পাঁচ সিটিতে বিএনিপর জয়ঃ বেগম খালেদা জিয়া দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞার জয়।
লিখেছেন লিখেছেন বিএনপির পক্ষে ১০ জুলাই, ২০১৩, ০২:৫৭:২৮ দুপুর
শীর্ষ থেকে তৃণমূল। ৫সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দারুণভাবে উজ্জীবিত বিএনপি। সরকারি দলের বিপুল প্রচারণা, হুমকি ধমকি, অব্যাহতভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রশাসনিক হয়রানি, অপপ্রচার ও নিজেদের অন্তর্কোন্দলকে উড়িয়ে দিয়ে দলটি ঘরে তুলেছে বিপুল বিজয়। নির্বাচনে জিতেছেন ৫ প্রার্থী। কিন্তু তাদের বিজয় নিশ্চিত করতেকোন্দলকে ঐক্যে পরিণত, দলীয় সিদ্ধান্তে ত্যাগ স্বীকার ও সরকারি কৌশল ব্যর্থ করে দেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুডবুকে স্থান করে নিয়েছেন এক ডজন নেতা। দলের সকল পর্যায়ে প্রশংসিত এই নেতারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আসম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান,শমসের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, ফজলুল হক মিলন, টঙ্গীর সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার, সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান, খুলনা সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা জেলা বিএনপির সম্পাদক শফিকুল আলম মনাও রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।এদের মধ্যে কয়েকজন ভবিষ্যতে মন্ত্রী, সাংগঠনিক পদ ও জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন এ আলোচনা এখন দলের সর্বত্র। বিএনপি নেতারা জানান, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া তখন সিঙ্গাপুরে। এদিকে গাজীপুর জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ অংশটি প্রার্থী হিসেবে পক্ষ নেনহাসানউদ্দিন সরকারের। ইতিমধ্যেখালেদা জিয়ার নির্দেশে সেখানে ৪টি গোপন জরিপ চালায় কেন্দ্রীয় বিএনপি। জরিপে প্রার্থী হিসেবে প্রথম পছন্দে উঠে আসেন প্রফেসর এমএ মান্নান। এমন প্রেক্ষিতে জেলা নেতাদের মতামতের চেয়ে ভোটারদের মতামতকেই বেশি গুরুত্ব দেন খালেদা জিয়া। তিনি হান্নান শাহকে প্রফেসর মান্নানের পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেন। হাসানউদ্দিন সরকারকে ডেকে বলেন, মান্নানের পক্ষে কাজ করুন- আপনার জন্য পুরস্কার অপেক্ষা করছে। তখনও জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন ছিলেন মান্নানের বিপক্ষে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে মিলনকেডেকে খালেদা জিয়া পরিষ্কার জানিয়ে দেন, যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে না। পদ-পদবি ও আগামীতে নমিনেশন কোনটিই থাকবে না। শেষে সক্রিয় হন মিলন। তবে খালেদার অঙ্গীকারে হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনের মাঠে ছিলেন অক্লান্ত। তার প্রচেষ্টার কারণেই এরশাদের সমর্থন নাটকের পরও মান্নানের পাশে ছিল জেলা জাতীয় পার্টি। ওদিকে রাজশাহীতে আগেই অনুজ সহকর্মীকে জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। ওয়ান ইলেভেনের সময় অনুষ্ঠিত বিগতনির্বাচনে মিনুর অনুপস্থিতি নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলেন বুলবুল। মিনুর সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয়েছে বিএনপিতে। শেষে প্রার্থিতার দৌড়ে ছিল শফিকুল ইসলাম মনা। তিনিও খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেছেন। বরিশালে আগেই জায়গা ছেড়ে দেন সাবেক মেয়র ও বরিশাল বিএনপির সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার। অন্যদিকে দলীয় নির্দেশে পারস্পরিক ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়ান এবাদুল হক চাঁন। বিনিময়ে আহসান হাবিব কামালের বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির পদ ছেড়ে দেন চাঁনকে। কিন্তু বরিশাল বিএনপির কোন্দলপ্রবণ নেতাদের সমন্বয় ও নির্বাচনী ফলাফল রক্ষায় নানা কৌশল ও নির্দেশনা দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে যখন বিএনপি একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে তখনও সিলেটছিল বিভক্ত। নানা কারণে আরিফুল হক চৌধুরীকে মেনে নিচ্ছিল না নেতাকর্মীদের বড় অংশটিই। জামানের পক্ষে পরিষ্কার অবস্থান নিয়েছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবার। কিন্তু জোটের প্রধান শরিক জামায়াত ইসলামের সমর্থন ছিলআরিফের পক্ষে। তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আরিফকে সমর্থন না দিলে তারা জেলা আমীর এহসান মাহবুব জুবায়েরকে প্রার্থী করবেন। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার নির্দেশে সরে দাঁড়ান জামান। অন্যদিকে প্রথম থেকেই আরিফের পক্ষে মাঠ গুছিয়েছেন ভাইসচেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। খুলনায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন দক্ষিণাঞ্চল বিএনপিরকাণ্ডারি তরিকুল ইসলাম। কিন্তু সদর আসনের এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর আন্তরিকসমর্থনই ছিল সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। খালেদা জিয়ার নির্দেশে তরিকুল ও মঞ্জু জুটির কার্যকর নির্বাচনী কৌশল ওজনপ্রিয়তায় বিজয় আসে মনিরুজ্জামান মনি’র। এছাড়াও ৫ সিটি নির্বাচনে ভূমিকা রেখে প্রশংসিত হচ্ছেন-বিএনপির সিলেটবিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সিলেট জেলা বিএনপি’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে খন্দকার আবদুল মোক্তাদির, বরিশালদক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক এবাদুল হক চান, সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, বরিশাল উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক আকন আবদুল কুদ্দুস, মহানগর সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান শাহীন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা, খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, গাজীপুরজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছায়েদুল আলম বাবুলসহ কয়েকজন। বিএনপি নেতারা জানান, সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জাতীয় ইস্যু। কারণ ৫ সিটির মধ্যে একমাত্র গাজীপুরের প্রার্থী প্রফেসর এমএ মান্নানই ছিলেন হেভিওয়েট।প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।বাকিদের মধ্যে একজন পৌর মেয়র ও তিনজন সিটি করপোরেশনের কমিশনার ছিলেন।রাজনৈতিক পরিচিতির দিক দিয়ে তারা ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে। কিন্তু প্রতিটি সিটিতেই ভোটের ব্যবধান হয়েছে বিশাল সংখ্যার। আর এ ইস্যু গুলোকে ফলপ্রসূ করেছে বিএনপি নেতাদের ত্যাগ স্বীকার ও ইস্পাতকঠিন ঐক্য। দলের স্বার্থেই ৫ সিটি করপোরেশনের একাধিক নেতা সরে গেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে। প্রচারণার মাঠে খেটেছেন প্রার্থীর সমান আন্তরিকতায়।এ ঐক্যের নেপথ্য কারিগর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রার্থী বাছাই, দলীয় নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করা ও সার্বিক বিষয়ে তিনিই ছিলেন কাণ্ডারির ভূমিকায়।
সৌজন্যেঃ মানব জমিন
বিষয়: রাজনীতি
১২৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন