আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য
লিখেছেন লিখেছেন মনিরা ২৬ জুন, ২০১৩, ১২:০৫:৪১ রাত
আদর্শ স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য কোন মহিলা যদি তার চরিত্র নিম্নোক্ত গুণাবলীর সমাবেশ ঘটাতে পারে সে একজন আদর্শ ও কল্যাণ কামী স্ত্রী হিসাবে সুখময় সংসার জীবন- যাপন করতঃ পরকালীন মুক্তি ও পুরস্কার লাভে ধন্য হতে পারে। ধর্য্যশীলতাঃ.................. ধর্য্য একটি মহৎ গুণ। ধর্য্য সাফল্যের সোপান। একজন ধর্য্যশীলা স্ত্রীই পরিবারের সকল কে যে কোনো ধরনের মারাক্তক বিপর্যয় রক্ষা করতে পারে এবং নিজেও বিভিন্ন সমস্যা রক্ষা করতে পারে এবং নিজেও বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পেয়ে আত্নমর্যাদা লাভ করতে পারে। প্রবাদে বরে, যে সহে সে রহে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,স্বামী যদি কোনো কারণে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে স্ত্রী কে কোন কটু কথা বলে ফেলে এবং স্ত্রী তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তপ্ত জবাব না দিয়ে একটু ধর্য্যধারন করে এবং স্বামীর ক্রোধ প্রমমিত হলে মিষ্টি স্বরে প্রতিবাদ জানায়, তা হলে স্বামী তার কৃ্তকর্মের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হবে। এতে স্ত্রী নিজে যেভাবে একটি আসন্ন অঘটন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে, তেমনি পরিবার কে একটা ধংসাত্নক পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ ধর্য্যশীলদের সাথে আছেন।(সূরা বাকারা) সত্যবাদীতা ও কোমলতাঃ সত্যবাদী ও মিষ্টিভাষী মানুষ সর্বত্রই সমাদৃত। একজন সত্যবাদী ও মিষ্টিভাষী স্ত্রী পরিবারের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। পক্ষান্তরে কর্কভাষী স্ত্রী দ্বারা কেউ শান্তি পায়না, তাই সে সকলের কাছেই অসহনীয় ও ঘৃণিত। হাদিস অনুসারে সত্যবাদী ও উত্তম আচরন কারি আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট খুবই প্রিয়। রাসূল(সাঃ) ইরশাদ করেন-নিশ্চয় অহংকারী ও কর্কভাষী কখনো বেহেস্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।(আবু দাউদ) রাসূল (সাঃ) মেরাজের রাত্রে কিছু সংখ্যক মহিলাকে জিহ্বার সাথে লটকানো দেখতে পেয়ে হরযত জিব্রাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে জানতে পারলেন এরা ঐ সকল মহিলা যারা কথা বার্তায় সংযত ছিল না। এরা কথা বার্তায় স্বামী সহ আশে পাশের লোকদের কে কষ্ট দিত । পর্দাশীলতাও লজ্জাশীলতাঃ আল্লাহ পাক মুমিন নারী পুরুষের প্রতি পর্দা ফরজ করেছেন। পর্দা হলো এক জন আদর্শ ও সম্ভ্রান্ত মহিলার প্রতিক। পর্দা মানুষের মধ্যে লজ্জা সৃষ্টি করে এবং যৌন অপকর্ম থেকে দূরে রাখে। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন_লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ। একজন পর্দাশীল নারী যার তার সাথে মেলামেশা করতে পারে না, তার পর্দা ও লজ্জা তাকে হেফাজত করে। রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন-মেরাজের রাত্রে পর্দাহীনতার কারণে কিছু মহিলাকে মাথার চুল দ্বারা লটকানো দেখা গেছে। হরযত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন_ প্রত্যেক ধর্মেরই একটি বৈশিষ্ট রয়েছে,ইসলামের বৈশিষ্ট শালীনতা। চোগলখোরী পরিহার করাঃ চোগলখোরী একটি মারাত্নক ব্যাধি। এর জন্য কেয়ামতের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। চোগলখোর সমাজের পরম শ্ত্রু। এদের কারণে সমাজে বিশৃংখলা ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে স্ত্রীর যদি এ দোষ থাকে, তা হলে উক্ত পরিবারে কোন শান্তি থাকে না। অল্পেতুষ্টিঃ যদি ও ইসলাম বিধান মোতাবেক স্ত্রীর যাবতীয় ভর-পোষণের দায়িত্ত স্বামীর উপর অরপিত,তথাপিও স্ত্রী কে স্বামীর সমার্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা তার দায়িত্ত। স্বামীর নিকট কোন কিছুর দাবি করতে হলে স্বামীর সামর্থ্য বিবচেনা করতে হবে। স্বামীর পক্ষে প্রধান করা অসম্ভব এমন কিছু দাবী করা আদর্শ স্ত্রীর গুণ নয়। স্বামীর সামর্থের অনুযায়ী কম-বেশী এবং ভালো-মন্দ যাই কিছু প্রধান করবে, একজন আদর্শ স্ত্রী সন্তুষ্ট চিত্তে তাই গ্রহন করতে হবে। মোট কথা অল্পে তুষ্টি একজন আদর্শ স্ত্রীর অন্যতম গুণ। উত্তম ব্যাবহারঃ উত্তম ব্যাবহার উত্তম চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। যে স্ত্রী তার স্বামীর ও স্বামীর আত্নীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যাবহার করে সে উত্তম নারী হিসাবে পরিগনিত। দুনিয়াতে সে সকলের আদরের পাত্র ও শান্তির প্রতিক এবং কেয়ামতে আল্লাহ পাকের করুণার দৃষ্টি পাওয়ার উপযোগী। স্বামীর আনুগত্যঃ স্বামী স্ত্রী একই দেহের ২ টি অঙ্গ। ২জনের সমন্নয়ে ১টি নতুন সংসারের সুত্রপাত হয়। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিকট অধিকার প্রাপ্য। তবুও স্বামী স্ত্রীর উপর কৃর্তৃত্বশীল। কুরআনের ভাষায়ঃ "পুরুষ নারীর উপর কৃর্তৃত্বশীল"। সূরা নিসা-৩৪। আল্লাহ পাকের এ নির্দেশ স্ত্রীর নতশির মেনে নিতে হবে। তার বিপরীত কাজ করলে পারিবারিক শান্তি-শঙ্খলা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। যদি কোন মহিলা অহংকার বশতঃ স্বামীর কৃর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে তা হলে এই পরিবারে কোন শান্তি প্রতিষ্টিত হবে না। স্বামীর কৃর্তৃত্বের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন-যদি নির্দেশ দিতাম তা হলে স্ত্রী কে নির্দেশ দিতাম স্বামীকে সিজদা করতে।(তিরমিযী) রাসূল (সাঃ) অন্যত্র ইরশাদ করেন- কোন মহিলা যেন তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতিত ফরজ রোজা ছাড়া অন্য কোন রোজা না রাখে।(তিরমিযী) স্বামীর সম্পদের হেফাজত করাঃ স্ত্রীর নিকট স্বামীর সম্পদ আমানত স্বরূপ। স্ত্রীর উচিত স্বামীর এই সম্পদের রক্ষণা-বেক্ষণা করা এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতিত খরচ না করা। আর একজন আদর্শ স্ত্রী অবশ্যই স্বামীর সম্পদ কে নিজের সম্পদ মনে রক্ষণা-বেক্ষণ করে থাকে। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন_যে ব্যক্তিকে চারটি নেয়ামত দেওয়া হয়েছে সে ইহকালে ও পরকালের মঙ্গলের অধিকারী হয়েছে। যথা-১)কৃতজ্ঞ হৃদয়,২)আল্লাহকে স্মরণকারী জিহ্বা,৩)বিপদে ধৈর্যধারণ শরীর ও মন, ৪)বাধ্য গত স্ত্রী যে তার স্বামীর দেহ ও তার সম্পদের ব্যাপারে বিশ্বাস ঘাতকতা না করে। (বায়হাকী)। সন্তানদের উত্তম শিক্ষাদানঃ শিশুর প্রথম শিক্ষকই হল তার মাতা। শিশু যে হেতু মায়ের তত্ত্বাবধানে পালিত_পালিত হয়, তাই মায়ের শিখানো বিষয়ই জ্ঞান ও অজ্ঞাতসারে আয়ত্ত করে থাকে। তাই একজন মহিলার উচিৎ তার সন্তান কে ভাল জিনিস শিক্ষা দেয়া এবং খারাপ বিষয় থেকে দূরে রাখা । একজন আদর্শ মাতা অবশ্যই তার সন্তান কে উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকাঃ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন_পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। শরীর,পোষাক, বিছানা পত্র , আসবাব পত্র, বাড়ী ঘর ইত্যাদি পরিস্কার থাকলে মন পরিস্কার থাকে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মানুষ সকলের নিকট প্রিয়। তাই স্ত্রীর উচিৎ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা,সুগন্ধি ব্যাবহার করা এবং স্বামীর সম্মুখে সাজগোছ করে নিজেকে উপস্থাপন করা,যাতে স্ত্রীর প্রতি স্বামী সর্বদাই আকৃষ্ট থাকে। পরনিন্দা ক গীবত থেকে দূরে থাকাঃ পরনিন্দা ও পরচর্চা মারাত্নক অপরাধ। আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) এ দু টো কাজ না করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। উল্লেখ এ প্রবণতাটি পুরুষের চেয়ে মহিলাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। পরনিন্দা ও পরচর্চা কারীদের দ্বারা সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। একজন আদর্শ মহিলা অবশ্যই এ থেকে বেচে থাকবে। উপরোক্ত গুণাবলী যে নারীর মধ্যে থাকে? সেই একজন উত্তম আদর্শ স্ত্রী বা মা হিসেবে মর্যাদার আসন অলংকৃত করতে পারে এবং বয়ে আনতে পারে যে কোন সংসারে বেহেশতের শান্তি। মহিলাদের ওয়াজ বই থেকে সংগ্রহীত। ব্লগে সম্পাদনায়ঃ ব্লগার সৈয়দ রুবেল। শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে।
বিষয়: বিবিধ
১০৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন