মোহরানাঃ স্ত্রীর অধিকার
লিখেছেন লিখেছেন মনিরা ২৬ জুন, ২০১৩, ০১:৪৩:৪১ দুপুর
দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের মাধ্যমে পুরুষ ও একজন নারী জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও নতুন অধ্যায় শুরু হয়। দাম্পত্যের আবর্তে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় প্রেম-ভালবাসা। চাওয়া-পাওয়া ও অধিকারের বিষয়টিও। একজন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যে অধিকার ও দায়-দায়িত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি একজন স্বামীর প্রতিও স্ত্রীর অধিকার ও দায়-দায়িত্ব রয়েছে।
একজন নারী তার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ফেলে স্ত্রীরূপে স্বামীর ঘরে প্রবেশ করে। স্বামীর ঘরে আসার পর স্ত্রীর চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-বিনোদন সবকিছুই স্বামীর সংসারকে ঘিরেই শুরু হয়। স্বামীর অবর্তমানে একজন স্ত্রী যাতে অসহায়ত্বের কালোছায়ায় পতিত না হয় এজন্য ইসলাম ধর্মে রয়েছে প্রয়োজনীয় পথ-নির্দেশনা। মোহরানা তেমনিই এক উপহার।
বিয়ের পর একজন স্ত্রীর অধিকারপ্রাপ্তিতে প্রথমেই চলে আসে মোহরানার বিষয়টি। পবিত্র কোরআনুল কারিমে সূরা নিছার ৪নং আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা দিয়ে দাও সন্তুষ্টচিত্তে।’ বিয়েতে মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় হিসেবে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী যে অর্থ-সম্পদ পেয়ে থাকে তাকেই মোহরানা বলে। অর্থাৎ মোহরানা বলতে ওইসব অর্থ-সম্পদ বোঝায়, যা বিয়েবন্ধনে স্ত্রীর ওপর স্বামীত্বের অধিকার লাভের বিনিময়ে স্বামীকে আদায় করতে হয়। বিয়েতে নারীকে মোহরানা দেয়ার জন্য পুরুষের প্রতি আল্লাহর যে নির্দেশ এটা ফরজ বা অবধারিত।
মহানবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করার তার ইচ্ছে নেই, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’ (মুসনাদে আহমেদ)
সুতরাং মোহরানা স্ত্রীর এমন একটি প্রাপ্য যা তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে পাওনা হন, তবে স্ত্রী (স্বেচ্ছায় ও স্বত:স্ফূর্তভাবে) সময় দিলে বাকি রাখা যাবে। কিন্তু মোহরানার অর্থ আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে। বিবাহিত স্ত্রীকে অসহায় মনে করে ছলে-বলে-কৌশলে বা অজ্ঞতার সুযোগে মাফ করিয়ে নিলে মাফ না হয়ে তা হবে জুলুম-প্রতারণা। এ জুলুম প্রতিরোধকল্পে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন-‘যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে মোহরের কিছু অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবে তোমরা তা হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে পার।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৪)। মোহরানা এককালীন আদায় করতে অক্ষম হলে, উত্তম হল কিছু অংশ নগদ আদায় করে বাকি অংশ পরে আদায় করা, তা ধীরে ধীরে কিস্তিতে পরিশোধ করা। তবে মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী যাতে তিনি সহজেই তা পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান সমাজের দু:খজনক ঘটনা হলো-বিশাল আকারের মোহরানা বাধা হয় নামেমাত্র অথচ বহুলাংশে তা পরিশোধ করতে দেখা যায় না।
তাই কেবল সামাজিক স্টাটাস রক্ষার জন্য মোটা অংকের মোহরানা নয়; বরং সামর্থ্যরে মধ্যে মোহরানা বেঁধে নির্দিষ্ট সময়ে বাসর হওয়ার আগেই তা পরিশোধ করে দেয়া উচিত। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন, আমীন!
বিষয়: বিবিধ
৯৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন