আগোড়া (Agora) [চলচ্চিত্র]
লিখেছেন লিখেছেন আরাফ করিম ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৩৩:৫১ সন্ধ্যা
‘আমি দর্শনে বিশ্বাস করি।’ – আগোরা
ব্যবহারিক দিক থেকে ধর্মগুলোতে মানবতার অবস্থান নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, হয়তো আরো হবে। কিন্তু একটা বিষয়ে সম্ভবত অনেকেই একমত হবেন যে-প্রায় সব যুগের ধার্মিকদের কোন না কোন উপদলের মধ্যেই এমন কিছু লোক ছিল যারা মানবতা বিষয়টা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না।
সাধারন ধার্মিক মানুষ মানেই কোন ধর্মগুরুর অনুসারী। এরাই সর্বদা মানবতা জ্ঞানশুন্য লোকেদের বলীর পাঠা হয়ে থাকে।
এসব ধর্মগুরু আর সাধারন ধার্মিক মানুষের উদাহরণ ইতিহাসে অনেক রয়েছে। এদের নিয়ে লেখা হয়েছে বই, তৈরি করা হয়েছে সিনেমা। এমনি একটি সিনেমার নাম-AGORA, যার মূখ্য চরিত্র হাইপেশিয়া নামের এক মহিয়শী নারী যিনি একইসাথে গণিতবিদ, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
স্থান-রোমান সাম্রাজ্যের অধিনস্ত আলেকজান্দ্রিয়া(ইজিপ্টি-এর অন্তর্গত)।সময়টা ৪০০ খ্রীষ্টাব্দের কিছু আগে। থেঅন(Michael Lonsdale) ছিলেন লাইব্রেরী অফ আলেকজান্দ্রিয়ার পরিচালক। এটি তৎকালিন সময়ের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী লাইব্রেরীগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো। থেঅন ছিলেন একইসাথে গনিতবিদ, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ। তার কন্যা হাইপেশিয়াকে(Rachel Weisz) ইতিমধ্যেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে লাইব্রেরী অফ আলেকজান্দ্রিয়ার একজন লেকচারার হিসেবে। হাইপেশিয়া নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন গণিত, দর্শন ও জ্যোতির্বিধ্যায়। ধর্মের খুঁটিনাটি সম্পকেও পার জ্ঞন ছিলো। তবে তিনি সেসময় মূলত মেতে থাকতেন সৌরজগতের স্বরুপ, সূর্য্য ও নক্ষত্রের অবস্থান আবিষ্কার নিয়ে। যদিও প্রেম ভালবাসা নিয়ে কোন ভাবনাই ছিল না তার কিন্তু তার প্রেমে পড়ে যায় তারি ছাত্র অরেষ্টিস(Oscar Isaac) ও ক্রীতদাশ ডেভাস(Max Minghella)।
এখানে বলে রাখা ভালো যে লাইব্রেরী অফ অলেকজান্দ্রিয়া শুধু পাঠাগার বা বিশ্যবিদ্যালয়ই ছিল না এটি পেইগান ধর্মের প্রধান পরিচালনা কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করতো। তা স্বত্তেও এখানে খ্রীষ্টানরা পড়তে আসতো কারন রোমান সাম্রাজ্য ইতিমধ্যেই বৈধ ঘোষনা করেছে খ্রীষ্টানদের।
লাইব্রেরীর ভেতরের পরিবেশ যেমন শান্ত ছিলো বাইরের পরিবেশ ছিলো ততটাই অশান্ত। খ্রীষ্ট ধর্ম প্রচারকারি একটি দল নিয়মিতভাবে অপমান করছিলো পেইগান দেব-দেবীদের আর অত্যাচার করছিলো পেইগান ধর্মিয় নেতাদের উপর। তাদের মূল শক্তি ছিলো হতদরীদ্র জনগনের সমর্থন যারা তাদের দান ও সেবা পেয়ে ধিরে ধিরে খ্রীষ্টানে রুপান্তরিত হয়েছিলো।
নিয়মিত অত্যাচার প্রতিহত করতে একদিন পেইগানদের প্রধান পুরোহীত লাইব্রেরী প্রধান থেঅনের অনুমতি নিয়ে শশস্ত্র প্রতিবাদের ঘোষনা দেয় খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে। ঘোষনার পর পরই পেইগানরা অতর্কিতভাবে আক্রমন করে বসে খ্রীষ্টানদের উপর। অনেক খ্রীষ্টান মারা যায় অনেকে আহত হয়। তবে লাইব্রেরীতে পড়তে আসা খ্রীষ্টান ছাত্ররা বেঁচে যায় হাইপেশিয়া ও অরেষ্টিসের জন্যে। যাইহোক এই অক্রমনের জবাব দিতে খ্রীষ্টানরাও পিছপা হয়নি, হাজার হাজার খ্রীষ্টান দলে দলে ছুটে আসে প্রতিশোধ নিতে। যার ফলে পেইগানরা হয়ে পড়ে কোনঠাসা। লাইব্রেরী হয়ে যায় পেইগানদের আত্বরক্ষার দূর্গ, বাইরে থেকে তাদের ঘিরে ফেলে খ্রীষ্টানরা।
শেষপর্যন্ত সম্রাট ফ্লভিয়াস থিওডোসিয়ান অগাষ্টাসের হস্তক্ষেপে নামমাত্র সমাধানের ব্যবস্থা করা হয় দাঙ্গার। মুক্ত ঘোষনা করা হয় লাইব্রেরীতে বন্দি হয়ে পড়া পেইগানদের ও খ্রীষ্টানদের লাইব্রেরীতে প্রবেশ করতে দিতে বলা হয়। ঘোষনার পর পরই পেইগানরা বুঝতে পারে যে তাদের সময় শেষ। তাই তারা কিছু অতি প্রয়োগনীয় বই(পান্ডুলিপি) ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র যা নেওয়া তখন সম্ভব ছিলো তাই নিয়ে পালিয়ে যায়। অপরদিকে খ্রীষ্টানরা লাইবেরীতে প্রবেশ করেই ধাবংস করতে থাকে পেইগান দেব-দেবীর মূর্তি ও সকল বই।
হাইপেশিয়া লাইব্রেরী ছেড়ে শেষপর্যন্ত অবস্থান নেয় তার এক সময়ের ছাত্র ও প্রেমিক অরেষ্টিসের বাসভবনে। অরেষ্টিস তথন আলেকজান্দ্রিয়ার গভর্নর। হাইপেশিয়া আর অরেষ্টিসের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক ভালো চোখে দেখলো না খ্রীষ্টানরা। এক পর্যায়ে হাইপেশিয়া সভাকক্ষে খ্রীষ্টিয় শাশকদের বলেই ফেলেন-তিনি শুধু দর্শনে বিশ্বাস করেন।
হাইপেশিয়ার স্পষ্ট বক্তব্যই তাকে তার শেষ পরিনতির দিকে টেনে নিয়ে যায়। আলেকজান্দ্রিয়ার দ্বায়অত্বশীল সকল উর্ধতন কর্মকর্তারাই ক্ষমতায় টিকি থাকতে খ্রীষ্টান হয়ে যান চাপে পড়ে। অরেষ্টিসকেও হতে হয় খ্রীষ্টান একসময়ের সহপাঠি খ্রীষ্টান বন্ধু সাইনেসেয়াসের(Rupert Evans) কাছে(সাইনিসিয়াস তখন ধর্মযাজক)।
হাইপেশিয়াকে ধরে নিয়ে যায় একদল খ্রীষ্টান উগ্রবাদিরা। তারা তাকে পাথর ছুড়ে মেরেফেলার পরিকল্পনা করে। তাদেরি দলের সদস্য ছিলো ক্রীতদাশ ডেভাস। ডেভাস যে হাইপেশিয়াকে তুলে দিতে চায়নি অন্য কারো হতে সে কি করে তাকে এভাবে মরতে দিতে পারে। তাই একজন প্রেমিক বা নিষ্ঠাবান ক্রীতদাশের মতই সে হাইপেশিয়ার প্রতি তার দায়ীত্ব পালন করে।
Alejandro Amenábar ও Mateo Gil-এর লেখা আর Alejandro Amenábar-এর পরিচালনায় চমৎকার এই সিনেমাটি রিলিজ হয় ২০০৯ সালে। IMDB রেটিং-7.1
আমার লিঙ্কস:
ব্লগ: www.arafkarim.wordpress.com
ফেসবুক: www.facebook.com/araf.karim
টুইটার: www.twitter.com/arafkarim
বিষয়: বিবিধ
১৬৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন