ইস্তানবুলে হামলাঃ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরী
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ২৯ জুন, ২০১৬, ০৮:৩১:৩৪ রাত
ইস্তানবুলের আতাতুরক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ‘আন্তর্জাতিক বহির্গমন’ বিভাগের প্রবেশ পথে প্রতিদিনকার মত সবে সন্ধ্যে নেমেছে। ব্যস্ত এ শহরের ব্যস্ত মানুষগুলো নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছিল। কারো দিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময়টুকুও নেই। কেউ বিমানবন্দরে ঢুকছে কেউ বা বের হচ্ছে। কত শত গাড়ি আসে-যায় আত্মীয়-স্বজনদের ড্রপ/পিক করতে।
গতকালও সবকিছু ওভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একে-৪৭ হাতে গাড়ি থেকে নেমে ছুটে এল এক মানুষরূপী হায়েনা। এলোপাতাড়ি গুলী চালালো কিছুক্ষণ, পরক্ষনেই আবার বোমা হামলা। মাটিতে লুটিয়ে পড়ল শত শত মানুষ...!! এক মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে রূপ নীল আতাতুরক বিমানবন্দরের ব্যস্ততম এ স্থানটি। আসেপাশে বন্দুকের নাগালের মধ্যে যারাই ছিল সবাই নিহত/আহত। সেই সাথে ঝরে গেল ৩৬ টা প্রাণ। আহত হল দেড়শর অধিক। মৃত্যু হল কিছু স্বপ্নের, কিছু আশার, কিছু ভালোবাসার!
হয়ত এ মানুষগুলো একটু আগেই সবার সাথে বিদায় নিয়ে আসছিল অথবা প্রিয়জনের সাথে মিলনের স্বপ্নে বিভোর ছিল। হয়ত বলছিল ‘এইতো আর ১০ টি মাত্র মিনিট অপেক্ষা কর আমি আসছি!’ ঐ দিকে বাড়িতে হয়ত চলছে প্রিয়জনকে সারপ্রাইজ দেয়ার আয়োজন!! কিন্তু কিছুক্ষণ পরে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে ফিরে আসল!!
প্রায়সময়ই যাওয়া লাগে ইস্তানবুলের এ বিমানবন্দরে। আন্তর্জাতিক বহির্গমনের এ পথগুলো মাড়াতে হয়। সব দেখে তুরস্কের নিরাপত্তা নিয়ে খুব শঙ্কিত আছি। যেকোন সময় যেকোন জায়গায় হামলা হতে পারে। রাস্তা-ঘাট, বা বাস-ট্রেন কোথাও কাউকে চেক করা হচ্ছেনা। কে সন্ত্রাসী কে ভাল মানুষ দেখেতো বুঝা যায়না। গায়ের ফর্সা চামড়া দেখে অনুমান করাটা দুরহও বটে। তুর্কি সরকারের ভ্রাতৃত্ববোধের নমুনা হিসেবে সিরিয় সীমান্ত খুলে দেয়। তুর্কীদের আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়ে সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বাস্তুদের আগমন হচ্ছে। উদ্বাস্তুদের সাথে সাথে সন্ত্রাসীরাও ঢুকে পড়ছে তুর্কির সীমানায়। বিভিন্ন ধরণের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা প্রতিনিয়ত। সাথেতো নিজেদের দেশীয় শত্রু পিকেকে আছেই।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও অনেক বেশী জোরদার করা দরকার। নইলে তুর্কি ইকোনমির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিবে এ সন্ত্রাসী হামলা। রিপোর্ট বলছে অলরেডি প্রতি বছরের তুলনায় ৫৮% ট্যুরিস্ট কমে গেছে এবছর। পর্যটন খাত হল তুরস্কের ইকনোমির অন্যতম প্রধান উৎস। তুর্কি ইকনোমির চালিকাশক্তিও বলা চলে।।
নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হচ্ছি কারণ, রমজানের প্রথম সপ্তাহের বিস্ফোরণে ৭ পুলিশসহ ১১ জন নিহত হল। আর সেই বিস্ফোরকের ওজন কত ছিল জানেন? এর ওজন ছিল পাক্কা ৪০০ কেজি। আর এ বিস্ফোরকটি বহন করছিল একটি লাইসেন্সবিহীন গাড়ি। রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহেও একেইভাবে ১ মন ওজনের একটি বিস্ফোরক পাওয়া গেছে একই স্থানে। শুকরিয়া যে বিস্ফোরণ হওয়ার আগেই ওঠা উদ্ধার করা হয়েছে।
এর কয়েকমাস আগে রাজধানী আংকারায় ১০০ জনের উপর নিহত হল গাড়িবোমা বিস্ফোরণে। কোথাও বোমা হামলা হওয়ার পর মেট্রো ষ্টেশনের প্রবেশ পথে চেকপোষ্ট বসানো হলেও দু’একদিনের বেশী স্থায়ী হয়না এ চেকপোস্ট। এ দেশে যেহেতু সবধরনের মানুষ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে সেহেতু নিরাপত্তার খাতিরে যেসব স্থানে মানুষের আনাগোনা বেশী সেসব স্থানে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা উচিত। কারণ, সন্ত্রাসীরা ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য জনসমাগম বেশী এরকম স্থান এবং ট্যুরিস্ট স্পট বেছে বেছে হামলা চালাচ্ছে।
মানুষের মধ্যে ভয় বিরাজ করছে। ইস্তানবুলের ফাতিহ সুলতান মসজিদের আশেপাশের পার্কে প্রতিরাতে শ’পাঁচেক মানুষ পরিবার-পরিজনসহ ঘুরতে আসে। রাতের মনোরম ইস্তানবুলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি বাচ্চারা বিভিন্ন ধরণের খেলায় মেতে উঠে। কিন্তু গতরাতের পরিবেশ ছিল ভিন্ন। সবমিলে ৩০ জন মানুষও হবেনা। চেয়ারগুলো সব খালি পড়ে আছে, অন্যদিন যেখানে তিল পরিমাণ জায়গা থাকেনা।
অন্যদিকে, আমেরিকান দুতাবাস সব আমেরিকান নাগরিকদেরকে ২-৩ আগে মেইলযোগে আতাতুরক বিমানবন্দরে হামলার আশংকা সম্পর্কে অবহিত করে বিমানবন্দের যেতে নিষেধ করে। অথচ তুর্কীর কোন খবরই নেই! তাইলে কি সিআইএ তুরস্কের ভিতরেও টার্কিশ গোয়েন্দা বিভাগের চেয়েও বেশী শক্তিশালী!! আর তুর্কীর বন্ধুরাষ্ট্র আমেরিকা এ ব্যাপারে তুর্কিকে সতর্ক করেনি কেন? করলে হয়ত নিহতের পরিমাণ আরও কমানো যেত? তাইলে কি এর পিছনে ওদেরই কাল হাত!!? এ মুহূর্তে একটা ঐতিহাসিক উক্তি মনে পড়ছে ‘আমেরিকা-ইসরাইল যাদের বন্ধু তাদের আর শত্রুর দরকার হয়না।’
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক।। আমীন
visit here: http://www.istanbultimes24.com
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link
মন্তব্য করতে লগইন করুন