তাবলীগ জামাতের কাজ প্রথম যেখানে যে ভাবে শুরু হলো- (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন সত্যভাষন ২০ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪৩:১৪ সকাল
মাওলানা ইলিয়াস (র) অনুধাবন করলেন যে, সমাজের বৃহত্তর অংশে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস দৃঢ়করণ ও তার বাস্তব অণুশীলন না হলে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না এবং সাধারণ মানুষের জীবনে দ্বীন না আসলে কিছুই হতে পারে না। তাই ১৩৪৫ হিজরীতে দ্বিতীয় হজ্জ থেকে ফিরে এসে তিনি তাবলীগি গাশত শুরু করেন। সাধারণের মাঝে তিনি কালেমা ও নামাযের দাওয়াত দিতে লাগলেন। তাবলীগি জামাত বানিয়ে তিনি বিভিন্ন এলাকায় বের হওয়ার দাওয়াত দিলেন। এ ভাবে গ্রামে গ্রামে কাজ করার জন্য তিনি জামাত তৈরী করে দিতেন। কয়েক বছর মেওয়াতে এ পদ্ধতিতে কাজ চালু থাকলো।
১৩৫২ হিজরীতে তৃতীয় হজ্জ পালন শেষে তিনি বুঝতে পারলেন যে, গরীব মেওয়াতী কৃষকদের পক্ষে দ্বীন শেখার সময় বের করা কষ্টকর। ঘর-সংসার ছেড়ে মাদরাসার ছাত্র হয়ে দ্বীন শিখবে তা'ও সম্ভব নয়। ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে এদের সামাজিক জীবনকে পাল্টে দিয়ে জাহেলী বিশ্বাসকে পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। অতএব একমাত্র উপায় হিসাবে তাদের ছোট ছোট জামাত আকারে ইলমী ও দ্বীনি মারকাযগুলোতে গিয়ে সময় কাটানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন এবং ধর্মীয় পরিবেশে তালিম দিতে আরম্ভ করলেন। সেই ধর্মীয় মজলিশে ওলামা মাশায়েখদের ওয়াজ নসিহতের পাশাপাশি তাদের প্রাত্যাহিক জীবনের নিয়মনীতি বাতলে দেয়া হতো। সাথে সাথে দ্বীনদার পরহেজগার লোকদের জীবন যাপন, চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার-আচরণ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে মানুষের অন্তরে ধর্মীয় বিশ্বাস; জীবন যাপনে ধর্মীয় অণুশাসনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। সেই সাথে তিনি কুরআন শরীফের কিছু সূরা শিক্ষা দান, দোয়া দরুদ ও জরুরী মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে অবহিত করে তাবলীগ জামাতকে একটি ভ্রাম্যমান মাদরাসাতে রূপান্তরিত করেন। আর এভাবেই ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে বিশ্বময় তাবলীগ জামাতের প্রশার ঘটে।
----------------------------------------------------------------
একান্ত ব্যক্তিগত মতামত :
এখানে একটি বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয়, হযরত ইলিয়াস (র) পথহারা মানুষগুলোকে পথের দিশা দেয়ার জন্য কত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। বিভিন্ন সময় কৌশল পরিবর্তন করে মেওয়াতী জনগোষ্ঠীকে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শিক্ষা দেয়ার প্রানান্তকর চেষ্টা করেছেন। পরিশেষে তিনি তাদেরকে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে বিভিন্ন ইসলামী কেন্দ্রে নিয়ে ওলামা মাশায়েখদের সাহচর্যে তাদের মধ্যে দ্বীনের আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছেন।
বর্তমান তাবলীগ জামাতের অবস্থা কি। যেখানে কুরআনের শত শত তাফসীর, হাদীসের হাজার হাজার অনুবাদ, লক্ষ লক্ষ ইসলামী সাহিত্যে সারা বিশ্বের গ্রন্থাগারগুলো সমৃদ্ধ। আর এ গুলোতো মানুষের অধ্যায়ন ও গবেষণার জন্যই রাখা হয়েছে। সেখানে বর্তমান তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা তাবলীগি নেসাব, ফাযায়েলে আমল, হেকায়েতে সাহাবা ইত্যাদি মুষ্টিমেয় কিছু কিতাবের মধ্যে তাদের জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
মহা গ্রন্থ আল কুরআনকে আরবীতে তিলাওয়াত ব্যতীত কুরআনকে বুঝার কোন সুযোগ তাদের কর্মসুচীতে দেখা যায় না।
হযরত ইলিয়াস (র) লোকদেরকে মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। অথচ বর্তমানে উঠতি বয়সের যুবকদেরকে মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে মসজিদের পবিত্র পরিবেশ বজায় থাকছে কি-না তা ভেবে দেখার বিষয়।
পবিত্র কুরআনে বহু সংখ্যক আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ রব্বুল আলামীন 'জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ' এর ওপর সর্বধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অথচ এ ব্যাপারে তাদের কোন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
তাবলীগ জামাতের বিরূপ সমালোচনা করার জন্য কথাগুলো বলা হচ্ছে না। আসল কথা হচ্ছে, মহান আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম প্রদর্শিত দ্বীনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে সক্ষম।
সুতরাং সকল উম্মতে মুহাম্মাদী নিজেদের ছোট খাটো সকল মতভেদ ভুলে গিয়ে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজ থেকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, যুলুম, নির্যাতন উৎখাত করে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া একান্তই জরুরী।
মহান আল্লাহ আমাদের এ প্রয়াসকে সফল করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন