রাসুল (সা.) কে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রূপ করা হলে আমাদের করণীয়
লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ০৩ মার্চ, ২০১৬, ০৮:৩৫:৫৫ রাত
রাসুল (সা.) কে নিয়ে কটাক্ষ ও বিদ্রূপ করার মত জঘন্য অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর নিশ্চুপ থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে একজন ঈমানদার বান্দাহ হিসেবে প্রত্যেকরই যোগ্যতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। যেসব করণীয় রয়েছে সেগুলো হলো :
১. প্রতিবাদ করা। আমাদের প্রধান করণীয় হলো:- রাসুলের অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে সামর্থ অনুযায়ী প্রতিবাদ করা। একজন মুসলিম কখনও এমন হতে পারে না যে, সে মহানবীর অবমাননা হওয়ার কথা জানার পরও নিশ্চুপ বসে থাকবে। কেননা এটি একটি মহা অন্যায় কাজ। আর ঈমানের লক্ষণ হলো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।
মহান আল্লাহ আল কুরআনে ইরশাদ করছেন, ‘আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে।’ (সুরা আত-তাওবাহ, আয়াত : ৭১)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখে, তবে সে যেন তা নিজের হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। আর যদি সে সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন মুখ দ্বারা প্রতিহত করে। আর যদি সে এতেও সক্ষম না হয়, তাহলে সে যেন অন্তর দিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।’ (মুসলিম: ১৮২)
২. শাস্তির ব্যবস্থা করা। মহানবীর অবমাননাকারীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা ঈমানের দাবি। এক শ্রেণীর নামধারী মুসলিম তারা বলে এ বিচার আল্লাহ করবেন, অতএব আমাদের কিছুই করার দরকার নেই। ঈমানদার হিসেবে এ ধরণের কথা বলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা রাসুল নিজেই তাকে অবমাননা করার শাস্তি কার্যকর করেছেন এবং সাহাবায়ে কিরামও তা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই যে মহানবীর অবমাননা করে তাকে দুনিয়াতেই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
ইবনে খাতাল রাসূলের প্রতি কটূক্তি করেছিল, সেজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করে মাত্র মাথায় যে হেলমেট পরা ছিল তা খুললেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললো, ইবনে খাতাল (বাঁচার জন্য) কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে আছে। রাসুল (সা.) বললেন, (ঐ অবস্থায়ই) তাকে হত্যা করো।’ (বুখারী ১৮৪৬, মুসলিম ৩৩৭৪)
৩. জাতিকে সতর্ক করা। মহানবীর সাঃ অবমাননা করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা সময়ের দাবী। কেননা জেনে-না জেনে, বুঝে-না বুঝে নানানভাবে মহানবীর অবমাননা করা হচ্ছে। এর কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত জাতিকে সতর্ক করা। আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন, ‘আর তোমার পূর্বেও অনেক রাসুলকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল, পরিণামে তারা যা নিয়ে ঠাট্টা করত তাই বিদ্রূপকারীদেরকে ঘিরে ফেলেছিল।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৪১)
‘বরং আমি মিথ্যার উপর সত্য নিক্ষেপ করি, ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং নিমিষেই তা বিলুপ্ত হয়। আর তোমাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ তোমরা যা বলছ তার জন্য।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১৮)
৪. ঐক্যবদ্ধ হওয়া। রাসুলের অবমাননা বন্ধে ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকতে পারবে না। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজেদের মধ্যে কর্মপন্থা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু রাসূলের অবমাননার মত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালনে কোনো ধরণের সংশয় রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে ঘোষণা এসেছে এভাবে, ‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৫)
৫. আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া। রাসুলের অবমাননা করার কারণে যে কোনো সময় গোটা জাতির উপর আল্লাহর গযব আসতে পারে। সেজন্য আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৫)
৬. তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। যারা অবমাননা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সঙ্গে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ১৪০)
৭. রাসুলের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। রাসুলের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার এবং তার মর্যাদারহানী করে এমন কোনো কাজ পরিচালিত হলে উম্মাতের দায়িত্ব হলো তার সমস্ত শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা। আল্লাহ তাআলা তাঁর সম্মানকে উচ্চকিত করেছেন। অতএব, তাঁকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক উম্মাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে মজীদে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। (হে মুমিনগণ!) যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আন, তাঁকে সাহায্য কর ও সম্মান কর। আর আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর সকাল-সন্ধ্যায়।’ (সুরা আল-ফাতহ, আয়াত : ৮-৯)
সাহাবায়ে কিরাম রাসুলকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। যখন কুরআনের সুরা হুজুরাতের ২ নং আয়াত আবতীর্ণ হলো, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সঙ্গে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না।’
হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি নিতান্তই আপনার সঙ্গে ক্ষীণ আওয়াজ ব্যতীত কথা বলব না।’
৮. রাসুলের কটূক্তিকারীদের ঘৃণা করা। যারা রাসুলকে কটূক্তি করে তাদেরকে রাসূলের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে ঘৃণা করা ঈমানের দাবি। অনেকে রাসূলের উম্মাত দাবি করে কিন্তু রাসূলের শত্রুদের সঙ্গে উঠা-বসা ও তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআনের ঘোষণা হলো, ‘তুমি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোনো সম্প্রদায় পাবে না যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের ভালবাসে। হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জ্ঞাতি-গোত্র।’ (সুরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত : ২২)
৯. রাসুলের আদর্শ জাতির সামনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা। রাসুল (সা.) আমাদের প্রিয় নবী। তার উম্মাত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো তার আদর্শ জাতির সামনে তুলে ধরা। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এই হাদীসে- হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল )সা.) বলেছেন, ‘একটি বাণী হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছিয়ে দাও।’ (সহীহ বুখারী ৩৪৬১)
১০. নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা। আজকে অনেক মুসলিম নিজের অবস্থান কোনো দিকে তা স্পস্ট করে না। যেহেতু কিছু লোক রাসুলের অবমাননাকারীর পক্ষাবলম্বন করেছে, সেহেতু নিজের অবস্থান কোনো পক্ষে তা ঘোষণা দিতে হবে। কেননা রাসুলের অবমাননা হলে কোনো ঈমানদার ব্যক্তির অবস্থান অস্পষ্ট হতে পারে না। যে এমনটি করবে সে মুনাফিক। কুরআন মাজীদে এসেছে, ‘তারা এর মধ্যে দোদুল্যমান, না এদের দিকে আর না ওদের দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোনো পথ পাবে না।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত : ১৪৩)।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার লিখার প্রতিপাদ্য ও পয়েন্টসমূহের সাথে আমি পুরোপুরি একমত প্রথমটি ছাড়া। বিশেষ করে বাংলাভাষাভাষি মানুষ এখন প্রতিবাদ বলতে যা বুঝে (হরতাল, অনশন, মানববন্ধন, ধর্মঘট বিক্ষোভ মিছিল ইত্যাদি) তার সাথে আমি ইসলামের কোন সম্পর্ক পাই না। বরং এ সবই ডিসিপটিভ স্বত্তার ইমপোর্টেড সুন্নাহ বলে মনে হয়।
ইসলামে (কোরান, সুন্নাহ কিংবা সলফে সালেহীন দের দৃষ্টান্ত হতে) প্রতিবাদ বলে যদি কিছু থেকে থাকে - আমি ব্যাক্তিগতভাবে তা জানতে চাই।
ব্যাক্তিগতভাবে রাসুল সঃকে নিয়ে কার্টুন আঁকা, ব্যাংগ বিদ্রুপ করার - একটাই পরিনতি ইসলামে আছে বলে আমি কনভিন্সড হয়েছি এবং এখনো এ মতামতটিকেই অধিকতর রাইট মনে করছি - আর তা হলে ঐ ব্যাক্তিকে হত্যা করা - সব মুসলমানের উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
এ নিয়ে আমার একটা লিখায় তার কিছুটা আলোকপাত ছিল Click this link
আল্লাহ ভাল জানেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন