চারুলতা 2011 [চলচ্চিত্র]
লিখেছেন লিখেছেন আরাফ করিম ১৮ জুলাই, ২০১৩, ০২:৩৮:৩৫ দুপুর
“একটি নারী, একটি পুরুষ আর তাদের সন্তান; এই হচ্ছে পরিবার । রাষ্ট্র হচ্ছে বৃহত্তর পরিবার । তাই দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাদের নিজেদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে ।” – চারুলতা 2011
সিনেমার শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয় রবীন্দ্রনাথের “নষ্টনীড়” থেকে অনুপ্রানীত এই গল্প । অনুপ্রানীতই বটে, কারন এই গল্পে নষ্টনীড়ের মত চরুলতা, অমল এরা থাকলেও এই গল্প নষ্টনীড়ের সাথে মিলে যায় না, এটা অন্য এক গল্প ।
চৈতি(ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) একজন শিক্ষিত-স্বাধীন গৃহবধু । স্বামী বিক্রম(অর্জুন চক্রবর্তী) এক পত্রিকার সম্পাদক, সে যদিও চৈতিকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে তথাপি সময় দিতে পারে না । একাকি একঘেয়ে জীবনে হয়তো তলিয়ে যাচ্ছিলো চৈতি । এমনি এক সময়ে চৈতির সাথে পরিচয় হয় সঞ্জয়ের(দিব্যেন্দু মুখার্জী) । ফেসবুকের মাধ্যমেই হয় পরিচয় । দুজনের কাছেই দুজনের আসল পরিচয় থাকে অজানা । চৈতির কাছে সঞ্জয়ের পরিচয় বা নাম অমল(সঞ্জয়ের ফেসবুক আইডি) আর সঞ্জয়ের কাছে চৈতির পরিচয় চারুলতা 2011 (চৈতির ফেসবুক আইডি)। আসল পরিচয় গোপন থাকলেও তারা হয়ে ওঠে ভাল বন্ধু বা তারচেও বেশিকিছু ।
চৈতি তার বান্ধবীর কাছে স্বিকার করে যে সে ‘সেক্স-স্টার্ভড’ । পরিপাটি একটা সংসার আছে চৈতির । শুধু নেই স্বামী-সঙ্গ । একটি দৃশ্যে চৈতি স্বমেহনে প্রবৃত্ত আর সেই সময় ঘরে ঢুকে আসে বিক্রম । স্ত্রীকে এই অবস্থায় দেখে সে চোরের মতো ফিরে যায় । আর এখানেই বোঝা যায় উভয়ের সম্পর্কটা আসলে বহুলাংশে প্রাতিষ্ঠানিক ।
চৈতির দাদা (বড় ভাই) আর তার স্ত্রী বেশ কিছুদিনের জন্যে বেড়াতে আসে চৈতির বাড়ী, কিন্তু তাতে কি চৈতির একাকিত্ব লাঘব হয় ? না, হয় না । তাতে বোধয় একাকিত্বের সাথে যোগহয় আরো নতুন কিছু ।
এক সময় অমল তথা সঞ্জয় আসে কলকাতায় । দেখা হয় চৈতির সাথে । নিজেদের সীমানার বাইরে এসে নিজেদের অভাববোধকে তাড়িয়ে পুর্নতা পেতে চায় তারা, একসাথে মিশে গিয়ে ।
হঠাতি যেন সম্বিত ফিরে পায় চৈতি । ধুয়ে-মুছে ফেলতে চায় সব । অমলের সঙ্গে আর কখনও দেখা না করার সিদ্ধান্ত নিয় । কিন্তু এর পরেই আসে গল্পের আসল মোচড় যখন অমল এসে হাজির হয় চৈতি-বিক্রমের বাড়িতে ! সে ‘নষ্টনীড়’-এর গল্পের মতোই চৈতির পিসতুতো দেওর । কলকাতার কয়েকটা দিন সে বিক্রমের বাড়িতেই থাকবে স্থির হয় ।
বিক্রম-চৈতির সংসারে যেমন বহিরাগতরা এসেছিল তেমন চলেও গেল । কিন্তু তার আগেই চৈতি জানতে পারে যে সে অন্তঃসত্ত্বা । এই সন্তান চৈতি চায়নি সে যদি কিছু চেয়ে থাকে তা হল বিয়েটা বাঁচাতে । এই সাইবার সেক্স আর ওয়ান-নাইট স্ট্যান্ডের যুগে সম্পর্ক যতখানি তলানিতে এসে ঠেকেছে সেখানে চৈতিকে কয়েক দিনের প্রেম-যৌনতা-মোহের ওপর সম্ভবত বিবাহ নামক হাজার হাজার বছরের পুরনো স্থাপত্যকেই অধিক স্বীকৃতি দিতে দেখি আমরা ।
অগ্নিদেব চ্যাটার্জির পরিচালনা, সুদীপা মুখোপাধ্যায়ের চিত্রনাট্য, শীর্ষ রায়ের ক্যামেরা আর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুর সব মিলিয়ে অসাধারন এক নির্মান এই সিনেমা ।
‘চারুলতা ২০১১’ শুধু বিষয়ের জন্য নয়, ছবির ঘেরাটোপের মধ্যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, দোলন রায় এবং অবশ্যই অর্জুন চক্রবর্তীর যে দক্ষ অভিনয় দেখার সুযোগ ঘটে তা নিশ্চিত ভাবেই ভাল বাংলা ছবির মর্যাদার দাবি রাখে । বিশেষভাবে একটা কথা না বললেই নয় তা হলো-ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত একের পর এক ক্লোজ-শটে প্রায় মেকআপহীন মুখাবয়বকে ভেঙেচুরে অসংখ্য অভিব্যক্তির পর অভিব্যক্তি সম্বলিত অভিনয় দিয়ে চারুলতা 2011–এ এমন এক শহুরে চারুলতাকে সৃষ্টি করেছেন যে ‘নষ্টনীড়’-এর চারুলতার ভেতর থেকে খসে পড়েও চারুলতা নয় ।
শেষের দৃশ্যে বিক্রম চৈতির গলা টিপে ধরে জানতে চায়, “হু ইজ দ্য ফাদার?” উত্তরে চৈতি বলে “ইউ”। “তা হলে অমল কে?’’ বিক্রমের এমন প্রশ্নের উত্তরে চৈতি বলে “চারুলতাকে জিজ্ঞেস করো” । যদিও আমাদের অনেকেই মেনে নিতে পারি না তবুও এটা ঠিক যে আমাদের সামাজিক পরিচয়ের ভেতরেই আমাদের নকল পরিচয়গুলো প্রাণ পায় ।
আমার লিঙ্কস:
ব্লগ: www.arafkarim.wordpress.com
ফেসবুক: www.facebook.com/araf.karim
টুইটার: www.twitter.com/arafkarim
বিষয়: বিবিধ
২০৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন