রাইস ব্র্যান হেলথ ভোজ্য তেল (ক্রুড রাইস ব্র্যান অয়েল)
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৫ জুন, ২০১৪, ০৩:৫৪:১৪ দুপুর
রাইস ব্র্যান হেলথ ভোজ্য তেল (ক্রুড রাইস ব্র্যান অয়েল)
বড় আশ্চর্যের বিষয় , ছোট কালে ধান হতে চাল করার সময় ( প্রথমে ধান পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে বড় বড় চুলায় ড্রামে করে সেদ্ধ করে রোদে শুকিয়ে কলে গিয়ে কুটে আনতে হত) চালের সঙ্গে পাওয়া যেত কুড়া। সেই কুড়া কে বেশির ভাগ মানুষ গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত । কেও কেও পুকুরে মাছের খাদ্য হিসেবে অথবা জ্বালানি হিসেবে।জ্বালানি ও পোল্ট্রি খামার ছাড়া আর কোন কাজে লেগেছে বলে জানা নেই। পরে এই কুড়া বা তুষ হতে মেশিনে প্রক্রিয়াজাত করে চারকল বা চারকোল নামে এক ধরনের জ্বালানি প্রস্তুত করা হয়েছিল। যা গ্রামে এবং শহরে সমান জনপ্রিয় হয়েছিল জ্বালানি হিসেবে।
এই ছিল বাংলাদেশে ধানের তুষ বা কুড়ার সবোচ্চ ব্যবহার।
কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে সেই তুষ হতে প্রস্তুত হচ্ছে তেল! ভাবা যায় বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে বিশ্বের এক নম্বর ভোজ্য তেল হিসেবে ধানের তুষের নির্যাস থেকে তৈরি রাইস ব্র্যান হেলথ ভোজ্য তেল (ক্রুড রাইস ব্র্যান অয়েল)।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৫/২০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে সরিষাসহ বিভিন্ন তেলজাতীয় শস্য থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন হয় মাত্র ৫ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ভোজ্যতেলই বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।
তাই তুষ হতে উৎপাদিত এই তেল আমাদের যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান করবে তেমনি বিদেশে রপ্তানি করে আয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
রাইস ব্র্যান ,দেখে নিই উপকার গুলিঃ
বাজারে প্রচলিত তেলের তুলনায় স্বাস্থ্যকর এই তেলে নানা ওষুধি গুণ থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্যে অধিক উপকারী।
>রাইস ব্রান অয়েল প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ এবং শতভাগ কোলেস্টেরলমুক্ত।
>এতে ভিটামিন এ, ডি, ই ও ওমেগা ৩ আছে, যা রক্তের LDL(মন্দ কোলেস্টেরল) মাত্রা কমিয়ে এবং HDL (ভালো কোলেস্টেরল) মাত্রা বাড়িয়ে হূদেরাগের ঝুঁকি প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।’
>ভিটামিন ই সমৃদ্ধ রাইস ব্র্যান অয়েল রক্তনালী পরিষ্কার করে, পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, নার্ভাস সিস্টেমকে আরও কার্যকর করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সঠিক অনুপাতে খতিকর কোলেস্টেরল তৈরি হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
>এ ছাড়া উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত ক্রুড অয়েল, গাম ও ফ্যাটি এসিড সাবান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
রপ্তানিঃ
ধানের তুষ ও কুঁড়া থেকে উৎপন্ন তেল (ত্রুক্রড রাইস ব্যান্ড অয়েল) ভারতে রফতানি বেড়েছে। গত দেড় বছরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সাড়ে ১৫ হাজার টন তেল রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপন্ন এ তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে প্রতিবেশী দেশটিতে। প্রতি মেট্রিক টন ৮শ’ ৮৫ মার্কিন ডলার দাম ধরে বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করছে।
তবে পরিবেশের সমস্যা গুলি পাশ কাটানো যাবে নাঃ ঐতিহ্যবাহী মৃগি নদী কি হতে যাচ্ছে আরেক বুড়িগঙ্গা ???????
স্পন্দনের বর্জ্যে বিপর্যস্ত জীববৈচিত্র
শেরপুর জেলার একমাত্র ধানের তুষ থেকে তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্পন্দনের অপরিশোধিত বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী মৃগি নদী। ফলে নদী অববাহিকার বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে পরিবেশ বিপর্যয় ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
শেরপুর পৌর শহরের পশ্চিম সেরী এলাকায় চাপাতলী খাল সংলগ্ন গত প্রায় ২ বছর আগে ২৯০ শতক জমিতে ‘ইমারেল’ ওয়েল কোম্পানির রাইস ব্র্যান ওয়েল (ধানের তুষ থেকে তৈরি ভোজ্য তেল) ‘স্পন্দন’ তেলের কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় ওই চাপাতলি খাল দিয়ে। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বের খাল বেয়ে ওই বিষাক্ত বর্জ্য নেমে যাচ্ছে মৃগি নদীতে।
ওয়েল মিল এলাকা এবং পশ্চিম সেরী মহল্লার প্রায় আধা কিলোমিটার জুড়ে চাপাতলী খালের দু’প্রান্তে ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার বসবাস করে। এসব পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে জানান যে এক সময় এ খালে পানি কম থাকলেও কই, মাগুর, সিং, বাইম, টাকি, চিংড়িসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। আর বর্ষা মওসুমে আরো অনেক প্রজাতির মাছের খামার হিসেবে পরিচিত ছিল এই চাপাতলি খাল।
অপরদিকে মৃগি নদীতে এক সময় বড় বড় বোয়াল, রুই, কাতলা, চিতল মাছসহ বিভিন্ন মাছের বেশ সুনাম ছিল। বিশেষ করে মৃগি নদীর বোয়াল মাছের কদর ছিল জেলার বাইরেও। যদিও শুষ্ক মওসুমে আগের মতো এ নদী ও খালে খুব বেশি পানি থাকে না, তবুও যে সামান্য পানি থাকে সেখানেই স্থানীয় মানুষ গত দুই বছর আগেও জাল, বেড় (বাঁশের চাই) ও বরশি দিয়ে প্রচুর মাছ ধরতেন।
এছাড়া এ নদী ও খালের পানিতে আশপাশের অসংখ্য জমিতে ধানের বীজতলা তৈরি এবং ইরি আবাদের পানির চাহিদা মেটাতো। এছাড়া হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশুর খাবার পানির উৎস ছিল এ খাল ও নদী। কিন্তু এতে গবাদি পশুর নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত এবং মরে যাওয়ার কারণে ওইসব এলাকার কৃষকদের এখন বিকল্প ব্যবস্থায় সেচ এবং গবাদি পশুর খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিষাক্ত বর্জ্যের দুর্গন্ধে আশপাশ এলাকার সাধারণ মানুষকেও নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হচ্ছে। বিশেষ করে চাপাতলি খাল এলাকার মানুষ এ দুর্গন্ধের কারণে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে এলাকার ভুক্তভোগীরা ।
এদিকে ওই বিষাক্ত পানি যার গায়ে একবার লাগে তার গায়ে ঘা হয়ে ফুলে যাচ্ছে। ফলে ওখানকার সাধারণ মানুষ শিশুদের নিয়ে চিন্তায় রয়েছে। কারণ বড় মানুষ ওই পানির ক্ষতির দিকটা বুঝলেও শিশুরা না বুঝে পানিতে নামতে চায়। এ কারণে অভিভাবকরাও সব সময় চিন্তায় থাকেন তাদের শিশুদের নিয়ে কখন খাল এবং নদীতে নেমে পড়ে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এ বিষয়ে পৌরসভা এবং ওই তেল মিল কর্তৃপক্ষকে বারবার অভিযোগ জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
জেলার পরিবেশবিদরা জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে শেরপুরের ওই তেলের মিল দিলেও ওই মিলের বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা ‘ডব্লিউটিপি’ প্লান্ট না বসিয়েই তারা প্রায় দুই বছর ধরে তাদের তেল উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে। এ ওয়েল মিলের বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে ইতোমধ্যে চাপাতলি খাল ও মৃগি নদীর অববাহিকার জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে তা অব্যহত থাকলে আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে জেলার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ভায়াবহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে ।
ফরচুন রাইস ব্র্যান হেলথ ভোজ্য তেলের মোড়ক উন্মোচন
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/282000.html
বাংলাদেশে বিভিন্ন যায়গায় গড়ে উঠছে রাইস ব্র্যান হেলথ ভোজ্য তেল উৎপাদন কারখানা। এগুলি যেন মিলের বিষাক্ত বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা ‘ডব্লিউটিপি’ প্লান্ট বসিয়ে উৎপাদনে আসে তা দেখ ভাল করার আবেদন যানাই যথাযথ মহলকে।
বিষয়: বিবিধ
২৫৩০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন