গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব: ০৩
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:৩৭:৪২ দুপুর
গ্রামীণ-দেশজ খেলা যা আর খেলা হয়না তেমন—পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের সঙ্গে পর্ব: ০৩
পর্ব: ০১
পর্ব: ০২
টোপাভাতি
পুতুল খেলার মতোই মেয়েদের আরেকটি প্রিয় খেলা হলো টোপাভাতি বা রান্না করার খেলা। যদিও মেয়েদের খেলা তবে সাধারনত মেয়ে ছেলে উভয় শিশুরা মিলে এই খেলা খেলে থাকে।
টোপা মানে মাটির হাঁড়ি বা রান্না করার বাসন এবং ভাতি হলো ভাত রান্না করা। এজন্য রান্না করার এ খেলাকে টোপাভাতি বলা হয়।
নিয়মকানুন
প্রথমে শিশুরা পাটকাঠি বা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ছোট খেলাঘর তৈরি করে। এরপর এর উপরে গাছের পাতা, কলা পাতা অথবা পলিথিন দিয়ে ছাউনি দেয়। এর পর পানি দিয়ে ঘর লেপা ও মাটি খুড়ে চুলা তৈরি করা হয় অথবা খেলনা চুলোয় চলে রান্না আর তা না থাকলে তিনটে ইটের টুকরো বা ঢেলা দিয়ে বানানো হয় চুলা ।এর পর একজনকে কাছেই কোথাও কাল্পনিক বাজারে পাঠানো হয়। সে বাজার (ঝোপঝাড়ে যায় বাজার করতে) থেকে বিভিন্ন কাল্পনিক জিনিসপত্র বাজার করে আনে। সেখানে থাকে মাছ-মাংস থেকে সব রকমের তরকারি।
সাধারনত গাছের পাতা তরকারি হিসেবে,
বালু ভাত হিসেবে ,
ধুলোকে চিনি বা লবণ হিসেবে বাজার হতে নিয়ে আসে,
বাজার করার সময় কাঁঠাল গাছের পাতা টাকা হিসেবে ক্যাবহার করা হয়।
মেলা থেকে কেনা টিনের বটি দিয়ে চলে তরি-তরকারি কাটার কাজ। চুলায় ফু দিয়ে-দিয়ে আগুন জ্বলানো হয়। আগুনের ধোঁয়ার চোখ হয়ে যায় লাল। সবটাই অভিনয়। কিন্তু দেখলে মনে হবে বাস্তব সংসারেই ঘটে চলছে এসব।
এরপর একজন সেসব জিনিসপত্র রান্না করে সবাইকে খেতে দেয়। মুখ দিয়ে শব্দ করে পাতার থালায় চলে খাওয়ার পর্ব। এ সময় এক অনাবিল আনন্দে ভরে থাকে বাচ্চাদের মুখ।
শিশুরা রান্নার জন্য সাধারনত খেলনা হাড়ি-পাতিল ব্যবহার করে থাকে।আর গাছের বড় পাতাকে ব্যবহার করা হয় বাসন হিসেবে এবং খাওয়ার সময় থাল হিসেবেও গাছের পাতা ব্যবহার করে থাকে। এই খেলার মধ্যে গ্রাম বাংলার পারিবারিক আবহ ফুটে উঠে।
মজার খেলা পিকাবো বা কানামাছি
বাংলাদেশের গ্রামীণ খেলাধুলার মধ্যে কানামাছি একটি চমৎকার খেলা। এ দেশের সর্বত্র শিশু কিশোররা এ খেলা খেলে থাকে। কানামাছি খেলার সময় নিচের ছড়াটি বলতে হয়।
“কানামাছি ভোঁ ভোঁ
যারে পাবি তারে ছো”
নিয়মকানুন
এ খেলায় কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে দেয়া হয়, সে অন্য বন্ধুদের ধরতে চেষ্টা করে। যার চোখ বাঁধা হয় সে হয় ‘কানা’। অন্যরা ‘মাছি’র মতো তার চারদিক ঘিরে কানামাছি ছড়া বলতে বলতে তার গায়ে টোকা দেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় সে অন্যদের ধরার চেষ্টা করে। সে যদি কাউকে ধরতে পারে এবং বলতে পারে তার নাম তবে ধৃত ব্যক্তিকে কানামাছি সাজতে হয়।
বাচ্চারা যে কারণে কানামাছি খেলতে পছন্দ করে
প্রায় সব বাচ্চাই যে খেলাটি খেলতে পছন্দ করে সেটা হচ্ছে পিকাবো বা কানামাছি। বিজ্ঞানীদের বলেছেন, তারা শেষমেশ খুঁজে পেয়েছেন বাচ্চাদের কাছে পিকাবো খেলার জনপ্রিয়তার কারন।
বাচ্চারা সাধারণত নতুন খেলাধুলার সঙ্গে পরিচিত হতে বেশি পছন্দ করে। এবং তারা ধীরে ধীরে যোগ্য হতে থাকে।গবেষকরা মনে করেন, খেলাধুলা উঠতি বয়সের বাচ্চাদের মন থেকে ভয়- ভীতি দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
সুইস মনোবিজ্ঞানী জেন পিয়াগেট এর পক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, বাচ্চারা সাধারণত জীবনের প্রথম দুই বছর ব্যয় করে প্রাথমিক কিছু পদ্ধতিতে দক্ষতা অর্জনের জন্য।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, বাচ্চারা তাদের মা-বাবাদের কণ্ঠস্বরের উঠানামা বা তারতম্যের উপরও মনযোগ দিয়ে থাকে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমস রাসেল মনে করেন, খেলাধুলার সময় অদৃশ্য চিন্তায় মগ্ন থাকায় তাই খেলাধুলা বাচ্চাদের বোকা বানায়। গবেষকরা বাচ্চাদের চোখে মুখোশ পরিয়ে এক গবেষণা চালিয়েছেন। এরপর গবেষকরা দেখিয়েছেন, আসলে বাচ্চাদের এমন অদৃশ্য ভাবনার ফলে প্রত্যক বাচ্চার ক্ষেত্রে একই অবস্থার সৃষ্টি হয় কিনা। সব বাচ্চাদের বেলায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয় নি। কারন বাচ্চাদের কেউ কেউ ভেবেছিল অন্য মানুষ তাদের বাঁধা চোখ দেখছে।
আবার অন্য এক গবেষণায় বাচ্চাদের চোখে রঙিন চশমা পরিয়ে দেওয়া হয়। গবেষণা আওতায় থাকা ৩৭ বাচ্চার মধ্যে মাত্র ৭ জন বাচ্চা ব্যপারটা ধরে ফেলে যে, তারা সবাইকে দেখছে, কিন্তু অন্য সবাই তাদের চোখ দেখতে পারছে না।যেসব বাচ্চারা ধারণাটি বুঝতে পারে তাদের ছয় জন মনে করেছিল, যদিও গবেষকরা তাদের চোখ দেখতে না পারে তবুও তারা সবাইকে দেখবে।
গবেষকরা মনে করছেন, খেলাধুলা বাচ্চাদের বিকাশের মূল। এবং তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অধ্যায়ন গবেষণার মাধ্যমে তা প্রমান করে চলেছেন।
বিষয়: বিবিধ
৩২০০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন