নবরত্নের ইতিবৃত্ত
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৬ মার্চ, ২০১৪, ০১:৪৬:০১ রাত
নবরত্নের ইতিবৃত্ত
ইতিহাস পাঠকালে আমরা নবরত্ন নামে একটি শব্দ শুনে থাকি। এই নবরত্ন নামে ইতিহাসে ২টি রাজার বিখ্যাত সভাসদের বুঝিয়ে থাকে। আর একটি নবরত্ন বিদ্যমান এটিও বিখ্যাত একটি বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। আর সেটি হল জৌতিশাস্ত্রে উল্লেখিত ৯টি পাথর
(১।মুক্তা
২।মাণিক্য
৩।বৈদূর্য
৪।গোমেদ
৫। বজ্র
৬। বিদ্রুম
৭। পদ্মরাগ
৮। মরকত
৯। নীলকান্ত-এই নয়টি রত্ন )।
তবে আমার আলোচনা আজ নবরত্ন নামে পরিচিত দুইজন রাজার সভাসদের নিয়ে।
যে দুইজন রাজার সভাসদরা নবরত্ন নামে পরিচিত ছিল, এই দুই রাজা হলেন----
১।দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত( চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য)
২।জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর
১। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত [Chandragupta II Vikramaditya] (৩৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে - ৪১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) :
সমুদ্রগুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকাল গুপ্তযুগের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় ।ছিলেন উত্তর ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের শক্তিশালী সম্রাটদের মধ্যে অন্যতম। তার শাসন স্থায়ী ছিলো সি. ৩৭৫ থেকে ৪১৩/৪১৫ সিই পর্যন্ত। তার শাসনামলেই মূলত প্রাচীন ভারত তথা গুপ্ত সাম্রাজ্য শিল্প, সংস্কৃতি ও স্থাপত্ব্যে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে। গুপ্ত সাম্রাজ্যকে ভারতের ইতিহাসের স্বর্ণ যুগ বলেও অভিহিত করা হয়। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের পুত্র। তার মার্শাল শিল্প ও বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হয়ে তার পিতা সমুদ্রগুপ্ত ও দাদা প্রথম চন্দ্রগুপ্ত তাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন। সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন ক্লাসিকাল শিল্পের রূপকার ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এটাকে বাস্তবে রূপদান করেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত শিল্পকলাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করতেন। তার শাসনামলে শিল্পীরা ভালো সমাদর পেত ও তাদের কাজের জন্য উচ্চমূল্য পেত যা প্রাচীন সভ্যতায় দেখা যেত না বললেই চলে। ৩৮৮ থেকে ৪০৯ পর্যন্ত তিনি মুম্বাইয়ের উত্তরের অঞ্চল গুজরাট, পশ্চিম ভারতের সুরাষ্ট্র ও মালওয়া এবং এর রাজধানী উজ্জাইন তার নিজের অধীনে নিয়ে আসেন। সাংস্কৃতিক ভাবে তার যুগকে স্বর্ণযুগ বলে উল্লেখ করা হয়। তার দরবারে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কবি-সাহিত্যিক ,সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ,জ্যোতির্বিঞ্জানী-গণিতবিদ ও অন্যান্য সভাসদ নিয়ে একটি নবরত্ন সভা ছিল। “দেবীচন্দ্রগুপ্তম্” নাটক থেকে জানা যায় সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে রামগুপ্ত সিংহাসনে বসেন । তিনি একজন শক রাজার হাতে পরাজিত হয়ে নিজ স্ত্রী ধ্রুবদেবীকে তাঁর হাতে সমর্পণ করেন । তখন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সেই রাজাকে হত্যা করে রানির মর্যাদা রক্ষা করেন । পরে রামগুপ্তকে হত্যা করে ও ধ্রুবদেবীকে বিবাহ করে সিংহাসন দখল করেন । অনেকে এই কাহিনী সত্য বলে মনে করেন ।
► এক নজরে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
►গুপ্ত সম্রাট----- দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত
►রাজত্বকাল----- ৩৭৫-৪১৫ সিই
►পূর্বসূরি-------- রামগুপ্ত
►উত্তরসূরি----- প্রথম কুমার গুপ্ত
►স্ত্রী-----------ধ্রুবস্বামীনী
►পিতা---------সমুদ্রগুপ্ত
►মাতা---------দত্ত দেবী
►ধর্মবিশ্বাস--------হিন্দু
>>> দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের নবরত্ন সভার নবরত্নদের নাম:
মহাকবি কালিদাসের “জ্যোতির্বিদ্যা ভরণ” গ্রন্থে মহারাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের (বিক্রমাদিত্য নামে খ্যাত) নবরত্ন সভার নবরত্নদের নাম পাওয়া যায়।
“ধন্বন্তরি-ক্ষপণকামরসিংহ-শঙ্কু-বেতালভট্ট-ঘটকর্পর-কালিদাসাঃখ্যাতোবরাহমিহিরোনৃপতেঃ সভায়াংরত্নানি বৈ বররুচির্নব বিক্রমস্য।
অর্থাৎ : নৃপতি বিক্রমের সভায় যে নয়জন রত্ন
১) ধন্বন্তরি
২) ক্ষপণক
৩) অমরসিংহ----সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ
৪) শঙ্কু
৫) বেতাল ভট্ট
৬) ঘটকর্পর
৭) কালিদাস-- কবি-সাহিত্যিক
৮) বরাহ মিহির---জ্যোতিবিঞ্জানী-গণিতবিদ
৯) বররুচি
২।জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর:
জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খানকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন।
► এক নজরে আকবরঃ
►পূর্ণ নাম-- আব্দুল-ফথ জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর
►উপাধি-- His Majesty Al-Sultan al-'Azam wal Khaqan al-Mukarram, Imam-i-'Adil, Sultan ul-Islam Kaffatt ul-Anam, Amir ul-Mu'minin, Khalifat ul-Muta'ali Sahib-i-Zaman, Padshah Ghazi Zillu'llah ['Arsh-Ashyani], Emperor of India
►সমাধিস্থল --Bihishtabad Sikandara, Agra
►পূর্বসূরি-- হুমায়ুন
►উত্তরসূরি-- জাহাঙ্গীর
►সন্তানাদি----জাহাঙ্গীর সহ আরও পাঁচ ভাই ও ছয় বোন
►রাজবংশ-- মুগল
►পিতা-- হুমায়ুন
►মাতা---- নয়াব হামিদা বানু বেগম সাহেবা( ১৫৩০-১৬০৪)
>>>আকবরের নবরত্ন সভার নবরত্নদের নাম:
আকবরের সভাসদ দের মধ্যে নবরত্ন হিসেবে যারা ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছেন,
১) আবুল ফজলে----- প্রধান পরামর্শ দাতা
২) তানসেন--- হিন্দি গানের সঙ্গীত বিশারদ, সভা গায়ক।তাঁর আসল নাম আতা আলি খাঁ। তানসেন ছিল উপাধি।
৩)টোডরমল--- অর্থনীতিক বিশারদ( আকবরের অর্থমন্ত্রী)
৪)বীরবল--- হাস্যরসিক ও উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারী।
৫)মোল্লা দো পেয়াজা--- পরামর্শদাতা
৬)আব্দুল রহিম খান---- পার্সি, হিন্দি ভাষার কবি
৭) ফকির আজিআউ দিন--- পরামর্শদাতা
৮)রাজা মান সিং--- প্রধান সেনাপতি ও বীর
৯)ফাইজি---- কবি এবং আবুল ফজলের ভাই।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯২ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইতিহাস ভিত্তিক পোষ্টটি আসলেই ভাল লাগল।
পিলাচ
মন্তব্য করতে লগইন করুন