এই গরমে কচি তালের শাঁস বা চোখ
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৬ মে, ২০১৪, ০২:২১:৩৭ দুপুর
এই গরমে কচি তালের শাঁস বা চোখ
তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উঁকি মারে আকাশে। -কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অথবা
‘ঐ দেখা যায় তালগাছ
ঐ আমাদের গাঁ
ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছাঁ..------ খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দিন
—এ সব কবিতা ছোটবেলায় হাত-পা নাড়িয়ে আবৃত্তি করেনি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
বাংলাদেশের সর্বত্র তালগাছ দেখা যায়। তালগাছ শাখা-প্রশাখা বিহীন একবীজপত্রী উদ্ভিদ। তালগাছ বাড়ির আনাচে-কানাচে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে, পরিত্যক্ত স্থানে বেশি দেখা যায়। তবে দিনে দিনে বিলুপ্তির পথে তালগাছ । তালগাছ কিন্তু দীর্ঘজীবী। পৃথিবীর বহু দেশে তালগাছ আছে। এই গাছ কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে।
তালগাছের প্রতিটি অংশই আমাদের প্রয়োজনীয়। পাতায় ঘরের ছাউনি, জ্বালানি, গরমের বন্ধু হাত পাখা, পাতার ডগার আঁশ দিয়ে মাছ ধরার নানা যন্ত্র তৈরির উপকরণের যোগানদার এই তালগাছ। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানির বিখ্যাত টুপি এই তালের আঁশ দিয়েই তৈরি।
আবার গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি হয় ঢেঁকির নোট। তালের ডোঙা বর্ষাকালে গ্রামবাংলার অন্যতম বাহন। তালের রস, তালের গুড়, কচি তালের শাঁস, পাকা তাল, তালের পিঠা, পাকা তালের বিচির শাঁস এরসবই অত্যন্ত মজার ও উপাদেয় খাবার। আর তাল এর দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়। তাল যখন কাঁচা থাকে, তখনো খাওয়া যায়, তখন বাজারে এটি পানি-তাল হিসেবেই বিক্রি হয়।কেউ বলে তালশাঁস আবার কেউ বলে তালের চোখ, কেউ বলে তালকোরা। যে যেই নামে চিনুক বা জানুক এটি মৌসুমি ফল। মধুমাস জ্যৈষ্ঠতে বিভিন্ন ফলের সঙ্গে এই ফলেরও কদর বাড়ে। খেতে সুস্বাদু ফলটি রাস্তার মোড়ে, ফুটপাতে কিংবা হাট-বাজারে এ সময়টায় দেদার বিক্রি হয়।অনেকে বিক্রির জন্য এই কচি তাল বাজারে তুলেছেন। আর চোখে পড়ে বিক্রেতারা হাঁসুয়া বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাল কেটে তালের শাঁস বের করছে।
বাজারে আসা অসংখ্য ফলের চেয়ে তালশাঁসের বৈশিষ্ট্য আলাদা। একটি তালে ২-৩টি বীজ বা আঁটি থাকে। পরিপক্ব হওয়ার আগে সুস্বাদু তালশাঁস তুলতুলে থাকে। মূলত তালের ভেতরে নরম তুলতুলে শাঁসই তালকোরা বা তালশাঁস। এটি ঠাণ্ডা ও মিষ্টি জাতীয় সুস্বাদু খাবার। সব বয়সের মানুষের কাছে প্রিয়।গরমের দিনে পিপাসা কাতর পথিকের তৃষ্ণা মেটায় তালে শাস। তালের শাস শরীর শীতল করা একটি অতি সু স্বাদু উপকরণ। শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার কাছে প্রিয় তালের শাস।
আবার মৌসুমি ফল বলে শখের বশেই অনেকে এটি খায়। দামেও বেশ সস্তা। তাই বাজারে এর কদরও বেশি।
গ্রামের স্মৃতিঃ আগে গ্রামে গেলে আব্বা আমাদের সকলকে নিয়ে যেতেন তালের শাঁস খেতে। পুকুর পাড়ের লম্বা লম্বা তাল গাছে কান কান(ছড়া ছড়া/ গুচ্ছ গুচ্ছ/ঘড়া ঘড়া) তাল ধরে থাকত। বেছে বেছে কচি দেখে তালের ছড়া/কান পাড়তে বলতেন আমাদের চাচাদের। চাচারা সরসর করে কি অদ্ভুদ সহজাত ভাবে উঠে যেতেন লম্বা লম্বা তাল গাছে। এর পর তালের ঘড়া কেটে নিচে ফেলত, আর অন্য কেউ কেটে দিত কচি তালের চোখ। আর আমরা ভাই বোনরা মিলে হই হুল্লা করে খেতাম কচি তালের শাঁস। আহ খুব মিছ করি সে সব সময়,সেই তাল গাছ।
তালের পুষ্টিগুণ : পাকা ও কাঁচা তালের খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে খনিজ ০.৮ গ্রাম, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৩ গ্রাম, আমিষ ০.৮ গ্রাম, শর্করা ২০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শক্তি রয়েছে প্রায় ৮৭ কিলোক্যালরি।
তালের রস শ্লেষ্মানাশক। এটা নিবারণ করে মূত্রকর, প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য। তালমিশ্রি সর্দি-কাশির মহৌষধ। যকৃতের দোষ নিবারক ও পিত্তনাশক।তালে থাকে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও আঁশ। প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, অ্যামাইনো অ্যাসিডেরও ভালো উৎস তাল। এ ছাড়া আছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও আয়রন।
তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া হূৎস্বাস্থ্যের সুরক্ষায়ও তাল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। স্মৃতি মুছে যাওয়া রোগের জন্যও তাল ভালো।
দরদামঃ একটি আস্ত তাল ১০ থেকে ১৫ টাকা বেচাকেনা হয়। তালের ভেতর ৩টি আঁটি বা শাঁস পাওয়া যায়। এখন বাজারের রাস্তার পাশে, ফুটপাতে বসে বিক্রি হচ্ছে। অনেক তালশাঁস বিক্রেতা স্কুল, কলেজের গেটেও বসেন। অনেক বিক্রেতা গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছের মালিকদের কাছ থেকে পাইকারি কচি তাল কেনেন। একটি গাছে ৩শ’ থেকে ৫শ’ তাল ধরে। প্রতিটি কচি তালের পাইকারি দাম ৮টাকা থেকে ১০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি গাছের তাল ১২ থেকে ১৫শ’ টাকা করে বিক্রি হয়।
শেষ কথাঃ
সত্যি কথা বলতে, গ্রামে না গেলে এখন আর তালগাছ খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই কখনো তাল হাতের কাছে পেলে কিনে ফেলুন। পুষ্টি পূরণও হবে, সঙ্গে স্বাদেও আনবে বৈচিত্র্য।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তালের পোষ্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ
তবে যে জিনিসটা অপ্রিয় তা হচ্ছে পুংকেশর তালগাছের ফলের রস। একবার একজন একে তালের রস বলে খাওয়ানর চেষ্টা করেছিল। বিশ্রি গন্ধ এক চুমুক এর বেশি খাওয়া হয়নি।
http://forum.projanmo.com/topic43995.html
মন্তব্য করতে লগইন করুন