পথ হারিয়ে কোন বনে যাই
লিখেছেন লিখেছেন Nazrul Islam Rony ২৯ জুন, ২০১৩, ১২:৪৩:৩৬ রাত
প্রবন্ধরে শুরুটা অতটা গুরুগম্ভীর না করে একটু গল্প দিয়ে শুরু করা ভাল ।
নাতি দাদুর কাছে এসে- ছিঃ ছিঃ ছিঃ
দাদু : কিরে অত ছিঃ ছিঃ করছিস কেন?
নাতি : শূনছোনা খবরে কি বলল?
দাদু : কি বলল?
নাতি : এইমাত্র জার্মান চ্যান্সলের অ্যাণ্জেলা মার্কলে বন থেকে হেগে এলনে।
দাদু : আরে বোকা বন এবং হেগ হচ্ছে দুটি রাজধানী শহররে নাম।
এতক্ষনে নাতির ভুল ভঙ্গলো।কিন্তু ভুল পথে পা বাড়াতে যাওয়া এদেশের হাজারো
তরুন যুবকের দল,আত্মভোলা হয়ে যারা আলেয়ার পিছু হাটছে তাদের নিয়েই আমার
আজকের অবতরনা।
একটি আলোকতি সমাজ গঠনের জন্য তরুনদের ভূমকিা মূখ্য ।একটি সমীক্ষায় দেখা
গেছে পৃথিবীকে পরবির্তনের জন্য তরুনরাই বেশি অবদান রাখতে পারে যাদের বয়স
২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে।তারাই ক্রিয়েটিভ থিংকিং এর জন্য দক্ষ ।কিন্তু এই
দক্ষতা যদি অঙ্কুরে বিনিষ্ট হয়ে যায় কিংবা করে দেওয়া হয় তাহলে জাতির ঘাড়ে
অসারতার বোঝা-ই ভারি হবে ।দক্ষিন এশিয়ার মধ্যম আয়ের দেশসমূহের মধ্যে
বাংলাদেশের অবস্থান সম্ভাবনাময় হলেও হতাসার চিত্রটাও চোখে পরার মতো।এজন্য
যে বিষটিকে দায়ী করা চলে সেটি হচ্ছে অনৈতিক শিক্ষার প্রভাব।স্কুল জীবনে
আমাদের অঙ্ক কসতে হতো একজন গোয়ালা ২ কেজি দুধের ভিতর .৫ কেজি পানি মেশালে
৭ টাকা লাভ করতে পারে। তাকে ১০ টাকা লাভ করতে আরও কি পরিমান পানি মেশাতে
হবে।এখানে অনৈতিক শিক্ষাকে বুদ্ধিভিত্তিক পন্থায় চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।১৮৩৮
সালে ব্রিটিশ শিক্ষামন্ত্রী লর্ড মেকেল তার শিক্ষাব্যবস্থার মুখবন্ধে
বলেছিলেন-আমরা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ন করব যা ভারতবর্ষের মানুষের
মধ্যে দোভাষীর ন্যায় কাজ করবে।তারা রক্তে মাংসে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তা
চেতনায় হবে ইংরেজ। লর্ড মেকেল প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আজও আমাদের
বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। উপরে উল্লিখিত অঙ্কটি যদি
এভাবে শেখানো হতো-একজন গোয়ালাকে ২ কেজি দুধের ভিতর .৫ কেজি পানি মেশানোর
শাস্তিসরুপ ৭ টি বেত্রাঘাত করা হয় ঐ গোয়ালা যদি ২ কেজি দুধে .৭৫ কেজি
পানি মেশায় তাহলে তাকে কি পরিমান শাস্তি পেতে হবে। তাহলে বাস্তব জীবনে
দূর্নীতির প্রভাব থেকে এ প্রজন্ম রক্ষা পেত।রসূলে কারীম (স
বলেছেন-বাল্য কালের শিক্ষা পাথরে খোদাই করার ন্যায়। রসূলে কারীম (স যে
শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রবর্তন করেছেলেন তার তিনটি দিক ছিল।
1.Human value
2.Social value
3.Ideological value
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় Ideological value-এর অনুপস্থির কারনে আলোকের
দিশা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সমাজ এবং সভ্যতা ।
প্রসঙ্গ ১লা বৈশাখ: বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য এ দিনটি অত্যন্ত
তাতপর্যপূর্ন ।মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিটি বাঙ্গালীর জন্য এ দিনটি আনন্দের
দিন।এ দিনটির তাতপর্যকে ধারন করে এর প্রতিটি দিন, তারিখ ও মাসকে স্বরন
রাথা প্রতিটির বাঙ্গালীর নৈতিক দাবি।বাংলা তারিখ অফিসিয়াল ভাবে গণনা করার
দাবীও অনেকের। সব মিলিয়ে বাংলাকে উপরে তুলে ধরাই নিজেদের জন্য গৌরবের। আর
সে হিসেবে ১লা বৈশাখের বর্ষবরন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।বিদেশী সংস্কৃতির
প্রভাবে যখন আমাদের তরুন প্রজন্ম আহামুরি দিয়ে অন্ধকারে পাখা ঝাপ্টাচ্ছে
বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে 31 night-এ বর্ষবরন, পটকাবাজি ,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বাঁধনহারা কোলাহল, কুরুচিপূর্ন পোশাক,
অশালীন আচারন ইত্যাদি অপকর্ম যখন ঘাতক ব্যাধি আকারে ছড়াচ্ছে তখন বাঙ্গালী
সংস্কৃতি আমাদের রুচিবোধের জাযগাটিতে সুস্থতা দেবে বলে বিশেষজ্ঞদের
ধারনা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার উল্টো। বাংলা সংস্কৃতির নামে কলকাতার
সংস্কৃতির এ জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে। এপার বাংলা ওপার বাংলার সূত্র ধরে
বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি অনলাইন সংযোগ স্থাপন
করেছে। আর সংবিধানে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ
পুনঃস্থাপন হওয়ায় এ সুযোগটি জেকে বসেছে। গত ১৪ এপ্রিল ১লা বৈশাখের নামে
ঢাকার রাস্তায় যে উৎসবটি হয়ে গেল এটি মূলত হিন্দুস্থানের একটি সাংস্কৃতিক
উৎসব। যেসব মুসলিম যুবতীরা শাঁকা সিঁদুরের প্রতীক লাল সাদা কাপড় পরে
রমনায় নেচে এলেন এবং প্রতিটি যুবতী তার বিপরীতে অনেক যুবককে নাচালেন তা
মূলত সাংস্কৃতিক গোলামীর সাক্ষ্য দেয়। শুধু তই নয় মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে
পেঁচা, ভাল্লুক, কুমির, হাতি ইত্যাদির প্রতিকৃতি নিয়ের রালি করা, মঙ্গল
প্রদীপ জ্বালানো, রাখীবন্ধন, ১ মিনিট নিরবতা পালন এ সবগুলোই সাংস্কৃতির
আগ্রাসনের সাক্ষ্য বহন করে। পহেলা বৈশাখে গালে উল্কি আঁকা আরেকটি নগ্ন
সংস্কৃতি। হাদীসে বর্নীত-যে ব্যক্তি উল্কি আঁকায় এবং যে ব্যক্তি আঁকে
উভয়ই অভিসপ্ত। বাইবেলেও একে নিষেধ করা হয়েছে।আর চিকিৎসা বিজ্ঞানরে
দৃষ্টেতে এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছ। সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক সৈয়দ আসাফ
উদদৌলার মতে-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনইস্টিটিউড থেকে হাতি, পেঁচা,
কুমিড়ের প্রতিমা নিয়ে যে রালিটি বের হয় তাতে অংশগ্রহনকারী প্রায় সবাই
মুসলমান। আমরা এটাকে প্রত্যক্ষ্য করতে পারি কিন্তু অংশ গ্রহন করতে
পারিনা। বলা হচ্ছে এগুলো নাকি বাঙ্গালীর সংস্কৃতি। প্রশ্ন হচ্ছে বাঙ্গালী
কে ? সহজ ভাষায় যিনি বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু একজন হিন্দু বাঙ্গালী যদি
তার ধর্মকে মাথায় তুলে নাচতে পারে তাহলে মুসলিম বাঙ্গালী কেন তার ধর্মীয়
অনুভুতিকে বলি দিয়ে হিন্দুত্বের জোয়ারে গা ভাসান ! ভারতীয় সংস্কৃতির একটা
প্রভাব লক্ষ্য করা যায় আমাদের সমাজ জীবনে। আমাদের যৌথ পারিবারিক প্রথাকে
ভেঙ্গে দিয়ে একক পারিবারিক জীবনকে বেছে নেওয়া, পারিবারিক বিশৃংখলা এবং
বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ভারতীয় সিরিয়ালগুলো অনেকাংশে দায়ী। অথচ ভারতীয় এই
চ্যানেলগুলোর পিছনে বাংলাদেশকে প্রতিবছর গুনতে হয় ৪০০ কোটি টাকা যা দিয়ে
৪ টি পদ্মা সেতু নির্মান করা সম্ভব। ভারতীয় চলচিত্রের একটা প্রভাব এদেশের
যুবক যুবতীদের পোশাক ও বিশেষভাবে রক্ষ্য করা যায়। সে কারনে ঈদ এলে ভারতীয়
পন্যের একটি বিশাল বাজার হয় বাংলাদেশ। আমাদের তরুন যুবকদের এই সংস্কৃতি
কখনোই গ্রহন করা উচিত নয়। তাহলে আমাদের অসভ্যতা এবং বর্বরতা আরও
সর্বগ্রাসী আকারে প্রকট হবে।তাই আামরা এদেশের এক শ্রেনীর স্থুল চিন্তার
বুদ্ধিজীবিদের পরাধীন ঐ আহবানকেও প্রত্যাখান করি যারা এপার বাংলা ওপার
বাংলার দোহাই দিয়ে এদেশের সংস্কৃতিতে দেবদেবীর আছর লাগায়। এজন্য কথা
সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ বলেছেন-"রাজনৈতিক আগ্রাসনের চেয়েও সাংস্কৃতিক
অগ্রাসন ভয়াবহ।" আর এই ভয়াবহতা রোধকল্পেই ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রশ্ন এসে
দাঁড়ায়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন