এ্যানেমিয়া
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১২ মার্চ, ২০১৪, ০২:২৯:৩৯ রাত
এ্যানেমিয়া বা রক্তস্বল্পতার কারন ও প্রতিকার
আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামের মানুষের প্রায় ৬৫% মানুষ যে সাধারন রোগটিতে ভোগে তা হল এ্যানেমিয়া বা রক্তস্বল্পতা। একজন স্বাভাবিক মানুষের শরীরে থাকে সাধারণত ৩ লিটার রক্ত। তবে মানুষ ভেদে এই পরিমাণে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগের চিকিৎসা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে না করা যায় তবে ধীরে ধীরে এই রোগটি মৃত্যুর দ্বারে পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
>> লক্ষণ ও উপসর্গ---
>সাধারণ লক্ষণঃ
• দুর্বলতাঃ অকারণে এবং সব সময় দুর্বল অনুভূত হওয়া রক্তস্বল্পতার প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ। কাজে অমনোযোগ এবং অকারণে দূর্বল লাগা এ রোগের প্রধান কারণ।
•শ্বাসকষ্টঃ শ্বাসকষ্ট সম্পূর্ণ আলাদা একটি রোগ হলেও রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। যাদের অ্যাজমা জনিত শ্বাসকষ্ট আছে তারা এই লক্ষনের আওতায় পড়েন না। অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা জনিত শ্বাসকষ্ট রক্তস্বল্পতা রোগের লক্ষণ।
•হৃদস্পন্দন দ্রুততর হয়ে যাওয়াঃ গুরুতর রক্তস্বল্পতা রোগের প্রধান লক্ষণ হলো হৃদস্পন্দন সাধারণের চাইতে দ্রুততর হয়ে যাওয়া। এর কারণ, হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত দেহে সঞ্চালনের জন্য পাম্প করতে পারে না। ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে আসে।
•মাথাঘোরা ও মাথাব্যথাঃ অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে মাথাঘোরা মারাত্মক পর্যায়ে রক্তস্বল্পতার লক্ষণ ধরা হয়। বিনা কারনে মাথা ঘুরলে বা মাথা অকারণে ব্যথা করলে কখনই তা হেলায় দেখা উচিত নয়।
•ফ্যাকাসে ত্বকঃ চামড়ার নিচে রক্ত এবং রক্তের লাল কণিকা কমে যাওয়ার ফলে ত্বক মাত্রাতিরিক্ত ফ্যাকাসে সাদা হয়ে যায়। বিশেষ করে হাতের তালু এবং চোখের ভেতরের দিক বেশি সাদা হয়ে যায়।
•চুল পড়ে যাওয়াঃ রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ শরীরে আয়রনের ঘাটতি। এই আয়রনের অভাবেই অতিরিক্ত চুল পড়ে যেতে শুরু করে। এটিও রক্তস্বল্পতা রোগের লক্ষণ।
>ভিটামিন বি ১২-এর অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা লক্ষণ
•উপরে বর্ণিত লক্ষণ ও উপসর্গ এবং সেই সাথেঃ
•মুখ এবং জিহ্বায় ব্যথা এবং ফুলে ওঠা।
•হাতে এবং পায়ের পাতায় টন টনে ব্যথা হওয়া।
•হাটতে এবং শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হওয়া।
•স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়া এবং বিভ্রান্তি।
>আইরন বা খনিজ লৌহ-এর অভাবজনিত রক্তস্বল্পতার লক্ষণ
উপরে বর্ণিত লক্ষণ ও উপসর্গ এবং সেই সাথেঃ
•ভঙ্গুর নখ।
•পায়ুনালীতে রক্তপাতের লক্ষণ হিসেবে কালো কিংবা রক্তাক্ত মল।
>ফলিক এসিডের অভাবজতিন রক্তস্বল্পতা লক্ষণ
•উপরে বর্ণিত লক্ষণ ও উপসর্গ এবং সেই সাথেঃ
•মুখে এবং জিহ্বায় ব্যথা।
•তলপেট বা উদর স্ফীতি।
•খাবারের প্রতি অনীহা, বিতৃষ্ণাবোধ এবং ডায়রিয়া।
>> কী করা উচিত?
•যদি আপনার আশঙ্কা হয় যে আপনি রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হয়েছেন সেক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
•ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিরেকে খনিজ লৌহের অভাব পূরণ করে এরকম ওষুধ বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট সেবন করবেন না।
•খুব বেশি আয়রন সেবনের ফলেও রক্তস্বল্পতার লক্ষণ দেখা যেতে পারে এবং আপনার অবস্হা আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
>> কখন ডাক্তার দেখাবেন?
•যদি আপনি ইতোমধ্যেই আয়রন সাপ্লিমেন্ট সেবন শুরু করে থাকেন এবং নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখে থাকেন
•জ্বর ও বমি।
•তীব্র আলস্য এবং হৃদরোগের আক্রমণ হয়ে থাকে।
•ডায়রিয়ার সাথে রক্তাক্ত মল।
>>> এই লক্ষণগুলো দেখা গেলে আপনার শরীরে আয়রনের আধিক্য দেখা দিয়েছে, এবং এটা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
•জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন যদি রক্তস্বল্পতার লক্ষণ দেখা দেয়।
•যদি পুষ্টিজনিত কারণে রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা নোবার দুই সপ্তাহের মধ্যেও আপনার অবস্হার কোন উন্নতি না হয়।
>>কীভাবে প্রতিরোধ করবেন/দূর করার উপায়ঃ
•দেহে বি ১২ ভিটামিনের পর্যাপ্ততার জন্যে আপনার খাদ্য তালিকায় মাংস, মুরগী, মাছ এবং দুধ জাতীয় তরল খাবারের যোগ করুন।
•দেহে যথেষ্ট ফলিক এসিডের সরবরাহ করতে টক ফল বা সাইট্রাস যুক্ত ফল যেমন (কমলা, আঙ্গুর), সবুজ শাক সব্জি এবং শুকনো সিমের বিচি জাতীয় খাবারগুলো খাবেন। এছাড়া কলিজি, ডিম ও দুধ খাবেন।
•আপনার মদ পানের অভ্যাস থাকলে, যদি আপনি পুরুষ হন সেক্ষেত্রে দিনে ২৫০ এম এল এর বেশি মোটেও পান করবেন না, আর নারী হলে ১২৫ এম এল এর বেশি নয়। তবে স্বাস্হ সার্বিকভাবে ভালো রাখতে কখনই মদ না খেলে উত্তম, যদি একান্তই সেটা সম্ভব না হয় তবে সপ্তাহে তিন বার মদ পান করবেন এর বেশি নয়। তাছাড়া এলকোহল আপনার দেহের খনিজ লৌহ হজমের ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়।
•যদি আপনি গর্ভবতী নারী হন, কিংবা নার্সিং পেশার সাথে যুক্ত হন কিংবা আপনার মাসিকের সময় যদি খুব বেশি রক্তপাত হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করুন।
•দেহে খনিজ লৌহের পর্যাপ্ততার জন্যে খাবার আহার করার সময় চা বা কফি খাবেন না। চা এবং কফিতে এমন উপাদান রয়েছে যেটা দেহকে খাবারের খনিজ লৌহ উপাদান হজমে বাধা দান করে। যেসব খাবারে খনিজ লোহার পরিমাণ বেশি যেমন আলু, কিসমিস, শুকনো বিচি, যব, এবং গুর ইত্যাদি আহার করুন। মাংস, কলিজি এবং সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি আহার করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো লাগলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন