পি.এইচ ( pH) কি জানতে হবে???

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৫৫:৫৭ দুপুর

পি.এইচ ( pH) কি জানতে হবে???



রসায়নে পি.এইচ (ইংরেজি: pH) হচ্ছে দ্রবীভূত হাইড্রোজেন আয়নের সক্রিয়তার পরিমাপ। পি.এইচ দ্বারা মূলত হাইড্রজেন আয়নের ঘনত্ব বোঝায়। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানির পি.এইচ ৭ যাকে পি.এইচ স্কেলের নিরপেক্ষ মান হিসেবে ধরা হয়। পানি বিক্রিয়ক বিশেষে কখনও অম্ল আবার কখনও ক্ষারকের মত আচরণ করে এজন্য পানিকে Amorphous বা, অনিয়তাকার পদার্থ বলা হয়ে থাকে। পি.এইচ স্কেলে নিরপেক্ষ পানির পি.এইচ কে মধ্যমান ধরে যাদের পি.এইচ ৭ এর নিচে তাদের অম্ল এবং যাদের পি.এইচ ৭ এর ওপরে তাদের ক্ষারক বলা হয়। জলীয় দ্রবণের পি.এইচ মাপার জন্য পি.এইচ নির্দেশক, গ্লাস-ইলেকট্রড অথবা পি.এইচ মিটার ব্যবহার করা হয়।

জীববিজ্ঞান,রসায়ন,কৃষিবিজ্ঞান,বনবিদ্যা, পরিবেশ বিজ্ঞান, ফরেনসিক,খাবারের মান যাচাই,গবেষণাগারের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা সহ অসংখ্য ক্ষেত্রে পি.এইচ পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

@@ক্ষার ও ক্ষারকঃ ক্ষারক এক শ্রেণীর রাসায়নিক যৌগ যা হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করতে সক্ষম। যেমন ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইডসমূহ ক্ষার। পানিতে দ্রবণীয় ক্ষারক যা হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH−) প্রদান করে তাকে ব্রনস্টেড-লাউরির মতবাদ অনুযায়ী ক্ষার বলা হয়। ক্ষারকের অন্যান্য মতবাদ বা সংজ্ঞার্থের মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রন জোড় দান, হাইড্রোক্সাইড আয়নের উৎস বা আরহেনিয়াস মতবাদ। এইসব রাসায়নিক যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন অবমুক্ত করে দ্রবণের pH এর মান প্রশম পানির চেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭ এর বেশি করে। সবচেয়ে প্রচলিত ক্ষারক সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল NaOH, KOH, Ca(OH)2, NH4OH,CuO,Al(OH)2. এদের মধ্যে CuO,Al(OH)2. ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়।

রাসায়নিকভাবে অম্লের বিপরীতধর্মী পদার্থ হল ক্ষারক। অম্ল এবং ক্ষারকের মধ্যে বিক্রিয়াকে বলা হয় প্রশমন বিক্রিয়া। অম্ল এবং ক্ষারককে বিপরীতধর্মী হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ অম্ল পানিতে হাইড্রোনিয়াম আয়নের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করে ; অপরদিকে ক্ষারক তা হ্রাস করে। ক্ষারক অম্লের সাথে প্রশমন বিক্রিয়া করে লবণ এবং পানি উৎপন্ন করে। যেসব ক্ষারক পানিতে দ্রবণীয় তাদেরকে বলে ক্ষার ; পক্ষান্তরে যেসব ক্ষারক পানিতে অদ্রবনীয় তারা ক্ষারক হলেও ক্ষার নয়। তাই বলা হয় সকল ক্ষারক ক্ষার নয়, কিন্তু সকল ক্ষারই ক্ষারক।এদের জলীয় দ্রবন লাল লিটমাস কাগজকে নীল রঙে পরিণত করে।

@@ বৈশিষ্টঃ ক্ষার ও ক্ষারক পিচ্ছিল হয়। এরা তিতা স্বাদ যুক্ত হয়। যেমন—সাবান।

@@ এসিডঃ অম্ল (acid) একটি রাসায়নিক যৌগ যাকে পানিতে দ্রবীভূত করলে এমন একটি দ্রবণের সৃষ্টি হয় যার পিএইচ মান ৭.০ -এর কম হয়। এই সংজ্ঞাটি বিজ্ঞানী ইয়োহানেস নিকোলাউস ব্রনস্টেড এবং মার্টিন লাউরি প্রদত্ত আধুনক সংজ্ঞার খুব কাছাকাছি। তারা প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে সংজ্ঞা দিয়েছিলেন যে, অম্ল এমন একটি রাসায়নিক যৌগ যা অন্য কোন যৌগকে (সাধারণত ক্ষার) এক বা একাধিক হাইড্রোজেন H+ আয়ন প্রদান করতে পারে। কিছু অম্লের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, HCl,H2SO4,NHO3,H2CO3 ইত্যাদি। অম্ল-ক্ষার বিক্রিয়া জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া থেকে এ দিক দিয়ে পৃথক যে, অম্ল-ক্ষারের ক্ষেত্রে জারণ অবস্থায় কোন আধান থাকেনা এদের জলীয় দ্রবন নীল লিটমাস কাগজকে লাল রঙে পরিণত করে।এটাকে পানিতে ফেললে এটি ধনাত্মক ও ঋণাত্মক দুই আয়নে পরিণত হয়।

@@ বৈশিষ্টঃ এসিড টক স্বাদ যুক্ত। যেমন—লেবু(সাইট্রিক এসিড)

@@পি.এইচ মিটার (ইংরেজি: pH মিটার)ঃ pH মিটার একটি বৈদ্যুতিক পরিমাপের যন্ত্র যার সাহায্যে তরলের pH (অম্লতা বা ক্ষারতা) মাপা যায়। একটি আদর্শ pH মিটারে বিশেষ ধরনের পরিমাপের প্রোব (একটি কাচের ইলেক্ট্রোড) এবং মান প্রদর্শনী পরিমাপযন্ত্র থাকে। আর্নল্ড অরভিল বেকম্যান আবিষ্কার করেন।



@@@@পি.এইচ স্কেল (ইংরেজি: pH স্কেল) অম্ল ও ক্ষারের জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনমাত্রা প্রকাশের জন্য pH স্কেল নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের ঘনমাত্রা বুঝাবার জন্য ব্যবহৃত সংকেত পিএইচ (pH)। ফরাসি শব্দ Pouvior Hydrogene অর্থাৎ হাইড্রোজেন শক্তি, সংক্ষেপে pH। পিএইচ-এর স্কেল ০ থেকে ১৪ পর্যন্ত বিস্তৃত। pH ৭-এর নিচে হলে দ্রবণটি অম্লীয়, ৭-এর উপরে হলে দ্রবণটি ক্ষারীয় এবং pH=7 হলে দ্রবণটি নিরপেক্ষ বা প্রশমিত দ্রবণ বা পানি।

@@বিশ্বজনীন নির্দেশক উপাদান

সূচক পি.এইচ এর রঙ নিম্ন পরিবৃত্তি পি.এইচ এর পরিসীমা পি.এইচ এর রঙ উচ্চ

Thymol blue (প্রথম পরিবর্তন) লাল ১.২ – ২.৮ হলুদ

Methyl red লাল ৪.৪ – ৬.২ হলুদ

Bromothymol blue হলুদ ৬.০ – ৭.৬ নীল

Thymol blue (দ্বিতীয় পরিবর্তন) হলুদ ৮.০ – ৯.৬ নীল

Phenolphthalein বর্ণহীন ৮.৩ – ১০.০ Fuchsia

@@@ এই শীতে জানতে হবে পি. এইচ “PH”

এই শীতে আমরা আমাদের ত্বক ভাল রাখার জন্য বাজারে প্রচলিত নানা রকম ক্রিম, ভেসলিন, বডি লোশন........................... ইত্যাদি ব্যবহার করি। কিন্তু কখনো কি একবার ভেবে দেখেছি যে এই সব ক্রিম আমাদের ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আর এই সব ক্রিম আমাদের জন্য ক্ষতিকারক কি না তা জানার জন্য অর্থাৎ এই সব ক্রিমে কি পরিমাণ এসিড/ ক্ষার আছে তা পরিমাপের এদের গায়ে লিখা থাকে। এই পি এইচ “PH” এর তারতম্য হলে তা আমাদের জন্য ক্ষতির কারন এমন কি মৃত্যুও হতে পারে। আমাদের ত্বকের জন্য যেমন অতি এসিড ক্ষতিকর তেমনি অতি ক্ষারও ক্ষতিকর। আমাদের ত্বক সাধারণত এসিডিও হয়। স্বকের “PH” ৪-৬ এর মধ্যে। তাই প্রসাধনী কিনার আগে একটু খেয়াল করে দেখতে হবে এর “PH” কত। সাধারণত বাজারে যে সব প্রসাধনী পাওয়া যায় এদের গায়ে এদের “PH” ৫.৫ লিখা থাকে। তাই যে সব প্রসাধনীতে “PH” মান লিখা থাকে না তা না কিনায় ভাল। আর বিশেষ করে আমাদের শিশুদের ব্যবহারের জন্য বড়দের প্রসাধনী ব্যবহার হতে বিশেষ বিশেষ ভাবে সাবধান থাকতে হবে। কারন নবজাতক শিশুদের ত্বকের “PH” ৭ এর কাছা কাছি থাকে। তাই বড়দের ব্যবহৃত প্রসাধনী এদের ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম। ব্যবহার করলে শিশুদের ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই তো শিশুদের ব্যবহারের জন্য মেরিল বেবি লোশন/জনসনের তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার করেন অনেকে। এর একটিই কারন এই প্রসাধনী শিশুদের ত্বকের উপযোগী করে বানানো। একটু খেয়াল করলে দেখবেন এদের “PH” মান একটু বেশি। প্রায় পানির কাছা কাছি। কারন পানি নিরপেক্ষ ।এর “PH”=৭।

@@ আমাদের শরীরে “PH” মানঃ আমাদের ধমনির রক্তের “PH” প্রায় ৭.৪। এর সামান্য হের ফের হলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে, এমন কি মৃত্যও হতে পারে। আমাদের জিহ্বার লালা “PH” ৬.৬ এর কাছা কাছি থাকলে তা আমাদের পরিপাকে ভাল কাজ করে। আবার আমাদের পাকস্থলীতে খাদ্য হজম করার জন্য “PH” হল ২। এর মান ০.৫ এর মত হের ফের হলে বদহজম শুরু হয়। যা আমাদের প্রায় হয়ে থাকে। আমাদের প্রসাবের “PH” ৭ এর কম থকা ভাল এবং স্বাভাবিক। তা না হলে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয়।

@@ আরও যে সব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে “PH” মানঃ ঔষধ, কলমের কালি, লজেন্স জাতীয় মিষ্টি খাবার, রঙ, সহ বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য,চামড়া, রাসায়নিক দ্রব্য, জাংক ফুড( ফাস্ট ফুড), কোমল পানিয় ইত্যাদি।

@@ কৃষিতে “PH” মানঃ মাটির পি.এইচ ( pH) সাধারণত ৪-৮ হয়ে থাকে। মৃত্তিকার পিএইচ মান ৭-এর কম থাকলে তাকে এসিড মৃত্তিকা বা অম্লমাটি (Acid soil) বলে। পরিবর্তনযোগ্য হাইড্রোজেন ও অ্যালুমিনিয়াম আয়নের উপস্থিতির কারণে এই অম্লতা। এসিড মৃত্তিকায় হাইড্রক্সিল আয়নের তুলনায় হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বেশি থাকে। মাটির “PH” ৩ এর কম হলে অর্থাৎ এসিডিও হলে মাটির অনেক দরকারি Ca ও Mg চলে যায়। ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। আবার মাটি খুব ক্ষারীয় হলে “PH” মান ৯.৫ এর বেশি হলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। অর্থাৎ মাটিতে অতিরিক্ত ক্ষার/এসিড দুইই মাটির জন্য ক্ষতিকর। মাটির দ্রবণে হাইড্রোজেন যোগানের উৎসের মধ্যে রয়েছে অম্লযুক্ত মূল উপাদানসমূহ, উদ্ভিজ্জ সার, বৃক্ষমূল, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অ্যালুমিনো সিলিকেট, আয়রন পাইরাইটস এবং অ্যামোনিয়া সার। সাধারণত মৃদু ও মধ্যম এসিড মৃত্তিকা চাষাবাদের জন্য উত্তম।

এ জন্য জমির মাটির “PH” মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা উচিত। আর এই পরীক্ষা খুব অল্প ব্যায়ে থানা মিতৃকা পরীক্ষা গারে পরীক্ষা করতে পারবেন অথবা ইউনিয়ন কৃষি অফিসারের কাছে সাহায্য নিতে পারেন।

এসিডিও মাটির জন্য Ca ও Mg যুক্ত সার এবং ক্ষারীয় মাটির জন্য নাইট্রেট ও ফসফেট জাতীয় সার ব্যবহার করে মাটির “PH” নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সুত্রঃ নবম শ্রেণীর বিঙ্গান বই, ব্লগ, ফেসবুক ও বিভিন্ন সাইট।

বিষয়: বিবিধ

৫২৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File