ইসলাম ও রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন পাপী বান্দা ০৮ জুলাই, ২০১৩, ০২:০০:৪৪ দুপুর
ইসলাম বিশ্বস্রষ্টা ও বিশ্বপ্রভু আল্লাহতায়ালা মনোনীত মানবতার সার্বিক কল্যাণ তথা প্রকৃত সুখ,শান্তি,সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা বিধানের নির্ভুল,আকাট্য শাশ্বত জীবন বিধান।যুগে যুগে লক্ষাধিক নবী-রাসুল এ জীবন ব্যাবস্থারই আহবান জানিয়েছেন।বিভিন্ন যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন গোত্,বিভিন্ন ভাষাভাষী ও জাতির কাছে তাঁরা সবাই একই আহবান জানিয়েছেন।তাঁদের সবারই মিশন ছিল একই।একই মহান আল্লাহর আনুগত্যের দিকে তাঁদের আহবান।সকল প্রকার সংকীর্ণতা,ভেদাভেদ,বৈষম্যের উর্ধে উঠে তাঁরা আল্লাহর একত্ববাদ ও সার্বভৌমত্বের চিরন্তন বাণী প্রচার করেছেন।আর মানবতাকে পাপ-পংকিলতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে জীবনের জয়গান গেয়েছেন।পৃথিবীর অন্যান্য দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের মত তাঁদের দর্শন ও জীবনোপলব্ধি বিভিন্ন প্রকৃতির ছিল না।তাঁদের কেউই নিজস্ব মতবাদ বা মতাদর্শ পেশ করেন নি,কেউই ব্যক্তিগত রুচি,স্বার্থ ও প্রাপ্তি নিয়ে আদৌ ব্যস্ত ছিলেন না।পৃথিবীর অন্যান্য দার্শনিক ও চিন্তাবিদ হরেক রকম SCHOOL OF THOUGHT এর প্রণেতা ও প্রতিষ্ঠাতা।কিন্তু সকল নবী-রসুলদের মিশনই ছিল এক ও অভিন্ন।তাঁদের কেউই মানুষকে নিজের দিকে,নিজের দর্শন ও মতবাদের দিকে আহবান করেন নি।সবারই মিশন ছিল “ লা-ইলাহা ইল্লালাহ”-এর ঘোষণা।এ বাণীই ইসলামের মূল ও মৌলিক। এর মর্মার্থ,বিশ্লেষণ ও লক্ষনার্থ একই এবং তা এ বিরাট বিশাল সৃষ্টিরাজ্য ও সৃষ্টি বৈচিত্রের মাঝে অকাট্য, নির্ভুল ও বাস্তব। 'আল্লাহ' শব্দটি সৃষ্টিকর্তার জাতী নাম,তাঁর একান্ত সত্তার নাম।এবং তাঁর ‘ইলাহ’ হওয়ার বিষয়টি একমাত্র পরম সত্য ও সর্বচ্চ সত্য।তিনি এ সৃষ্টি জগতের একমাত্র নিয়ন্ত্রক,সৃষ্টিকুলের একমাত্র প্রয়োজন ও অভাব পূরণকারী।এ বিশ্বজগতের স্তিতি,স্থায়িত্ব,নিয়ন্ত্রন,বিকাশ এবং অবশেষে এর ধবংস হওয়া সর্বভাবে তাঁরই ক্ষমতাধীন।তিনি ‘ইলাহ’ ও ‘রব’।ইলাহিয়াত তথা সার্বভৌমত্ব ও রুবুবিয়াত তথা প্রভুত্ব নিরংকুশভাবে তাঁরই।সৃষ্টিকুলের সকল ব্যাবস্থাই তিনি নির্ধারণ করেছেন।সৃষ্টিরাজ্যের সৃষ্টি,এর প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি একক ক্ষমতার অধিকারী।মহান স্রষ্টা সকল জাতি উপজাতি সৃষ্টি করে এদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন।সকল সৃষ্টি তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক নিয়মের সম্পূর্ণ অধিন।এদের জিবনোপকরনের সকল ব্যবস্থা তিনিই করেছেন।এ ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো স্বাধীনতা দেন নি।তেমনিভাবে তিনি মাটি, পানি,বায়ু, আলো,চন্দ্র,সূর্য, নক্ষত্র-তারকাসহ সব সৃষ্টির জন্য একটি নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন।সবকিছুই সে নিয়মের অধীন বা অনুগত।আল-কুরাআনের ভাষায় এ নিয়মকে তাসবীহ,সাজদা,কুনূত,সাবহুন ও ইসলাম বলা হয়েছে।সৃষ্টির কোন কিছুই এ চিরন্তন নিয়মের উর্ধে নয়।পক্ষান্তরে,তিনি মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন।আর তাঁর সম্মুখে দুটি পথ খোলা রেখেছেন।একটি সত্যের পথ যা নবী-রাসুলের পথ,অন্যটি অসত্যের পথ যা মানুষকে বিপদ,ধ্বংস ও অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়।মানষকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে এ দুটি পথের যে কোনো একটি গ্রহণ করতে,আর অন্যটি বর্জন করতে।একটি তাঁর মনোনীত পথ,তাঁর খেলাফতের পথ,তাঁর প্রতিনিধিত্বের পথ।এ পথে মানুষ আল্লাহকে একমাত্র রব ও ইলাহ মেনে নিয়ে তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে –ব্যাক্তিগত জীবন থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত—তাঁরই নির্দেশিত পথে চলবে।এটাই ইসলাম,আনুগত্যের পথ।এর বিপরীত করা কুফরী, তথা তাগূতের-খোদাদ্রোহীর পথে চলা।
ইসলাম একটি পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান।এতে রয়েছে ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্নের জবাব তেমনি রয়েছে-পারিবারিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক দিক-নির্দেশনা,শিল্প-সাহিত্য,সন্ধি,চুক্তি,সমর,শ্রম,প্রশাসন,আইন-আদালত,আন্তর্জাতিক আইন ও শৃঙ্খলা বিষয়ক সুস্পস্ট,নির্ভুল বিধি বিধান।কোনো নবী-রাসুল ইসলামকে নিছক ধর্মীয় বিধান হিসেবে মানুষের কাছে তুলে ধরেন নি।সকলে হক প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে নিরলস কাজ করে গেছেন।ইসলামকে একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসেবে মানব সমাজে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।এর ফলে যুগে যুগে কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী,তথাকথিত ধর্মের পতাকাবাহী সম্প্রদায়,ধণিক ও শাসক শ্রেণী এর বিরোধিতায় কোমর বেধেছে।এভাবে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কাজে ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে।নবী-রাসুলদের উপহাস-ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও নির্যাতন করা হয়েছে।তাঁদের রক্ত ঝরেছে,অসংখ্য নবী শহীদ হয়েছেন।আমার বিশ্বাস,সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করবেন, ইসলামকে সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক,সামরিক,সাংস্কৃতিক, তথা জীবনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে বা মানতে গেলেই স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দিকটা এসেই যায়।যারা ইসলামকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চান তারা হয় ইসলামই বোঝেন নি অথবা জেনে বুঝেই ইসলামের বিরোধিতা করতে চান।কারণ আমাদের কাছে ইসলামের অকাট্য দলীল ও রাসুল (সঃ)-এর সুন্নাহ মওজুদ আছে,ইসলামের কোনো কিছুই মানুষের অগোচরে নেই।আল-কুরআনের বিন্দু-বিসর্গ পরিবর্তিত হয়নি।যারা ইসলামকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে দূরে রাখতে চান তারা আল্লাহর এ বাণীর কি জবাব দিবেন? “হে বিশ্বাসীগণ ,তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করো আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না (সূরা বাকারা; আয়াত ২০৮)।” বস্তুতঃ ইসলামের পুরণ অনুশীলন কক্ষনো শুধু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে সম্ভব নয়।কারণ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে অনুসরণ করার সুযোগ না থাকলে বিয়ে-শাদী থেকে শুরু করে রাসুল(সঃ)-এর সমগ্র মাদানী জীবন আমাদের থেকে দূরে চলে যাবে যা শুধু কিতাবেই থাকবে।কেউ কি বলতে পারবেন রাসুল(সঃ) আল-কুরআনের বিধানকে অস্বীকার করে বা বাদ দিয়ে নিজের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছেন বা সমাজে প্রচলিত,প্রতিষ্টিত নিয়মকানুন বা অন্য কারোর মস্তিস্কপ্রসূত বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র চালিয়েছেন?অবশ্যই বলতে পারবেন না।রাসুল(সঃ)-এর সকল কথা ও কাজ আল-কুরআনেরই পুর্নাঙ্গ প্রতিফলন।ফলে ইসলাম মানেই আল-কুরআনের সম্পূর্ণ অংশ ও রাসুল(সঃ)-এর সমগ্র জীবন ও আদর্শ।যেহেতু আল্লাহ-তায়ালা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে দাখিল হতে ফরজ করেছেন,সেহেতু ইসলামের বৃহত্তর দিকগুলো মেনে চলার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রয়োজন।আর ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা হওয়ায় ভেসে এসে কোনো ভূখন্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়নি বা হবেও না।সামান্যমাত্র সামাজিক বিধান বা বিচার সংক্রান্ত বিষয় বা অর্থনৈতিক বিধান রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে জনগণের রায়ের প্রয়োজন তথা রাজনীতি ও রাজনৈতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ অপরিহার্য এবং জনগণের মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে রাস্ত্রীয় আইনে তা পাশ করিয়ে নেয়া অত্যাবশ্যক।আমরা পূর্ণ মুসলিম হবার চেষ্টা করবো বা ইসলামকে পূর্ণভাবে মেনে নেব অথচ ইসলামী রাজনীতি চর্চা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবো না এটা হতেই পারে না।আর যেসব লোক ইসলামের বৃহত্তর দিকগুলো জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন না বা চেষ্টা করার চিন্তাও করেন না বা ইসলামী আন্দোলনকে সমর্থন করেন না,তারা ধার্মিক হতে পারেন;কিন্তু তারা অবশ্যই বক ধার্মিক।আর বক ধার্মিকের স্থান ইসলামে নেই।ইসলাম যে পরিপূর্ণ জীবন বিধান এ কথা কোনো সত্যিকার মুমিন অস্বীকার করতে পারেন না।কারণ খোদ কুরআনেই এর ঘোষণা এসেছে।বিদায় হজ্জের দিনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করলেন, “আজ(বিদায় হজ্জের দিনে) আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপুর্ণ করলাম।আমার নিয়ামতকে সুসম্পন্ন করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম (সূরা মা’য়িদা;আয়াত ০৩)।” ইসলামে যে রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনা আছে তার বিবরণ স্বল্প পরিসরে দেওয়া সম্ভব নয়।এজন্যে ভলিউম ভলিউম গ্রন্থ লেখা যেতে পারে।
আল্লাহ চেয়েছেন,তাঁর শ্রেষ্ট সৃস্টি মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবে আর এজন্যে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আমৃত্যু আন্দোলন চালিয়ে যাবে।সে লক্ষ্যে প্রয়োজন সংগঠন কায়েম করে সুষ্টু পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষের চিন্তা ও বিশ্বাসের পরিশুদ্ধি ঘটিয়ে তাদের খিলাফত পরিচালনার যোগ্য করে গড়ে তোলা।চিন্তা-বুদ্ধি-জ্ঞানসম্পন্ন প্রত্যেক মানুষ স্বীকার করবেন যে,এ কাজ রাজনৈতিক ময়দানে ভূমিকা রাখা ছাড়া সম্ভব নয়।ফলে কোনো মুসলিম অধিপতির বা ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী কোনো শাসক গোষ্ঠীর উপরউক্ত সংগঠন করতে না দেওয়া বা তাদের বিরুদ্ধে বিধান তৈরী করা বা অবস্থান নেওয়া ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার শামিল।আশাকরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ বিষয়ে সতর্ক হবেন।।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন