আমাদের লাল সবুজ পতাকা – প্রয়োগ চাই পতাকা নীতির
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৫ মার্চ, ২০১৪, ০৩:০৮:৪২ দুপুর
আমাদের লাল সবুজ পতাকা – প্রয়োগ চাই পতাকা নীতির
কত সংগ্রাম করে,লক্ষ মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পেলাম । এই সেই লাল-সবুজের পতাকা আমাদের । লাখো বাঙালির চেতনায় ধরে রাখা আমাদের জাতীয় পতাকা আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক।এটির ভেতরে লুকিয়ে আছে আমাদের সাংস্কৃতি,স্বপ্ন,আমাদের চেতনা,সব কিছু ।হাজারো ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত এই
পতাকা আমাদের চোখের সামনে নিমিষেই তুলে ধরে আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে। যে জন্মভূমিকে আমরা প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। জন্মভূমির প্রতি এই ভালোবাসা মানেই আমাদের জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। কারণ, লাল-সবুজের এই পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, আমাদের বিজয়ের প্রতীক।জাতীয় পতাকার রং এর ব্যাখ্যা (বাংলাদেশের সংবিধানের ৪ নং অনুচ্ছেদের ২ নং দফায়) হচ্ছে সবুজ জমিনের উপর খচিত রক্ত রঙের বৃত্ত ।জাতীয় পতাকার রং হবে বটল গ্রীন (Bottle Green)। সবুজ রং হবে Procion Brilliant Green H-2RS 50 Parts per 1000. এর মধ্যে একটি লাল বৃত্তের রং হবে Procion Brilliant Orange H-2RS 60 Parts per 1000. সবুজ রং তারুণ্যের উদ্দীপনা ও চির সবুজ গ্রামবাংলার সবুজ পরিবেশের প্রতীক ।
সেই প্রতীক কে আমরা হর-হমেশায় অপমান করি যেনে বুঝে। তার জন্য বাংলাদেশী এই সব কুলাঙ্গারদের একটা বড় বুলি ---“ খেলায় রাজনীতি নয়”
এই এক বুলির বদৌলতে এই সব পাঁঠারা হর দম অপমান অপদস্থ করে যাচ্ছে আমাদের জাতিয় পতাকার। এটি যেমন দেখা যায় ফুটবল বিশ্ব কাপ এলে তেমনি দেখা যায় ক্রিকেট যে কোন খেলায়( বেশি চোখে পড়ে ভারত ও পাকিস্থান খেলা হলে)
>>বিদেশি জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে হলে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ অনুমতির দরকার হবে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আইন অনুসারে,
“Except as stated in the above Rules, the flag of a Foreign State shall not be flown on any car or building in Bangladesh without the specific permission of the Government of the People’s Republic of Bangladesh.” (People’s Republic of Bangladesh Flag Rules, article 9.IV)
সুতরাং কারো ইচ্ছা হলেই বিদেশি পতাকা গায়ে জড়িয়ে বাংলাদেশের স্টেডিয়ামে, বাংলাদেশের রাজপথে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ কিংবা ‘জয় হিন্দ’ শ্লোগান দিবে, এটা আইনত অপরাধ।
ফুটবল বিশ্বকাপ এলে এই সব পাঁঠারা পকেটের টাকা খরচ করে এমন বড় বড় পতাকা বাড়ির ছাদে ঝুলান যে তা আমাদের পতাকা নিতীর সম্পূর্ণ বরখেলাপ।
পতাকা নীতিতে বলা আছে—“ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রণীত (২০০৫ সালের জুলাই মাসে সংশোধিত) জাতীয় পতাকা ওড়ানোর সাধারণ নিয়মগুলো হলো—
>> জাতীয় পতাকা ইচ্ছে হলেই যেখানে-সেখানে যেমন গাড়ীতে, স্টিমারে, নৌকাতে, রেল গাড়ীতে কোন দিকেই জড়িয়ে রাখা যাবে না ( হরহামেশায় আজকাল অনেকে জাতীয় পতাকা গাড়ীর সামনে সেটে দিয়েছেন বোঝাতে চেয়েছেন ভালবাসা , আসলে এটা জাতীয় পতাকাকে অপমানই করা হলো )
>> আমাদের জাতীয় পতাকা যদি অন্য কোন দেশের পতাকার সঙ্গে টানাতে হয় তবে সেখানেও নিয়ম কানুন আছে । যেমন.বাংলাদেশের পতাকার অবস্থান থাকবে উচুতে ( ফুটবল বিশ্বকাপ এলে এর চরম অবমাননা হয়)
>>বাংলাদেশ সরকারের লিখিত অনুমতি ব্যতিত জাতীয় পতাকা কোন ট্রেডমাক ,বৃত্তি,পেশায়,ডিজাইন বা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না । পতাকাটি সবসময় মুক্তভাবে সুউচ্চে রেখে যথাসম্ভব বহন করতে হবে (এখন অনেক রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন পেশার লোক তাদের পোস্টারে ও ছবিতে পতাকার আদলে লাল সবুজ রং ব্যবহার করে ছবি সহ নানা কাজে ব্যবহার করছে)
>> এই পতাকার মর্যাদা ধরে রাখার জন্য ১৯৭২ সালে সংবিধানের ৪(২) অনুচ্ছেদে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল। ঐ রক্ষা কবচে বলা হয়েছে, গাঢ় সবুজের মাঝে রক্ত বর্ণের লাল বৃত্ত হবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
>একই অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, পতাকার মর্য়াদা রক্ষার জন্য সরকার আইন প্রণয়ন করবে।
>>১৯৭২ সালে পতাকা আইন করা হয়। আইনের ৪(ক) ধারায় উল্লেখ করা হয়, যে ব্যক্তি পতাকার অবমাননা করবে বা যথাযথ সম্মান করবে না সে ব্যাক্তি এক বছর কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
যেভাবে পতাকার অবমাননা হচ্ছে : বিধিতে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া আর কেউ গাড়িতে পতাকা বহন করতে পারবে না। অথচ লক্ষ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে মোটর বাইক, সিএনজি,পাবলিক বাস, লঞ্চ এবং অন্যান্য পরিবহনে বেআইনিভাবে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
বিধি অনুযায়ী পতাকা কোনোভাবেই মাটিতে ছোঁয়ানো যাবে না, পাশে রাখা যাবে না।
এমনভাবে রাখা যাবে না যাতে পতাকা নিচে পড়ে যায় বা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইদানিং মোটর বাইকে এমনভাবে পতাকা বহন করা হচ্ছে যা পতাকাকে অসম্মানের শামিল।
পতাকা অবমাননার নতুন কৌশল : বিধি মোতাবেক জাতীয় পতাকা গায়ে জড়ানো যাবে না, পতাকার উপর কিছু লেখা যাবে না বা অঙ্কন করা যাবে না, এটা নিয়ে ব্যাবসা করা যাবেনা। অথচ গভীর উদ্বেগের ব্যাপার হল, ইদানিং বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলো টি-শার্টে, পাজামায়, ওড়নায়, কামিজে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করছে এবং এর ওপর অঙ্কন করছে, যা বিধি মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যে সব দিবসে পতকা উত্তোলন করা যাবে : ঈদে মিলাদুন্নবি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং সরকার কতৃক অনুমোদিত যেকোনো দিবসে পতাকা উত্তোলন করা যাবে। অপরদিকে ২১ ফেব্রুয়ারি ও শোক দিবসে পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে।
অসম্মানের সঙ্গে পতাকা অর্ধনমিত হয় : ২১ ফেব্রুয়ারি ও শোক দিবসে পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান কেউ মানছে না। বিধি অনুযায়ী প্রথমে পতাকা দণ্ডের শীর্ষে তুলতে হবে তারপর ধীরে ধীরে দণ্ডের মাঝখানে নামাতে হবে।
আবার পতাকা নামানোর সময় পুনরায় পতাকা দণ্ডের শীর্ষে তুলতে হবে তারপর পতাকা একদম নীচে নামিয়ে ফেলতে হবে।
অথচ বাংলাদেশে কেউ এ নিয়ম মানছে না। সবাই দণ্ডের অর্ধেক বরাবর পতাকা তুলে রাখে যা জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান।
ধর্মীয়ভাবে পতাকার অবমাননা : বিধিতে আছে, কোনো ভবনে বিদেশি পতাকা উত্তোলন করতে হলে প্রথমে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে হবে। তারপর অন্যদেশের পতাকা উত্তোলন করা যাবে।
দেখা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে মাজার, দরগা শরিফ, খানকা শরিফ রয়েছে সব জায়গায় চাঁদ-তাঁরা খচিত বিভিন্ন রকম ও রং এর পতাকা উত্তোলন করা হয় যা আইনের লঙ্ঘন। এমনকি সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা লক্ষ করা যায় না।
অথচ এসব দরগা-মাজারে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুমতি নাই।
যেসব ভবনে পতাকা উত্তোলন করা যাবে : রাষ্ট্রপতি ভবন, সংসদ ভবন, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, দেশের সব নিম্ন আদালত, প্রশাসনিক ভবন, উচ্চ আদালত, উপজেলা কার্যালয়, পুলিশ স্টেশন, জেলখানা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে।
সাংস্কৃতিকভাবে পতাকার অবমাননা : বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার সময় লক্ষ করা যায় দেশের বড় বড় ভবন বাড়িতে বিশ্বকাপের সমর্থকরা তাদের পছন্দনীয় দেশের পতাকা ঝুলিয়ে রাখে। সেখানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। অথচ বাসা বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরই অনুমতি নাই। অনুমোদিত ভবনে পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক জাতীয় পতাকা ভবনের একদম উপরে টাঙাতে হবে। অথচ দেখা যায় বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার সময় বাড়ির বারান্দায়, জানালায়, সানশেডে পতাকা ঝুলিয়ে রাখা হয় যা বেআইনি।
অবশেষে পতাকা নীতির প্রয়োগ কঠোর ভাবে আসছে। যা খুবই ভাল একটা সংবাদ এবং বর্তমান সময়ে পতাকা নীতি প্রয়োগের ভাল একটি সময়।কারন ২০টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাঠে দেখছি ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা হাতে বাংলাদেশী কুলাঙ্গারদের উল্লাস।
পতাকা নীতি থাকলেও তার প্রয়োগ শুধু আমরা অফিস আদালত ও অন্যন্য যায়গায় দেখে আসছি। এবার পতাকা নিতির আওতায় আসছে খেলার মাঠে বা গ্যালারিতে পতাকার ব্যবহার নিয়ে।
এই নিয়মে বলা হয়েছে – গ্যালারিতে পতাকা উড়াতে হলে অবশ্যয় তাকে ঐ দেশের জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোট দেখাতে হবে।
মারহাবা খুব ভাল একটা সিদ্ধান্ত। এখন এর প্রয়োগ আমরা দেখতে চাই ক্রিকেট মাঠের গ্যালারিতে। বাংলাদেশী কুলাঙ্গারদের খেলাতে রাজনীতি নয় এর জবাব দিতে এই নীতির কঠোর প্রয়োগ চাই। যেন পাকি প্রেমি ও ভারত প্রেমী বাংলাদেশী কুলাঙ্গাররা মাঠে বা গ্যালারিতে আর বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশের পতাকা উড়াতে না পারে। আর সামনে আসছে ফুটবল বিশ্বকাপ। আসছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সমর্থকদের বিশাল বিশাল পতাকা উড়ানোর উপর চাই নিষেধাজ্ঞা। আর যদি উড়াতে চায় তবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার
পতাকার চেয়ে বড় লাল সবুজ দেশের পতাকা তৈরি করে সেই সব পতাকার উপরে উড়াতে হবে( পতাকা নীতি-২০০৫) এবং এটি আমরা দেখতে চাই, চাই এর প্রয়োগ।
চলুন জেনে নিই জাতীয় পতাকা টানানোর নিয়মঃ
সবশেষে এক নজরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রণীত (২০০৫ সালের জুলাই মাসে সংশোধিত) জাতীয় পতাকা ওড়ানোর সাধারণ নিয়মগুলো হলো—
১. সর্বদা পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করিতে হইবে।
২. পতাকা দ্বারা মোটরযান, রেলগাড়ি অথবা নৌযানের খোল, সম্মুখভাগ অথবা পশ্চাদ্ভাগ কোন অবস্থাতেই আচ্ছাদিত করা যাইবে না।
৩. যেক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের পতাকা অথবা রঙিন পতাকার সহিত ‘বাংলাদেশের পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য স্থান সংরক্ষিত থাকিবে।
৪. যেক্ষেত্রে কেবলমাত্র দুইটি পতাকা অথবা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ভবনের ডানদিকে উত্তোলন করা হইবে।
৫. যেক্ষেত্রে পতাকার সংখ্যা দুইয়ের অধিক হয়, সেক্ষেত্রে অযুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যখানে এবং যুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যভাগের ডানদিকে উত্তোলন করা হইবে।
৬. যেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অন্য পতাকার সহিত আড়াআড়িভাবে কোন দণ্ডে দেয়ালের বিপরীতে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পতাকা অন্য পতাকার ডানদিকে আড়াআড়িভাবে থাকিবে (আড়াআড়িভাবে যুক্ত পতাকা দুইটির দিকে মুখ করিয়া দণ্ডায়মান ব্যক্তির বামদিকে) এবং পতাকা দণ্ডটি অন্য পতাকা দণ্ডের সম্মুখভাগে স্থাপিত হইবে।
৭. ‘বাংলাদেশের পতাকা’র উপরে অন্য কোন পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাইবে না।
৮. ‘বাংলাদেশের পতাকা’ শোভাযাত্রার মধ্যভাগে বহন করা হইবে অথবা সৈন্য দলের অগ্রগমন পথে (Line of March) শোভাযাত্রার ডানদিকে বহন করা হইবে।
৯. মর্যাদার প্রতীক সম্বলিত ঢালে (escutcheons) অযুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ মধ্যভাগে এবং সর্বোচ্চ কেন্দ্রে থাকিবে এবং যুগ্ম সংখ্যক পতাকার ক্ষেত্রে ঢালের ডানদিকে শীর্ষে (ঢালের দিকে মুখ করিয়া দণ্ডায়মান ব্যক্তির বামদিকে) বাংলাদেশের পতাকা স্থাপন করা হইবে।
১০. যেক্ষেত্রে অন্য কোন দেশের সহিত ‘বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ প্রথমে উত্তোলন করিতে হইবে এবং নামাইবার সময় সর্বশেষে নামাইতে হইবে।
১১. যেক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক দেশের পতাকা প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি পতাকা পৃথক পৃথক দণ্ডে উত্তোলন করা হইবে এবং পতাকাসমূহ প্রায় সমান আয়তনের হইবে।
১২. যেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হইবে এবং অতঃপর নামাইয়া অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হইবে। ঐ দিবসে নামাইবার সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হইবে, অতঃপর নামাইতে হইবে।
১৩. যেক্ষেত্রে দণ্ডের উপর ব্যতীত অন্যভাবে কোন দেয়ালের উপর ‘পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে উহা দেয়ালের সমতলে প্রদর্শিত হইবে। কোন পাবলিক অডিটোরিয়াম বা সভায় ‘পতাকা’ প্রদর্শন করিতে হইলে উহা বক্তার পশ্চাতে উপরের দিকে প্রদর্শিত হইবে। যেক্ষেত্রে রাস্তার মধ্যখানে পতাকা প্রদর্শিত হয়, সেক্ষেত্রে উহা খাড়াভাবে প্রদর্শিত হইবে।
১৪. কবরস্থানে ‘জাতীয় পতাকা’ নিচু করা যাইবে না বা ভূমি স্পর্শ করান যাইবে না।
১৫. ‘পতাকা’ কোন ব্যক্তি বা জড় বস্ত্তর দিকে নিম্নমুখী করা যাইবে না।
১৬. ‘পতাকা’ কখনই উহার নিচের কোন বস্ত্ত যেমন: মেঝে, পানি বা পণ্যদ্রব্য স্পর্শ করিবে না।
১৭. ‘পতাকা’ কখনই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাইবে না, সর্বদাই । ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকিবে।
১৮. ‘বাংলাদেশের পতাকা’ কোন কিছুর আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে না, তবে শর্ত থাকে যে, কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি যাঁহাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদা বা পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতাসহ সমাধিস্থ করা হয়, তাঁহার শবযানে পতাকা আচ্ছাদনের অনুমোদন প্রদান করা যাইতে পারে।
১৯. ‘পতাকা’ এমনভাবে উত্তোলন, প্রদর্শন, ব্যবহার বা সংরক্ষণ করা যাইবে না, যাহাতে উহা সহজেই ছিঁড়িয়া যাইতে পারে বা যে কোনভাবে ময়লা বা নষ্ট হইতে পারে।
২০. কোন কিছু গ্রহণ, ধারণ, বহন বা বিলি করিবার নিমিত্ত ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাইবে না।
২১ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরোপিত কোন শর্তাবলী (যদি থাকে) এবং লিখিত অনুমোদন ব্যতীত, কোন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্বোধন, পেশা বা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের ‘পতাকা’ কোন ট্রেড মার্ক, ডিজাইন, শিরোনাম অথবা কোন প্যাটেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে না।
২২. যেক্ষেত্রে ‘পতাকা’র অবস্থা এমন হয় যে, উহা আর ব্যবহার করা না যায়, সেক্ষেত্রে উহা মর্যাদা পূর্ণভাবে, বিশেষ করিয়া সমাধিস্থ করিয়া, নিষ্পত্তি করিতে হইবে।
২৩. ‘পতাকা’ দ্রুততার সহিত উত্তোলন করিতে হইবে এবং সসম্মানে নামাইতে হইবে।
২৪. ‘পতাকা’ উত্তোলন ও নামাইবার সময় এবং প্যারেড পরিক্রমণ ও পরিদর্শনের সময় উপস্থিত সকলে ‘পতাকা’র দিকে মুখ করিয়া সোজা হইয়া দাঁড়াইবেন।
২৫. যেক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পতাকা’ উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে একই সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হইবে। যখন জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং ‘জাতীয় পতাকা’ প্রদর্শিত হয়, তখন উপস্থিত সকলে ‘পতাকা’র দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবেন। ইউনিফর্ম-ধারীরা স্যালুট-রত থাকিবেন। ‘পতাকা’ প্রদর্শন না করা হইলে, উপস্থিত সকলে বাদ্য যন্ত্রের দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইবেন, ইউনিফর্ম-ধারীরা জাতীয় সঙ্গীতের শুরু হইতে শেষ পর্যন্ত স্যালুট-রত থাকিবেন।
২৬. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত, ‘জাতীয় পতাকা’ অর্ধনমিত করা যাইবে না, তবে শর্ত থাকে যে, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান (যে দেশের নিকট তিনি আস্থাভাজন) ইচ্ছা করিলে ঐ সকল দিবসে ‘পতাকা’ অর্ধনমিত রাখিতে পারিবেন, যে সকল দিবসে উক্ত দেশে, সরকারীভাবে ‘পতাকা’ অর্ধনমিত রাখা হয়।
শেষে বলতে চাই, জাতীয় পতাকার সচেতনতার জন্য কোন প্রচার আমাদের এত টিভি চ্যানেল থাকলেও নেই । বিভিন্ন অহেতুক প্রচারে আমরা ব্যস্ত কিন্তু অতি গুরুত্বপূন এ বিষয়টি শুধু বিশেষ জাতীয় দিবস গুলোতে ভাবি । অথচ এটি আমাদের জাতীয় চেতনার সাথে মিশে আছে । সবসময় থাকবেও । তাই যার যার ইচ্ছা মত জাতীয় পতাকা বানিয়ে মাপ,রং কিছুই একটার সাথে অন্যটা মিলছে না । সরকারী সংস্থা অথবা বেসরকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে এটি একক ভাবে বানালে সমগ্র বাংলাদেশে হয়তো একই রকম জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যেত এবং সেটা ভাল ও দেখা যেত ।এ ব্যপারে সরকারের কড়া দৃষ্টি থাকলে সবাই সচেতন থাকবে বলে আশা করা যায় । আর আমাদের ও খেয়াল থাকতে হবে যে , বিকৃত, কুচকানো, রং চটা ও অতি পুরানো যে সব পতাকা দৃষ্টির গোচরে আসে সে গুলো উৎখাত করে সঠিক জাতীয় পতাকা প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণও জরুরী। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন শিক্ষিত নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে এবং সরকারকে অবশ্যই অন্তত নিচের যৌক্তিক কাজগুলো করতে হবে:
১। জাতীয় পতাকা আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে এবং এ আইন লঙ্ঘনকারীদেরকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে।
২। বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে অন্যদেশের পতাকা নিয়ে উল্লাস করাকে পতাকা আইনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী কার্যকলাপ হিসেবে চিহ্নিত করে স্পষ্ট আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩। পতাকার এই উন্মাদনা প্রধানত দেখা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোতে। বর্তমানে আইসিসির নির্দেশ অনুযায়ী দর্শক সাথে করে অস্ত্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যের পাশাপাশি ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টার বা ব্যানার নিতে পারে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিনদেশের জাতীয় পতাকাকেও এই তালিকায় যোগ করতে হবে।
সূত্র- ব্লগ, সাইট, ফেসবুক।
বিষয়: বিবিধ
২৩০৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"মাজার, দরগা শরিফ, খানকা শরিফে চাঁদ-তাঁরা খচিত বিভিন্ন রকম ও রং এর পতাকা উত্তোলন করা হয় যা আইনের লঙ্ঘন। " এই আইন সধারন মানুষ জানেনা , সবাইকে সচেতন করা উচিত ।
ধন্যবাদ
ভালো...
১..{{{ বিধিতে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া আর কেউ গাড়িতে পতাকা বহন করতে পারবে না। }}}
উত্তর = ভাই, মানুষ পতাকা দেশপ্রেম হিসাবে গাড়িতে ব্যভার করে, এতে বাধা দেয়া, বা আইন করা অবশ্যই মূর্খতা,
এই আইন কোন মানুষ ভুল করে তার ব্যক্তিগত মতামতকে আইন বানাইছে,
কারন মানুষ ভুলের উরধে নয়,
আমার মতে এই আইন বাদ দিয়ে এমন আইন বানানো হোক যেন ১০০% জনবাহ্নে (বাংলাদেশের ভিতরে) বাংলাদেশের পতাকা থাকে,
এটাও একটা বিশ্ব রেকর্ড হবে, এই রেকর্ডে ৯০০ কোটি টাকা অপচয় করে মুসলমানদের শয়তানের ভাই হতে হবে নয়া,
২..{{{বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিনদেশের জাতীয় পতাকাকেও এই তালিকায় যোগ করতে হবে, }}}
উত্তর = বুঝতে অসুবিধা হয় নাই, আপনি জঙ্গিবাদী--আওয়ামীলীগের সদস্য,
কারন ভারত-পাকিস্তান খেলায় ২৫ জন যদি ভারতের পতাকা হাতে নেয় ,
তবে অপর পকক্ষে ১০০০ (১ হাজার) জন হতে নেয় পাকিস্তানের পতাকা,
এটা আপনার সহ্য হয় না, তাই এই আইন করতে চান ভারতকে সান্তনা দিতে,
{{{ এখন অনেক রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন পেশার লোক তাদের পোস্টারে ও ছবিতে পতাকার আদলে লাল সবুজ রং ব্যবহার করে ছবি সহ নানা কাজে ব্যবহার করছে, }}}
উত্তর = আবারও বুঝতে পারছি আপনি জঙ্গিবাদী--আওয়ামীলীগের সদস্য,
তাই, লাল-সবুজের BNP এঁর পোস্টার-ব্যানার বন্ধ করতে চাচ্ছেন,
এখানেই জঙ্গিবাদী--আওয়ামীলীগের পরাজয়,
তবে, আপনার পোস্ট আমার ভাল লেগেছে, সময় উপযোগী ১ টি পোস্ট,
আপনাকে ধন্যবাদ,
স্বাগতম
মন্তব্য করতে লগইন করুন