>>নারীমুক্তি ৬ তম পর্ব <<
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:২৪:২৮ সকাল
নারীমুক্তি ৬ তম পর্ব
সমাজ গবেষক “এডওয়ার্ড ফিড জেরাল্ড” আমাদের ধারনা দেন-
“হয়ত সব লোককথা এবং গ্রামীণ গীতের রচয়িতাই নারীরা। চরকি বুলনের ক্লান্তি অথবা পিঠা বানাতে বানাতে যা তারা গেয়ে শোনাতেন শিশু সন্তানদের”। (ক্রমশ)
মেয়েদের লেখালেখি করাকে আগে ভাল দৃষ্টিতে দেখা হতনা যেমন এখনও নাট্যকলা কে ভাল চোখে দেখা হয় না। তার ওপর সব সমই এত খবরদারি ও সমালোচনা করা হত যে লেখালেখিতে পুরু মন নিবিষ্ট করা সম্ভব ছিল না তখন। একথাটা আজও সত্য অনেকাংশেই। সুতরাং প্রতিভাবান কোন মেয়ে যদি তার প্রতিভা কবিতায় খাটাতে চাইত সে অন্য দেরে দ্বারা এতই বাধাগ্রস্ত এবং নিজের বিপরীত প্রবৃত্তির পীড়নে এতই ক্ষতবিক্ষত হত যে সে মানবিক ভারসাম্য হারাত নি:সন্দেহে।আর যদিও কিছু লিখত তা হত অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ সাহিত্য।
উদাহরণ হিসাবে আমরা লেডি উইন বিলিসের কাব্যের কথা উল্লেখ করতে পারি তার মন ফেরান ছিল প্রকৃতিও ধ্যানের দিকে কিন্তু তাকে দীক্ষা দেয়া হয়েছিল ঘৃণা ও তিক্ততায়। তার কাব্য ভরতি ছিল সেসব তিক্ত বর্ণনায় যার শিকার তাকে হতে হয়েছিল। সে লিখতে বসত রাগের বসে যেখানে তার লেখার কথা ছিল ঠাণ্ডা মাথায়। সে লিখত অন্ধের মত তার লেখা উচিৎ ছিল প্রাজ্ঞের মত। সে লিখত মনের ভেতর ঘৃণা ও তিক্ততা নিয়ে। যার কি না লেখা উচিৎ ছিল মশাল নিয়ে।
তেমনি বাংলা সাহিত্যেও বেগম রোকেয়া, নাসরিন জাহান, রাবেয়া খাতুন এমনকি তসলিমা নাসরিনও এ বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি। কারণ-তাদের লেখা উচিৎ ছিল তাদের গল্পের চরিত্র সম্বন্ধে তা না করে তারা নিজেরা কেমন করে বঞ্চিত হয়েছেন সে গল্প করতে শুরু করেন।
“আমার বড় বোন” আমাকে বলতেই হচ্ছে মাধ্যমিক পাস। অল্প বয়সে বিয়ে করে এখন দুই সন্তানের জননী গৃহিনী এবং প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। এত ভাল ছাত্রী ছিল , অথচ তাকে বিয়ে দেওয়া হয় ১৬ বছর বয়েসে। হয়তো তাকে পড়তে দিলে
সে হতে পারত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার।সে হতে পারত কবি বা গায়িকা।( এমন হাজারটা উদাহরণ পাবেন আপনার চার পাশে। আপনার মা, খালা, ভাবী , ফুপু.............................. প্রতিবেশী দের জীবনে।) সে এখন কাঁথা আর বালিশের কভার সেলাই করে। রান্না ঘরে পুই আর পালং কাটে। তার মন ফেরান ছিল বাইরের জগতের দিকে আর তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল রান্নাঘরের দিকে। আমি জানি এই একই গল্পের পুনরাবৃত্তি ঘটছে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে। পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কি নিদারুণ অপব্যবহার।
সিমোন দ্য বেভোয়ার যখন তার জগত বিখ্যাত “লা দ্যজিয়েম সেক্স” লিখছিলেন তখন পুরুষদের প্রচণ্ড সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। তাকে আখ্যা দেয়া হয়েছিল “লেখার সুড়সুড়ি বিশিষ্ট বদমাশ নারী” এবং তাকে বলা হত” অতৃপ্ত নারী –যার দরকার একটি উৎকৃষ্ট সংগম”
এর প্রভাব ছিল মারাত্মক। কারণ শিল্পীর স্বভাবই হচ্ছে তার সম্পর্কে কি ভাবা হচ্ছে সেসব নিয়ে কোন মাথা ঘামানো।( ক্রমশ)
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন