“আইধার”
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১২ আগস্ট, ২০১৩, ১২:০৫:৫৯ দুপুর
“আইধার”
আইধার হল এমন সব কৃষক যাদের নিজের কোন জমি নেই, তারা ধনী জোতদারদের দের নিকট হতে জমি আদি নিয়ে চাষাবাদ করে। এই আইধাররা বিভিন্ন শর্তে জমি চাষাবাদ করে থাকে।
১। কেও আধা আধি ধান দেবার অর্থাৎ যা ধান হবে তার অর্ধেক ভাগ হবে শর্তে জমি চাষ করে।
২। কেও কেও নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান দেবার অর্থাৎ তোমার ধান হোক বা না হোক তোমাকে চুক্তি মত ধান দিতে হবে।
৩। কেও বা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চুক্তি তে অর্থাৎ বসরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সিজনের শুরুতে দিয়ে যাবে, আপনার আর দেখার বিষয় না সে কি চাষ করছে।
এই তিন শর্তের যে কোন একটি পদ্ধতিতে আইধাররা জমি চাষ করে। আগে খড় বা বিচুলির ভাগ দিতে হত না, কিন্তু এখন খড় এর দাম বাড়ার সাথে সাথে খড় এর আধা আধি ভাগ দিতে হয়।
আমি নিজে আমাদের আইধারদের খুব কাছ হতে দেখেছি, ঐ ৩ পদ্ধতির যে কোন টিতে চাষাবাদ করা তাদের জন্য খুব লাভজনক না হলেও তারা বাধ্য হয়ে চাষাবাদ করে। কারণ তাদের খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তা দিয়ে কোন মতে চলে যায় । আমার মনে হয়েছে এটি খুব অমানবিক, তারা এত কষ্ট করে ফসল ফলান অথচ এর ফল ভোগ করেন জোতদাররা। এই পদ্ধতির পরিবর্তন চাই আমি , চাই এই জোতদারি পদ্ধতির অবসান। এই জন্য আমার কিছু শর্ত আছে আইধারদের জন্য।
১। ফসল ভাগ হবে ১ : ২ অনুপাতে। অর্থাৎ জমির মালিক : আইধার ।
২। অথবা জমির মালিকরা নির্দিষ্ট কিছুপরিমাণ চাষাবাদ খরচ দিবে আইধারদের এবং ফসল ভাগ হবে অর্ধেক করে।
এই দুই ভাবে চাষাবাদ করলে আইধাররা কিছু লাভের মুখ দেখতে পাবে। তারা সচ্ছল ভাবে বাঁচতে পারবে। আমরা যারা জোতদার আছি তারা কি ব্যাপারটা
ভেবে দেখতা পারিনা ? আমাদের একটু সহানুভূতি এই গরীব কৃষকদের একটু ভালভাবে বাঁচতে স্বপ্ন দেখাতে পারে।
এবার দেখুন ১ বিঘা জমিতে একটি খরচ এর নমুনা:
১। সার.................................... ১০০০ টাকা
২। বীজ.................................... ২০০ টাকা
৩। শ্রমিক খরচ........................... ৭০০ টাকা
৪। হাল চাষ.............................. ৪০০ টাকা ( বিঘে প্রতি পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ)
৫। নিড়ানি................................. ৫০০ টাকা
৬। বিষ......................................... ৫০০ টাকা
মোট খরচ = ৩৮০০ টাকা
এখন দেখুন উৎপাদন ও পাওনার হিসেব:
১। উৎপাদন বিঘেতে ............................................. ১৮ মন
২। আইধার এর পাওনা.......................................... ৯ মন
৩। বিক্রয় বাবদ পাওনা.......................................... ৯ x ৫৫০= ৪৯৫০ টাকা
৪। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের নিকট থাকে ..................... ৪৯৫০- ৩৮০০=১১৫০ টাকা
ধরেন একজন আইধার কৃষক ১০ বিঘে জমি চাষ করে অর্থাৎ তার বছরে আয় ১০ x ১১৫০= ১১৫০০ টাকা । কি ভাই চলবে বছরে ঐ টাকা দিয়ে পরিবার নিয়ে। এখন চিন্তা করুন কি করুন অবস্থা আমাদের এই প্রান্তিক কৃষকদের। এরা না পারে সইতে না পারে প্রতিবাদ করতে। তাই আসুন এদের পাশে দাড়ায় আমরা যারা ধনী কৃষক আছি । এদের উন্নয়নে একটু কাজ করি।
বিঃদ্রঃ তবে ঐ জমিতে যদি খরালি বা শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদের সুবিধা থাকে তবে একটু পুষিয়ে নিতে পারে আইধাররা। কিন্তু আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলে বেশির ভাগ এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ হয় না পানি সেচের অভাবে।
ইসলাম সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে। হয় তুমি চাষ কর, না হয় তোমার ভাইকে দাও, অথবা ফেলে রাখ......।। এই রকম একটা হাদিস শুনেছিলাম । কেও ভাল করে সুত্র সহ জানলে ইনবক্র করতে বলছি।
https://www.facebook.com/golammaula.akas/posts/563767323691197
বিষয়: বিবিধ
১২১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন