একটি উদ্যোগ
লিখেছেন লিখেছেন বিদ্যালো১ ১৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:২৩:১৬ দুপুর
অনেকদিন ধরে অনেক বিষয় নিয়ে লিখব লিখব করেও লিখা হয়ে উঠেনি। এখন বুঝতেছিনা কোন বিষয় নিয়ে লিখব। আমাদের স্বাধীনতা দিবস উজ্জাপন, বান্দরবন ভ্রমণ, T20 বিশ্বকাপের জুয়া ও সম্প্রতির সীতাকুণ্ড ও মহামায়া প্রোজেক্ট ভ্রমণ ছাড়াও অনেক বিষয় নিয়ে লিখব ভাবতে ভাবতেই সময় গরিয়ে যাচ্ছে। এত বিষয়ের মধ্যে স্বাধীনতা দিবস উজ্জাপন নিয়েই কিছু লিখি।
চারিদিকে যখন দেশপ্রেম আর বিশ্ব রেকর্ড গড়ার ও ভাঙ্গার জয় জয়ও কার তখন একটা পক্ষ কোমর বেঁধে এর বিরোধিতায় লিপ্ত। একজন বন্ধুর মত বড় ভাই এই বিষয় নিয়ে ফেসবুকএ ২৪ মার্চ সকালে একটা পোস্ট দেন। ঐ পোস্ট এ কমেন্ট করতে করতে পথশিশুদের সাথে স্বাধীনতা দিবস পালনের একটা প্রস্তাব আসে।
যেই ভাবা সেই কাজ। সাথে সাথে আমি একটা ইভেন্ট তৈরি করি। ইভেন্টির লক্ষ ছিল পরিচিতদের কাছ থেকে একটা ফান্ড গঠন করা যা আমরা পথশিশুদের দুপুরের খাবার ও কিছু পুরষ্কারের জন্য ব্যয় করব। অনেকেই একমত পোষণ করে। আমার সকল বন্ধুদের এই ব্যাপারে জানানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ২৪ মার্চ রাত পর্যন্ত তেমন সাড়া পেলাম না। কিছুটা হতাশ হলাম। ঐ বড় ভাইকে জানালাম, অনুরোধ করলাম আমার পোস্টটি শেয়ার করতে। বুদ্ধিটা কাজে লাগলো। সকালে হতাশা কেটে গেল। অনেক ভাই বোন সকালে ফান্ডের জন্য টাকা bkask করা শুরু করে। মাত্র দুইটা মোবাইল নম্ভর দিয়েছিলাম যা শুধুমাত্র অনধিক ১০বার টাকা রিসিভ করতে পারবে যা আমার জানা ছিল। আরও একটি প্রতিকূলতা ছিল ২০০ টাকা bkash করা নিয়ে। এজেন্টরা এত কম টাকা পাঠাতে চায় না। আরও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম। অনেকে নাকি ঐ বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। আসলে এমন কোন কাজ আগে করার অভিজ্ঞতা না থাকায় এমন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হই।
এসবের মধ্যেই আমরা এগিয়ে চলি। দিন শেষে প্রায় ১২০০০ টাকা সংগ্রহ হয় যা ছিল আমার কল্পনার বাহিরে। আমরা সরবোচ্ছ ৫-৬ হাজার টাকা আশা করেছিলাম। আমাদের ভাই-বোনদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন আমার ধারণাকে পরাজিত করে অনেক এগিয়ে যায়। ৫০জন পথশিশুকে নিয়ে আমাদের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। পরবর্তীতে ১০০জনকে টার্গেট করে আমরা এগিয়ে যাই।
ফান্ড সংগ্রহ করলাম, খাবার অর্ডার সবই চলছিল। কিন্তু ১০০জন শিশু কইপাব? কিভাবে এদের আনন্দ দিব? কিভাবে এদের কন্ট্রোল করব কিছুই মাথায় আশ্তেছিল না। অনেকেই প্রথমবার বলাতেই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। এই খবর শুনে অনেক বোন স্বেচ্ছাশ্রম দিতে রাজি থাকলেও আমরা ভাইরা থাকতে তাদের এই কষ্ট দিতে চাইনি যদিও তখনও যথেষ্ট জনশক্তি পাইনি (পরে জেনেছি কেও কেও আমার এই সিদ্ধান্ত কে একটু নেতিবাচক ভাবে নিয়েছে। আমারও মনে হয়েছে যে কিছুটা ভূল হয়েছে। আল্লাহ্-ই ভাল জানেন কোনটি সঠিক ছিল।)। আমার এলাকার কিছু বন্ধুকে ২৫মার্চ রাত এ জানালাম, তারা কোন ধরনের চিন্তাভাবনা না করেই রাজী হয়ে গেল। তবুও সারারাত ঘুমাতে পারলামনা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ডাকার জন্য বের হলাম । যারা যাবে বলল তাদের ফোন করা শুরু করলাম। আবার প্রতিবন্ধকতা। কেউ কেউ অসুস্থ থাকায় ইচ্ছা থাকার পরও যেতে পারছে না। কারো কারো পরীক্ষা। সব প্রতিকূলতাকে ঠেলে এগিয়ে চললাম। প্রায় ২০ জনের একটা টিম তৈরি করলাম।
সবাই টাইগারপাস এ মিলিত হলাম। কেউ ফেসবুক এ পরিচিত, কেউ এলাকার, কেউ ইউনিভার্সিটির। কমন ছিলাম আমি। বাকিরা একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার পর আমরা একটা ছোট মিটিং করলাম। কিভাবে কি করব ঠিক করে সিআরবি হিল এর দিকে হাঁটা শুরু করলাম। কেউ জায়গা নির্বাচন, কেউ শিশু সংগ্রহ, কেউ তাদের জন্য গিফট কিনতে গেল।
এক-দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ৮০-৯০ জন শিশু সংগ্রহ করলাম। তাদের নিয়ে মোরগ লড়াই, মুরগী লড়াই, ব্যাঙ লাপ, আবৃতি ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে তাদের আনন্দ দিচ্ছিলাম। আমরাও আনন্দ পাচ্ছিলাম। এক সময় শিশু বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কিছুটা নির্দয় হতে হয়েছে। পরবর্তিতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। ছয়জন হিন্দু থাকায় তাদের জন্য চিকেন আনতে হল। ১০৬জন কে আমরা দুপুরের খাবার খাওয়াতে পারলাম।
এই আয়োজনের ফলে হয়ত কিছুই করতে পারলাম না; এক বেলা খাওয়ানোতে দেশ বদলাবে না। দেশ বদলাতে, দেশের জন্য কিছু করতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। ১০০জন কে এক বেলা না খাইয়ে ১-২ জনকে সারা বছর খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু একটা ইতিবাচক দিক হল আমাদের অনেকের মাঝেই একটা কিছু করার ইচ্ছা আছে কিন্তু সুযোগের অভাবে করা হয়না। একদিনের মধ্যে এর চেয়ে গোছাল কোন কিছু আশা করা যায়না। পরবর্তীতেও এমন ইভেন্ট আয়োজনের ইচ্ছা পোষণ করি। (ঈদ এ নূতন জামা দেয়ার কথা ভাবছি।) দীর্ঘমেয়াদী কিছুর জন্য আপনাদের পরামর্শ ও নির্দেশনা আশা করছি।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৮ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পথের ধারে অবহেলায়
কাটে যাদের সকল সময়
কুড়িয়ে নিয়ে পায়না খেতে
....
Dowa korben, jaate uddogti chaliye jete pari. r shokol RIYAR urdhe thakte pari.
পথের ধারে অবহেলায়
কাটে যাদের সকল সময়
কুড়িয়ে নিয়ে পায়না খেতে
প্রশংসার দাবিদার
ধন্যবাদ এসব পথশিশুদের সাহার্য্য করার জন্য।
আপনা এর সাথে তাদের জন্য কিছু শিক্ষা উপকরন ও দিতে পারেন। যে গুলি নিজে নিজে ব্যবহার করা যায়।
Dowa korben, jaate uddogti chaliye jete pari. r shokol RIYAR urdhe thakte pari.
চমৎকার উদ্যোগ! সংগঠিত হলে আরো অনেক বেশি কাজ করতে পারবে ইনশা আল্লাহ
Dowa korben, jaate uddogti chaliye jete pari. r shokol RIYAR urdhe thakte pari.
নামবার জদি দিতেন,
হয়তো আপনাদের এই প্রোগ্রামে আমি বা আমরা কোন সাহায্য করতে পারতাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন