ইসরাইল : পৈশাচিকতার জীবন্ত প্রতিমূর্তি
লিখেছেন লিখেছেন সত্যবাক১৯৭৯ ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:১৮:০৯ রাত
যায়নবাদী ইহুদিরা ফিলিস্তিনের বুকে তাদের বসতি স্থাপনের সূচনা থেকেই স্থানীয় আরব অধিবাসীদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন, জোর-যুলুম, লুণ্ঠন, হত্যা ও উৎখাত তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এটা জোরের সাথেই বলা যায় যে, মানব প্রজাতির ইতিহাসে ‘জাতি’ হিসেবে অন্য কোন জাতিই এহেন পৈশাচিকতার আশ্রয় গ্রহণ করে নি।
যায়নবাদী ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মাটিতে প্রথম সন্ত্রাসবাদী অভিযান চালায় ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে। এ সময় ইউরোপ থেকে আগত যায়নবাদী সস্ত্রাসীরা ফিলিস্তিনের ‘উয়ূন্ কারেহ্, মাল্বাস্ ও জামারিন্ নামক তিনটি গ্রামের ওপর হামলা চালিয়ে অনেক অধিবাসীকে হত্যা করে এবং বাকিদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে গ্রাম তিনটি দখল করে নেয়।
তখন থেকে শুরু করে তারা অসংখ্য পৈশাচিক অপরাধ সংঘটিত করেছে; হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করেছে, তাদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে, বাড়িঘর-জমিজমা দখল করেছে। যায়নবাদীদের এ পৈশাচিকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা এখনো পুরোদমে অব্যাহত রয়েছে।
ইসরাইল প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পূর্বে যায়নবাদীরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে তা হচ্ছে দীর ইয়াসীনের হত্যাকাণ্ড। ১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল মেনাহেম বেগিন ও আইযাক শামীরের নেতৃত্বে ১৩০ জন যায়নবাদী সন্ত্রাসী বায়তুল মুকাদ্দাসের অদূরবর্তী পার্বত্য পল্লী দীর ইয়াসীনের নিরীহ ফিলিস্তিনী জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা গ্রামটির চারশ’ অধিবাসীর মধ্যে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, সুস্থ-অসুস্থ নির্বিশেষে ২৫০ জনকে হত্যা করে। তাদের পৈশাচিকতা শুধু হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি; বরং তারা হত্যার জন্য অত্যন্ত বীভৎস পন্থা অবলম্বন করে। তারা অনেকের হত-পা, পেট ও কান কেটে ফেলে, চোখ তুলে নেয়, মাথার খুলি চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলে, নারীদের উদর কর্তন করে, মায়ের কোলে সন্তানকে হত্যা করে, অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। এছাড়া কতক ফিলিস্তিনী তরুণীকে নগ্ন করে ট্রাকে তুলে বায়তুল মুকাদ্দাসের ইহুদি এলাকায় নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়ে লোকদেরকে প্রদর্শন করে এবং ঐ অবস্থায় তাদের ছবি তুলে রাখে।
দীর ইয়াসীনের এ গণহত্যা এবং এতে অবলম্বিত পৈশাচিক প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদেরকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা এবং যায়নবাদীরা এতে পুরোপুরি সফল হয়েছিল।
ইসরাইলের আত্মপ্রকাশের পর সংঘটিত প্রথম আরব-ইসরাইল যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে) জর্দানি বাহিনী আল্লাদ্ ও রাম্লাহ্ ছেড়ে চলে যাবার পর ইহুদিরা এ দ’টি শহরে পৈশাচিক গণহত্যা চালায়; তারা শিশু, বৃদ্ধ ও নারীসহ শত শত লোককে হত্যা করে। ফলে এখানকার অনেক অধিবাসীই বাস্তুহারা হয়ে যায় এবং আরব নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য ফিলিস্তিনি এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।
ইসরাইলের পরিচালিত অপরাধী তৎপরতার আরেকটি বীভৎস দৃষ্টান্ত হচ্ছে কাবীয়াহ্ পল্লিতে পরিচালিত গণহত্যা। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের চৌদ্দই অক্টোবর সকালে একদল ইসরাইলি সৈন্য উক্ত গ্রামে হামলা চালিয়ে সত্তর জন লোককে হত্যা করে এবং গ্রামটির অর্ধেক ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। কিন্তু আরবদের অভিযোগের জবাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইসরাইলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে সামান্য তিরস্কার করে মাত্র। ফলে নাহালীন্ ও বাদ্রাসে ইসরাইল একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে।
যায়নবাদীদের এ পৈশাচিকতা শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিনেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। ১৯৮২ সালে তারা যখন লেবানন দখল করে তখন পঁচিশ হাজার লোককে হত্যা করে, দুই লাখ আশি হাজার জনকে আহত করে এবং দুই হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ধ্বংস করে। এ সময় তারা লেবাননে ১৬ হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে বন্দি করে এবং এর ফলে ঐ সময় পর্যন্ত কারাগারে নিক্ষিপ্ত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা আড়াই লাখে দাঁড়ায়। তারা ১২ হাজার লেবাননি ও ফিলিস্তিনি বন্দিকে ইসরাইলে স্থানান্তরিত করে।
বৈরুতের ছ্বাবরা ও শাতীলা ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরে দখলদার যায়নবাদীদের সাথে যোগসাজশে তাদের তাঁবেদার লেবাননের খ্রিস্টান ফালাঞ্জিস্ট মিলিশিয়ারা যে পৈশাচিক গণহত্যা চালায় তার নৃশংসতা ও ব্যাপকতা দীর ইয়াসীনের ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যায়। ১৯৮২ সালের ১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ফালাঞ্জিস্ট মিলিশিয়ারা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রহরাধীন ছ্বাবরা ও শাতীলা শরণার্থী শিবিরে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃদ্ধকে হত্যা করে। এ ঘটনার পরে শিবির দুটি পরিদর্শনকারী জনৈক কানাডীয় চিকিৎসকের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের পর নিহতদেরকে তিনশ’, চারশ’ ও পাঁচশ’ করে এক একটি কবরে সমাহিত করা হয় এবং বুলডোজারের সাহায্যে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের শেষ দিকে সূচিত ফিলিস্তিনি জনগণের গণজাগরণ (প্রথম ইন্তিফাদা) দমনের লক্ষ্যে যায়নবাদীরা সম্ভাব্য সকল প্রকারের পৈশাচিকতার আশ্রয় নেয়। যায়নবাদীদের গুলিতে প্রতিদিনই কিছু না কিছুসংখ্যক লোক আহত হয় এবং পাঁচ বছরে মোট নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছয়শ’ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু যায়নবাদীরা যাদেরকে গ্রেফতার করে তাদের সাথে যে পৈশাচিক আচরণ করে তা ছিল হত্যার চেয়েও বীভৎস। দেয়ালে মাথা ঠুকে মাথা ও কপালের চামড়া তুলে ফেলা, মাথার চুল উপড়ে ফেলা, চোখ তুলে নেওয়া, হাত-পা ভেঙে ফেলা, হাত-পা, পেট ও কান কেটে ফেলা; ইট-পাথরের আঘাতে মাথার খুলি চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া, অসুস্থ লোকদের হত্যা, নারীদের উদর কর্তন, মায়ের কোলে সন্তানের শিরশ্ছেদ, জীবন্ত পুড়ে মারা, তরুণীদেরকে বন্দি করার পর উলঙ্গ করে ট্রাকে তুলে শহরের রাস্তায় ঘুরানো ইত্যাদি যায়নবাদীদের নিয়মিত কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বার্তাসংস্থা এপি তেল আবিব থেকে প্রদত্ত এক রিপোর্টে জানায়, সামরিক অফিসাররা বন্দি ফিলিস্তিনিদের হাড্ডি ভেঙে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বলে তিনজন ইসরাইলি সৈনিক এক সামরিক আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। আর এ ব্যাপারে অভিযুক্ত একজন অফিসার বলে যে, এ নির্দেশ উচ্চতর পর্যায় থেকে এসেছে; প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর স্টাফ-প্রধান এবং অন্যান্য সামরিক অধিনায়কের পক্ষ থেকে এ নির্দেশ এসেছে।
ইসরাইলের তাঁবেদার তথাকথিত দক্ষিণ লেবানন বাহিনী (এসএলএ)-ও ইসরাইলি নির্দেশে একই পন্থা অবলম্বন করে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর এক রিপোর্টে বলা হয়, দক্ষিণ লেবাননের খাইয়াম্ কারাগারে বন্দিদেরকে বৈদ্যুতিক শক্ দেওয়া হয় এবং পৈশাচিকভাবে মারপিট করা হয়।
‘মিড্ল ইস্ট্ টাইম্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে একজন ব্রিটিশ মহিলা ডাক্তার বলেন যে, যায়নবাদীরা ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোরদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায় ও তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে থাকে। গাযার এক হাসপাতালে চিকিৎসকের দায়িত্বপালনকালীন অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসা নিহত ও আহতদের অর্ধেকের বেশিই হচ্ছে পনর বছরের কমবয়স্ক শিশু-কিশোর। তিনি বলেন, ইসরাইলী সৈন্যরা আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে, এমনকি হাসপাতাল থেকে আহতদের জোর করে ধরে নিয়ে যায়। এ ধরনের একটি ঘটনায় একজন ইসরাইলী ডাক্তারের (!) নেতৃত্বে ইসরাইলী সৈন্যরা অস্ত্রোপচার-কক্ষ থেকে বেহুঁশ অবস্থায় একজন আহতকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে সুইডেনের একটি ত্রাণসংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্তিফাদার প্রথম দুই বছরে যায়নবাদীদের হাতে ১৬ বছরের কমবয়স্ক ১৫৯ জন শিশু-কিশোর নিহত হয়। আর একই সময় ৫০ থেকে ৬৩ হাজার শিশু-কিশোর গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও মারপিটের শিকার হয়ে আহত হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক রিপোর্টে বলা হয়, ইন্তিফাদা দমনের লক্ষ্যে ইসরাইলী সৈন্যরা ব্যক্তিগত বাসভবন, ডাক্তারখানা, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ইত্যাদিতেও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে এর বেশির ভাগ শিকার হয় শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা। এছাড়া কাঁদানে গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় অনেকের মৃত্যুও ঘটে। ইন্তিফাদা শুরু হবার ছয় মাস পরে প্রকাশিত উক্ত রিপোর্টে ঐ সময় পর্যন্ত কেবল কাঁদানে গ্যাসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ায় ৪০ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে বলে উল্লে¬খ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছয় মাসের কমবয়স্ক ১৮টি শিশু এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ববয়স্ক ১৭ ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
‘ক্যাথলিক হেরাল্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরাইল সফরকারী ৪৯ সদস্যের একটি ব্রিটিশ গির্জা-প্রতিনিধিদল বলেন, জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাযা এলাকায় ইসরাইল সরকার ‘বিজয়চিহ্ন’ প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং ইসরাইলী সৈন্যরা অত্যন্ত কঠোর পন্থায় এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছে। ইসরাইলী সৈন্যরা বিজয়চিহ্ন দেখানোর দায়ে গ্রেফতারকৃত শিশুদেরকে মারধোর করছে। একটি তিন বছরের শিশু এরূপ বিজয়চিহ্ন প্রদর্শন করায় তার মাকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে রাখা হয় বলে ‘জেরুসালেম পোস্ট’ পত্রিকায় উল্লে¬খ করা হয়।
উক্ত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে প্রাপ্ত পানির এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করা হয় সেখানে বসতি স্থাপনকারী ৭০ হাজার ইহুদিকে, এক-তৃতীয়াংশ ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এক-তৃতীয়াংশ দেওয়া হয় জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের নয় লাখ ৩০ হাজার ফিলিস্তিনীকেÑ যারা সেখানকার জনসংখ্যার শতকরা ৯৩ ভাগ।
ইন্তিফাদা দমনের লক্ষ্যে যায়নবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া এবং সীলমোহর করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়। ১৯৮৭ সালের ৯ ডিসেম্বর পথম ইন্তিফাদা শুরু হবার পর থেকে ১৯৯০ সালের ২৩ মে পর্যন্ত যায়নবাদীরা ফিলিস্তিনিদের ২৯৯টি বাড়ি বুলডোজার দ্বারা নিশ্চিহ্ন করে ফেলে এবং আরো ১৮৭টি বাড়ি সীলমোহর করে দেয়।
পাইকারি হারে গ্রেফতার, দীর্ঘদিন যাবৎ কারান্তরালে ফেলে রাখা, কারাগারে নির্যাতন, নির্যাতনের ফলে বন্দির মৃত্যু ইত্যাদি ইসরাইলের ফিলিস্তিনিবিরোধী প্রাত্যহিক কর্মসূচি। মাঝে মাঝে এ নিয়ে বন্দিদের অনশন ধর্মঘটের ঘটনাও ঘটছে।
আরবদেরকে তাদের বসতি থেকে উৎখাত এবং সেখানে ইহুদি বসতি স্থাপন ইসরাইলের একটি স্থায়ী পরিকল্পনা। কিন্তু এ পরিকল্পনা তারা শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিনেই কার্যকর করে নি; বরং ১৯৮২ সালে লেবানন দখলকালে সেখানেও তারা (ইহুদি বসতি স্থাপনে সক্ষম না হলেও) যথারীতি উৎখাত তৎপরতা চালিয়েছিল। যেমন : ঐ সময় ইসরাইলের তাঁবেদার অ্যান্টন লাহাদ নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ লেবাননের সীমান্তবর্তী এলাকার আরব অধ্যুষিত শহর সালিম-এর সাত হাজার অধিবাসীর মধ্যে ছয় হাজার ছয়শ’ জনকে উৎখাত করা হয়। এছাড়া আইনুল হাল্ওয়াহ্ ও আমিয়াহ্ ওয়ামিয়াহ্ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরের ২২ হাজার লোককেও তারা উৎখাত করে। যায়নবাদীদের উৎখাত তৎপরতা থেকে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা পর্যন্ত রেহাই পায় নি। ঐ সময় নিরাপত্তা এলাকা গঠনের নামে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের সাথে ৪০০ খ্রিস্টান পরিবারকেও উৎখাত করা হয়।
সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার দেওয়া মারণাস্ত্রে সজ্জিত ও তার রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট যায়নবাদী ইসরাইল ১২ জুলাই ২০০৬ তারিখে পুনরায় লেবাননে সামরিক হামলা চালায় এবং দেশটির দক্ষিণাংশ দখল করার পর শেষ পর্যন্ত লেবাননের হিযবুল্লাহ্ গেরিলাদের প্রতিরোধের মুখে পরাজয় মেনে পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। যায়নবাদী ইসরাইল হিযবুল্লাহ্ গেরিলাদের দমনের নামে এ হামলা শুরু করলেও কার্যত ইসরাইলী বাহিনী লেবাননের নিরীহ বেসামরিক লোকদের নির্বিচারে হত্যা করে। লেবাননে তারা চরম পৈশাচিকতার আশ্রয় নেয়। ইসরাইলী বাহিনীর হামলা থেকে হাসপাতাল ও ত্রাণসামগ্রীবাহী যানবাহন পর্যন্ত রেহাই পায় নি। এমনকি তারা দক্ষিণ লেবানন থেকে পলায়নরত লোকদেরকেও পথিমধ্যে বোমাবর্ষণ করে হত্যা করে। বিশেষ করে লেবাননের ক্বানা শহরে জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত একটি উদ্বাস্তু-আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে যায়নবাদীরা যে গণহত্যা চালিয়েছে তাতে তাদের মদদদাতা পাশ্চাত্য ছাড়া বিশ্বের সকল মানুষই মর্মাহত হয়েছে। তাদের এ পৈশাচিকতা অনেককে বিস্মিত করেছে। কিন্তু যায়নবাদীদের অতীত ইতিহাসের সাথে যারা পরিচিত তারা এতে মোটেই বিস্মিত হন নি।
যায়নবাদীদের গোটা ইতিহাসই মানবতাবিরোধী পৈশাচিক অপরাধে পরিপূর্ণ। এখানে আমরা তাদের পৈশাচিকতার একটি সংক্ষিপ্ত ও অসম্পূর্ণ খতিয়ান পেশ করছি :
০ ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ : ফিলিস্তিনের ‘উয়ূন্ কারেহ্, মাল্বাস্ ও জামারিন্ নামক তিনটি গ্রামের ওপর হামলা, অনেক অধিবাসীকে হত্যা এবং বাকিদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে গ্রাম তিনটি দখল।
০ ৯ এপ্রিল ১৯৪৮ : দীর ইয়াসীনের গণহত্যা। যায়নবাদীরা এ গ্রামের ৪০০ অধিবাসীর মধ্যে ২৫০ জনকে হত্যা করে; এদের মধ্যে ছিল ২৫ জন গর্ভবতী নারী, ৫২ জন শিশুসন্তানবিশিষ্টা মাতা এবং আরো ৬০ জন নারী।
০ ১৩ এপ্রিল ১৯৪৮ : নাসিরুদ্দীন গ্রামের গণহত্যা যাতে ৪০ জন বাদে গ্রামটির সব লোককে হত্যা করা হয়।
০ ৩ মে ১৯৪৮ : কাবু গ্রামের বিশ জন এবং বায়তু দারেস্ গ্রামের সকল অধিবাসীকে হত্যা।
০ ৫ মে ১৯৪৮ : বায়তুশ্ শূরা-র সকল অধিবাসীকে হত্যা।
০ ৬ মে ১৯৪৮ : যায়তুন্ গ্রামের সকল অধিবাসীকে মসজিদে জমা করে মসজিদটি উড়িয়ে দিয়ে তাদের সকলকে হত্যা।
০ ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ : সানী বেদুঈন গোত্রের ৪ হাজার ৭১ জন অধিবাসীকে নির্বাসিতকরণ এবং কাবীয়্যাহ্ গ্রামের সকল অধিবাসীকে হত্যা।
০ ২৮ জানুয়ারি ১৯৫৩ : আল্লামাহ্ গ্রামে হামলা।
০ ২৯ জানুয়ারি ১৯৫৩ : ওয়াদি ফুকিন্ গ্রামে হামলা।
০ ১১ আগস্ট ১৯৫৩ : সিরুফ্ এবং ওয়াদি ফুকিনে হামলা।
০ ৪ মার্চ ১৯৫৪ : জর্দানের মাহালিন্ গ্রামে হামলা চালিয়ে ১১ জন বেসামরিক লোককে হত্যা ও অপর ১৯ জনকে আহতকরণ।
০ ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন ১৯৫৪ : জর্দানি এলাকায় পনর বার হামলা। দীর আইয়ূব-এ হামলা।
০ ১৫ এপ্রিল ১৯৫৫ : তাওফীক্-এ হামলা।
০ ৩১ মে ১৯৫৫ : খান্ ইউনুস্-এ হামলা ও ২০ জন বেসামরিক লোককে হত্যা।
০ ১৪ জুলাই ১৯৫৫ : কারান্দাল্ গ্রামে হামলা।
০ ২২ আগস্ট ১৯৫৫ : খান্ ইউনুস্ ও বানী শালাহ্-তে হামলা চালিয়ে ৪৬ জন বেসামরিক লোককে হত্যা।
০ ১৩ নভেম্বর ১৯৬৪ : সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় নাপাম্ বোমা বর্ষণ।
০ ৬, ৭, ১৮ ও ২২ মে ১৯৬৫ : লিতানী নদীর সিরীয় অংশের তীরে বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা।
০ ৬ থেকে ২২ মে ১৯৬৫ : জর্দানি এলাকায় পাঁচ বার হামলা। জর্দানের সুর্মা গ্রামের ২০০ বেসামরিক অধিবাসীকে হত্যা।
০ ১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ : দখলদার ইসরাইলী সৈন্যদের প্রহরাধীন বৈরুতের ছ্বাবরা ও শাতীলা ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের তাঁবেদার লেবাননের ফালাঞ্জিস্ট খ্রিস্টান মিলিশিয়া বাহিনী কর্তৃক নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা।
০ ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৭ : ইসরাইলি সৈন্য কর্তৃক গাড়ি চাপা দিয়ে চার জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূচিত পাঁচ বছরব্যাপী ইন্তিফাদা (অবিরত গণবিক্ষোভ) চলাকালে ১৬১৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও এক লাখ ৩৩ হাজার ২৯ জনকে আহতকরণ।
০ ১৯৮৮ সালে তিউনিসে পিএলও নেতা খালীলুল ওয়াযীর ওরফে আবূ জিহাদকে সন্ত্রাসবাদী কায়দায় হত্যা।
০ ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ : আল-খালীল শহরে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মাযার সংলগ্ন মসজিদে একজন ইসরাইলি সামরিক অফিসার কর্তৃক ব্রাশ ফায়ারে ৬৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূচিত ছোট ইন্তিফাদা চলাকালে ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা।
০ ১৮ এপ্রিল ১৯৯৬ : লেবাননের ক্বানা শহরস্থ জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে অবস্থিত উদ্বাস্তু শিবিরে বোমা বর্ষণ করে অনেক নারী, বৃদ্ধ ও শিশুসহ ১৭০ জন নিরীহ বেসামরিক লেবাননিকে হত্যা।
০ ২০০০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সূচিত দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় (২০০৮-এর শেষ পর্যন্ত) মোট সাড়ে পাঁচ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা যাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই ছিল এমন লোক যারা ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘাতে অংশগ্রহণ করে নি। এ ইন্তিফাদার সময় কেবল ২০০৬ সালের জুলাই মাসে গাযা ও পশ্চিম তীরে অব্যাহত হামলা চালিয়ে তারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা এবং ৪ আগস্ট পর্যন্ত কম পক্ষে ১৭৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৪৮ জনে দাঁড়ায়।
০ ১২ জুলাই ২০০৬ : ইসরাইলি বাহিনী লেবাননে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে এবং ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কম পক্ষে সাড়ে এগারশ’ লোককে হত্যা করে; বিশেষ করে ৩০ জুলাই ক্বানা শহরে জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে উদ্বাস্তু-আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ৩৭ জন শিশুসহ অন্তত ৫৫ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করে।
০ ৫ আগস্ট ২০০৬ : লেবাননের তাইবে ও আইতা আশ্-শাব্ গ্রামে বোমা বর্ষণ করে ৫৭ জন নিরীহ বেসামরিক লোককে হত্যা।
০ ৯ আগস্ট ২০০৬ : দক্ষিণ লেবাননের ‘আইনুল্ হাল্ওয়াস্থ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরে বোমা বর্ষণ; (সম্ভবত ঘটনাক্রমে বোমা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তা সত্ত্বেও) ২ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরো ১৫ জন আহত হয়। ১২ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪ দিনে যায়নবাদীদের হামলায় একশ’ ফিলিস্তিনিসহ কমপক্ষে সাড়ে এগারশ’ লোক শহীদ হয় যাদের প্রায় সকলেই বেসামরিক লোক, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। এদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই ছিল শিশু।
০ ৪ নভেম্বর ২০০৮ : ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে ১৯ জুন ২০০৮ থেকে ছয় মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা অবস্থায় ৪ নভেম্বর ইসরাইল গাযায় হামলা চালায় এবং তাতে হামাসের ছয়জন সদস্য নিহত হয়। এছাড়া যুদ্ধবিরতি চলাকালেও ইসরাইল গাযাবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ অব্যাহত রাখে যার ফলে গাযার ১৫ লক্ষ অধিবাসীকে খাদ্যদ্রব্য, ওষুধপত্র ও জ্বালানির অভাবের সম্মুখীন হতে হয়।
০ ইসরাইল গাযার ওপর ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিমান হামলা ও ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি স্থল হামলা শুরু করে। এ সময় ইসরাইলি জঙ্গী বিমান গাযার থানাসমূহ, বিভিন্ন স্কুল, জাতিসংঘের গুদাম, হামাস সরকারের বিভিন্ন অফিস ভবন, গাযা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন, জাতিসংঘ পরিচালিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরের ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। কেবল প্রথম পাঁচ দিনেই ৪৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ২ হাজার ৮০০ জন আহত হয়। ইসরাইলি বাহিনী গাযার পানি ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ইসরাইলের এ আগ্রাসনে গাযার ৫ হাজার বাড়ি, ১৬টি ভবন ও ২০টি মসজিদ পুরোপুরি ধ্বংস হয় এবং আরো ২৫ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ আগ্রাসনে মোট প্রায় এক হাজার ৪০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয় যাদের বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক ফিলিস্তিনি, নারী ও শিশু। নিহতদের মধ্যে ২৫২ জন ছিল শিশু।
যায়নবাদী ইসরাইলের পৈশাচিকতা সব সময়ই অব্যাহত ছিল এবং এখনো অব্যাহত আছে। এখানে কেবল কয়েকটি বড় বড় ঘটনার কথা অত্যন্ত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো। কিন্তু যায়নবাদীদের পৈশাচিকতা কেবল হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তাদের নির্যাতন-নিপীড়ন এতই ভয়াবহ যে, অনেকেই এদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার পরিবর্তে শহীদ হওয়াকেই অগ্রাধিকার দেবে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর যায়নবাদীদের যুলুম-নির্যাতন শুধু হত্যা, উৎখাত, শারীরিক নির্যাতন, জেল-যুলুম ইত্যাদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পাশাপাশি তারা মানসিক নির্যাতন এবং সাংস্কৃতিক বিকৃতি সাধনের তৎপরতাও চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব পৈশাচিকতা করা হয় পরিকল্পিতভাবে এবং সরকারী নির্দেশে।
১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধে গাযা ও জর্দান নদীর পশ্চিম তীর দখলের পর কার্যত ইসরাইল এ দু’টি এলাকাকে ইসরাইলভুক্ত করে নেয়। ঐ সময় অনেক আরব অধিবাসী অন্য এলাকায় চলে যায়। আর ইসরাইল তার দখলের অব্যবহিত পরেই এক আদম শুমারির পদক্ষেপ প্রহণ করে এবং এভাবে ঐ সময় সেখানে ছিল না এমন লোকদেরকে ঐ এলাকা দুটির অধিবাসী বলে অস্বীকার করে। ফলে যেসব পরিবার স্থানত্যাগ করেছিল তাদের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ পরিবারসমূহ বিপদের মুখে পড়ে যায়। কারণ, অনেক নারীকে, ঐ সময় তাদের পিতামাতা ঐ এলাকায় না থাকায়, বিদেশী হিসেবে গণ্য করা হয়, যদিও তাদের স্বামীরা ঐ এলাকার অধিবাসীরূপে পরিগণিত হয়। এ ধরনের নারীদের অনেককেই সন্তানসহ বহিষ্কার করা হয়। অতঃপর তাদেরকে রীতিমত ভিসা নিয়ে নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে হতো। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের ভিসা নবায়ন করত অথবা নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানাত। ১৯৮৯ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঐ বছর ২৫০ জন মা ও সন্তানকে ভিসার মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ায় জর্দান নদীর পশ্চিম তীর থেকে বের করে দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি অবশ্য এরূপ দশজন মহিলা ভিজিট-ভিসা নিয়ে স্বীয় পরিবারের নিকট প্রত্যাবর্তনে সক্ষম হয়।
যায়নবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর সাংস্কৃতিক নির্যাতনও চালায়। তারা ফিলিস্তিনিদের শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্নভাবে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করে দেওয়ার তৎপরতা চালায়। ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বই-পুস্তকের অনুবাদ নিষিদ্ধ করে দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তরে কয়েকটি সূরা পড়ানো ব্যতীত কুরআন মজীদ শিক্ষাদান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তরে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ‘ওল্ড্ টেস্টামেন্ট’ পড়ানো বাধ্যতামূলক করে। এমনকি তারা বেশ কিছু আয়াত বাদ দিয়ে ও বহু আয়াত বিকৃত করে কুরআন মুদ্রণের পদক্ষেপও প্রহণ করে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ও লেবাননিদের মধ্যে নেশাকর দ্রব্যের ব্যাপক প্রচলনের জন্য যায়নবাদী ইসরাইল ও তার তাঁবেদার দক্ষিণ লেবানন বাহিনী ব্যাপক তৎপরতা চালায়। ১৯৭৫ সাল থেকে তারা এ জাতীয় তৎপরতা চালিয়ে আসছে।
অর্থ, মাদক দ্রব্য ও নারী ইত্যাদির মাধ্যমে যায়নবাদীরা ফিলিস্তিনিদের নৈতিকতার বিনাশ সাধন এবং তাদের মধ্যে নিজেদের দালাল সৃষ্টির ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে আসছে। মাঝে মাঝে বিপ্ল¬বীদের হাতে এ জাতীয় দালাল ধরা পড়ে এবং বৈপ্ল¬বিক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়। বিপ্ল¬বী ফিলিস্তিনিরা প্রথম ইন্তিফাদার প্রথম তেত্রিশ মাসে (১৫ সেপ্টম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত) ইসরাইলের দালালি ও অনৈতিকতার দায়ে ২৩০ জনেরও অধিক ফিলিস্তিনিকে বৈপ্লবিক মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। দ্বিতীয় ইন্তিফাদা-কালে এ ধরনের ৫৯৩ জন ফিলিস্তিনি শত্রুর সাথে যোগসাজশের অপরাধে মুজাহিদদের হাতে নিহত হয়।
১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইল ৬ লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেও প্রায় ১১ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরাইলের কারাগারে ছিল।
বস্তুত এ এক বিতর্কাতীত সত্য যে, ফিলিস্তিনের বুকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাইরে থেকে ইহুদিদের এনে ফিলিস্তিনি জনগণের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে এবং সন্ত্রাসী কায়দায় তাদেরকে উৎখাত করে অবৈধভাবে কৃত্রিম রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অতঃপর এ রাষ্ট্রটির ইতিহাস হচ্ছে ফিলিস্তিনি ও লেবাননি জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও পৈশাচিকতার ইতিহাস। এহেন একটি মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়ে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান একেবারেই অসম্ভব। বরং ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমে সন্ত্রাসের হোতা এ অবৈধ রাষ্ট্রটির অস্তিত্ব ধরণির বুক থেকে চিরতরে মুছে ফেলা।
(সৌজন্যে : প্রত্যাশা, বর্ষ ৩, ৩য় ও ৪র্থ লেখকঃনূর হোসেন মজিদী)
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন