কোল--- প্রায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের আদিম এক পূর্বপুরুষ

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৫ মে, ২০১৪, ০৩:২৯:৪৩ দুপুর

কোল--- প্রায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের আদিম এক পূর্বপুরুষ



কোল উপজাতি সম্পর্কে প্রথম জানি নবম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্র পড়ার সময়। সেখানে বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডার এর শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে এমন---

১। দেশী শব্দ ২। তৎসম শব্দ ৩। তদ্ভব শব্দ ৪। অর্ধ---তৎসম শব্দ ৫। বিদেশী শব্দ

☼ দেশী শব্দঃ বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের ভাষা হতে যে সব সব্দ বর্তমান বাংলা ভাষায় রক্ষিত হয়েছে সে সব শব্দকে দেশী শব্দ বলে। যেমন—কুড়ি(বিশ)—কোল ভাষা।

এই একটাই শব্দের উদাহরণ আছে সেখানে আমাদের আদিম এই পূর্বপুরুষ কোলদের নিয়ে।

অথচ আমরা ইতিহাস হতে দেখতে পাই প্রত্ন-প্রস্তর যুগে এ অঞ্চলে বাস করতো নিগ্রো জাতি যাদেরকে ইতিহাসের পরিভাষায় "নিগ্রোবটু" নামে উল্লেখ করা হয় । এরপর আসে ইতিহাসের নব্য-প্রস্তর যুগ। আসামের উপত্যকা অতিক্রম করে আদিম বাংলায় প্রবেশ করে অষ্ট্রিক জাতীয় জনগোষ্ঠী। নব্যপ্রস্তর যুগ থেকে এই অঞ্চলে বসবাসকারী অষ্ট্রিক ভাষাভাষী আদি নৃগোষ্ঠী । আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি নেগ্রিটোদের উৎখাত করেই অষ্ট্রিক জাতি বাঙলায় আসে । ইতিহাসে কোল, সাঁওতাল, ভীল, মুণ্ডা প্রভৃতি উপজাতির পূর্ব পুরুষ রূপে ধারণা করা হয় এই অষ্ট্রিক জাতিকে ।

অষ্ট্রিকরা যে এই উপমহাদেশে প্রথমে সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো এর প্রমাণ বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করতে পারি । তার কয়েকটি কারণ আমরা বলতে পারি ---

১. উপমহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা হচ্ছে সিন্ধু সভ্যতা । আর এই সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো দ্রাবিড় জাতি । আর ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে অষ্ট্রিকরা দ্রাবিড়দের থেকে পুরনো জাতি । সে হিসেবে অষ্ট্রিকরাই যে গ্রামিন সভ্যতা গড়ে তুলেছিলো তাই উপমহাদেশের পুরোনো সভ্যতা বলে আমরা ধারণা করতে পারি । যদিও বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করতে পারিনা ।

২. ইতিহাসের পাতায় আমরা দেখতে পাই দ্রাবিড় জাতি আর্যদের হাতে মার খেয়ে তৎকালীন অষ্ট্রিক উপজাতি সমূহের বাসস্থানে আশ্রয় নেয় । এর দ্বারা আমরা বুঝতে পারি অষ্ট্রিকদের ঘরবাড়ি ছিলো । আর ঘর-বাড়ী থাকাটাই প্রমাণ করে তারাই উপমহাদেশের প্রথম সভ্যতা নির্মাতা ।

৩. ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত সত্য হচ্ছে অষ্ট্রিকরা ভাষার ব্যবহার জানত। অস্ট্রিক উপজাতি সমূহের মধ্যে এখনো তাদের আদি ভাষা টিকে আছে। বাংলাদেশের কোল, ভীল, মুন্ডা, সাঁওতাল প্রভৃতি উপজাতি অস্ট্রালয়েড নরগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত। বাংলা ভাষার মধ্যেও অস্ট্রিক ভাষার প্রভাব অনেকখানি। বাঙ্গালী জাতির অনেকেরই মধ্যে অস্ট্রিক নরগোষ্ঠীর প্রধান প্রধান দৈহিক বৈশষ্ট্যি বর্তমান আছে। সুতরাং একটি ভাষার ব্যাবহার জানা নিশ্চয়ই সাংস্কৃতিক সভ্যতার নির্মাতা এতে কোন সন্দেহ নাই ।

৪. ইতিহাসের গবেষণায় আমরা আরো লক্ষ করি প্রস্তর যুগের উত্তরকালে অস্ট্রিক জাতির ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র দেশীয় গাছ গাছালী দ্বারা তৈরী হত। অস্ট্রিক জাতি ছিল কৃষি জীবি। সেজন্য অস্ট্রিক জাতির কোন সভ্যতার বস্তুগত প্রমাণ আমাদের হাতে নাই । কারণ, গাছ পচনশীল । সিন্ধু সভ্যতার নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় কারণ তারা তামা, পিতল ইত্যাদির ব্যাবহার জানতো ।

☼ বর্তমান অবস্থাঃ

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৭টি। এগুলো হচ্ছে: চাকমা (চার লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮), মারমা (দুই লাখ দুই হাজার ৯৭৪), ত্রিপুরা (এক লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮), ম্রো (৩৯ হাজার চারজন), তঞ্চ্যঙ্গা (৪৪ হাজার ২৫৪), বম (১২ হাজার ৪২৪), পাঙ্খুয়া (দুই হাজার ২৭৪), চাক (দুই হাজার ৮৩৫), খিয়াং (তিন হাজার ৮৯৯), খুমি (তিন হাজার ৩৬৯), লুসাই (৯৫৯), কোচ (১৬ হাজার ৯০৩), সাঁওতাল (এক লাখ ৪৭ হাজার ১১২), ডালু (৮০৬), উসাই (৩৪৭), রাখাইন (১৩ হাজার ২৫৪), মণিপুরি (২৪,৬৯৫), গারো (৮৪ হাজার ৫৬৫), হাজং (নয় হাজার ১৬২), খাসি (১১ হাজার ৬৯৭), মং (২৬৩), ওঁরাও (৮০ হাজার ৩৮৬), বর্ম্মন (৫৩ হাজার ৭৯২), পাহাড়ি (পাঁচ হাজার ৯০৮), মালপাহাড়ি (দুই হাজার ৮৪০), মুন্ডা (৩৮ হাজার ২১২) ও কোল (দুই হাজার ৮৪৩)।

মাত্র ২৮৪৩ জন কোল টিকে আছে বাংলাদেশে। ভারতে হয়তো একটু বেশি।

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও বিদ্রোহঃ

☼ কৃষক বিদ্রোহ-- ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর থেকে একের পর এক কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ।

☼ ওয়াহাবি আন্দোলন-- ১৭৮৬-১৮৩১ খ্রি. প্রজন্তা আন্দোলন চলে। শেষ পর্যন্ত ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে মেজর স্কটের নেতৃত্বে এক শক্তিশালী ইংরেজ বাহিনী তিতুমীর ও তাঁর অনুগামীদের বারাসত বিদ্রোহে পরাজিত করার মাধ্যমে শেষ হয় এ আন্দোলন।

☼ ফরাজি আন্দোলন-- ১৮১৮ থেকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলন চলে ।১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দুধু মিঞা কারারুদ্ধ হন । করারুদ্ধ অবস্থায় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুধু মিঁয়ার মৃত্যু হয় । দুধু মিঁয়ার মৃত্যুর পর ফরাজি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে ।দুধু মিঁয়ার মৃত্যুর পর পুত্র নোয়া মিঁয়া বা আব্দুল গফুর কিছু কাল পিতার আন্দোলন চালিয়ে যান । আব্দুল গফুর ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় আন্দোলনে পরিণত করেন ।

☼ সন্দীপ বিদ্রোহ-- ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালি জেলার দরিদ্র মুসলিম কৃষকদের বিদ্রোহ সন্দীপ বিদ্রোহ নামে পরিচিত

☼ রংপুর বিদ্রোহ-- ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির ইজারাদার দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরের কৃষকদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।

☼ সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ-- দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ১৭৬৩ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা ও বিহারের দরিদ্র কৃষকেরা অন্ন ও বস্ত্রের জন্য সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ধ্বজা তোলেন । প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিল ।

☼ পাইক বিদ্রোহ-- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে পাইকরা ওড়িশার খুরদা-রাজ্যের সেনাপতি বিদ্যাধর মহাপাত্রের নেতৃত্বে যে ব্রিটিশ বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল তাই পাইক বিদ্রোহ নামে পরিচিত ।

☼ পলিগার বিদ্রোহ--- দক্ষিণের ধনী জমিদার ও সামরিক কর্মচারীগণ ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন । এটি পলিগার বিদ্রোহ নামে পরিচিত । ১৭৮৩ থেকে ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পলিগাররা ব্রিটিশ সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে অবশেষে আত্মসমর্পন করেন ।

☼ মোপলা বিদ্রোহ--- কেরলের মালাবার অঞ্চলের মোপলাদের উত্থান ও বিদ্রোহ কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে এক জ্বলন্ত সংযোজন । ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৮টি অভ্যুত্থানে মোট সক্রিয় বিদ্রোহীর সংখ্যা ছিল ৩৪৯ জন ।

☼ কোল বিদ্রোহ--- ১৮২০-১৮২১ খ্রিস্টাব্দে পোড়াহাটের জমিদার ও তার ইংরেজ সেনাপতি রোগসেস -এর বিরুদ্ধে ‘চাইবাসার যুদ্ধে’ কোলরা পরাস্ত হয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় ।কিছুদিন পর কোলরা আবার ১৮৩১-১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ শুরু করে ।

☼ সাঁওতাল বিদ্রোহ--- ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগ থেকে সাঁওতালগণের মধ্যে অসন্তোষ ও অস্বস্তির ভাব দেখা যায়।১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জুন গোক্কো ও বীরসিং নামক গোষ্ঠীপতিদের ওপর ইংরেজ সরকারের উত্পীড়নের প্রতিবাদে হাজার হাজার সাঁওতাল লাঠি, বল্লম, তির, ধনুক নিয়ে দামিন অঞ্চলে সমবেত হন এবং বেপরোয়া লুঠতরাজ এবং দারোগা ও মহাজনদের হত্যার নেশায় মেতে ওঠেন । বিদ্রোহ ক্রমশ বীরভুম অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে । ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ জুলাই সিধু ও কানহুর নেতৃত্বে প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতালের এক সমাবেশ হয় । এই সমাবেশে তাঁরা সমস্ত পার্বত্য অঞ্চল অধিকার করে এক স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন । ওই দিন থেকেই আনুষ্ঠানিক সাঁওতাল বিদ্রোহের সূচনা হয় ।

☼ চুয়াড় বিদ্রোহ--- চুয়াড় বা চোয়াড়রা ছিল বাংলার মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলমহলের অধিবাসী । বাংলায় কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠার পর কোম্পানির কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলের জমিদারদের ওপর অত্যন্ত চড়া হারে ভূমিরাজস্ব ধার্য করে । এর বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের জমিদাররা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তাঁদের পাইক চুয়াড়গণও সমগ্র জঙ্গলমহল জুড়ে বিদ্রোহ করে । এই বিদ্রোহ প্রায় ৩০ বছর ধরে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে । ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম ধল বিদ্রোহ ঘোষণা করেন । চুয়াড়রাও এই বিদ্রোহে সক্রিয় ভাবে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত ইংরেজ সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয় । অবশেষে কোম্পানি জগন্নাথ সিংহের ভ্রাতুষ্পুত্রকে জমিদারি ফিরিয়ে দেয় । অন্যদিকে ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে ধাদকার শ্যামগঞ্জন -এর নেতৃত্বে চুয়াড়রা বিদ্রোহ ঘোষণা করেও ব্যর্থ হয় । ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুর্বল সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহ সবচেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল, কিন্তু কোম্পানির সেনাদল নির্মম অত্যাচার করে এই বিদ্রোহ দমন করে ।

☼ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ---- ১৮৫৭ সালে এনফিল্ড রাইফেলের প্রচলন এই বিদ্রোহের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল । এই রাইফেলে যে টোটা ব্যবহার করা হত তার উপরের আবরণটি দাঁতে কেটে রাইফেলে ভরতে হত । গুজব রটে যায় যে, এই কার্তুজে গোরু ও শুয়োরের চর্বি মেশানো হয়েছে, ফলে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ধর্মনাশের সম্ভাবনা রয়েছে । ফলত ধর্মনাশের আশঙ্কায় হিন্দু ও মুসলিম সিপাহিরা এই টোটা ব্যবহারে অসম্মত হয় এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে । ক্রমে এই বিদ্রোহের আগুন সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্যারাকপুরে মঙ্গল পান্ডে নামে জনৈক সিপাহি এক ইংরেজ অফিসারকে হত্যা করলে মহা বিদ্রোহের সূচনা হয় । এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী দু’জন নেতা ছিলেন দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ও তাঁতিয়া টোপি । মহাবিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং ।

এ ছাড়াও ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ভেলোরে বিদ্রোহী সিপাহিদের বিদ্রোহ, ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশে বেরিলির বিদ্রোহ, ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে ব্যারাকপুরের বিদ্রোহ,

☼ কোল বিদ্রোহ

☼ কোল বিদ্রোহ (Kol movements):- উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেসব আদিবাসী বিদ্রোহ ঘটে, তাদের মধ্যে কোল বিদ্রোহ ছিল অন্যতম । সুপ্রাচীনকাল থেকেই ‘কোল’ উপজাতি সম্প্রদায় বর্তমান বিহারের সিংভূম, মানভূম, ছোটোনাগপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাস শুরু করে । কোলরা হো, মুন্ডা, ওরাওঁ প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল । এঁরা মূলত বনবাসী ও স্বাধীনচেতা । অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত কোলদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় ছিল । কিন্তু ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আদিবাসীগণ ব্রিটিশ শক্তির শোষণ নীতির নাগপাশে আবদ্ধ হন ।

>> অন্যান্য আদিম জাতিগুলির মতো কোলরাও ছিল কৃষিজীবী ।<<



নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে ইংরেজ সরকার বহিরাগত লোকদের কোল সম্প্রদায়ের জমিদার হিসাবে নিযুক্ত করেন । তাঁরা চড়া হারে রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচার ও আইন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে কোল সমাজের ওপর আঘাত হানে, এইসব শোষণ ও বঞ্চনা থেকেই ১৮৩১ সালে কোল বিদ্রহের সূত্রপাত হয় । সাধারণভাবে কোল বিদ্রোহের মূলে ছিল কৃষি অসন্তোষ ।

কোল বিদ্রোহের কারণ -

(ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পর কোল উপজাতির উপর জমিদার ও মহাজন শ্রেণির অত্যাচার বাড়তে থাকলে কোলরা বিদ্রোহের পথ বেছে নেয় ।

(খ) ১৮২০-১৮২১ খ্রিস্টাব্দে পোড়াহাটের জমিদার ও তার ইংরেজ সেনাপতি রোগসেস -এর বিরুদ্ধে ‘চাইবাসার যুদ্ধে’ কোলরা পরাস্ত হয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় । তির-ধনুক, বর্শা, বল্লম নিয়ে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রধারী ইংরেজদের সঙ্গে পেরে ওঠা কোলদের পক্ষে সম্ভব ছিল না । কিছুদিন পর কোলরা আবার ১৮৩১-১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ শুরু করে ।

(গ) সিংরাই, বুদ্ধ ভগৎ, জোয়া ভগৎ, বিন্দাই মাংকি, সুই মুন্ডা প্রভৃতি নেতাগণ এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ।

বিদ্রোহের ব্যাপ্তি ও দমন- রাঁচি, হাজারিবাগ, মানভূম. সিংভূম, পালামৌ, ছোটনাগপুর প্রভৃতি অঞ্চলে কোল বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে । কোল বিদ্রোহের পাশাপাশি মানভূমের ভূমিহীন জনসাধারণ বিদ্রোহী হয়ে সরকারি কাছারি ও পুলিশ ঘাঁটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় । শেষ পর্যন্ত সৈন্যবাহিনী নিয়োগ করে এই বিদ্রোহ দমন করতে হয় । কোল বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে কোলদের ঐক্যবদ্ধ রূপ । তাছাড়া বিদ্রোহীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ ছিল ইংরেজ ও বহিরাগত জমিদারবর্গ । চার্লস মেটকাফের মতে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানো । ঐতিহাসিক জগদীশচন্দ্র ঝা বলেছেন সুযোগ্য নেতার অভাব, আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা, শিক্ষিত মানুষের সমর্থনের অভাব ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যোগাযোগের অভাবে কোল বিদ্রোহ ব্যর্থ হয় ।

ফলাফল:- কোল বিদ্রোহের পরে উপজাতিদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামে একটি ভূখন্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় । এছাড়া এই ভূখন্ডে প্রচলিত ব্রিটিশ আইন কার্যকর করা হবে না বলে ঘোষণা করা হয় । এসব সত্ত্বেও খাজনার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শোষণের মাত্রাও হ্রাস পায়নি ।

বিষয়: বিবিধ

৩৬০৬ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

221885
১৫ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫০
ফেরারী মন লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ। জানলাম অনেক কিছু তাদের সম্পর্কে। এমন তথ্য বেশী বেশী জানা দরকার আমাদের।
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৫৯
169510
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
221915
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৫
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : সুন্দর হয়েছে অনেক ধন্যবাদ
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৫৯
169511
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
221938
১৫ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২২
আঁধার কালো লিখেছেন : জাজাকাল্লা খাইরান.. অনেক ভালো লাগলো পড়ে
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৫৯
169512
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
222085
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:২৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর তথ্যপুর্ন পোষ্টটির জন্য।
কোল, ভিল ,মুন্ডারাই মুলত বাংলাদেশের আদিবাসি। চাকমা,গারো,সাওতাল রা কিন্তু নৃতত্বের সঙ্গাতে আদিবাসি বলে পরিচিত হতে পারেনা।
১৫ মে ২০১৪ রাত ১০:৫৪
169502
গোলাম মাওলা লিখেছেন : এটা বিতর্ক আছে----
222543
১৭ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬
egypt12 লিখেছেন : ভালো লাগলো তাই প্রিয়তে Rose
১৮ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৩৪
170300
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
223975
২০ মে ২০১৪ রাত ১১:৩২
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : সরাসরি প্রিয়তে
২১ মে ২০১৪ রাত ০১:৩৮
171296
গোলাম মাওলা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ |

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File