রজমান মাসকে স্বাগতম

লিখেছেন লিখেছেন মনিরা ০৮ জুলাই, ২০১৩, ০৯:২৫:৪৮ রাত

বাড়িতে বিশেষ কোনো মেহমান আসার তারিখ থাকলে আমরা আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নিই। ঘরদোর পরিষ্কার করি। বিছানাপত্র সাফ-সুতরো করি। পরিপাটি করি বাড়ির পরিবেশ। নিশ্চিত করি মেহমানের যথাযথ সম্মান ও সন্তুষ্টি রক্ষার সার্বিক ব্যবস্থা। তারপর অপেক্ষা করতে থাকি মেহমানকে সসম্মানে বরণ করে নেয়ার জন্য। আমাদের ঘরেও আজ উপস্থিত এক বিশেষ অতিথি।

এমন অতিথি যার আগমনে সাড়া পড়ে যায় জমিনে ও আসমানে! আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় সমগ্র সৃষ্টি জগতে! আল্লাহর হাবিবের মুখেই শুনুন সে কথা—‘যখন রমজানের প্রথম রাত আগমন করে—শয়তান এবং অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়; খোলা রাখা হয় না কোনো দ্বার, জান্নাতের দুয়ারগুলো অর্গলমুক্ত করে দেয়া হয়; বদ্ধ রাখা হয় না কোনো তোরণ। এদিকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন—‘হে পুণ্যের অনুগামী, অগ্রসর হও। হে মন্দ-পথযাত্রী, থেমে যাও।’ আবার অনেক ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আর এমনটি করা হয় রমজানের প্রতি রাতেই।’ (তিরমিযি : ৬৮২; ইবনে মাজা : ১৬৪২)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই রমজান আসার আগে থেকেই রমজানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। শাবান মাসে অধিক হারে নফল রোজা পালনের মাধ্যমে তিনি রমজানে সিয়াম সাধনার পূর্বানুশীলন করতেন। তদুপরি তিনি সাহাবিদের রমজানের শুভাগমনের সুসংবাদ দিতেন। তাদের শোনাতেন রমজানের ফজিলতের কথা। তারা যেন রমজানে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি করে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। নেকি অর্জনে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে প্রত্যয়ী হন।

ইমাম আহমদ (রহ.) আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গী-সাথীদের এই মর্মে সুসংবাদ শোনাতেন—‘তোমাদের সমীপে রমজান মাস এসেছে। এটি এক মোবারক মাস। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এতে জান্নাতের দ্বার খোলা হয়। বন্ধ রাখা হয় জাহান্নামের দরজা। শয়তানকে বাঁধা হয় শেকলে। এ মাসে একটি রজনী রয়েছে যা সহস্র মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে যেন যাবতীয় কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো।’ (মুসনাদে আহমদ : ২/২৩০)

সুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো, এ মহান অতিথির সমাদর করা। এ মাস যেন আমাদের বিপক্ষে দলিল না হয়ে দাঁড়ায় তার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। কারণ মাসটি পেয়েও যে এর উপযুক্ত মূল্য দিল না, বেশি বেশি পুণ্য আহরণ করতে পারল না এবং জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পরোয়ানা পেল না, সে বড় হতভাগ্য।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, এমন ব্যক্তি আল্লাহর ফেরেশতা ও খোদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদদোয়ার অধিকারী। কারণ এমন ব্যক্তির ওপর জিবরাইল (আ.) লানত করেছেন আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গে ‘আমিন’ বলেছেন!

রমজানকে সব গোনাহ থেকে বিশেষ করে তওবার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত। কারণ এটা তো তওবারই মৌসুম। এ মাসে তওবা না করলে তওবা করব কবে? অনুরূপভাবে রমজানে ইবাদতে দ্বিগুণ চেষ্টা, দান-সাদাকা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-ইস্তেগফার এবং অন্যান্য নেক আমল অধিক পরিমাণে করার দৃঢ় সংকল্প রাখতে হবে এবং এ দোয়ার মাধ্যমে—হে আল্লাহ! আমাদের তোমার সন্তুষ্টিমত রোজা রাখার এবং তারাবি আদায় করার তাওফিক দাও।

বিষয়: বিবিধ

১৭৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File