বাংলাদেশ ও বিকল্প শক্তি--- এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ।

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৫ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৩৯:০১ বিকাল

বাংলাদেশ ও বিকল্প শক্তি--- এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ।



শক্তি ছাড়া পৃথিবী অচল। বিভিন্ন শক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে টিকে আছে পৃথিবী ও মানবসভ্যতা। কিন্তু পৃথিবীতে জ্বালানি অসীম নয়। প্রতিনিয়তই নিঃশেষ হওয়ার পথ ধরে এগোচ্ছে তেল, গ্যাস, কয়লাসহ প্রাকৃতিক জ্বালানি। অদূরভবিষ্যতে শক্তির প্রাপ্যতার সংকট চরমে উঠবে বলেই মেনে নিয়েছেন গবেষক ও বিশ্লেষকরা। শক্তির সংকট মানেই বিশ্ব অর্থনীতিতে সর্বোচ্চ মন্দার আঘাত। এ কারণেই প্রায় সব দেশই নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। বিকল্প শক্তির সন্ধানে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখযোগ্য সাফল্য হাতে আসতে শুরু করেছে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। এখন পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকল্প শক্তি উৎপাদনের দিকেই হাঁটছে পৃথিবী।

আমরা ৩য় বিশ্বের একটা উন্নয়নশীল সম্ভাবনা দেশ হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে নিজেদের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি খুব গর্বের সাথে। রাজনৈতিক দৈনতা বা দুর্নীতি গ্রস্থ সরকার যন্ত্রের পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমান তালে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি । প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনাময় পথের। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শক্তির ব্যবহার ও চাহিদা। আর এই চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস এর উপর চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় এই দু শক্তির নতুন নতুন উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে সময় এখন বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহার জোরদারের কোন বিকল্প নেই আমাদের হাতে। আর আসুন দেখে নিই বাংলাদেশে উৎপাদন করা বা ব্যবহার করা সম্ভব এমন কি কি বিকল্প শক্তি রয়েছে যা আমরা আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি।

১।সৌরশক্তিঃ



সোলার পাওয়ার বা সৌরশক্তি সংগ্রহ করার উদ্ভাবনী নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছি প্রযুক্তিবিদদের। সাধারণভাবে বললে সূর্যের বিকিরণ থেকে আসা তাপকে সংরক্ষণ করে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরের ধারণাই সৌরশক্তির প্রাথমিক সাফল্যের জানান দেয়। শক্তি ব্যবহারের যতগুলো রূপ আছে তার প্রায় সবই তাপ উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর পৃথিবীতে তাপের একমাত্র উৎস হল সূর্য। সূর্যের তাপ বিকিরণ ও সৌর বিদ্যুৎকে সহজলভ্য করার প্রক্রিয়ার দিকে তাকালে কয়েক দশক আগেও বড় ধরনের কোনও পরিকল্পনার তথ্য মিলবে না। সত্যি বলতে সৌরশক্তিকে যতভাবে ব্যবহার করা সম্ভব তার খুব ক্ষুদ্রতম অংশও মানুষ ব্যবহার করছে না। এক সময় ছিল যখন সৌরশক্তির ব্যবহারে সোলার প্যানেলকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে প্রযুক্তিবিদদের। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সংযোজন ঘটেছে। বিশেষত, বিদ্যুৎ ব্যবহার উপযোগী প্রযুক্তি আবিষ্কার হওয়ার পর মানুষ সৌরশক্তিকে বিভিন্ন রকমে ব্যবহার করতে শুরু করে। বিভিন্ন রকম শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর এবং সেই বিদ্যুৎ শক্তিকে আবার বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তর করতে পারার সুবিধার কারণে শক্তি ব্যবহারের ধরন হিসেবে বিদ্যুৎ খুব দ্রুত সভ্যতার উন্নয়ন এবং পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠেছে।

সৌরশক্তির ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়া মাত্রই নতুন করে গতি পেয়েছে শক্তির সংকট মোকাবিলা ও ভবিষ্যতে ব্যবহার্য শক্তি উৎপাদন সম্ভাবনায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য মানুষ সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করছেন।

বাংলাদেশে সৌরশক্তির সাহায্যে ঘরের বাতি, ফ্যান, টেলিভিশন, ফ্রিজ থেকে শুরু করে মোটর চালিয়ে পানি তোলার কাজে এখন প্রমাণিতভাবে সাফল্য পেয়েছে। বর্তমানে উড়োজাহাজ, ভূ-উপগ্রহ, সামুদ্রিক প্রমোদতরী, রেসিংকার থেকে শুরু করে একটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, তাপ অথবা যান্ত্রিক শক্তি সৌরশক্তির সাহায্যে উৎপাদন করা যাচ্ছে। সৌরশক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরের যান্ত্রিক দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে বাণিজ্যিকভাবে তো বটেই শিল্প কল-কারখানার বিপুল পরিমাণ উৎপাদন সৌরশক্তি নির্ভর হয়ে পড়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

প্রাপ্যতার দিকে তাকালে সৌরশক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে পৃথিবীর সিংগভাহ বিদ্যুৎ শক্তির চাহিদা মেটানো সম্ভব। কারণ শুধু এক বছরে যে পরিমাণ সৌরশক্তি পৃথিবীতে আসে তা দিয়ে সারা পৃথিবীর বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী ৮০০০ বছর চলবে। পৃথিবীতে প্রতি বর্গ মিটারে গড়ে ১০৬৫ ওয়াটের সমপরিমাণ সৌরশক্তি আসে। সৌরশক্তি সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন এবং নবায়নযোগ্য। এ খাতে বিভিন্ন দেশই ইতোমধ্যে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের সৌর বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

২।সৌর খামারঃ



আধুনিক সময়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে সৌর খামার স্থাপনের মাধ্যমে শক্তি সংকট সামাল দেওয়ার। এ অবধি গবেষকরা দুটি উপায়ে সৌর খামার স্থাপনের কথা ভেবেছেন। সৌর খামার থেকে যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে একমত হয়েছেন বিশ্লেষকরা। মূলত সৌর তাপ প্ল্যান্টগুলোতে আয়না দিয়ে সূর্যের আলোকে ঘনীভূত করা হয়। তাই এর আরেক নাম ঘনীভূত সৌরশক্তি পদ্ধতি। এ ধরনের পদ্ধতির সাহায্যে পানি থেকে তৈরি করা বাষ্প দিয়ে টারবাইন ঘোরানো হয়। অন্যটিতে আলোক কোষ ব্যবহার করে সরাসরি সূর্যশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য এ শক্তির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশাল খোলা মাঠে সোলার প্যানেল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এ ধরনের খামার গড়ে তুলতে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে উন্নত দেশগুলো।



>> বাংলাদেশ এই প্রযুক্তির ব্যবহার খুব সহজেই সম্ভব। এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করা সময়ের ব্যপার মাত্র।

৩। বায়ু শক্তিঃ



বাতাসের শক্তিকে কাজে লাগানোর কথা অনেক আগে থেকেই ভেবে এসেছেন গবেষকরা। 'উইন্ড মিল' স্থাপনের পর থেকেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয় বায়ু খামার। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বায়ুচালিত জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গেল কয়েক বছরে সর্বমোট ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার মাধ্যমে সাফল্যের প্রমাণ মিলেছে সেখানে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে বায়ু খামার বা উইন্ড মিল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালেই দেখা যাবে, তাদের কর্ম-পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের শক্তির উৎস হিসেবে ২০৩০ মধ্যে তাদের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার পাঁচ ভাগের এক ভাগ বায়ুশক্তির সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে পূরণ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সফলতা দেখা মিলেছে ডেনমার্কে। তাদের চাহিদার বিশভাগ শক্তির জোগান দিচ্ছে উইন্ড মিলগুলো। প্রাকৃতিক উৎস দিয়ে পরিচ্ছন্ন শক্তির ব্যবস্থা করার স্বপ্ন পূরণে বায়ু খামার স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যাবে অদূর ভবিষ্যতে।

>>বাংলাদেশে এই শক্তি কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মত আমরাও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। আর এই জন্য আমরা কাজে লাগাতে পারি আমাদের বিশাল সমুদ্র অঞ্চল।

৪।পানির স্রোত শক্তিঃ



পৃথিবীর বড় একটি অংশই ঢেকে রয়েছে পানি দিয়ে। সমুদ্র ও নদী অববাহিকায় বয়ে চলা জলের প্রবাহমান শক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতের শক্তি সংকট মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে গবেষকরা। এরই মধ্যে স্রোত ও প্রবাহমান পানি থেকে শক্তি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কিছু উন্নত দেশ। পিছিয়ে নেই উন্নয়নশীল দেশগুলোও। নদী, সাগর বা জোয়ার-ভাটার স্রোত কাজে লাগিয়ে এবং খালের মতো কৃত্রিম জলপথে প্রবাহ তৈরি করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। জলের স্রোত ও প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের শক্তি সংকটে এভাবে শক্তি উৎপাদনে বিশেষভাবে মনোযোগী শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রগুলো। এভাবে শক্তি উৎপাদনে কোনো ধরনের দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এরই মধ্যে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয়েছে। উত্তাল সমুদ্রের জলরাশি কীভাবে কাজে লাগানো যায় বা এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েই কাজ চলছে।

>>নদী মাতৃক বাংলাদেশ হতে পারে এই শক্তির ব্যবহারের প্রথম সারি।

৫। ভূ-উত্তাপ শক্তিঃ



মাটির নিচে জমা রয়েছে ভূ-উত্তাপ শক্তি। এ শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার এখনো সব দেশে দেখা যাচ্ছে না। তবে গবেষকদের দীর্ঘদিনের গবেষণার ফল পেতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দেড় শতাংশ বৈদ্যুতিক শক্তির পেছনে অবদান রয়েছে এই জিও-থার্মাল শক্তির। বাস্তবে এই শক্তির নমুনা কিছুটা উপস্থাপন হতে দেখা যায় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ঘটনার দিকে তাকালে। আসলে বিপুল পরিমাণ জিও-থার্মাল শক্তি ভূ-ত্বকের নিচে কার্যতম বন্দী হয়েই আছে। গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন আগামী দিনের পৃথিবীর বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই শক্তি। জিও-থার্মাল হিট ব্যবহার করে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে ঘরের প্রয়োজনীয় কাজেও। বর্তমান বিশ্বে প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট ভূ-উত্তাপ শক্তি বা জিও-থার্মাল শক্তি উৎপাদিত হচ্ছে। এর বড় অংশই প্রায় দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াটই আমেরিকাতে উৎপাদিত হচ্ছে। আশার কথা হচ্ছে, সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন এ শক্তি প্রচুর পরিমাণে মজুদ আছে মাটির নিচেই।

>>আমরাও কি ব্যবহারের চেষ্টা করে দেখতে পারি না এই পদ্ধতির।

৬।সমুদ্র-তাপ শক্তিঃ



সূর্যের তাপ কাজে লাগানোর অন্যতম উপায় সাগরের তাপশক্তির রূপান্তর ঘটানো। প্রতিদিন সূর্যশক্তির এক শতাংশের দশভাগের একভাগেরও কম পরিমাণ শক্তি সাগর শুষে নিচ্ছে। এই তাপশক্তি কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া বের হয়ে এসেছে সমুদ্র-তাপ ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ শক্তির জোগান দেওয়া। সমুদ্র উপরিতলে সূর্যের তাপশক্তিকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে পৃথিবীর ভবিষ্যতের শক্তি সংকট বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। সাগরের উপর দিকের পানি সূর্যের আলোয় উষ্ণ হয় বলে এর নিচে দিকের পানি থাকে শীতল। অল্প তাপে ফুটতে শুরু করে এমন তরল ব্যবহার করে সাগরের উপর দিকের পানি হতে তাপ সংগ্রহ করে বিশেষ প্ল্যান্টের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তারপর এই গ্যাসকে সাগরের গভীরে পাঠিয়ে শীতল করে বারবার ব্যবহার করা হয়।

আমাদের বিশাল সমুদ্র অঞ্চলকে কাজে লাগিয়ে আমরা শক্তি উৎপাদনে এগিয়ে যেতে পারি কি?

৭।পারমাণবিক শক্তিঃ



অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শক্তির উৎস হবে পারমাণবিক শক্তি। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে সে পথেই হাঁটছে বিশ্ব। পারমাণবিক শক্তি হলো মূলত শক্তির এক প্রকার রূপ। নিউক্লীয় ফিউশন বা ফিশন বিক্রিয়ার ফলে এ শক্তির উদ্ভব ঘটে। কোনো একটি ভারি মৌলের পরমাণুকে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে ভারি মৌলটি ভেঙে দুটি হালকা মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয় এবং বিপুল পরিমাণ তাপশক্তির বিকিরণ ঘটে। এ শক্তিকেই বলা হয় পরমাণু শক্তি। পরমাণুর কেন্দ্র যত ছোট হোক না কেন ক্ষুদ্র এই বস্তু পিণ্ডটাকে একসঙ্গে ধরে রাখতে এর ভেতর অসম্ভব পরিমাণে শক্তি সঞ্চিত থাকে। নিরাপদ বিদ্যুতের ভালো একটি সমাধান হলো এই পারমাণবিক শক্তি। ফ্রেঞ্চ পদার্থবিদ হেনরি বেকেরেল সর্বপ্রথম ১৮৯৬ সালে পারমাণবিক শক্তি উদ্ভাবন করেন। তিনি অন্ধকারে ইউরেনিয়ামের পাশে রক্ষিত ফটোগ্রাফিক প্লেটের বর্ণ পরিবর্তন দেখে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হন। এরপর আরও উন্নত প্রযুক্তি আমাদের হাতে এসেছে এবং পারমাণবিক শক্তিকে আরও নিরাপদভাবে উৎপাদন ও ব্যবহারের প্রক্রিয়ার খোঁজ মিলেছে। পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের সাফল্য ঘেঁটে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বেশ এগিয়ে আছে। দেশটির মোট বিদ্যুতে পাঁচ ভাগের এক ভাগ আসছে আণবিক শক্তি কেন্দ্র থেকে। তাপ উৎপাদন করে যা বিভিন্ন গবেষণা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়।

>>বাংলাদেশে পাবনার রূপপুরে (বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০১৩) পদ্মা নদীর তীরে দেশের প্রথম পরমানু বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রাশিয়ার সহযোগিতায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হবে। ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাযুক্ত রাশিয়ার সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে ১ হাজার মেগাওয়াটের দু’টি ভিভিআর রিঅ্যাক্টর সম্বলিত পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে এটি। ১৯৬১ সালে পরামানু কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ১৯৬৩ সালে প্রস্তাবিত ১২টি এলাকার মধ্য থেকে রূপপুরকে বেছে নেওয়া হয়।

“২০২১ সালের মধ্যে দু হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা যাবে কি না, এর পরিবেশগত প্রভাব কী হবে, কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, ব্যয় কেমন হবে—এসব জরুরি বিষয় নির্ধারণের জন্য অনেকগুলো সমীক্ষা করতে হবে। এ জন্য সময় লাগবে অন্তত দেড় বছর।

ওই সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব প্রক্রিয়ায় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোস্যাটম। সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।

৮। বর্জ্যকে শক্তি সম্পদে রূপান্তর:



উন্নত দেশগুলোর মতো বর্জ্যকে পুনঃব্যবহারযোগ্য এবং এ হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা বাংলাদেশে এখন সময়ের ব্যপার।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে প্রতিদিন ২৪০ টন জৈব সার তৈরি করা সম্ভব হবে। এর ফলে বছরে জাতীয় তহবিলের ৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তাছাড়া কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০ হাজার লোকের।এ ছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুত্ তৈরি করে তা আমাদের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে।

রাজধানীর বর্জ্য থেকে বিদ্যুত্ তৈরি করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিদেশী একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ওই কোম্পানি প্রতিদিন ১০ হাজার টন বর্জ্য থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ তৈরি করবে। এছাড়াও বেশ কয়েক বছর ধরে ডিসিসির কাছ থেকে ওয়েস্ট কনসার্ন নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রতিদিন ৭শ-৮শ টন বর্জ্য নিয়ে কমপোস্ট সার তৈরি করে মার্কেটে বিক্রি করছেন।বর্জ্যের ধরণ: রাজধানীতে উত্পন্ন বর্জ্যগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়। জৈব বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য বর্জ্য (ধাতব এবং বিবিধ বর্জ্য এতে অন্তর্ভূক্ত। বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করলে একদিকে যেমন বিভিন্ন পদার্থ/দ্রব্যাদি নির্মানের কাঁচা মালের পরিবেশ সম্মত যোগান সম্ভব হবে এবং অন্যদিকে বর্জ্য ফেলার ল্যান্ডফিলের আয়ুস্কাল বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য বর্তমানে ঢাকা সিটির জন্য দুটি মাঝারি ধরনের ল্যান্ডফিল রয়েছে যা আগামী ৫-৭ বছরের মধ্যে ভরাট হয়ে যাবে। ল্যান্ডফিলের জন্য উপযুক্ত জায়গা পাওয়া ঢাকা সিটির জন্য খুবই দুস্কর। বর্জ্য থেকে বিদ্যু, কম্পোস্ট সার রূপান্তর ব্যতীত এবং বর্জ্যের পুনচক্রায়ন ছাড়া ল্যান্ডফিলের উপর বর্জ্যের চাপ কমানো সম্ভব নয়।

আমরা আশা করতেই পারি শক্তি সম্পদের চাহিদা মিটিয়ে এক সময় আমরা বাড়তি শক্তি পাশের দেশ গুলিতে রপ্তানি করতে পারব।

সূত্র--- ব্লগ, পত্রিকা, নেট।

বিষয়: বিবিধ

২২১৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

244907
১৫ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
244908
১৫ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৪
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আপনার চিন্তা অনেক সুন্দর তবে আমাদের দেশের মাথা মোটারা সুন্দর চিন্তা পছন্দ করে না তারা নিজেদের শারীরিক ও পকেটের উন্নতি হয় কিভাবে সেই চিন্তা দ্বারা বাছাই করে কাজ করে। অনেক ধন্যবাদ
245041
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:০০
egypt12 লিখেছেন : এভাবে হলে পৃথিবীতে খনিজ তেল নিয়ে সংঘাত কমে যাবে Rose
245763
১৮ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৩১
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাদেরকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File