গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব: ০৭
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৩ আগস্ট, ২০১৪, ০২:০৩:২৩ দুপুর
গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব: ০৭
পর্ব: ০৬
আজ নতুন আর এক খেলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের। খেলাটি ছোটদের প্রিয় একটি খেলা। এই খেলাকে অঞ্চল ভেদে ইচকি মিচকি বা ইটকি মিটকি নামে চেনে। অনেকে আবার ইচকি মিচকি চাম চিচকি নামেও বলে এই খেলাকে। এটি বিনোদন মূলক ইনডোর গেম। ছোটরা বর্ষায় বা খুব দুপুরে তপ্ত রোদে যখন বাবা-মারা চোখ রাঙ্গানি দিয়ে বলে ঘর হতে বাহিরে যাওয়া যাবেনে, এই বৃষ্টিতে ভিজা যাবেনে বা দুপুরের কাঠফাটা রোদে বাইরে খেলতে মানা।তাই বলে মজার খেলা খেলতে পারবে না তা কি হয়?
তখন আশেপাশের বড় ছোট সই( বন্ধু) মিলে খেলে এই মজার খেলা।
@খেলোয়াড় সংখ্যা: ৪/৫ জন বা বেশি কম হলেও নো প্রব্লেম।
@খেলার স্থান: ঘরের মেঝে,চৌকি, বারান্দা বা বৈঠকখানায় একটু ফাঁকা জায়গা হলেই চলে।খেলোয়াড়রা বসতে পারলেই হল।
@@ খেলার নিয়ম কানুনঃ এই জন্য প্রথমেই বাটাবাটি বা নেতা গঠন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়। কোথাও ---ওবু দশ , বিশ , ত্রিশ চল্লিশ , পঞ্চাশ , ষাট , শত্তুর , আশি , নব্বই এবং একশ বা অন্য পদ্ধতি নিয়ে সাক্ষী বেঁটে এক জন নেতা নির্বাচিত করতে হয়। এরপর খেলোয়াড়রা টেবিল, চৌকি, খাট অথবা মাটিতে মুঠ খুলে দুই হাতের তালু রাখবে বা সবাই দুই হাতের দশ আঙ্গুল বিছিয়ে বিছিয়ে দিবে। তারপর আঙ্গুল গুনে গুনে ছড়া কেটে, যার আঙ্গুলে গিয়ে ছড়াটি শেষ হতো, তার আঙ্গুল ভাঁজ করে লুকিয়ে ফেলতে হবে।
অথবা খেলোয়াড়রা টেবিল, চৌকি, খাট অথবা মাটিতে মুঠ খুলে দুই হাতের তালু রাখবে। নেতা রাখবে এক হাত।এর পর ছড়া কেটে,কেটে নেতা এক হাত দিয়ে ছন্দের প্রতিটি মাত্রায় সঙ্গীদের রাখা হাতের পিঠে মৃদু কিল দিবে। যে হাতে গিয়ে ছড়া শেষ হবে, সে হাত উঠে যাবে কপালে। তারপর একই প্রক্রিয়ায় ছড়া কাটতে কাটতে থাকবে নেতা আর সহ খেলোয়াড়দের হাতের পিঠে কিল পড়বে । যে হাতে ছড়া শেষ হবে সে হাত উঠে যাবে কপালে এবং পরের বার একই জনের হাত উঠলে রাখবে নাভিতে। এভাবে সকলের দুই হাত কপাল ও নাভিতে উঠে এলে, যার হাতটি অবশিষ্ট থাকবে সে হবে চোর বা বুড়ি। বুড়িকে নিয়ে নেতা তখন কিছু প্রশ্ন করবে এবং বুড়ি হবার কারণে সে পাবে ছড়ার শেষ লাইনের প্রসাদ। স্রেফ বিনোদনের খেলা এটি, শিশু-কিশোররা দারুণ উপভোগ করে। যতক্ষণ ভাল লাগে, একই প্রক্রিয়ায় চলতে থাকবে খেলা।
@খেলার ছন্দঃ
১। ইচকি মিচকি চাম চিচকি
জাম ভাই লকেন্দার
সেজে এল জামাদার ----- (মনে নেই)
-----------------------
------------------------
হার কুক্কুর বাড় কুক্কুর
ইলিশ মাছের ঝোল
বুড়ি তুই হাত তোল ।
(মনে আসছে না কারো মনে থাকলে কমেন্টে লিখতে বলছি)
২।“ইচকি মিচকি সাবুদানা
কাইল কে আইলো বৈঠকখানা
মামা আইলো গামাইয়া
ছাতি ধরো টানাইয়া
ছাতির উপরে গামছা
দেখ মামীর তামসা!
বড়মামী রান্দে বাড়ে,
মেজ মামী খায়
ছোট মামী গাল ফুলাইয়া
বাপের বাড়ী যায়।
বাপের বাড়ী তেল-সিন্দুর,
মালির হাতে ফুল
এমন খোপা বাইন্দা দিমু,
হাজার টাকা মূল”।
(এই হাজার টাকা পাবে যার হাতে শেষ হবে ছড়া, নেহাত কাগজের বানানো টাকা)
৩। ইটকি মিটকি জামের ছিটকি
ভাইয়া হে বন্ধু হে
আমার ছাতি ধর হে
ছাতির উপর ঘুঘুরা
লাফ মেরেছে বাবুরা।
বাবুর বুকেরে হাঁড়ি
সোনার চাউল কাঁড়ি।
( এই সোনার কড়ি ও চাউল উপহার পাবে যার হাতে শেষ হবে ছড়া)
৪।এ্যালপাত ব্যালপাত
সর্বনাশের এক হাত
তোল কপালে,
আরেক হাত
তোল নাভীতে।
হাত সবার তোলা হলে এবার বুড়ি বা চোরকে নেতা প্রশ্ন করবে । বিভিন্ন এলাকায় প্রশ্নের ধরন ভিন্ন। প্রশ্ন না পারলে বুড়ির বা চোরের পিঠে পড়ে কিল ধপাস করে।
বুড়িকে যে যে প্রশ্ন করা হয়----
>তোর কপালত কী?
>>সিন্দুর বা টিপ।
>ঘসলে ওঠে?
>>না।
> বাড়ির কোদাল নিয়ে এসে চাঁচ।
>>চাঁচিছি।
>উঠিছে?
>>উঠিছে।
>তোর নাইতে(নাভি) কী?
>>কোলা ব্যঙ।
>কান্দে ক্যা?
>>দুধ ব্যাগড়ে(চায়)।
>এত ফুটি, এত ফুটি, এত ফুটি পানি বিলকিস( যে কোন এক খেলোয়াড় কে নাম ধরে বলবে) দুধ নিয়া আয় ।এই নে দুধ দিনু, কি করলু?
>>বিলায়ে খাইছে।
>বিলাই ধরে মারিছু?
>>জঙ্গলত পালাছে।
>জঙ্গল পুড়িছু?
>>পুড়িছি।
>কয় ডালি ছাই হল?
>>৩ ডালি।
>কাকে কাকে দিলু?
>>নানাক এক ডালি, মামাক দুই ডালি।
>নানায়ে কী দিল?
>>পান্টি(লাঠি ,জা দিয়ে গরু মহিষ তাড়ায়)।
>মামায়ে কী দিল?
>> কানা ঘোড়া।
>পান্টি থুস কোনটে?
>>চালের বাতাত( বাতা হল চাল বা ছাউনির খাঁজে)।
>ঘোড়া থুস কোনটে?
>> গোয়ালে।
এ ভাবে চলতে থাকে
অথবা কোন কোন এলাকায় বুড়ির চোখ হাতে বেঁধে সহখেলয়াড় রা বুড়ির কপালে হাতের আঙ্গুলের উল্টো পিঠের সাহায্যে টিপ দেই তার পর নিচের প্রশ্ন চলতে থাকে।
>আকাশে কি?
>> চাঁদ/ তারা।
----------------- উত্তর না পারলে চলে কিল পর্ব।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হায় রে মধুর শৈশব
মন্তব্য করতে লগইন করুন