প্রতি গ্রাম হোক একটা পাঠাগার
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৬ মে, ২০১৪, ০৪:০৩:৩৪ বিকাল
প্রতি গ্রাম হোক একটা পাঠাগার
প্রতি গ্রাম হোক একটা পাঠাগার --- এই শ্লোগান সামনে রেখে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন তাদের নির্দিষ্ট লক্ষে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
○► মানব সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই গ্রন্থাগারের ভূমিকা অসামান্য। অতীতের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় গ্রন্থাগারের বূমিকা অনস্বীকার্য। গ্রন্থাগারের অগ্রগতি মানেই দেশ এবং জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি। পৃথিবীতে যে জাতি সভ্য বলে পরিচিত লাভ করেছে, সে জাতিরই সমৃদ্ধ জ্ঞান ভান্ডার তথা গ্রন্থাগার রয়েছে। সুপ্রাচীনকাল অ্যাসিরিয় সভ্যতা থেকে শুরু করে চীন, গ্রীক, রোম, কনস্টান্টিনোপল, বাগদাদ সর্বত্রই বিশাল গ্রন্থাগারের অস্তিস্ত প্রশংসার দাবি রাখে। মধ্যযুগেও রাজকী মহাফেজখানায় বা গ্রন্থাগারে দলিল-দস্তাবেজ ও দুর্লভ তথ্য সংরক্ষণ করা হতো। রাজকীয় গ্রন্থাগারের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেশের জ্ঞানী-গুণী মানুষের নিজস্ব গ্রন্থাগার ছিল এবং এখনো আছে। তবে সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের জ্ঞান অর্জনের উম্মুক্ত গ্রন্থাগার প্রবর্তনের ইতিহাস খুব বেশি দিনের পুরানো নয়।
উপমহাদেশে পাঠাগার বা লাইব্রেরীর ইতিহাস যদিও শিক্ষানুরাগী রাজা বাদশাহদের হাত ধরে শুধু মাত্র তাদের প্রসাদে গড়ে উঠেছিল। আর এই লাইব্রেরীগুলিই কিন্তু সেসময় হতেই উপমহাদেশের ঙ্গান পিপাসু মানুষের শিক্ষা ও ঙ্গানের ক্ষেত্রে সহায়ক ও পথের ভুমিকা হিসেবে কাজ করেছিল। তার উজ্জ্বল উদাহরণ আমাদের বাংলা ভাষার আদি নির্দেশন চর্যাপদ নেপালের রাজকিয় লাইব্রেরি হতে ১৯০৭ সালে আবিষ্কার হয়।
যদিও উপমহাদেশের লাইব্রেরীর ইতিহাস হতে যানা যায়-----
○► ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে গণগ্রন্থাগার আইন পাস হয় এবং ওই বছরই প্রথম জনগণের করের ভিত্তিতে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের কলকাতায় তারও পূর্বে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে গভর্ণর জেনারেলের সহায়তায় কতিপয় ইংরেজ নাগরিকের উদ্যোগে সর্বপ্রথম আধুনিক গ্রন্থাগার ‘কলিকাতা পাবলিক লাইব্রেরী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। লন্ডন এই গ্রন্থাগার আইন পাস হওয়ার পর সমগ্র বাংলাদেশেও গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন জেলা শহরে মূলত প্রজাদরদী দানশীল রাজা ও জমিদার, উচ্চ পদস্থ রাজকর্মচারী এবং শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্ঠায় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
○► ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম মেদিনীপুরে ‘রাজানারায়ণ বসু সমঋতি পাঠার’ নামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি উপমহাদেশের প্রথম গণগ্রন্থাগার হিসেবে খ্যাত।
○► পরবর্তী পর্যায়ে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ‘যশোর পাবলিক লাইব্রেরী’,
✔ বগুড়া উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরী’,
✔ ‘রংপর পাবলিক লাইব্রেরী;,
✔ ‘বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরী’,
✔ ‘হুগলী পাবলিক লাইব্রেরী’,
○► ১৮৫৬ তে ‘কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী’, নদীয়া,
○► ১৮৫৮ তে কোন্নগর পাবলিক লাইব্রেরী’, হুগলী,
○► ১৮৫৯ এ ‘উত্তরপাড়া পাবলিক লাইব্রেরী’, হুগলী (উপমহাদেশের প্রথম সার্কুলেশন লাইব্রেরী),
○► ১৮৬০ এ ‘জানাই পাবলিক লাইব্রেরী’, হুগলী,
○► ১৮৬৪-৬৫ তে ‘রাজা আনন্দনাথ রায় পাবলিক লাইব্রেরী’, রাজশাহী,
○► ১৮৬৯ এ ‘মহেশ পাবলিক লাইব্রেরী’, হুগলী,
○► ১৮৭০ এ ‘চন্দননগর পাবলিক লাইব্রেরী’, হুগলী,
✔ ‘আড়িয়াদহ পাবলিক লাইব্রেরী’, ২৪ পরগনা,
○► ১৮৭১ এ ‘শ্রীরামপুর পাবলিক লাইব্রেরী’, সোনাপুর, ২৪ পরগনা,
○► ১৮৭২ এ ‘কালনা মেরো পাবলিক লাইব্রেরী’, বর্ধমান,
○► ১৮৭৬ এ ‘রবাহনগর শশীপদ ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরী’, ২৪ পরগণা,
✔ ‘মুদিয়ালী পাবলিক লাইব্রেরী’, গার্ডেন রীচ, কলকাতা,
✔ ‘বরাহনগর পিপলস লাইব্রেরী’, পরগণা,
✔৭৭ এ ‘রামপুর পাবলিক লাইব্রেরী’, সোনাপুর, ২৪ পরগণা,
○► ১৮৭০- ৭৫ এর মধ্যে ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী’,
✔ঢাকা, ‘তালতলা পাবলিক লাইব্রেরী’,
✔কলকাতা তে ‘ বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরী’, কলকাতা,
○► ১৮৮৪ তে ‘রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরী’,
✔ ‘কুমারটুলি ইনস্টিটিউট’, কলকাতা,
○► ১৮৮৫ তে ‘কুমিল্লা পাবলিক লাইব্রেরী’,
○► ১৮৮৯ তে চৈতন্য লাইব্রেরী’, কলকাতা,
○► ১৮৯০ তে ‘পাবনা পাবলিক লাইব্রেরী’,
○► ১৮৯১ এ কেবলমাত্র সরকারী কর্মচারীদের ব্যবহারের জন্য ‘ইম্পোরিয়াল লাইব্রেরী’, কলকাতা,
○► ১৮৯৩ তে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগার’,
○► ১৮৯৭ তে ‘নোয়াখালী টাউন হল এ্যান্ড পাবলিক লাইব্রেরী’,
✔ও ‘উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী’, খুলনা,
প্রভূতি লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার ফলে জনসাধারণ জ্ঞান চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। এর ফলে তাঁরা সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহামন্ত্রে দীক্ষা লাভ করেন। সমগ্র বাংলাদেশে এই গ্রন্থাগারগুলো ক্রমশই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানাবিধ কর্মকান্ডের মিলনকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে “প্রতি গ্রাম হোক একটা পাঠাগার --- এই শ্লোগান সামনে রেখে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন তাদের নির্দিষ্ট লক্ষে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের পরিকল্পনা :
২০১৫ : ৬৪ জেলার কোন না কোন গ্রামে একটি পাঠাগার
২০২০ : ৫০৭ টি উপজেলার কোন না কোন গ্রামে একটি পাঠাগার
২০২৬ : ৪,৪৯৭ টি ইউনিয়নের কোন না কোন গ্রামে একটি পাঠাগার
এই পরি কল্পনা বাস্তবায়নে যোগদিন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনে।
সার্বিক যোগাযোগঃ
ফেবুক--- https://www.facebook.com/GramPathagarAndolan
মুঠোফোনঃ ০১৭৫২০২৩১৭৭
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন’র পাঠাগার সমূহঃ
১. অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগার, অর্জুনা ভূঞাপুর, টাংগাইল
২. অরং পাঠাগার , খাগড়াছড়ি...
৩. কাজী মোতাহরে হোসেন পাঠাগার, খোকসা, কুষ্টিয়া
৪. জ্ঞানদীপ পাঠাগার, শাহারাস্তি , চাঁদপুর
৫. কবি গোলাম মোস্তফা পাঠাগার, হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ
৬. জননী আলেয়া পাঠাগার, নাটোর
৭. সারুটিয়া সাধারণ গ্রন্থাগার, টাংগাইল
৮. লাইসিয়াম গণিত ও বিজ্ঞান সংঘ, ভূঞাপুর, টাংগাইল
৯. গারোবাজার পাঠাগ...ার, মধুপুর , টাংগাইল
১০. পাহারপুর বৌদ্ধবিহার পাঠাগার, বদলগাছি, নওগাঁ
১১. নালন্দা ডিজিটাল পাঠাগার, শাহীনবাগ, ঢাকা
১২. মহানন্দপুর পাঠাগার, মহানন্দপুর, সখিপুর, টাংগাইল
১৩. কুতুবপুর সাধারণ পাঠাগার, কুতুবপুর, সখিপুর, টাংগাইল
১৪. মুক্তির দিশারী পাঠাগার, জিতাশ্বরী,বড় চাওনা, সখিপুর , টাংগাইল
১৫. শান্তি সংঘ গণ পাঠাগার, চারিবাইদা, কুতুবপুর, সখিপুর, টাংগাইল
১৬. প্রগতি পাঠশালা, রামনগর, গাংনী, মেহেরপুর
১৭. আমাদের পাঠাগার, সিকিরচর, ছেংগারচর, পৌরসভা, মতলব উত্তর, চাঁদপুর
১৮. আমবাড়িয়া গণপাঠাগার, আমবাড়িয়া, খোকশা, কুষ্টিয়া
১৯ . শানোকবয়ড়া অণুসন্ধান পাঠাগার , ফলদা, ভূঞাপুর, টাংগাইল
২০. জ্ঞান বিতান পাঠাগার , অর্জুনা বাজার, ভূঞাপুর, টাংগাইল
২১. ইছাপুর আদর্শ পাঠাগার, ইছাপুর, চৌগাছা, যশোর,
২২. পাড়া কুশারিয়া গণগ্রন্থাগার, সন্ধানপুর, ঘাটাইল, টাংগাইল
২৩. রাপ্রু স্মৃতি পাঠাগার, রাজ্যমণি পাড়া খাগড়াছড়ি
২৪. আনন্দোময়ী পাঠাগার, ফরিদপুর
২৫. ড: আবুল বারাকাত পাঠাগার, কান্দি প্রসাদপুর,চৌরস্তা,গফরগাঁও, ময়মনসিংহ
২৬. ঝাউকান্দি নবীন সংঘ পাঠাগার , ঝাউকান্দি, কালাপাহারিয়া, আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ
২৭. নাগেরপাড়া আশ্রম গণগ্রন্থাগার, শনীয়তপুর
২৮. জ্ঞানকুঞ্জ পাঠাগার, এলেঙ্গা, কালিহাতি, টাঙ্গাইল
২৯. কৃষি পাঠাগার, শালিয়াবহ, গারোবাজার, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল
৩০. উচাই আদিবাসী পাঠাগার, পাচবিবি,জয়পুরহাট
তাই আসুন এগিয়ে নিই এগিয়ে যায় এবং নিজ গ্রামে একটা লাইব্রেরী বা পাঠাগার স্থাপনে শরিক হই গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনে।
বিষয়: বিবিধ
৩১৯১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন