দস্যু বনহুর
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০২ মে, ২০১৪, ১১:৫৯:১১ রাত
দস্যু বনহুর
আর দশটা ছেলে মেয়ের মত থ্রিলার / এডভেঞ্চার/ গোয়েন্দাগিরি / দুঃসাহসিক বই পড়া শুরু সেবার তিন গোয়েন্দা দিয়ে। তার পর মাসুদ রানা, ব্যোমকেশ, ফেলুদা, বণ্ড, কালনাগিনী, দস্যুরানি, দস্যু রানা, দস্যু মোহন,দস্যু বনহুর ...................................................... (অনেক নাম ভুলে গেছি)। আহ কি গোগ্রাসে গিলতাম ঐ সব বই। পড়া বাদ দিয়ে টেবিলে বই এর মাঝে গল্পের বই রেখে বা রাতে টর্চের আলোতে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া ঐ সময় গুলি এখন মনে হলে হাসি পায়। ক্লাসে তিন গোয়েন্দা পড়ার জন্য তিন গোয়েন্দা ক্লাব তৈরি এবং সকলে চাদা দিয়ে বই কিনে একে একে বই পড়া।
আজ অনেক আগে পড়া দস্যু বনহুর সিরিজ নিয়ে আলোকপাত----
দস্যু বনহুর
দস্যু বনহুর রোমেনা আফাজ
দেশ বাংলাদেশ
ভাষা বাংলা
ধারাবাহিকতা দস্যু বনহুর
বিষয় থ্রিলার / এডভেঞ্চার
ধরণ গোয়েন্দাগিরি / দুঃসাহসিক
প্রকাশক সালমা বুক ডিপো
দস্যু বনহুর বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক রোমেনা আফাজ কর্তৃক সৃষ্ট একটি কথাচরিত্র। দস্যু বনহুর সিরিজে এই চরিত্রভিত্তিক নিয়ে শতাধিক (১৩৬টি) গোয়েন্দা কাহনী প্রকাশিত হয়েছে। ছোটবেলা নৌদূর্ঘটনায় চৌধুরী বাড়ীর ছেলে মনির হারিয়ে যায়, দস্যু সর্দার কালু খাঁ তাঁকে কুঁড়িয়ে পান ও পরবর্তিতে তাঁকে "দস্যু বনহুর" রুপে গড়ে তোলেন। গরীবের বন্ধু ও চোরাকারবারীদের চির শত্রু দস্যু বনহুর যেমন গরীবের কাছে ছিলেন পূঁজোনীয় তেমনি চোরাকারবারী ও সন্ত্রাসদের কাছে ছিলেন জমদূতের মত। এই সিরিজের স্লোগান হচ্ছে 'সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক দস্যু বনহুর'।
দস্যু বনহুরের সহায়ক চরিত্র হিসেবে রয়েছে রহমান ও কায়েস, তাঁরা একাধারে বনহুরের বন্ধু ও সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর দু'জন স্ত্রী ছিলো একজন জঙ্গলে অন্যজন শহরে; শহুরে স্ত্রীর নাম মনিরা ও অপরজনের নাম নূরী। মনিরার গর্ভে দস্যু বনহুরে বড় ছেলে "নুরুজ্জামান নূর" এর জন্ম, যে পরবর্তীতে দেশের সৎ ও সাহসী ডিটেকটিভ হিসেবে পরিচয় লাভ করে। নূরীর গর্ভে "জাভেদ" নামে তার একটি ছেলের জন্ম হয়, যে পিতার মতই দস্যুতা করতে ভালবাসে।
"কালু খাঁ" যাঁকে দস্যু বনহুর বাপু বলে সম্বোধন করতেন, কালু খাঁ ছিলেন একজন প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন ডাকাত সর্দার। একদিন তিনি ছোট্র মনিরকে কুঁড়িয়ে পান ও পরবর্তিতে তাঁকে "দস্যু বনহুর" রুপে গড়ে তোলেন।
দস্যু বনহুর সিরিজে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মধ্যে "আশা" নামের চরিত্রটিকে ধারনা করা হয় এই সিরিজের সবচেয়ে রহস্যময়। এছাড়া "দস্যু রানী" নামের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রয়েছে যিনি "আহাদ" নামের একজন নাম করা একজন ডিটেকটিভের স্ত্রী।
বইয়ের তালিকাঃ
দস্যু বনহুর
দস্যু বনহুরের নতুন রুপ
সৈনিক বেশে দস্যু বনহুর
নাথুরামের কবলে মনিরা
দুর্ধর্ষ দস্যু বনহুর
ছায়ামূর্তি
মনিরা ও দস্যু বনহুর
সাগরতলে দস্যু বনহুর
সর্বহারা মনিরা
ঝিল শহরে দস্যু বনহুর
ঝিন্দের রানী
দস্যু দুহিতা
বন্দিনী
মায়াচক্র
চিত্রনায়ক দস্যু বনহুর
কান্দাইয়ের পথে দস্যু বনহুর
বন্দী বনহুর
দস্যু বনহুরের মৃত্যুদন্ড
অন্ধ মনিরা
প্রেত, আত্মা
মৃত্যুর কবলে নূরী
বনহুরের অন্তর্ধান
আফ্রিকার জঙ্গলে দস্যু বনহুর
বাংলাদেশে দস্যু বনহুর
বন্ধনহীন দস্যু বনহুর
দিল্লীর বুকে দস্যু বনহুর
রাত্রী ভয়ঙ্কর
প্রতিধ্বনি
সাপুড়ে সর্দার
নাবিক দস্যু বনহুর
ফৌজিন্দিয়া দ্বীপ
আস্তানায় দস্যু বনহুর
চলচিত্রে দস্যু বনহুরঃ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অঞ্জনা অভিনীত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবিটির নাম ছিলো "দস্যু বনহুর"। ছবিটিতে "দস্যু বনহুর" চরিত্রে অভিনয় করে চিত্রনায়ক সোহেল রানা। এতে আরও অভিনয় করেন প্রয়াত চিত্রনায়ক জসিম। এ ছাড়া এ ছবিতে অতিথি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল রাজ্জাককে। ছবিটির "ডোরা কাটা দাগ দেখলে বাঘ চেনা যায়" গানটি দারুন জনপ্রিয়তা পায়।
ছবিঃ Dossu Bonhur-দস্যু বনহুর
পরিচালক: মাসুদ পারভেজ/ চিত্রনায়ক সোহেল রানা।
পেডাকশন: Sarothi-সারথী
পরিচালকঃ নির্মাতা শামসুদ্দিন টগর
ছবি কালার: রঙ্গিন
মুক্তিঃ ১৬ জুলাই ১৯৭৬
রোমেনা আফাজ
জন্ম ও শিক্ষাজীবনঃ রোমেনা আফাজ ১৯২৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার শেরপুর শহরের জন্মগ্রহণ করেন। লেখিকার বাড়ি ছিল বগুড়া জেলার জলেশ্বরীতলায়, যা বর্তমানে স্মৃতি জাদুঘর।তাঁর পিতার নাম কাজেম উদ্দীন আহম্মদ এবং মায়ের নাম বেগম আছিয়া খাতুন। বগুড়া জেলার সদর থানার ফুলকোট গ্রামের ডাক্তার মোঃ আফাজ উল্লাহ সরকারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
কর্মজীবনঃ রোমেনা আফাজ লেখালেখি শুরু করেন নয়বছর বয়স থেকে। তার প্রথম লেখা বাংলার চাষী নামক একটি ছড়া প্রকাশিত হয় কলকাতার মোহাম্মদী পত্রিকায়। এরপর অসংখ্য ছোটগল্প, কবিতা, কিশোর উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস, গোয়েন্দা সিরিজ ও রহস্য সিরিজ রচনা করেছেন। তাঁর লেখা রহস্য সিরিজ "দস্যু বনহুর" ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর সৃষ্ট এই দস্যু বনহুর চরিত্রের জন্যেই মূলত তিনি বিখ্যাত। রোমেনা আফাজের লিখিত বইয়ের সংখ্যা ২৫০টি।
চলচ্চিত্রঃ তাঁর লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ৬টি চলচ্চিত্র; জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্রগুলো হলো -
কাগজের নৌকা,
মোমের আলো,
মায়ার সংসার,
মধুমিতা,
মাটির মানুষ
ও দস্যু বনহুর৷
অন্যন্যঃ রোমেনা আফাজ শুধু একজন প্রতিভাময়ী লেখকই ছিলেন না, ছিলেন একজন সক্রিয় সমাজ সেবিকাও। ৩৭টি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি৷ তারমধ্যে জাতীয় মহিলা সংস্থা, বগুড়ার সাবেক চেয়ারম্যান; ঠেংগামারা মহিলা সবুজ সংঘ, বগুড়ার আজীবন উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা পৃষ্ঠপোষক; বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা, বগুড়ার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান; উদীচী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বগুড়ার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান; বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতি, বগুড়ার সাবেক সদস্য; শিশু একাডেমী, বগুড়ার সাবেক উপদেষ্টা; বাংলাদেশ রাইটার্স ফোরাম, বগুড়ার সাবেক উপদেষ্টা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ নিরলস সাহিত্য সাধনার অনন্য দৃষ্টান্ত রোমেনা আফাজকে সাহিত্য ক্ষেত্রে অসামান্য ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি-স্বরূপ “স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১০” (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। রোমেনা আফাজের অবদানকে ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে রোমেনা আফাজ স্মৃতি পরিষদ৷ সাহিত্যে প্রশংসনীয় বিশেষ অবদানের জন্যে বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন বহু পুরস্কার৷ তারমধ্যে নারী বিকাশ সংস্থা, বগুড়া থেকে বেগম রোকেয়া স্বর্ণপদক -২০০০; বাংলাদেশ রাইটার্স ফোরাম, বগুড়া থেকে ২১শে পদক (সাহিত্য),২০০৩; গণউন্নয়ন গ্রন্থাগার (সি,ডি,এল) নারী ফোরাম থেকে নারী মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত সম্মাননা পদক, ২০০৬ (মরণোত্তর) ইত্যাদি অন্যতম৷ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে সাহিত্যে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি-স্বরূপ বিভিন্ন সময়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়; তারমধ্যে ঢাকার নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা গুণীজন-১৯৯৯ সম্বর্ধনা উল্লেখযোগ্য৷
সাহিত্যকর্মঃ
দেশের মেয়ে: সামাজিক ও পারিবারিক
জানি তুমি আসবে: প্রণয়মূলক উপন্যাস
বনহুর: রহস্য সিরিজ
রক্তে আঁকা মাপ: দুঃসাহসিক অভিযান
মান্দিগোর বাড়ি: কিশোর উপন্যাস
মৃত্যুঃ অসামান্য প্রতিভার অধিকারী এই সাহিত্যিক ১২ জুন, ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন৷
>এক নজরে রোমেনা আফাজ
জীবিকা ঔপন্যাসিক
জাতীয়তা বাংলাদেশী
জাতি বাঙালি
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য রচনা কাগজের নৌকা, মোমের আলো, মায়ার সংসার, মধুমিতা, মাটির মানুষ, দস্যু বনহুর
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার স্বাধীনতা পদক
দম্পতি মোঃ আফাজ উল্লাহ সরকার
জন্ম: ২৭ ডিসেম্বর,১৯২৬
মৃত্যু: ২০০৩ সালের ১২ জুন ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
বিষয়: বিবিধ
৫৪৩৯ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাতাসের রুপ দেখে মেঘ চেনা যায়
মুখ ঢাকা মুখোশের এই দুনিয়ায়
মানুষকে কি করে চিনবে বলো
মানুষকে কি করে চিনবে বলো ''
০ গান টা কে গেয়েছিল বলতে পারবেন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন