দূর প্রবাসে মা তোমায় মনে পড়ে !
লিখেছেন লিখেছেন নিরব কান্না ২১ জুন, ২০১৩, ০২:০৮:০৩ দুপুর
রুমে সবায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।আমি কিছুতয় দুচোখের পাতা এক কতে পাছিনা।এট,ওটা ভাবতে ভাবতে মার কথা মার কথা মনেপড়েগেল।ছোটকালে মা’কে ছাড়া এক মুহূর্ত কল্পনা করতে পারতাম না। সর্বদা তাঁর পিছে পিছে লেগে থাকতাম। জোঁকের মত এভাবে লেগে থাকার কারণে কখনও তিনি বিরক্ত হতেন। তিনি বিরক্ত হলে আমার কিছু আসে যায়না, আমি তাঁর আশে পাশে ঘুরে সেই কাজটিই করতাম, যেটা দেখলে তিনি খুশী হবেন। এতে তাঁর বিরক্তির মাঝে আরো স্নেহ, আরো গভীরতা বেড়ে যেত। আমার ভাত নিজে মেখে নেবার পরও যদি তিনি তাঁর হাত সেই ভাতে না লাগাতেন আমার কাছে মনে হত সেই ভাত কোনদিন হজম হবেনা। এখন আমি নিজেই বুঝি আমার কারণে মায়ের কি কষ্ট হত;।
মা সর্বদা অসুস্থ থাকতেন, আমাকে কখনও হুমকি দিতেন, আমি মরে গেলে বুঝবি! এটা ছিল আমার জন্য বিরাট হুমকি, আমাকে নরম ও সহীহ রাখার জন্য এই অস্ত্র মা সর্বদা ব্যবহার করতেন। আমি চিন্তার জগতে ভাবতাম মা বিহীন পৃথিবীটা আমার জন্য কত কষ্টকর হবে। প্রতিবেশীদের মাঝে মা বিহীন সন্তানদের দুঃখ দুর্দশা মনের আয়নায় তুলে চিন্তা করতাম, তখনই মনটা ভয়ে আঁতকে উঠত। এবার থেকে মাকে বলা শুরু করলাম, তিনি যদি মারা যান, তাহলে দুটি কবর খুঁড়তে হবে। একটি তাঁর জন্য অপরটি আমার জন্য। মনের আয়নায় একটি পদ্ধতি নিয়ে ভাবতাম মা মারা গেলে, কিভাবে আমিও সহসা মারা যেতে পারি, সেই মৃত্যুর কোন পদ্ধতি জানা ছিলনা, তাই কথাচ্ছলে মায়ের নিকট থেকে বুদ্ধি চাইতাম। মা কৌতূহলে জানতে চায় কেন আমি মৃত্যুর ব্যাপার নিয়ে এত চিন্তিত! তাঁকে বললাম তুমি যদি মারা যাও, তাহলে আমাকেও সহসা মরে যেতে হবে, তাই পদ্ধতি জানতে চাই। মা যেন আসমান থেকে পড়লেন! আমাকে বুকে জড়িয়ে কান্না করলেন এবং বললেন, বাবারে মা মারা যাবার পরে সন্তান মারা যায় এটাই দুনিয়ার নিয়ম, তবে পদ্ধতি শিখতে গিয়ে যদি সন্তান আগে মারা যায়, তাহলে বাবা-মা কাকে নিয়ে বেঁচে থাকবে?
প্রবাস জীবনের গভীর রজনীতে এই মুহূর্তে মনে পড়ল মাকে। ফুঁপিয়ে কান্না করতেও পারছিলাম না। পৃথিবীর পরিধি যেন খুব ছোট হেয় গেল! মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার ভয়ে,বাহিরে বেরিয় এলাম । বড় করে কান্না করতে পারছিনা তবে দু,চোখের পানি যেন শত চেষ্টাকরেও আটকাতে পারছিলামনা! পুরো শহর ঘুমে নীরব-নিথর-নিস্তব্ধ। বহু জাতি, বহু ধর্মের মানুষের বাস এই ভবনে। প্রবাস জীবনের একাকীত্বের গহীন রাতে কান্না করার অধিকারও সীমিত। সবাই ব্যস্ততার অবসরে ঘুমে অচেতন, কেউ এমন নাই এই বলে সান্ত্বনা দেবার, ভাই কান্না করেনা। সকল অসহায়ত্বের মাঝে যিনি সহায়, সেই আল্লাহর কাছে আমার মায়ের জন্য মন ভরে দোয়া করলাম।ফজরের নামাজ শেষে আবার মায়ের জন্য মন ভরে দোয়া করে আবার নিজেকে সমার্পন করলাম শেষ রাতের বিছানায়!!!!
বিষয়: সাহিত্য
১১১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন