শিকলে বাঁধা মাদ্রাসার ছাত্র , হায় শিক্ষা ব্যবস্থা

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৫ মে, ২০১৪, ০১:৫৬:০৭ রাত

শিকলে বাঁধা মাদ্রাসার ছাত্র , হায় শিক্ষা ব্যবস্থা



বিচিত্রময় মানুষের জীবনে শিশু মন । শিশুর জীবন শুরু করে একটি নতুনের আকাঙ্খা নিয়ে । সেই নতুনের আকাঙ্খাকে আমাদের বর্তমান মা বাবারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই একমুখী করে দিচ্ছেন । একটু দুরন্তপনা, দৌর ঝাপ, শিশুর চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে পড়াশোনা নামক লাগাম টেনে একটি বদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে । প্রতিযোগীতার মনোভাব, বুদ্ধি, ধার্মিকতা এবং সামাজিক অবস্থা সব কিছু শুধু বই ভিত্তিক ভেবে কোন কোন সময় তিন বছরের আগেই একটি শিশুকে স্কুল নামক বদ্ধ শিক্ষালয়ে পাঠানো হচ্ছে । আমরা সবাই চাচ্ছি আমারই সন্তান স্কুলের প্রথম দিন থেকেই সবকিছুতে ফাষ্ট হবে ।

বাবা মায়ের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো একটি শিশুর জন্য কত বড় ভয়ের কারন হতে পারে । একটি শিশু যখন নিজেকে মার কোল থেকে অন্য কোন জায়গায় থাকতে স্বস্থিবোধ করেনা ঠিক তখনই একটি বন্দি জীবনের আভাস তার মুক্ত জীবনে সুখের বার্তা হয়ে আসেনা । আর এই শিশু বয়সেই যখন বইয়ের বোঝা তার পিঠকে কুজো করে দিচ্ছে তখন মনের প্রভাবটাও অনেকটাই যেন শৃঙ্খলিত ।

শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষিত হবার প্রয়াস মানুষের একটি সহজাত প্রবৃতি। মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে শিক্ষিত করতে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মুলত ৩ টি মাধ্যম----------

১) বাংলা মিডিয়াম

২) ইংলিশ মিডিয়াম

৩) মাদ্রাসা ।



এই তিনটি মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষকদের বা শিক্ষা দানের নানা পদ্ধিতির কারনে, নানা সময়ে -নানা কারনে সংবাদের শিরনাম হতে দেখা যায় ও গেছে।

শিক্ষা হবে আনন্দের , শিক্ষা হবে অজানা ও নতুনকে জানার সিংহদার। শিক্ষা দান পদ্ধতি হবে সহজ ও আনন্দের মাধ্যমে। আর শিক্ষাত্রি তার শিক্ষা পদ্ধতি চয়েস করবে নিজস্ব স্বাধীন মতামত দিয়ে।

অথচ বাচ্চাদের মতামত উপেক্ষা করে তাদের ভাল লাগার বিষয় বাদ দিয়ে বাবা-মা নিজের পছন্দ মত বাচ্চাদের ভর্তি করে দেন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে।

৩) মাদ্রাসাঃ

মাদ্রাসা শব্দটি আরবী درس (দরস) থেকে এসেছে। درس মানে হল পাঠ। আর মাদ্রাসা মানে হল যেখানে পড়ানো হয় বা বিদ্যালয়।আমাদের দেশে কয়েক ধরনের মাদ্রাসা আছে। প্রথমে একে একে এই মাদ্রাসাগুলোর পরিচয় দেই-

নূরানী/তালিমুল কুরআন/ফোরকানীয়া মাদ্রাসা:

নাম ভিন্ন হলেও এ মাদ্রাসাগুলোর কাজ একই। কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়ানো।আধুনিক পদ্ধতিতে শুদ্ধভাবে কুরআন শেখানোর জন্য এ মাদ্রাসাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। তাজবীদ (কুরআন শেখার জন্য সহীহ উপায় সমূহ এই বইতে লেখা থাকে) সহকারে এখানে কুরআন শেখানো হয়। প্রতিটি হরফের মাখরাজ (উচ্চারণ স্থান), মদ (কোন জায়গায় টেনে পড়তে হবে, কতটুকু টেনে পড়তে হবে), এদগাম, ক্বলব, এজহার, গুন্নাহ (উচ্চারণের ধরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন টার্ম) প্রভৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা সহকারে এখানে কুরআন শেখানো হয়।এই মাদ্রাসাগুলো মূলত ছোটদের জন্য তবে বয়স্ক কেউ শুদ্ধ করে কুরআন পড়ার জন্য তালীমুল কুরআন বা ফোরকানীয়া মাদ্রাসায় যেতে পারে।

হাফেজী মাদ্রাসা

এখানে কুরআন শরীফ মুখস্ত করানো হয়।কুরআন মুখস্থ হলে তাদেরকে হাফেজে কুরআন বলা হয়। কুরআন মুখস্থ শেষ হলে তাদেরকে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে পাগড়ী প্রদান করা হয়।

এই দুই ধারার মাদ্রাসা মূলত ছোটদের জন্য। এখানে পড়ার মেয়াদও কম। সাধারণত দুই থেকে চার বছরের মধ্যে এখানকার পড়া শেষ হয়ে যায়। তখন কেউ কেউ স্কুলে পড়াশোনা করে আবার কেউ কেউ আলীয়া বা কওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।

যারা হাফেজ হবে বা এই হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক তাঁরা এই লিংকটা পড়ে দেখতে পারেন

কুরআনুল কারিম হিফজ করার ব্যবহারিক পদ্ধতি

আলীয়া মাদ্রাসা

আধুনিক মাদ্রাসা বলতে আলীয়া মাদ্রাসাকে বোঝায়। এখানকার পড়ুয়ারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও আছেন যারা আলীয়া থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন।

স্কুল কলেজের সাথে মিল রেখে এখানকার সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়।দাখিলকে এসএসসি, আলিমকে এইচএসসি, ফাজিলকে ডিগ্রী এবং কামিলকে মাস্টার্সের মান দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ নম্বরের বাংলা, ইংরেজী না পড়ার কারণে কয়েকটি সাবজেক্টে মাদ্রাসার ছাত্রদের (আলীয়ার) ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে মাদ্রাসার সিলেবাসে পরিবর্তন আনা হয়। এবছর যারা ক্লাস নাইনে উঠেছে তারা ২০০ নম্বরের বাংলা এবং ২০০ নম্বরের ইংরেজী পড়ছে। অর্থাৎ ২০১৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় তারা ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষা দিবে।আর ২০১৭ সালের আলীম পরীক্ষায় তারা ২০০ নম্বরের বাংলা ইংরেজীসহ ১৪০০ নম্বরের পরীক্ষা দিবে।

ফাজিলে ডিগ্রীর মতই তিন বছর মেয়াদী কোর্স। আর কামিল দুই বছর মেয়াদী কোর্স। বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের আওতায় পঞ্চম, অষ্টম, দাখিল এবং আলিমের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফাজিল এবং কামিল আছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

এখানে এইচএসসি পর্যন্ত বিজ্ঞান, ইংরেজী সহ অন্যান্য আধুনিক অনেক সাবজেক্ট পড়ানো হয়। ফাজিল এবং কামিলেও আধুনিক কিছু বিষয় পড়ানো হয়। কামিলে চার সাবজেক্টে মাস্টার্স করার সুযোগ থাকে। এগুলো হলো-আরবী, ফিকহ (ইসলামী আইন শাস্ত্র), কুরআন এবং হাদীস।

কওমী মাদ্রাসা

কওম শব্দের অর্থ গোত্র। এই মাদ্রাসাগুলো সরকারের কোন অনুদান না নিয়ে স্থানীয়দের দান-সাদকায় চলে বলে এই নাম হতে পারে। কওমী মাদ্রাসাকে কেউ কেউ খারেজী, দেওবন্দী (ভারতে অবস্থিত বিখ্যাত মাদ্রাসা), দরসে নিজামী ( বাগদাদে এক সময় একটা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল যেটার নাম ছিল নিজামীয়া) ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। বাংলাদেশে প্রায় ১৫০০০ কওমী মাদ্রাসা আছে বলে জানা যায়। এখানকার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লক্ষ । তবে এই সংখ্যা কম বেশী হতে পারে।

মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার একটা দিক হল হাফেজিয়া শিক্ষা। এটি ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করার একটা পদ্ধতি গত শিক্ষা ব্যবস্থা। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে হাফেজিয়া মাদ্রাসা খুলে হাফেজ বানানোর ব্যবস্থা করা হয়, আর এই মাদ্রাসা গুলি বেসির ভাগ চলে মানুষের দানে। আর আর এই মাদ্রাসার বেশির ভাগ ছাত্র আসে গ্রামের অশিক্ষিত গরিব পরিবার হতে। এই গরিব মা বাবার চাওয়া নিঃসন্দেহে মহৎ। কিন্তু ছেলের ব্রেন বা তাদের ধারন ক্ষমতা সকলের সমান নয়, ফলে তাঁরা সকলে সমান ভাবে কোরআন মুখস্থ করতে পারে না। ফলে শিক্ষকদের বা ওস্তাদদের বা হুজুরদের শারীরিক নির্যাতন অবধারিত ভাবে এই ৬-১০ বছরের কচি কচি বাচ্চারা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি এক প্রকার মানসিক আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে পড়ে। শিশুরা মনে মনে হয়ে উঠে বিদ্রহী ।

“অথচ কোরআন মুখস্থ করার ব্যাপার হওয়া উচিত ছিল আনন্দের এবং সম্মানের। অথচ এ আনন্দ এবং সম্মানের বদলে ঐ সব কচি কচি শিশুদের কাছে তা হয়ে উঠে নিরানন্দের ও বিষণ বিভীষিকাময়।“

ফলে অনেক সময় এরা প্রতিষ্ঠান হতে পালিয়ে যান। বার বার পালিয়ে যাওয়ার ফলে অনেক বাবা মা ও শিক্ষকদের যোগ সাজগে বা শিক্ষকদের একার সিদ্ধান্তে তাদের শিক্ষার নামে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আর এর ফলে ঐ সব শিশুর ঘটতে পারে নানা বিধ মানসিক নানা সমস্যা। অথচ জাতিসংঘ সনদের ৩৭ নং ধারায় ‘কোনো শিশুই নির্যাতন বা নৃশংস অমানবিক মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির শিকার হবেনা’ বলা হলেও এদেশের ইস্কুলের ও মাদ্রাসা গুলির নির্যাতন থেকে এখনো বহুশিশু মুক্ত নয়

আসুন যেনে নেই শিশুদের মারার ফলে তাদের কি কি সমস্যা দেখা দেয় তা যেনে নেই------

১।মানসিক ভারসাম্য এলোমেলো হয়ে যায়ঃ ক্রমাগত নির্যাতিত হলে আপনার সন্তানের মানসিক ভারসাম্য এলোমেলো হয়ে যায়। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে ভুগতে এক পর্যায়ে সে প্রচন্ড মানসিক চাপে ভোগে। এভাবে মানসিক চাপে থাকতে থাকতে সে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে নিয়মিত মারধোর করলে আপনার সন্তান সারা জীবনের জন্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে।

২। শিক্ষক ও মা বাবার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যায়ঃ নিয়মিত মারধোর করলে শিক্ষকদের উপর ছাত্রের শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়। আর ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া লেখা করার জন্য ভর্তি করার জন্য ও না চাওয়ার পরেও যোর করে তাদের পড়তে পাঠানোর জন্য বাবা মায়ের প্রতিও ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে এ জন্য বাবা মা কে নিজের অনেক দূরের কেউ ভাবতে আরম্ভ করে সন্তানরা এবং বাবা মায়ের প্রতি মানসিক টান একেবারেই থাকে না এধরনের নির্যাতিত শিশুদের।

৩। নিজেকে একলা ভাবে ও বিষণ্ণতায় ভোগেঃ যেসব শিশুরা নিয়মিত শারীরিক কিংবা মানসিক ভাবে নির্যাতনের স্বীকার হয় তাঁরা সাধারণত নিজেদেরকে একা ভাবে এবং প্রচন্ড বিষন্নতায় ভোগে। বাবা-মাকে আপন করে না পাওয়া ও নির্যাতনের ভয়ে কুঁকড়ে থাকে এসব শিশুরা।



৪। লেখাপড়ায় খারাপ হয়ে যায়ঃ যেসব শিশুরা খুব ছোট বেলা থেকেই বাবা মায়ের ও শিক্ষকের অতিরিক্ত কড়া শাসন ও নির্যাতনের মধ্যে বেড়ে উঠেছে তাঁরা সাধারণত লেখাপড়ায় খারাপ হয়। আর এর পেছনের কারণ হলো কিছুতেই লেখাপড়ায় মন বসাতে পারে না এই শিশুরা। সারাক্ষণ আতঙ্ক ও হতাশার কারণে পড়ার টেবিলে বসে সারাদিন পড়লেও কিছু মনে রাখতে পারে না তাঁরা। আর আত্মবিশ্বাস কমে যায় বলে পরীক্ষার খাতাতেও ঠিক মত লিখতে পারে না এসব শিশু।

৫।কেউ খুব হিংস্র হয়ে বেড়ে ওঠে, কেউ খুব ভীতুঃ ছোট বেলা থেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার শিশুরা অধিকাংশই হিংস্র হয়ে বেড়ে ওঠে। আবার কিছু সংখ্যক শিশু হয় খুব ভীতু। জীবনের চলার পথে প্রতিটি পা এগুতেও খুব বেশি ভয় পায় তাঁরা। ফলে সব সময়েই সবার পেছনে পড়ে থাকে।



৬। মা বাবার প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা তৈরি হয়ঃ আজকে আপনি সন্তানকে নির্যাতন করছেন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রেখে তা করাচ্ছেন তাঁরা কিন্তু মনে রাখবেন একদিন সন্তানও আপনার ওপরে এটার শোধ নেবে। কারণ আপনার সন্তানের কচি মনে আপনিই এই বীজ বুনে দিচ্ছেন, কেন তার পছন্দ না হওয়ার পরেও এবং পালিয়ে এসেও তাকে জোর করে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাঠাচ্ছেন। অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ফলে তাঁরা সাধারণত বড় হয়ে বাবা মাকে ঘৃণা করতে শেখে এবং একপর্যায়ে বাবা মায়ের সাথে হিংস্র আচরণ করে।



৭। পৃথিবী সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মে যায়ঃ আপনার শিশুটি এই সুন্দর পৃথিবীতে জন্মেছে। সে যত বড় হবে পৃথিবী সম্পর্কে তার ধারণা ও জ্ঞান তত বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আপনি যদি তাকে ছোট বেলা থেকেই মারধোরের এবং মানসিক নির্যাতনের মধ্যে রাখেন তবে তাদের শৈশব কৈশোর নষ্ট হবে এবং ধীরে ধীরে পৃথিবী সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্মে যাবে তার মনে।

৮।অহেতুক ভয়ে ভিত থাকেঃ বেশির ভাগ শিশু-কিশোরের মধ্যে ভয় স্বল্পস্থায়ী হয় আবার কারও কারও মধ্যে কেবল ভয় নয়, দেখা যায় অহেতুক ভয় বা ফোবিয়া, যা তাদের আচরণের ওপর দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব ফেলে। অহেতুক ভয় এক ধরনের মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত শিশু-কিশোরেরা বুঝতে পারে যে তাদের ভয় অনেকটাই অমূলক কিন্তু সেটি কীভাবে দমন করবে অথবা ভীতির উদ্রেককারী বস্তুটির সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা তারা বুঝতে পারে না। অনেক সময় অহেতুক ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তারা অস্বস্তি বোধ করে। তাদের দ্রুত কল্পনাশক্তি বেড়ে যায়, শ্বাস রোধ হয়ে আসে।



শিশু-কিশোরদের মধ্যে অহেতুক ভয়ের লক্ষণ দেখা দিলে অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন।

তা হলে বাবা-মা ও শিক্ষকদের/হুজুরদের আমি বলতে চাই আপনাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে একজন ছাত্রের এবং সন্তানের কত রকম সমস্যা হতে পারে। তাই আসুন শাস্তি দেবার আগে ভেবে দেখি নিচের বিষয় গুলি-----

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিতকরণের জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় যে পরিপত্র জারি করেছে, তা ”শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১১” নামে পরিচিত। নীতিমালায় যে ধরণের শাস্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তা হলো -

০১:. শারীরিক শাস্তি

শারীরিক শাস্তি বলতে যেকোন ছাত্র-ছাত্রীকে যেকোন ধরণের দৈহিক আঘাত করা বুঝাবে । যেমন -

ক) কোন ছাত্র-ছাত্রীকে হাত-পা বা কোন কিছু দিয়ে আঘাত করা/করা ।

খ) শিক্ষার্থীর দিকে চক/ডাস্টার বা এ জাতীয় কোন বস্তু ছুড়ে মারা ।

গ) আছাড় দেয়া ও চিমটি দেয়া ।

ঘ) শরীরের কোন স্থানে কামড় দেয়া ।

ঙ) চুল ধরে টানা বা চুল কেটে দেয়া ।

চ) হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম চাপা দিয়ে মোচড় দেয়া ।

ছ) ঘাড় ধরে ধাক্কা দেয়া ।

জ) কান ধরে টানা বা উঠবস করানো ।

ঝ) চেয়ার, টেবিল বা কোন কিছুর নীচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাঁটু গেড়ে দাঁড় করানো ।

ঞ) রোদে দাঁড় করে বা শুইয়ে রাখা কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করে রাখা ।

ট) ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে এমন কোন কাজ করানো যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।

০২. মানসিক শাস্তি :

কোন শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষে এমন কোন মন্তব্য করা যেমন- মা-বাবা/বংশ পরিচয়/গোত্র/বর্ণ/ধর্ম ইত্যাদি সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করা বা এমন কোন আচরন করা যা শিক্ষার্থীর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে ।

সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ. উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা (আলিম পর্যন্ত) সহ অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে যা অমান্য করলে দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় শাস্তি না দিয়ে পারা যায়না । অনেক শিক্ষার্থীর অসদাচরণের জন্য শাস্তি দিতেই হয় । কিন্তু মনে রাখতে হবে অবাঞ্চিত আচরণ দূর করার শেষ চেষ্টা হল শাস্তিদান । শুধু তখন শাস্তি দেয়া যায়, যখন অনেক রকম কৌশল প্রয়োগ করেও শিক্ষার্থীকে প্রতিহত করা যায় না ।

শাস্তি দেয়ার আগে -

* শিক্ষার্থীর অন্যায় আচরণকে উপেক্ষা করার ভান করুন । এসময় অন্য শিক্ষার্থীদের প্রশংসনীয় কাজকে সমর্থন করুন ।

* নিয়ম ভঙ্গকারী কোন শিক্ষার্থীকে আপনি পছন্দ করেন না এটা যেন শ্রেণীর সকল শিক্ষার্থী বুঝতে পারে । দেখবেন অনেকেই নিয়ম ভঙ্গকারী শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে দল হতে বর্জন করবে ।

* আপনার আলোচিত বিষয়বস্তুতে আপনি স্থির থাকুন ।

* কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সংশোধনের জন্য সময় লাগে, ধৈর্য হারাবেন না । শিক্ষার্থীর অন্যায় আচরণকে এক মুহূর্তের জন্যও আমল দেবেন না ।

দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরণের কৌশল প্রয়োগের পরও যদি শিক্ষার্থীর মধ্যে কোন পরিবর্তন না আসে, তবে তাকে শাস্তি দিন ।

কিন্তু শাস্তি দেওয়ার আগে ভাবুন -

* শাস্তির ফলাফল কী হবে ?

