গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব; ৪

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১০ মে, ২০১৪, ০১:০৪:১৩ দুপুর

গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব; ৪



পর্ব: ০৩

○►ঘুড়ি উড়ানো

ছোটবেলায় ঘুড়ি উড়ায়নি এমন বাংলাদেশী দুরন্ত বালকের খোঁজ পাওয়া আসলেই মুশকিল। ঘুড়ি আর দুরন্ত শৈশব যেন একে অপরের পরিপূরক। আর ছোট থেকে বড় সকল বয়সেরই মানুষের বিনোদনের প্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ঘুড়ি উড়ানো। বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন রকমের ঘুড়ি দেখা যায়। সাধারণত বসন্তকাল এবং গ্রীষ্মকালে ঘুড়ি উড়ানো হয়। গ্রামের ছেলেরা স্কুল মাঠে অথবা ফাঁকা ফসলের মাঠে ঘড়ি উড়ায়। প্রতিযোগিতা হয় কে কত উচ্চতায় ওঠাতে পারে। বিকেল হলেই ছেলেরা নাটায় হাতে ছুটে যায় মাঠে। অনেকেই নিজে নিজে ঘুড়ি বানাতে পারে। শহরাঞ্চলের অনেকেই বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়ায়।



ঘুড়ি (ইংরেজি: Kite) একপ্রকারের হাল্কা খেলনা, যা সুতা টেনে আকাশে ওড়ানো হয়। পাতলা কাগজের সাথে চিকন কঞ্চি লাগিয়ে সাধারণত ঘুড়ি তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের এবং বিভিন্ন উপাদান ও নকশার ঘুড়ি রয়েছে। বিশ্বজুড়েই ঘুড়ি ওড়ানো একটি মজার খেলা। এছাড়াও বহু দেশে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।



○►প্রকারঃ

ঘুড়ি সাধারণত দুই ধরনের------

সুতাওয়ালা

এবং সুতাবিহীন ঘুড়ি।

সুতাওয়ালা ঘুড়ির মধ্যে আছে ঘুড্ডি, ঢাউশ, চং, চোঙা। আর সুতাবিহীন ঘুড়ি হলো ফানুস, বেলুন, হাউই ইত্যাদি।

ঢাউশ শব্দ থেকে বোঝা যায় এটা বিশাল আকৃতির উপবৃত্তাকারের ঘুড়ি। আকাশে ওড়ার সময় দেখতে অনেকটা উড়ন্ত চিলের মতো লাগে বলে একে অনেক সময় চিলি বলা হয়। মাছ বা প্রজাপতির আকারেও ঘুড়ি বানানো হয়। বড় আকৃতির অন্য একটি ঘুড়ির নাম উড়োজাহাজ ঘুড়ি। এটি আকাশের অনেক উপরে ওড়ে। এই ঘুড়ি উড়ানোর জন্য শক্ত সুতার প্রয়োজন হয়। অন্য এক ধরনের ঢাউশ ঘুড়ি হলো ঢোপ। এটি একটি ত্রিমাত্রিক আকাশযান এবং জেট বিমানের মতো ওড়ে। চং ঘুড়ি দেখতে অনেকটা ট্রাপিজিয়মের মতো, যার উপরের আর নিচের বাহু দুটি পরস্পর সমান্তরাল এবং উপরের বাহু নিচের বাহু অপেক্ষা ৯ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয়। কিছু কিছু চং ঘুড়ি দেখতে ঠিক মানুষের মতো। তাই এটিকে মানুষ চং বলা হয়। এটি উড়ানো হয় রাতে এবং এর দু’হাতে দুটি মশাল জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আর সেই মশালের আলোতে এটিকে দেখা যায় হেলেদুলে হাত-পা নেড়ে আকাশে উড়তে।



সুতাবিহীন ঘুড়ির মধ্যে অন্যতম হলো ফানুস। ফানুস আসলে মুখ খোলা বিরাট আকারের বেলুন। ফানুসের নিচের দিকে একটা প্রশস্ত মুখ থাকে, যা দেহের আয়তনের তুলনায় সরু।



মুখটা খোলা থাকে এবং একটা খিল বৃত্তাকারে বাঁকিয়ে মুখটা গোল করে বানানো হয়। ফানুসের সমস্ত দেহটা পাতলা কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়। ফানুসের মুখের নিচে লোহার একটা শিক ঝুলানো থাকে। ঝুলন্ত শিকটার মাঝখানে তুলা বা ন্যাকড়া জড়িয়ে তেল দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হয়। উড়ানোর সময় ফানুস মশালের মতো শিখাসহ জ্বলতে থাকে আর উপরের দিকে উঠতে থাকে। ফানুস আকাশে কয়েক মাইল পর্যন্ত উড়ে থাকে। আমাদের দেশে বুদ্ধপূর্ণিমার সময় ফানুস উড়ানো হয়ে থাকে।



○►ইতিহাসঃ

ঘুড়ি কবে আবিষ্কার হয়েছে সেই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও আনুমানিক ২৮০০ বছর পূর্বে চীনে ঘুড়ির ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।এছাড়াও, ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১,৬০০ বছর পূর্বে। প্রথমদিকে ঘুড়ি কাগজ অথবা হাল্কা তন্তুজাতীয় সিল্কের কাপড় দিয়ে উড়ানো হতো। ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের অংশ হিসেবে ঘুড়িতে বাঁশের কঞ্চি কিংবা অন্যান্য শক্ত অথচ নমনীয় কাঠ দিয়ে তৈরী করা হয়। এছাড়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে সুতা কিংবা পাতলা দড়ি ব্যবহৃত হয়।৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের ট্যারান্টাস শহরে প্রথম ঘুড়ি উড়ানোর দাবিদার হচ্ছেন বিজ্ঞানী আরকিয়াটাস।



ধারনা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে চীনা দার্শনিক Mozi এবং Lu Ban প্রথম ঘুড়ি আবিষ্কার করেন। সে সময়কার ঘুড়ি ছিল সিল্কের কাপড়ের তৈরি। তবে তারও আগে ইন্দোনেশিয়া-তে পাতার তৈরি ঘুড়ির প্রচলন ছিল বলে ধারনা করা হয়। এই ধারনার প্রবর্তক Clive Hart এবং Tal Streetar. তারা ইন্দোনেশিয়ার Sulawesy দ্বীপের Muna Island এর গুহাচিত্রে ঘুড়ির



ছবি দেখতে পান। কাগজের তৈরি ঘুড়ি প্রথম আকাশে উড়ে ৫৪৯ খ্রিস্তাব্দে, চীনে। সেটির উদ্দেশ্য ছিল উদ্ধার অভিযানে বার্তা পৌঁছানো। ইউরোপের লোকেরা ঘুড়ির গল্প প্রথম শোনে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বিখ্যাত অভিযাত্রী Marko Polo-র কাছ থেকে। আর ইউরোপে ঘুড়ি প্রথম নিয়ে আসে জাপানী আর মালয়েশিয় নাবিকেরা ১৬’শ থেকে ১৭’শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। নিউজিল্যান্ড এবং পলিনেশিয় দ্বীপপুঞ্জে ১৬’শ শতাব্দীতে ঘুড়ির ব্যবহার দেখা গিয়েছে। এটা একটা রহস্য ঘুড়ির প্রচলন এই দ্বীপগুলোতে কিভাবে হয়েছিল।



জাপানেও ১৭৬০ সালে ঘুড়ি উড়ানো নিষিদ্ধ ছিল। কারণ জাপানিরা তখন কোনো কাজকর্ম করত না। সারাদিন কেবল ঘুড়ি উড়াত। ঘুড়ির নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত। জাপানিদের কাছে ঘুড়ি উড়ানোটা ছিল এমনই মজার। ঘুড়ি উড়ানো কেবল মজাই নয়, ঘুড়ি উড়িয়ে কতকিছু যে উদ্ভাবন হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।

✔১৭৫২ সালের কথা। সেদিন ছিল মেঘলা আকাশ। কী নিয়ে যেন বউয়ের সঙ্গে জগড়া হলো বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের। মনটা ভালো করার জন্য ঘুড়ি নিয়ে উঠলেন বাড়ির ছাদে। সিল্কের কাপড়ের তৈরি ঘুড়ির সঙ্গে কী মনে করে বেঁধে দিলেন ঘরের চাবি। ব্যস, আকাশের বিদ্যুৎ ফ্রাঙ্কলিনের চাবির মধ্য দিয়ে ভিজে সুতার সাহায্যে নেমে এলো মাটিতে। আবিষ্কার হলো বিদ্যুৎ।



✔বিদ্যুৎ আবিষ্কারের তিন বছর আগে ১৭৪৯ সালের কথা। স্কটল্যান্ডের দুই ছাত্র আলেকাজান্ডার উইলসন ও টমাস মেলিভিন ঘুড়ির সঙ্গে থার্মোমিটার বেঁধে আকাশে উড়িয়ে দিলেন। আকাশের মতো উচ্চতায় কত তাপমাত্রা থাকে সেটাই তারা পরিমাপ করছিলেন।

✔এর প্রায় দেড়শ বছর পর ঘুড়ির সঙ্গে অ্যানিমিটার বেঁধে আকাশে উড়ালেন ইংল্যান্ডের ডগলাস আর্কিবাল্ড। বিভিন্ন উচ্চতায় বাতাসের গতিবেগ মাপলেন তিনি।

একসময় যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া অফিস এভাবেই বাতাসের গতিবেগ মাপত। যুদ্ধের কাজেও ঘুড়ির ব্যবহার হতো। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী একসময় শত্রুপক্ষের গোপন শিবিরের দিকে নজরদারি চালাত বাঙ্-ঘুড়িতে চেপে। জার্মানিরাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবমেরিন থেকে রেডিও অ্যান্টেনা আটকে বাঙ্-ঘুড়ি উড়াত। তারপর বেতার সংকেত পাঠাত তাদের সেনাশিবিরে।



শত্রুপক্ষের গোপন দুর্গের ছবি তোলার কাজও করা হতো ঘুড়ি উড়িয়ে। ১৮৯৮ সালে আমেরিকা আর স্পেনের যুদ্ধে এমন ক্যামেরা ঘুড়ির প্রচলন ছিল। তিব্বতে একসময় দুর্গম এলাকায় সেবা পৌছানোর জন্য খাঁচার মতো ঘুড়ি ব্যবহার করা হতো।

✔১৮৫০ থেকে ১৯১০ সালকে ঘুড়ির স্বর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে। কারন এই সময়ে ঘুড়ির ব্যবহার শুধুই বিনোদনে সীমাবদ্ধ থাকে নি। মেটেরোলজি, এরোনোটিক্স, তারবিহীন যোগাযোগ এবং ফটোগ্রাফিসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ঘুড়ি ব্যবহার করা হয়েছে।

○►বাংলাদেশে ইতিহাসঃ

মোগল আমলে ঢাকার অভিজাত লোকদের বিনোদনের জন্য ঘুড়ি উড়ানোর আয়োজন করা হতো। ১৭৪০-এর দশকে নায়েব-এ-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঢাকায় ঘুড়ি উড়ানো উত্সব একটা ঐতিহ্যে পরিণত হয়। তখন থেকেই আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে ঘুড়ি তৈরি শুরু হয়। বাড়ির ছাদ, খোলা মাঠ থেকে আকাশে অনেক ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়। বর্তমানকালে বিনোদনের এতোসব উপকরণ থাকা সত্ত্বেও ঘুড়ি উড়ানো একেবারে বন্ধ হয়ে তো যায়ইনি, বলা যায় ভালো রকমেই টিকে আছে। ইদানীং প্রতি বছর সেন্ট মার্টিনে বিরাট এক ঘুড়ি উত্সবের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়



চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের সংগঠন ছবির হাট আয়োজন করে এই উত্সবের। প্রতিযোগিতার আগে পাঁচদিন ধরে চলে ঘুড়ি বানানোর প্রশিক্ষণ। দানবের লেঞ্জা, কচ্ছপ, কালাপাড়, কোনোটার নাম লালপাহাড়, কোনোটা চুড়িদার, পেটকাটা, চুমকি, পঙ্খিরাজ, মেঘকুমারী, রংধনু, জেলি ফিশ, সূর্য, প্রজাপতি, বিজয় ঘুড়ি, লাল ঘুড়ি ইত্যাদি সব বাহারি নামের ও চেহারার ঘুড়ি এই উত্সবে উড়ানো হয়। ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই উত্সবের আয়োজন করা হয়।



○►পৌষ সংক্রান্তির ঘুড়ি উৎসবঃ

পৌষ সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার



মধ্যে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো অন্যতম। সারাদিন ঘুড়ি উড়ানোব পরে সন্ধ্যায় পটকা ফুটিয়ে ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি করে। বাংলাদেশে বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব পালন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে।



○►ঘুড়ির কাগজঃ

ঘুড়ির কাগজ সাধারণত হয় বেশ পাতলা, যাতে ঘুড়ি হয় হালকা এবং বাতাসে ভাসার উপযোগী। অনেক দেশেই ঘুড়ি বানানোর জন্য সাদা কাগজের পাশাপাশি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রঙিন কাগজ ব্যবহারের রীতি দেখা যায়, এবং এর মূল কারণ মনোরঞ্জন ও সৌন্দর্য্যবৃদ্ধি।



○►মাঞ্জাঃ

মাঞ্জা হল ঘুড়ি সূতা প্রস্তুত প্রণালী যা ঘুড়ি উড়াতে এবং কাটাকাটি খেলতে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ ভারতবর্ষের আশেপাশের দেশে ব্যবহৃত হয়। সুতায় আঠা, রঙ এবং কাচের গুড়ার (চূর) প্রলেপ ইত্যাদি মিশ্রিত বিশেষ মশলা যা সুতায় মাখিয়ে রোদে শুকানো হয় এবং সেই সুতা দিয়ে আকাশে ঘুড়ি কাটাকাটির জন্য ঘুড়ি উড়ানো হয়।

○►লাটাইঃ

ঘুড়ির সুতা পেঁচিয়ে রাখার জন্য ব্যবহার করার কাঠের বা বাঁশের তৈরি হাতল বিশেষ। যাকে নৌকার হালের সঙ্গে বা গাড়ির স্টিয়ারিং এর সঙ্গে তুলনা করা চলে। কারণ এর



সাহায্যে ঘুড়িকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনেকে লাটাই তৈরী করে টিনের কৌটা দিয়ে। টিনের কৌটার ভেতর ছোট ছোট কয়েকটি পাথর বা মার্বেল দিয়ে দেয়। এতে লাটাই ঘুরার সঙ্গে সঙ্গে ঝনঝন শব্দ করে উঠে।

○►নামকরণঃ

বিভিন্ন দেশে ঘুড়ির বিভিন্ন রকম নামকরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ঘুড়ির নিম্নবর্ণিত নামগুলো রয়েছে:

চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি,

ড্রাগন,



বক্স,

মাছরাঙা,

ঈগল,

ডলফিন,

অক্টোপাস,



সাপ,

ব্যাঙ,

মৌচাক,

কামরাঙা,

আগুন পাখি,

প্যাঁচা,



ফিনিক্স,

জেমিনি,

চরকি লেজ,

পাল তোলা জাহাজ,

জাতীয় পতাকা ।

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ব্রিষ্টল ঘুড়ি উৎসব শেষে সবচেয়ে বড় ঘুড়িটি প্রায় ২০ মিনিট আকাশে অবস্থান করে। এটি ভূমির প্রায় ১০,৯৭১ বর্গফুট জায়গা দখল করেছিল।



○►ঘুড়ির লড়াইঃ

ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা বিভিন্নভাবে হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে কাটাকাটি খেলা। তার মানে দুই ঘুড়ির সুতায় প্যাঁচ লাগিয়ে কে কার সুতা কেটে দিতে পারে তার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার জন্য কোনো পূর্বপ্রস্তুতি বা আয়োজনের দরকার হয় না। আমাদের শহরে-গ্রামে সবসময় ছোটদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতা লেগেই আছে। দেখা গেলো কেউ একজন ঘুড়ি উড়াচ্ছে, অন্য একজন কাছাকাছি আরেকটি ঘুড়ি উড়ালো। ব্যস, একটু পরেই দেখা যাবে এই ঘুড়ি তেড়ে যাচ্ছে অন্য ঘুড়ির দিকে। তারপর লেগে যায় তাদের মধ্যে প্যাঁচ। কিছুক্ষণ পরেই যে কোনো একটা ভোকাট্টা। মানে সুতা কেটে গেছে যে কোনো একটার। যে টিকে রইলো, জিতে গেলো সে। আর যারটা কেটে গেলো, মন খারাপ



করে নাটাইয়ে সুতা প্যাঁচাতে থাকে সে। এই যে ঘুড়িটা ভোকাট্টা হলো, সেটা নিয়েও আছে অন্যরকম এক প্রতিযোগিতা। ঘুড়ি ধরার প্রতিযোগিতা। কাটা ঘুড়ি বাতাসে টাল খেতে খেতে একসময় নিচে গিয়ে পড়ে। ছোট ছোট ছেলেরা আগে থেকেই ওঁত্ পেতে থাকে কে ধরতে পারে সেই ঘুড়ি। সেও এক অন্যরকম আনন্দ, অন্যরকম মজা। আরেকরকম প্রতিযোগিতার বিষয় হচ্ছে কতো উপরে ঘুড়ি উঠানো যায়। তবে যে প্রতিযোগিতাটি শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই উত্সবের সঙ্গে আয়োজন করা হয়ে থাকে—সেটা হলো ঘুড়ির আকার-আকৃতি ও অলঙ্করণ নিয়ে প্রতিযোগিতা। অর্থাত্ কে কতো চমত্কার ঘুড়ি বানাতে পারে তার প্রতিযোগিতা।

একটি অবসরমূলক বিনোদন এবং ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে এখানো অনেক উৎসব হয়। বাংলাদেশে, বিশেষ করে পুরনো ঢাকায় পৌষ মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব পালন করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে। এছাড়াও ভারতে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। বর্তমানে দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই ঘুড়ি উড়ানো হয়। ঘুড়ি নিয়ে রয়েছে নানা গল্প। চীন, জাপান আর তাইওয়ানে ঘুড়ি ইউানো নিয়ে রীতিমতো উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। সরকারি ছুটিও থাকে সেদিন। ঘুড়িকে পবিত্রতার প্রতীক মনে করে মালয়েশিয়ার মানুষ। তাদের বিশ্বাস ঘুড়ি হচ্ছে ভূত-প্রেতের ওঝা। যেসব বাড়িতে ঘুড়ি উড়ানো হয় সেসব বাড়ির ধারেকাছেও নাকি ভূতেরা ঘেঁষে না। ওদিকে নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীরা ভূত তাড়ানোর জন্য মাওরি নামের ধরনের ঘুড়ি উড়ায়। মাওরি নামের এ ঘুড়ির মধ্যে রয়েছে নানা রকম ছিদ্র। ওসব ছিদ্রে ধাতব পাত বসানো থাকে। উড়ার সময় বাতাস এসে ওই ছিদ্রে ঢোকে আর অদ্ভুত শব্দ হয়। ওই শব্দেই ভূতেরা পালায়। আর ঘুড়ি বৈচিত্র্যের কথা যদি আসে, তবে চীন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ডকে বাদ দিলে হবে না। চীনেই আছে তিনশ রকম ঘুড়ি। অথচ চীনেই এক সময় ঘুড়ি উড়ানো নিষিদ্ধ ছিল। কেউ ঘুড়ি উড়ালেই তাকে ধরে ঢুকিয়ে দেওয়া হতো জেলে। এক-দুইদিন নয়, তিন বছরের জন্য।



ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই সারা বছরই দেখা গেলেও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান প্রভৃতি ভারতবর্ষীয় অঞ্চলগুলোতে ঘুড়ি উড়ানোর বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঘুড়ির লড়াইয়ে সাধারণত একাধিক লড়াকু মাঞ্জা দেওয়া সূতা দিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে একজন আরেকজনের ঘুড়িকে টানে অথবা ছেড়ে (ঢিল পদ্ধতিতে) কাটার চেষ্টা করেন। বিজয়ী ঘুড়ি আকাশে উড়তে থাকে আর হেরে যাওয়া অর্থাৎ কেটে যাওয়া ঘুড়ি বাতাসে দুলতে দুলতে ভুপাতিত হয়। ভুপাতিত ঘুড়ি কুড়িয়ে নেয়ার জন্য কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ চেষ্টা করেন।

সাভারে অনুষ্ঠিত হলো ঘুড়ি উড়ানো উৎসব

http://www.kalerkantho.com/online/country-news/2014/01/17/42342

কক্সবাজার সৈকতে জাতীয় ঘুড়ি উৎসব।

http://bangla.bdnews24.com/lifestyle/article733838.bdnews

কমলগঞ্জে ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৮

http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=b5676b4f1f2868820df3683933303585&nttl=10122013247452

দিনাজপুরে ঘুড়ি উৎসব http://primenews.com.bd/bangla/details/60010

বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের রোমাঞ্চকর ঘুড়ি উৎসব-২০১৪: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে

http://massmediabd.com/?p=14112

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব

http://www.banglaexpress.com.bd/detail.php?id=17745&catid=46&subcat=53&subcat1=0

বিষয়: বিবিধ

২১৬১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

219793
১০ মে ২০১৪ দুপুর ০১:২১
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : মনটা আমার হয়ে গেলো বাঁধনহারা
১১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
167821
গোলাম মাওলা লিখেছেন : হুম
219802
১০ মে ২০১৪ দুপুর ০১:২৬
egypt12 লিখেছেন : ভালো কালেকশন Rose
১১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
167820
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
219820
১০ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৫৫
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
167818
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
219848
১০ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৩
হতভাগা লিখেছেন : ঘুড়ি উড়াতে পারলেও কাটাকাটি খেলা পারতাম না ।

তবে উড়ানোর চেয়ে দাড়িয়ে থাকতাম ঘুড্ডির কাটাকাটি দেখতে । যেই না একটা ঘুড্ডি ভো-কাট্টা হয়ে যেত তখন অন্য সবার মত দৌড় লাগাতাম ঘুড্ডি ধরতে ।

কোন কোন সময়ে নাগালের বাইরে চলে গেলে খুব আফসোস হত ।

কত পাগলামীই না করেছি সে সময় ঘুড্ডি ধরার জন্য । মাত্র ৮ আনা বা এক টাকা / ২ টাকার ঘুড়ির জন্য কি রিস্কই না নিতাম ! এজন্য মায়ের বকুনির শেষ ছিল না ।

কিন্তু শৈশবের এই ভো-কাট্টা ঘুড্ডি ধরাটা ছিল আমার মত অনেকের কাছে দারুন এক্সাইটমেন্ট+এডভেন্চার মূলক কাজ ।

এখনও পথ চলতে যখন আকাশ পানে তাকালে দেখি যে একটা ঘুড্ডি ভো-কা্ট্টা হয়েছে এবং নাগালেরই মধ্যে , তখন পা দুটো স্টার্ট দিতে চায় ঘুড্ডির পেছনে ।

বয়স হয়ে গেছে তো ! এখন আর এটা কি মানায় !
১১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
167817
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ২ টাকার ঘুড়ির জন্য কি রিস্কই না নিতাম ! আসলেই তাই
219858
১০ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৪০
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : Sad Sad Sad সুন্দর হয়েছে অনেক ধন্যবাদ
১১ মে ২০১৪ দুপুর ১২:১৪
167815
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদGood Luck
221200
১৩ মে ২০১৪ রাত ১১:৩৮
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : এককথায় চমৎকার!!
১৫ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:০০
169264
গোলাম মাওলা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File