ইস্তানবুল বিজয়ের সিংপুরুষ 'উলুবাতলি হাসান' (বিলুপ্ত মুসলিম ইতিহাস)
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১০:১৬:০৩ রাত
ওসমানী তরুণ সুলতান মেহমদের সেনাপতিত্বে জীবনবাজি রেখে লক্ষ লক্ষ সেনা দৃপ্তপদে ইস্তানবুল বিজয়ে অংশ নেন। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে যে ক'জনের নাম যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখ থেকে মুখে, হৃদয় থেকে হৃদয় হয়ে আজ পর্যন্ত পৌঁছেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন উলুবাতলি হাসান। আজও যার নাম শুনে তুর্কীর মানুষ প্রেরণা পায়...
১৪৫৩ সালের গোঁড়ার কথা। ওসমানী সালতানাতে বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। এবারের শত্রু সমকালীন অন্যতম পরাশক্তি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য। যাদের বিরুদ্ধে সুলতান মেহমেদের পূর্বপুরুষরা দেড়শ বছর ধরে চেষ্টা করার পরও সফলতা অর্জন করতে পারেননি। তবে
এবারের একুশ বছরের সুলতান দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি রাত-দিন নিরলসভাবে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সীমানা এবং শক্তি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা যায়, মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই যখন অন্য বাচ্চারা পুতুলের ঘর সাজাতে ব্যস্ত থাকত তখন ছোট্ট মেহমেদের নিত্যকার কাজ ছিল 'বাইজান্টাইনের দেয়াল' আঁকিবুঁকি করা।
ওসমানী সাম্রাজ্যে জুড়ে ঘোষণা দেয়া হল বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এবং আগ্রহীরা সেনাবাহিনীতে অংশ নিতে পারবেন। বাইজান্টাইন তথা কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ভবিষ্যতবাণীটার কথা তৎকালীন কারো অজানা ছিলনা। রাসুলুল্লাহ'র সাঃ ভবিষ্যতবাণীটার সরল অনুবাদ করলে দাঁড়ায়ঃ
“কনস্টান্টিনোপল অবশ্যই বিজিত হবে( মুসলমানদের দ্বারা), এ বিজয়ের সেনাপতি কতই না সৌভাগ্যবান সেনাপতি এবং এ বিজয়ের সেনাদল কতইনা
সৌভাগ্যবান সেনাদল!’’ (ইমাম বোখারি রহঃ এর আত-তারিখুল কাবির, ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল রহঃ এর মুসনাদে আহমদ’এ এবং তাবারি রহঃ এর আল-মুজমাউল কাবিরে এ হাদিসটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে )।
সুলতানের আহবান এবং রাসুলুল্লাহ'র সাঃ ভবিষ্যৎবাণীর সেই সৌভাগ্যবান সেনাপতি হয়ে নিজেকে ধন্য করার জন্য হাজার হাজার তরুণ-যুবা সেনাবাহিনীতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করেন। তাঁদের মধ্যে ওসমানী সাম্রাজ্যের প্রথম রাজধানী বুরসা'র উলুবাতলি হাসান ছিলেন অন্যতম। আল্লাহর পথে জিহাদ করে নিজের জীবনকে ধন্য করতে ছুটে এলেন সুলতান মেহমদের কাছে। যুক্ত হলেন মুসলিম সেনাদলে...
২৯ মে ১৪৫৩, ফজর নামাজের আগে মুসলিম সৈন্যরা পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ে একে অপরের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। সুলতান মেহমেদের ইমামতিত্বে ফজরের নামাজ সম্পন্ন করে সেনারা নিজ নিজ স্থানে গিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালেন। উলুবাতলি হাসানও সামনের কাতারে নিজের জায়গা করে নিলেন... এক হাতে তার মুসলিম সালতানাতের ঝাণ্ডা অপর হাতে ঢাল। যুদ্ধ শুরু হয়েছে। হাসানের আশে পাশের সেনারা একের পর এক লুটিয়ে পড়ছে শত্রুর ছোড়া তীরের আঘাতে... তবে উলুবাতলি হাসানের সেদিকে খেয়াল নেই। তিনি ছুটছেন তো ছুটছেন সামনের দিকে, তাকে যে মুসলিম সালতানাতের এ ঝাণ্ডা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের দেয়ালে ফুঁতে দিতে হবে...!! তাঁর দায়িত্ব যে বিশাল।। ঝাণ্ডা পত পত করে উড়ার মধ্যেই যে নির্ভর করছে অন্য সেনাদের দৃপ্ত পদে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা...। ঢাল দিয়ে বাতিলের সব তীরের আঘাত প্রতিহত করে উলুবাতলি হাসানও তাই ছুটছেন। হৃদয়ে শহীদি তামান্না...।। আর বেশী দূরে নয় বাইজান্টাইনের দেয়াল।। ছুটছেন তিনি ঊর্ধ্বশ্বাসে...অন্য সৈন্যরা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের দেয়ালের সাথে মই লাগিয়ে উলুবাতলি হাসানকে জায়গা করে দিলেন উপরে উঠে ঝাণ্ডা গেঁথে দেয়ার জন্য। মইয়ের প্রথম ধাপে পা দিলেন সাথে সাথে উপর থেকে বাইজান্টাইন সেনাদের একটি তীর এসে বিদ্ধ করল উলুবাতলি হাসানের গায়ে... তবে তাঁর এতটুকুও ভ্রূক্ষেপ নেই সেদিকে...শেষ পর্যন্ত তিনি সফল। যদিও তাঁর পিঠ-বুক এ ফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে গেল দুশমানের অসংখ্য তীরের ফলা। শেষপর্যন্ত বাইজান্টাইনের দেয়ালে মুসলিম সাম্রাজ্যের ঝাণ্ডা গেঁথে দিয়ে ঢলে পড়ল তাঁর ক্লান্ত দেহ। নিজের উপর ভারসাম্য হারিয়ে ঝাণ্ডা শক্তভাবে ধরে ওভাবেই লুটে পড়লেন
তিনি...শহীদ হলেন উলুবাতলি হাসান।। তবে মুসলিম সাম্রাজ্যের ঝাণ্ডা পতপত করে উড়ে ঘোষণা দিচ্ছে বিজয়ের...।
১) ইস্তানবুলের panorama 1453 মিউজিয়াম থেকে তোলা
২)শিল্পীর তুলিতে আঁকা উলুবাতলি হাসান
৩) conquest 1453, নামক মুভির উলুবাতলি হাসান
৪) বাইজান্টাইন দেয়ালের বর্তমান দৃশ্য
বিষয়: বিবিধ
২৭৯৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহ খায়ের।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
মন্তব্য করতে লগইন করুন