গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব: ০৫

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৮ মে, ২০১৪, ১২:২৮:০৭ দুপুর

গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব: ০৫



পর্ব; ৪

পর্ব: ০৩

পর্ব: ০২

পর্ব: ০১

হারিয়ে গেছে প্রাচীন ঐতিহ্য(কুইল ,খাগ, নিব ও কালির কলম)

ডাঙগুলিঃ



ডাংগুলি- অন্যতম জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলা এই ডাঙগুলি। সাধারণত কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরাই এই খেলা খেলে থাকে। এদেশে ক্রিকেট আসার আগে এই খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিল। আদতে ডাঙ্গুলি এখনকার জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের গ্রাম্য সংষ্করণই বলা চলে। ক্রিকেটের ব্যাট ও বলের মতো ডাঙ্গুলিতে আছে ডান্ডা ও গুলি। আরও মজার ব্যাপার যেটি তা হল, এখানেও ক্যাচ ধরা বা ডান্ডায় আঘাত করে আউট করার নিয়ম আছে।

>ক্যাচ ধরার চেষ্টা



বিভিন্ন নামঃ বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে খেলাটি ড্যাংবাড়ি, গুটবাড়ি, ট্যামডাং, ভ্যাটাডান্ডা ইত্যাদি নামে পরিচিত।তবে ডাঙ্গুলি নামেই এটি বেশি পরিচিত।



খেলোয়াড়ঃ

দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে ভাগ হয়ে খেলতে পারে এ খেলা ।



উপকরণঃ

খেলার উপকরণ মুলত দু'টি--- প্রায় দেড় হাত থেকে দুই ফুট লম্বা লম্বা একটি লাঠি, একে বলে ডাং বা ডাণ্ডা এবং অপরটি গুলি‘/ ‘ফুলুক’ বা ‘ফুত্তি’ নামে পরিচিত, যা আসলে গোল নয়, একটি ২ ইঞ্চি লম্বা ছোট লাঠি। যার ২ দিক কিছুটা চোখা থাকে। এই ডাং এবং গুলি বিভিন্ন গাছের লম্বা মোটা মুটি লম্বা এবং মোটা ডাল কেটে বানানো হয়।



খেলার নিয়ম কানুনঃ

খোলা মাঠে একটি ছোট্ট গর্ত করা হয় শুরুতেই। প্রথম দান পায় যে দল তাদের একজন গর্তের উপর ছোট কাঠিটি রেখে বড় লাঠির আগা দিয়ে সেটিকে যতদুর সম্ভব দুরে ছুঁড়ে মারে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা চারদিকে দাঁড়িয়ে সেটিকে লুফে নেওয়ার চেষ্টা করে। ধরতে পারলেই খেলোয়াড় আউট। অন্যথায়, খেলোয়াড় বড়



লাঠিটিকে আড়াআড়ি ভাবে রাখে। অপরপক্ষ, ছোটকাঠিটি যে জায়গায় পড়েছে সেখান থেকে ছুঁড়ে মারে গর্তের দিকে। কাঠিটি যদি বড় লাঠিটিকে আঘাত করে তবে প্রথম খেলোয়াড় আউট হয়ে যায়। তা না হলে প্রথম খেলোয়াড় পড়ে থাকা কাঠির কাছে গিয়ে বড় লাঠি দিয়ে বিশেষ কায়দায় আঘাত করে সেটিকে শূন্যে তোলে। শূন্যে থাকা অবস্থায় বড় লাঠি দিয়ে আঘাত করে দুরে পাঠিয়ে দেয়। আগের মতোই অন্যেরা সেটা ক্যাচ ধরে আউট করার চেষ্টা করে ওই ক্রিকেটের নিয়মে। কেউ আউট না হলে প্রথম খেলোয়াড় বড় লাঠিটি গর্তের উপর রাখে আড়াআড়ি ভাবে। দুর থেকে অপরপক্ষ কাঠিটি ছুঁড়ে যদি বড় লাঠিকে আঘাত করতে পারে, তাহলেও মূল খেলোয়াড় আউট।



দ্বিতীয় দফায় যেখানে পড়লো ছোট কাঠিটি সেখান থেকে গর্তের দুরত্ব মাপা হয় ।লম্বা লাঠিটি দিয়ে সাত পর্যন্ত মাপের আঞ্চলিক নাম হলো: বাড়ি, দুড়ি, তেড়ি, চাঘল, চাম্পা, ঝেঁক, মেক। এরূপ সাত মাপে এক ফুল বা গুট এবং সাত ফুলে এক লাল হয় অথবা মুনা, ধুনা, তিনা, চারা, পাঁচা, ছৈ, গৈ করেও মাপা হয়।ভাঙা ফুলের ক্ষেত্রে যেখানে শেষ হয়, পরের খেলা সেখান থেকে শুরু হয়। বাড়ি, দুড়ি ইত্যাদি প্রতিটি মারের পৃথক পৃথক পদ্ধতি আছে। আউট না হওয়া পর্যন্ত একজন খেলোয়াড় খেলতে পারে, আউট হলে দ্বিতীয় একজন একই পদ্ধতিতে খেলবে। এভাবে সবাই আউট হয়ে গেলে বিপক্ষ দল দান পেয়ে খেলা শুরু করে ।



কয়-লাঠি গোনা হলো এবং প্রতিপক্ষের খেলার সময় ও দুজনের গোনাগুনতির পরিমাণের ওপরই নির্ভর করে খেলার জয় পরাজয়।

বিপদ ও সাবধানতাঃ

গুলিটি চোখে লেগে অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয়বার মারার পর এর তীব্র বেগ ও সূচালো প্রান্তের চোট এই খেলাকে দুর্ঘটনাপ্রবণ



করেছে।তাই এ খেলার সময় সময় সাবধান থাকতে হবে।

------------------------------------

ওপেন্টি বায়োস্কোপ :



ওপেন্টি বায়োস্কোপ হল মেয়েদের খেলা। ছোট ছোট মেয়েদের অনেক পছন্দের একটি খেলা। বিশেষ করে এ খেলাটি গান গেয়ে খেলতে হয়। গানটি এরূপ-

ওপেন্টি বায়োস্কোপ,

'নাইন টেন তেইশ কোপ/রাইটেন টেইস্কোপ

সুলতানা বিবি আনা

সাহেব বাবুর বৈঠকখানা।

সাহেব বলেছে যাইতে

পান সুপারি খাইতে

পানের বোঁটা মরিচ আটা

স্পিরিংয়ের চাবি আটা

আমার নাম মধুবালা/ যার নাম বেনুমালা

গলায় দিব মুক্তার মালা'/ তারে দিব মুক্তারমালা ।

খেলার নিয়মাবলীঃ

এই খেলতে সাধারণত দুটি পক্ষের প্রয়োজন হয়। প্রথম পক্ষের দু'জন তাদের হাত উঁচু করে ধরে ফাঁদের আকারে দাঁড়িয়ে থাকে , যাতে মনে হয় একটা দরেরাজা তৈরি হয়েছে। তাদের তৈরি দরোজার মাঝ দিয়ে অন্যেরা লাইন ধরে চক্রাকারে ঘুরতে পারে।



আর অন্য পক্ষের খেলোয়াড়রা সেই ফাঁদের ভেতর দিয়ে---

'ওপেন্টি বায়োস্কোপ/ নাইন টেন তেইশ কোপ/ সুলতানা বিবি আনা/ সাহেব বাবুর বৈঠকখানা/ সাহেব বলেছে যাইতে/ পান সুপারি খাইতে/ পানের বোঁটা মরিচ আটা/ স্পিরিংয়ের চাবি আটা/ আমার নাম মধুবালা/ গলায় দিব মুক্তার মালা'



বলতে বলতে পার হতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, এই ছড়াটি যে ছেলে বা মেয়ের পার হওয়ার মুহূর্তে শেষ হয়, সে-ই ফাঁদে আটকে পড়ে। ছড়ার শেষ লাইনের (আমার নাম মধুবালা/ যার নাম বেনুমালা ----

গলায় দিব মুক্তার মালা/ তারে দিব মুক্তারমালা ) শেষ শব্দটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে দরোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকা ওই মেয়ে দুটি তাদের হাত নামিয়ে সবচেয়ে কাছের মেয়েকে ধরে ফেলে।



একে নিয়ে শুরু হয় আরেক খেলা। দুজন তার দুই হাত ও দুই পা ধরে ঘুরে বেড়ায়। এভাবেই সামনে এগুতে থাকে খেলাটি। এ খেলাটিতে আসলে বুদ্ধি দিয়ে পার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। শারীরিক কসরতই আসল। দম ফুরিয়ে যাওয়ার আগে যারা দ্রুত ওই ফাঁদ পার হতে পারে, তারা বিজয়ী হয়।এভাবেই শেষ হয় ওপেনটি বায়োস্কোপ।



বিষয়: বিবিধ

২৯০৫ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

222933
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৩২
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ পুরাতন স্মৃতি গুলো আমাদের সামনে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য,
আসলে আমাদের জীবনকে যদি Undo করা যেত তাহলে সেই ছোটবেলার জীবনটাই Undo করতাম।
হে প্রভু ! আমার জীবনকে Undo করার ক্ষমতা দাও
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫
170282
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ি হি MOney Eyes
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০১:১৭
170290
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : হে প্রভু ! আমার জীবনকে Undo করার ক্ষমতা দাও Crying Crying
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০১:১৮
170291
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : Time Out Time Out Time Out Time Out Time Out
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০২:৩১
170328
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone Don't Tell Anyone
222957
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০১:১৮
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : Rose Rose Good Luck Good Luck Rose Rose অন্নেক ভালো লাগলো Good Luck Good Luck যাজাকাল্লাহু খাইর।
১৯ মে ২০১৪ রাত ১২:৫১
170566
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
223033
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৮
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : পড়ে হঠাৎ করে যেন হারিয়ে গেলাম ছোটবেলায় গ্রামের মাঠঘাটে খেলার মাঠে। অকাস্মাৎ মনটা দোল খেলো সেই সব স্মৃতির পাতায়। ধন্যবাদ অশেষ ধন্যবাদ মনের মত একটা পোষ্ট দেয়ার জন্য।
১৯ মে ২০১৪ সকাল ০৯:১৭
170626
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
223216
১৮ মে ২০১৪ রাত ১১:৪৩
egypt12 লিখেছেন : ভালো সংগ্রহ!!! Rose Rose Rose
১৯ মে ২০১৪ সকাল ০৯:১৭
170625
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
223327
১৯ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২৮
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৯ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৪৩
170706
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও Good Luck
225417
২৪ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৩৮
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : বেশ মজা পেলাম
২৫ মে ২০১৪ সকাল ০৮:৩৬
172846
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ বাদশা ভাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File