>>নারীমুক্তি ৭ম পর্ব<<
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:০০:২১ দুপুর
>>নারীমুক্তি ৭ম পর্ব<<
( এই পর্ব সব মা তোমাদের কে)
এর প্রভাব ছিল মারাত্মক। কারণ শিল্পীর স্বভাবই হচ্ছে তার সম্পর্কে কি ভাবা হচ্ছে সেসব নিয়ে কোন মাথা ঘামানো।( ক্রমশ)
এভাবেই যুগে যুগে চলছে সৃষ্টিশীল নারীদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন।
“প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস” লেখার সময় “জেন অষ্টে-ন” তার পাণ্ডুলিপি লুকিয়ে রাখতেন কেউ দেখবে বলে। কে বলতে পারে ” প্রাইড এন্ড প্রেজুডিস হয়ত আরও ভাল কিছু হত -যদি তা গোপনে লিখতে না হত।
আর রয়েছে উপকরণের অভাব। এইসব নারীরা দার্জিলিং যায়নি নয়াগ্রায় গোসল করেনি- কাঞ্চনজঙ্ঘায় যায়নি ব্যস্ত পৃথিবী বিখ্যাত শহর বন্দর দেখেনি। ভাবের অদান প্রদান করেনি বিচিত্র মনুষ্যদের সাথে। আর কথাসাহিত্য এবং যেকোনো বিমূর্ত জিনিসই
তো অনেকটা অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি হয়। আমি নিশ্চিত লেভ টলষ্টয়কে” যদি বাস করতে হত বাঘা বা পত্নীতলা বা সিলেটের হাওড় অঞ্চলে বা অন্যকোন থানায়-সাত সন্তানের জনক হয়ে তবে তিনি “ওয়ার এন্ড পিস” লিখতে পারতেন না।
মহৎ কিছু সৃষ্টি করা আসলেই কঠিন। এর জন্য দরকার একাগ্র মনোযোগ আর একনিষ্ঠ মনোযোগ। কিন্তু জগত এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন।
পৃথিবী কখনও কাওকে বলবে না কবিতা লিখতে গান গাইতে। যেমন তার দরকার পুলিশ বা আমলা এমনকি পাতিটাও কিন্তু তার কবি দরকার নেই। জীবনানন্দ দাশ, সুকান্ত, আল মাহমুদ এবং বর্তমানে আজাদ, মামুন, আলীম, সঠিক শব্দটি খুঁজে পেল কিনা এ নিয়ে জগতর কোন মাথাব্যথা নেই।
কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা অনেকটা বিরোধিতার পর্যায়ের চলে যায়।
জগত নজরুলকে বলেছিল “তুমার ইচ্ছে হলে তুমি লেখ। তাতে আমার কি আস যায়।” আর জগত তসলিমা নাসরিন কে ব্যঙ্গ করে বলছে” ---- তোমাকে কে বলেছে লিখতে, লেখালেখি নিয়ে পাকামি করতে।”
এতসব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাড়িয়ে সুস্থ সাহিত্য লেখা রীতিমত অসম্ভব। কারণ মনের ভেতরে ঘুণ পোকা কামড় যে কেও টাল খেতে বাধ্য। সে যা লিখবে তা হবে ল্যাংড়া লুলা ধ্বজভঙ্গ সাহিত্য।
তাছাড়া শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড পুরুষ অধিপাত্যের এযুগে পুরুষের তৈরি মূল্যবোধ চাপিয়ে দেয়া হয় নারীর তৈরি মূল্যবোধের ওপর।
এজন্যই বলা হয় “ফুটবল খেলা” গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ফ্যাশন প্রিয়তা ফালতু যদিও দুটোই অনুৎপাদনশীল । এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বই কারণ এটি যুদ্ধ নিয়ে রচিত কিংবা সেটা একটা ফালতু বই কারণ ওটি রচিত অন্দরমহলের নারীদের আবেগ অনুভূতি নিয়ে বা রান্না নিয়ে।
এখন প্রশ্ন জাগে কে আমাদের শেখাল যে নারীদের আবেগ অনুভূতির চেয়ে যুদ্ধ বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
এটাও অনেকটা পুরুষ তন্ত্রেরই প্রভাব। এভাবেই যুগে যুগে নারীর তৈরি মূল্যবোধকে তুচ্ছ করে ছুড়ে ফেলা হয়েছে আর পুরুষ নির্মিত মূল্যবোধের চর্চা হয়েছে।
নারীপুরুষ উভয়ের জন্যই জীবন সমান কঠিন এবং সংগ্রাম মুখর। প্রচণ্ড দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস দাবী করে তা। তো এই আত্মবিশ্বাস কিভাবে অর্জন করা হয়?
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল-ভাবা যে অন্যরা আমার চেয়ে অধম। এতকাল ধরে মেয়েরা এমন এক আয়নার কাজ করে আসছে যার রয়েছে পুরুষকে দ্বিগুণ করে দেখানের এক যাদুকরী ক্ষমতা ।
পুরুষরা বিভোর হয়ে থাকে রাতে ঘুমাতে যায় এবং প্রাতে ঘুম থেকে জাগে এই মিথ্যা সুখে যে পৃথিবীকে অর্ধেক জনগোষ্ঠীর চেয়ে সে শ্রেষ্ঠ। এজন্যই পুরুষরা এত আত্মবিশ্বাসী ও চনমনে হয়ে থাকে। কিন্তু যেদিন মেয়েরা আর আয়নার সাজ কাজ করবে না? যেদিন আয়না সত্য কথা বলা শুরু করবে? ( ক্রমশ)
বিষয়: বিবিধ
১০০৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন