সোনারগাঁও ভ্রমণ – শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন বিদ্যালো১ ২৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০২:০৪:৩৪ দুপুর
সোনারগাঁও ভ্রমন-২
যাদুঘর থেকে বের হওয়ার পথে গ্রামীণ জীবন যাপনের কিছু ডামি চোখে পড়লো। বর্তমানে কেউ যদি এগুলোকেই গ্রাম ধরে বসে, তাইলে হয়ত গ্রাম খুঁজে পাবে না। সব কিছুই পরিবর্তন হচ্ছে। শহরে ব্যস্তানুপাতিক হারে বাড়ছে নগরায়ন সাথে সামাজিকীকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ভালবাসার দূরত্ব। গ্রামেও এর ছোঁয়া না পড়লে কি হয়? জন্মদিন পালন (মাঝে মাঝে সাউন্ড সিস্টেম সহ), নর্তকী বা গায়ক ভাড়া করে গায়ে হলুদ বা বিবাহ অনুষ্ঠান পালন এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। শহরের উন্নতি যেমন দ্রুত ও বাহ্যিক (মজ্জাগত কোন পরিবর্তন চোখে পরে না) হচ্ছে, গ্রাম ও এর বাহিরে যেতে পারছে না। এর কতকের জন্য, ৮০% এর বেশিই হবে, শহুরে পরিকল্পনাকারী ও এর বাস্তবায়নকারীরা দায়ী। যাইহোক, ডামি দেখে অতিত গ্রামের একটা চিত্র মনের মধ্যে ভেসে উঠল।
যাদুঘরের বাহিরেও সোনারগাঁও একটি বিশাল জায়গা। গ্রামের ফ্লেভার আনার জন্য বাঁশের সাঁকো সেট করা হয়েছে। কেও চাইলে একে এড়িয়ে পার হয়ে যেতে পারে, সেই পথ করাই আছে। একটা ছোট হ্রদ আছে। অনেকে এতে বোটিং করছে, কেউ কেউ ফিশিং করছে। আমরা ক্লিপিং করেছি। পিকনিক স্পট, জামদানি পল্লি থাকলেও প্রচুর গরম ও সময় স্বল্পতায় পুরো এলাকা ঘুরতে পারিনি। অপূর্ণতা থেকে গেল।
(আমার উপর রাগ হচ্ছে নিশ্চয়? ভাবছেন এই লেকচার দেয়ার জন্য একটা পর্ব বাড়ানোর কি দরকার ছিল?)
অপূর্ণতা আছে ঠিকই, কিন্তু পানাম সিটির পাশে গিয়ে, এই পুরাতন সিটিটা না দেখেই চলে আসলে কি চলে? গুগল ম্যাপের কল্যাণে আগেই সোনারগাঁও এর আশেপাশে কি কি আছে জেনে নিয়েছিলাম। তাই সোনারগাঁওয়ের ভিতরে আর তেমন না ঘুরেই, কিছু কেনাকাটা করা ছাড়াই পানাম সিটির পথে হাঁটা দিলাম। এটা ব্যাচেলরদের একটা সুবিধা। সাথে বউ থাকলে নিশ্চিত কেনাকাটা ব্যতিত পানাম সিটি দেখা হতো না। হেঁটে যেতে পাঁচ-দশ মিনিটের মত লাগলো।
পানাম সিটি একটি পুরাতন শহর। ১৯শ সতকের শেষের দিকে নদীমাতৃক বাংলাদেশের মেঘনা নদীর কল্যাণে এটি গড়ে উঠে। এই একই কারনে সোনারগাঁওও এইখানে গড়ে উঠেছিল। একসময় মেঘনার পাড়ে নদী বন্দর ছিল। ইবনে বতুতাসহ অনেক পর্যটক এই সোনারগাঁও ভ্রমণ করেন। বিশ্বের সকল সভ্যতাই ছিল নদী কেন্দ্রিক। পানাম সিটিও এর ব্যতিক্রম নয়। নদীমাতৃক এই দেশে যাতায়াতের সুবিদার কারনেই হয়ত এক সময়ের অবস্থা সম্পন্ন ব্যবসাহিরা এই শহরে বাস করত। এরা সবাই হিন্দু ছিল, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় এরা ভারতে পাড়ি জমায়। বর্তমানে তাদের এই পরিত্যক্ত সম্পত্তি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধিকারে আছে। এখানে ২০-৩০টা দোতালা বাড়ি আছে। কিছু কিছু খুব সুন্দর কারুকাজ করা। প্রায় সবগুলোই লকড্। কিছু কিছু বাড়ির পেছনে মানুষ নিশেধাক্ষা উপেক্ষা করে বাস করছে। এক সময়ের প্রাণচাঞ্চল্লে ভরা এই বাড়িগুলো আজ জীর্ণ শীর্ণ হয়ে পরে আছে। অথচ আমরা মরণশীল মানুষরা দিব্যি এই বাস্তবটাকে ভুলে রয়েছি। অন্তত আমাদের কর্মকাণ্ড তাই প্রমান করে।
সন্ধ্যা নেমে আসায় মেঘনা পারে আর যাওয়া হয়নি। ফিরতি পথে যাত্রা শুরু করতেই খাদ্যমন্ত্রির সাক্ষাতের অভাব বোধ করলাম। পথের পাশে এক চাচা চিতই পিঠা বানাচ্ছে দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনাই। গরম গরম মাত্র বানাচ্ছিল; সাথে ছিল মরিছ-সুটকির ও সরিষার ভর্তা। গরম-ঝাল-মজা সব একাকার হয়ে যাচ্ছিল। পিঠা একটা উঠলেই ছোমেরে তিনজনে সাবার করে দিচ্ছি। আবার পরেরটার জন্য অপেক্ষা। এভাবেই কিছুক্ষন চলল। একসময় থেমে গেলাম।
চট্টগ্রামের বাস ধরতে চিটাগাং রোড চলে আসলাম। আসার পথে সেলিম ‘তাজমহল’ লিখা একটা সাইন বোর্ড দেখিয়ে অপূর্ণতার মাত্রা আরও একটু বাড়িয়ে দিল। গুগল ম্যাপের কল্যাণে এর অবস্থান জানলেও এটাযে এত কাছে ভাবতে পারিনি। (তাজমহল কিছুটা ইন্ডিয়ার মূল তাজমহলের ডিজাইনে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠা একটি পর্যটন কেন্দ্র।) চিটাগাং রোড আসতে ৭ টার মত লাগলো। ঐ সময়ে চিটাগাংএর কোন বাস না থাকায় বাধ্য হয়ে ১১টার বাসের টিকেট সংগ্রহ করলাম। যদিও বাস এসেছিল ১২টায়। এই পাঁচ ঘণ্টার বিরক্তির মাঝে একটা লোকাল মিষ্টির দোকানে নাস্তা ও মিষ্টি খাওয়ার সময়টা কিছুটা স্বস্তি দিল।
ছবির কৃতিত্ব - সেলিম
বিষয়: বিবিধ
৩০৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন