ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানের মালিককেও আইনের আওতায় আনতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন পার্বত্যনিউজ ০৫ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৩২:৫৯ বিকাল
মেহেদী হাসান পলাশ
ভেজাল খাদ্য ও পণ্যের আগ্রাসনে দেশবাসী আতঙ্কিত। ফল মৌসুমে ফল কিনতে গিয়ে ক্রেতারা দ্বিধাগ্রস্ত- কি কিনছি পরিশ্রমের টাকা দিয়ে- ফল না বিষ? তবু দ্বিধান্বিত, আতঙ্কিত মন নিয়েই জনগণকে বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে বিষযুক্ত ফলসহ খাদ্যসামগ্রী, ভেজাল পণ্য। মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে বিষাক্ত কেমিক্যাল, যার অনিবার্য পরিণতিতে নানা প্রাণঘাতী রোগের শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু ভেজাল রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছিল না। এরই প্রেক্ষিতে খাদ্যে ভেজাল বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর অভিযোগে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’-এর নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গত সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’-এর খসড়ায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১৯৬৯ সালের ‘পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স’ রহিত করে এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, আইনের আওতায় ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য প্রতিষ্ঠান’ নামে একটি সংস্থা গঠন করা হবে, যার কাজ হবে খাদ্যপণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং নিম্নমানের পণ্য বিক্রি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ সমন্বয় করে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হবে ওই আইনের মাধ্যমে। এর আওতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ফৌজদারি আদালতে বিভিন্ন অপরাধের বিচার করা হবে, যার মধ্যে বিভিন্ন ধারায় দুই বছর থেকে সাত বছর কারাদ-ের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে ওই আইনে। এছাড়াও ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান থাকছে।
এ ছাড়াও খাদ্য নিয়ে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিলে দুই বছর, নিবন্ধন ছাড়া খাদ্যপণ্য বিপণন করলে দুই বছর এবং ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত কাউকে দিয়ে খাদ্য বিক্রি করলে তিন বছর কারাদ-ের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ
সচিব আরও জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য প্রতিষ্ঠান’ কর্তৃপক্ষকে দিকনির্দেশনা দিতে ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থা উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করা হবে, যার প্রধান থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী। নিরাপদ খাদ্যমান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের একটি কারিগরি কমিটি ও কারিগরি প্যানেল থাকবে।
এছাড়াও একই বৈঠকে অনুমোদিত মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহার ব্যবহারের সরঞ্জামাদি/বিপণন, নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি শীর্ষক পৃথক এক বিধানে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য উৎপাদন ও বিপণন করা যাবে, তবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। প্রচার না হলে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য কেনা বা ব্যবহারে মা বা পরিবার নিরুৎসাহিত হবে বিবেচনা করেই আইনে এ বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি পাস হলে নিবন্ধন ছাড়া বিকল্প শিশুখাদ্য উৎপাদন ও বিপণন এবং এ-সংক্রান্ত সরঞ্জাম আমদানিও নিষিদ্ধ হবে। ১৯৮৪ সালের মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য অধ্যাদেশ রহিত করে এ আইন করা হচ্ছে। এ আইন ভাঙলে কারাদ-ের মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। আর জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। আগে অপরাধের ক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তির শাস্তি হতো। নতুন আইনে প্রতিষ্ঠানকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রথম দফায় শাস্তির পর দ্বিতীয়বারের মতো এ আইন ভাঙলে তার শাস্তি দ্বিগুণ হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও এ ধরনের অপরাধের বিচার করা যাবে। সার্বিকভাবে আইনটি পর্যালোচনা করলে এক কথায় বলা যায়, এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় ও সময় উপোযোগী আইন। হয়তো আরো আগেই এ আইন করা উচিত ছিল। কিন্তু দেরিতে হলেও ভেজালে সয়লাব দেশে এ আইন করায় সরকার প্রশংসার দাবিদার।
কোনো বিশুদ্ধ বা খাঁটি বস্তুর সাথে নকল, দূষিত বা নিম্নমান সম্পন্ন পণ্যের মিশ্রণকে সাধারণভাবে ভেজাল বলা হয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে এই ভেজালের মহোৎসব চলছে। খাদ্যপণ্যে ভেজাল প্রক্রিয়া বহুকাল ধরে চালু থাকলেও বিগত জোট সরকারের আমলে ভেজাল বিরোধী অভিযানের ফলে খাদ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি নতুন করে আলোচিত হয়ে ওঠে। সে সময় থেকেই গণমাধ্যমেও ভেজালের খবরাদি গুরুত্ব দিয়ে স্থান পেতে থাকে। ফলে দেশবাসীর মধ্যে ভেজালবিরোধী সতর্কতা তৈরি হতে থাকে। অভিযানের কারণে দেশবাসী ভালোভাবে জানতে পারে ভেজালের দৌরাত্ম্য, প্রকৃতি ও ভয়াবহতা।
দেশের পচনশীল প্রায় সকল পণ্যেই ভেজাল দেয়া হয়। বিশেষ করে ফলে ভেজালের বিষয়টি এখন আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ফল পাকাতে, রঙ পরিবর্তন করতে ও পচন রোধে বিষাক্ত ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিমভাবে ফল বা সবজির আকর্ষণীয় রঙ বা সাইজ সৃষ্টি করে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অধিক দামে বিক্রি; পচনশীল ফল, সবজি বা অন্যান্য দ্রব্য পরিবহন ও বিক্রিকালে পচনজনিত কারণে কিছুটা নষ্ট হয়, সে কারণে পচন রোধ করা প্রভৃতি কারণে ফল ও সবজিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। আবার পাকা ফল ও সবজি পরিবহণজনিত কারণে পচে বা অন্যভাবে নষ্ট হয়। সে কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচা ও অপরিপক্ব অবস্থায় তা গাছ থেকে সংগ্রহ করে। এই কাঁচা ও অপরিপক্ব ফল পাকাতে এক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। আবার পেকে গেলে পচন রোধে অন্য ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এভাবে ফল ও সবজিতে ডবল ডোজ কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এই কেমিক্যাল মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেমন, আম, কলা ও আনারস পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথেকন ব্যবহার করতে হয়। অপরিপক্ব কাঁঠাল পাকাতে কাঁঠালের বোটা ছিদ্র করে তাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়। আনারসের পচন ঠেকাতে ফরমালিন স্প্রে করা হয়। মাল্টা এখন সারা বছর পাওয়া যায়। অথচ স্বাভাবিকভাবে তা ১০-১৫ দিনের বেশি থাকার কথা নয়। লিচুর রঙ লাল করার জন্য স্প্রে এবং ফরমালিনযুক্ত পানিতে চুবিয়ে নিলে তা আর পচে না। এ বছর আবার দেখা গেছে, রাজধানীতের ফরমালিনমুক্ত সরাসরি বাগানের বলে যেসব আম মেলা হচ্ছে সেই মেলার আমেও রয়েছে ফরমালিন। ফরমালিন উদ্বায়ী পদার্থ বলে অনেক সময় ফলের উপরে লাগানো ফরমালিনের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না, আবার ফলের ভেতরে প্রবেশ করা ফরমালিন সনাক্তকরণও প্রক্রিয়া বেশ কঠিন। ফলের পাশাপাশি দুধ, চিনি, তেল, কনডেন্স মিল্ক, ঘি, মাখন জুস-জেলিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মাছে ফরমালিনতো সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ভেজাল মিনারেল ওয়াটার বিক্রি হচ্ছে। এমনকি রাজধানীর নামকরা ও ব্রা-েড রেস্তোরাঁগুলোতেও পচা-বাসী খাবার পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে। এনার্জি ডিঙ্কের নামে বর্তমানে যা বিক্রি হচ্ছে তাতে এলকোহল ও বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং যৌন শক্তিবর্ধক বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। ফুড সাপ্লিমেন্টের নামে দেশি-বিদেশি যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তার বেশিরভাগই মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবার স্যালাইনে চিনির পরিবর্তে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সোডিয়াম সাইক্লামেট। এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানোর দরুন ফলের স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণ আগের মতো থাকে না। শুধু দেশীয় নয় আমদানিকৃত ফল, মাছ ও পচনশীল দ্রব্যেও ফরমালিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা রফতানিকারক বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করে পচন রোধে প্যাকেটজাত করার আগেই কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকে। অন্যদিকে পাটুয়াটুলি ও চকবাজারে রয়েছে ভেজাল ও নকল কসমেটিস তৈরির বিপুল কারখানা। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিক্রি হয় যেসব আমদানি করা পণ্য সেসবও ভেজাল মেশানো। এক কথায় ভেজাল খাদ্য ও পণ্যে সয়লাব দেশ। বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব খাদ্য খেলে, পণ্য ব্যবহার করলে মানব দেহে নানা ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসকদের মতে, ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কার্বাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো ফল খেলে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আমাশয়, খিচুনি, উচ্চরক্তচাপ, চর্মরোগসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘদিন শরীরে অবস্থানের কারণে এ বিষ লিভার, কিডনী, হার্ট ও ব্রেনে আক্রমণ করে। তাতে অনেক সময় লিভার ও কিডনী অকেজো হয়ে পড়ে। ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে মানবদেহের ফুসফুস ও পাকস্থলীতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ রক্তের রোগ ও ব্লাড ক্যান্সার হতে পারে। মানবদেহে ফরমালিন ফরমাল-ডি-হাইড ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তের এসিডিটি বাড়ায় এবং শ্বাসকষ্ট তৈরি হয়। দুধ ও মাছে ফরমালিন দেয়ার ফলে শিশুরা শারিরীক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে অকাল গর্ভপাত, প্রসবের জটিলতাসহ নানা প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হতে পারে। বাচ্চা জন্মগতত্রুটি যেমন বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিতে পারে। এমনকি বিদেশি চিকিৎসকরা পর্যন্ত বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে আশঙ্কাজনকভাবে ক্যান্সার ও কিডনি রোগ বৃদ্ধির কারণ কেমিক্যাল দেয়া ফল ও খাদ্যগ্রহণ। বিশেষ করে বোনম্যারো বা জয়েন্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ এটা। এলাকোহলযুক্ত এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করে দেশের যুব সমাজ ধীরে ধীরে মাদকের নীল নেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। চুরি, ছিনতাই, যৌন অপরাধসহ নানা ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে। নিম্মমানের ফুড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে শরীরে আলঝেমার্স রোগ, ক্যান্সারের মতো ঘাতক ব্যাধির সৃষ্টি হয়। এসব বিষাক্ত খাবার মানুষের জন্য যে কতোটা ক্ষতিকর তার একটি উদাহরণ দেয়াই যথেষ্ট। ২০১২ সালের জুনে দিনাজপুরে বিষাক্ত লিচু খেয়ে ১৫ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে হাসতাপাতালে নেয়ার পর ১৩ শিশু মারা যায়। মামলায় পুলিশকে লিচু বাগানের মালিকরা মোটা অঙ্কের উৎকোচ দেয়ায় পুলিশ কাউকে অভিযুক্ত না করে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়।
নাগরিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের মে মাসে বিচারপতি খায়রুল হক এক নির্দেশে সরকারকে প্রতিটি জেলায় খাদ্য আদালত ও পরীক্ষাগার তৈরি করতে বলেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়নে দুই বছরের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ১৯৫৯ সালে জারি করা এবং ২০০৫ সালে সংশোধিত পিওর ফুড অডিন্যান্স অনুযায়ী প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে একটি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে একটি খাদ্য আদালত থাকলেও তার কার্যক্রম নিয়মিত নয়। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনেও এ আদালত প্রতিষ্ঠা হয়নি।
বাংলাদেশে অনেক আইন আছে, কিন্তু সে আইনের প্রয়োগ না থাকায় মানুষ তার সুফল থেকে বঞ্চিত। ভেজাল বিষয়েও আইন বিদ্যমান। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের নানা কূটকৌশল ব্যবহারের কারণে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে নতুন এ আইনের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু আইন যতোই করা হোক, তার সুষ্ঠু প্রয়োগ না হলে আইনের সুফল মানুষ ভোগ করতে পারে না। কাজেই যে আইনটি করা হচ্ছে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা না হলে ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আইনটি বর্তমানে খসড়া অবস্থায় রয়েছে। মন্ত্রিসভায় ও সংসদীয় কমিটিতে এ আইন আরো পরীক্ষিত হবে। সে কারণেই বিদ্যমান আইনে কিছু সংশোধনীর দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে অতীতের ভেজাল বিরোধী আদালতের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে এ প্রস্তাবগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে দেখবেন বলে আশা করা যায়। ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, দখধংি মৎরহফ ঃযব ঢ়ড়ড়ৎ, নবপধঁংব ৎরপয সধহ সধফব ঃযব ষধংি.’ অর্থাৎ আইন গরীরদের পিষ্ট করে কারণ ধনীরা আইন তৈরি করে। বাংলাদেশে নিকট অতীতকালে পরিচালিত ভেজাল বিরোধী আন্দোলনে দেখা গেছে ভেজালের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারণে প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মচারীদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন। ফলে নতুন শ্রমিক দিয়ে পুনরায় প্রতিষ্ঠানটি ভেজাল প্রক্রিয়ায় জড়িত হয়ে গেছে। আবার কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ১০-৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ জরিমানা ভেজাল বিরোধী আদালতকে নগদ মিটিয়ে দিয়ে সাথে সাথে পুনরায় ভেজাল ব্যবসা চালিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। অনেকটা বাস/ট্রাকের ড্রাইভারের পুলিশ কেস খাওয়ানোর মতো বিষয়টা- একটা কেস হলে ৬ মাস টেনশন ফ্রি। ভেজালকারীরা নীরব ও পরোক্ষ ঘাতক। কাজেই নতুন আইনে শাস্তি দৃষ্টান্তমূলক হতে হবে এবং মূল অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া দেশকে ভেজাল মুক্ত করা সম্ভব নয়। মনে রাখা প্রয়োজন ভেজাল মুক্ত খাবার শুধু সুস্বাস্থ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং এর ফলে দেশ ও জনগণের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাশ্রয় হবে তা খেয়াল রেখেই এই আইন প্রণয়নকে গুরুত্ব দিতে হবে। আইনটি লাল ফিতায় বন্দি না রেখে মন্ত্রিসভা ও পার্লামেন্টে দ্রুততার সাথে পাস করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার হাত থেকে মুক্ত রাখতে এই আইনকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এ কথা পরিষ্কার যে, মূলত ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা মনোবৃত্তির কারণে খাদ্য ও পণ্যে এই ভেজাল প্রয়োগ হয়। শুধু আইন করেই তা রোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে খুনের শাস্তি মৃত্যুদ- থাকার পরও প্রতিদিন প্রচুর হত্যাকা- ঘটছে। কাজেই দেশকে পরিপূর্ণভাবে ভেজাল মুক্ত করতে হলে যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ণ ও প্রয়োগ নিশ্চিত করণের সাথে সাথে উদ্বুদ্ধকরণ, সচেতনতা সৃষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। ভেজালের ক্ষতিকর দিকে তুলে ধরতে হবে। ভেজালকারীও যে ভেজাল মুক্ত নয় তা বোঝাতে হবে। ফল/সবজিতে বিষ মিশ্রণকারী মাছের মাধ্যমে বিষের শিকার হচ্ছেন আবার মাছে ফরমালিন মিশ্রণকারী ফলের মাধ্যমে বিষের শিকার হচ্ছেন- এটা তাদের বোঝাতে হবে। পাঠসূচি ও গণমাধ্যমের সহায়তায় ব্যাপকভাবে ভেজাল বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি না করা গেলে দেশ সম্পূর্ণভাবে ভেজালমুক্ত করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে মানুষের উন্নত নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা গেলে দেশকে সহজেই ভেজাল মুক্ত করা সম্ভব। সেজন্যে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। কেননা হাদীসে বলা হয়েছে, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। এটা কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের কাছে এমন কোনো বস্তু বিক্রয় করবে যাতে কোনো ত্রুটি আছে অথচ সে তা প্রকাশ করে দেবে না।’
Email:
বিষয়: বিবিধ
১৫২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন