা হলে সাপের কোন ছবি প্রদর্শন হলে গুজব রটত প্রেক্ষাগৃহে সাপ ঢুকেছিল।সাপ শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নয়, বিষহরীর গান, যাত্রা, পালা, লোকনাট্য, আলপনা, চিত্রকলা, নকশাকর্ম প্রভৃতি শিল্পমাধ্যমে বহুমাত্রিক একটি চরিত্র ও প্রতীক হিসেবে হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। ।

>>> লোককাহিনী তে সাপ ও সাপুড়েঃ

লোককাহিনী শিল্পে সাপ এসেছে পুরাণ, লোকগাথা, মঙ্গলকাব্য তথা মৌখিক সাহিত্যে। মঙ্গলকাব্যের তিনটি ধারা খুব প্রবল_ চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল ও মনসামঙ্গল। এর মধ্যে সর্বপ্রাচীন হচ্ছে মনসামঙ্গল। আমাদের ভাটি বাংলায় চৌদ্দ থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত মনসামঙ্গল প্রভাবিত মঙ্গলগান, আখ্যানগীত, পদ্মাপুরাণভিত্তিক খণ্ডগান, পালাগান, ঢপযাত্রা, লোকায়ত নৃত্য প্রভৃতি চর্চিত হয়ে আসছে। মনসা হচ্ছে সর্পদেবী লক্ষ্মীর অন্য এক রূপ ও নাম। মনসা পদ্মা ও পদ্মাবতী নামেও পরিচিতা। জলা-জঙ্গলপূর্ণ ভাটি বাংলায় সাপের উপদ্রব খুব বেশি থাকায় এখানে সর্পদেবীর ধারণাটি পোক্ত হয়েছে এবং সাপ একদিকে যেমন একটি পূজনীয় বিষয় হয়েছে, অন্যদিকে লোকসাহিত্য, নৃত্য ও গীতের আধেয়ও হয়েছে।

মনসা-মঙ্গলের কাহিনী মূলত, দুই নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার কাহিনী। মনসা আর বেহুলা।

>>মনসার গল্পের সারসংক্ষেপঃ



মনসার জন্ম কোন নারীর গর্ভে হয়নি। শিবের বীর্য পদ্ম পাতায় রাখলে, সেখান থেকে তা পদ্ম নাল বেয়ে পাতালে নেমে যায়; সেখান থেকেই মনসার জন্ম হয়। মনসার জন্ম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না। সেকারণে তার চাই সন্তানের দাবি প্রতিষ্ঠা। এই দাবিতে সে অনড়। একই সাথে চাই মানব সমাজে দেবীরূপে নিজের অধিষ্ঠান। মনসার চাওয়ার ভেতর দিয়েই নারীর চাওয়া স্পষ্ট প্রতীয়মান। নারী অধিকার চায়। মনসার চাওয়াটা হল নারীর কর্তাসত্তাকে সমাজ চেতনায় স্পষ্ট করে তোলা। মনসার ভেতর বাইরে শিব ছাড়া অন্য কিছু নেই। এখানে শিব নারী হয়ে উঠল। শিব একই সাথে প্রকৃতি আবার পুরুষও। সেই অর্থে মনসার জন্মের ভেতর দিয়ে মানব জন্ম পুরোটাই উপলব্ধ হয়। হিন্দু সমাজে মনসা পূজা তার জ্যান্ত প্রমান। শক্তির মহাত্ম প্রকাশে ভক্তিতে গদ গদ হয়ে ভক্তকুল শিব ঠাকুরের গলায় লটকে দেয় সাপের প্রতিকৃতি। শিবের এই সাপ বশিকরনে শিবের মহাত্ম যেন বেড়ে যায় আরো শত গুন।



>>বৌদ্ধ মিথেও অনুপ্রবেশ করে সাপের কিছু ভূমিকা। জানা যায় এক ঝড় বাদলের রাতে সর্প রাজ তার বিশাল ফনা ছাতার মত মেলে ধরে বুদ্ধকে রক্ষা করে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির কবল থেকে।



>>সাপের সবচেয়ে বড় কিংবদন্তির গল্প হয়ে আছে বেহুলা-লখিন্দর।এ ছাড়া সাত ভাই চম্পা, অরুণ বরুণ কিরণ মালা নামে কত লোককথা আছে। কথিত বখখিলা সাপ নিয়ে গান আছে

‘খা খা খা বখখিলারে কাঁচা ধইরা খা...।’

>>বেহুলা-লখিন্দর গল্পের সারসংক্ষেপঃ

চাঁদ সওদাগর মনসা দেবীর পুজো করত না বলে অভিশপ্ত হন। তাঁর ছেলে লখিন্দরকে অভিশাপ লাগে। বেহুলার সঙ্গে লখিন্দরের বিয়ে হয়। বেহুলা লখিন্দরকে অভিশাপের কথা জানত তাই বাসর রাত থেকেই স্বামীর সেবাসঙ্গী হয়। স্বামী আরামে ঘুমিয়ে পড়ে। বেহুলা পাহারা দেয়। কিন্তু লোহার বাসর ঘরের বিশ্বকর্মার ছোট ছিদ্র দিয়ে মনসা দেবী সাপ হয়ে এসে ছোবল দেয় লখিন্দরকে। মৃত স্বামীকে নিয়ে বেহুলা ভেলায় করে লখিন্দরকে নিয়ে দেবপুরীতে যায়।বেহুলার নাচনে মনসা দেবী খুশি হয়ে প্রাণ ফিরিয়ে দেয় লখিন্দরের। তাকে আবার বাঁচিয়ে তোলে। মনসা-মঙ্গল এর এই কাহিনী আজও নাড়া দেয় আমাদের।



>>চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাপ সাপুড়ে ও সাপের বিষঃ

সাপেক নিয়ে অনেক কৌতূহলের মধ্যে বাস্তবতা হলো, সাপের বিষ দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জীবন রক্ষাকারী অনেক উন্নত ওষুধ আবিষ্কার করেছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিষধর অনেক সাপ পাচার হয়ে যাচ্ছে। খোঁজ খবর করে জানা যায়,



একটি শ্রেণী প্রযুক্তি ব্যবহারে সাপের বিষ সংগ্রহ করে পাচার করছে।

(চলমান)

আমার এলাকার একটি সংবাদ দিয়ে আজ শেশ সাপের পাহারায় শিশ

সাপের পাহারায় শিশু

http://www.prothom-alo.com/international/article/274630/সাপের-পাহারায়-শিশু



বিষয়: বিবিধ

৬৮৩১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

261184
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৯
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : সাপ সর্ম্পকিত একটি সাহিত্য কোষ। অনেক পরিশ্রমের ফসল এই পোষ্টটি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫০
205200
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
261198
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:১১
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : সর্বনাশ!!এত তথ্য পাইলেন কেমনে! ভালো লাগলো।ধন্যবাদ।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫০
205201
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
261223
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৭
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ। আগের ১ নং পোষ্ট পড়ার আমন্ত্রন
261228
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫২
লাল সবুজ লিখেছেন : এত সাপ সংক্রান্ত ছবির নাম কিভাবে মনে রাখলেন ভাই। ভালো লাগলো
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫০
205202
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
261241
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সাপ দেখলেই আমারও মারতে ইচ্ছা করে।
কিন্তু এত সাপের ছবি দেখলেন কিভাবে???
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫০
205203
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File