* শিক্ষার্থীর আদৌ কোন ইতিবাচক পরিবর্তন হবে কিনা ?

* তার শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা ?

* অন্যান্য শিক্ষার্থীর মধ্যে এর কি ধরণের প্রতিক্রিয়া হবে ?

এসব কিছু ভেবে নিয়ে যদি দেখেন শ্রেণীশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এবং শিখন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য শাস্তি দেয়া জরুরি, তখন শিক্ষার্থীর অপরাধের মাত্রার উপর নির্ভর করে -

* মৃদু ভৎর্সনা করুন ।

* কঠোর তিরস্কার করুন ।

* তার কাজে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করুন ।

* শ্রেনী থেকে তাকে সাময়িকভাবে বর্জন করুন ।

* শ্রেনীর বাইরে রাখুন ।

* আনন্দ থেকে বঞ্চিত করুন ।

* মাসিক পরীক্ষার মোট নম্বর থেকে ১/২ নম্বর কমিয়ে দিন ।

‘ফাঁকি’ দেওয়ার শাস্তি পায়ে শিকল

http://taiyabs.wordpress.com/2009/03/21/kasem

হাটহাজারীতে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে শারীরিক যৌন নির্যাতন (বলাৎকার) করার অভিযোগ ঃ থানায় মামলা দায়ের

http://www.primenewsbd24.com/archives/32369

যৌন নির্যাতনের পর ছাত্রকে হত্যা করলো মাদ্রাসা শিক্ষক http://www.youtube.com/watch?v=LZBssPCEVvc

মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

http://www.samakal.net/2014/04/30/56305

পাকিস্তানে মাদ্রাসা থেকে শিকল বাঁধা ৪৫ ছাত্র উদ্ধার

http://www.khulnanews.com/international-news/11121-2011-12-13-15-28-24

যশোরে শিকলে বাঁধা মাদ্রাসা ছাত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা মা ও শিক্ষক আটক

http://www.karatoa.com.bd/details.php?pub_no=1119&val=144204&menu_id=5&view=archiev&arch_date=10-12-2012

কেশবপুরে শিকলে বাঁধা মাদ্রাসা ছাত্র উদ্ধার

http://www.karatoa.com.bd/details.php?pub_no=1118&menu_id=3&val=144108&view=archiev&arch_date=09-12-2012

যৌন নির্যাতনের পর ছাত্রকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলো মাদ্রাসা শিক্ষক

http://www.cnsnews24.com/?p=11580

বেয়াদবী করায় মাদ্রাসা ছাত্রকে শিকল দিয়ে বেধে রাখা হলো

http://khabarsouthasia.com/bn/articles/apwi/articles/features/2012/03/05/feature-01#comments

ভোলায় শিকলে বাধা ছাত্র

http://www.amaderbarisal.com/news/11931.aspx?print=1

না বলে বাড়ি যাওয়ার শাস্তি গ্রিলে শিকলে বেঁধে

http://www.samakal.net/2014/03/30/49213

দুরন্ত রাফিনকে তালিম দিতে পায়ে শেকল

http://archive.prothom-alo.com/detail/news/51916

বিষয়: বিবিধ

২৩৮৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217570
০৫ মে ২০১৪ রাত ০২:০৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
217652
০৫ মে ২০১৪ দুপুর ১২:২৯
223980
২০ মে ২০১৪ রাত ১১:৪৪
শাহ আলম বাদশা লিখেছেন : এককথায় চমৎকার!!
২১ মে ২০১৪ রাত ০১:৩৭
171295
গোলাম মাওলা লিখেছেন : বাদাশা ভাই এই লেখা কেও পড়ে না। মন্তব্য করতে ভয় পায়। অথচ আমি এই এই শিক্ষার বিপক্ষে নই। শুধু দেখাতে চেয়েছি , এমন চলতে থাকলে কোরআন মুখস্থ যে উদ্যেসে তা ব্যাহত হচ্ছে ,

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File