প্রবাসের স্মৃতিচারণ- তেরো

লিখেছেন লিখেছেন মুহামমাদ সামি ১৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:০৫:৫০ সকাল

১৭

পূর্বের আকাশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে। ভোরের পাখিগুলো একই সঙ্গে কলকল করে উঠল। কি সুন্দরই না লাগছে। অন্যদিন এ সময়টা বিছানায় পড়ে থাকি। প্রভাত প্রকৃতি এমন করেই সাদরে আহবান জানায় সাড়া দিইনা।।

উঠে নামাজটা পড়ে নেয়া দরকার। নামাজ পড়ে সালাম ফিরাতেই দরজায় আলতো নক করার শব্দ পেলাম। এত ভোরে কে আসতে পারে। তিনবার নক করার পরে দরজা খুলে গেল। দেখলাম আজিমভ উপস্থিত। বললাম এত ভোরে তুমি? সে জবাব দিল আজকে অনেক ভালো লাগছে ফজরের নামাজটা মসজিদে আদায় করলাম। এখন নাস্তা করতে যাব তাই তোমাকে ডাকতে আসলাম।

আজিমভের সাথে নাস্তা করতে করতে অনেক কথা হল। তাঁকে আমাদের বিপ্লবী নেতা আজিমুল্লাহ খাঁ’র ব্যাপারে বলতেই তার মাঝেও যেন বিপ্লবের ছোঁয়া লাগল। সে তখন বলতে লাগল তোমাদের উপর যেমন ব্রিটিশরা জুলুম করেছে, আমাদের উপরও তেমন সোভিয়েত রাশিয়া নির্যাতনের ষ্টীম রুলার চালিয়েছিল। সে আরও যোগ করল, ‘আমি নিজের চোখে ওদের জুলুমের সাক্ষী না হলেও ওদের রেখে যাওয়া আমার জীর্ণ দেশটাকে দেখে নির্যাতনের মাত্রাটা অনুভব করি। আমরা শুধু নামমাত্র মুসলমান হয়ে রইলাম। অনেক সময় নিজের পরিচয়টুকুও ভুলে গিয়ে বাতিলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাই। ছোট বেলায় একবার এক মক্তবে গিয়েছিলাম কোরআন শিখতে, কিন্তু দুঃখের বিষয় মাত্র তিন মাসের মাথায় সরকারের প্রত্যক্ষ চাপে মক্তব কতৃপক্ষ মক্তব বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। আমার মত হাজার শিশুর কোরআন তথা ইসলামী শিক্ষা হাতেখড়ি হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। এমনিভাবে যখনি ইসলাম নামক বৃক্ষের কোন চারাগাছ গজানোর চেস্টা করে তখনি অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়া হয়। এভাবে সোভিয়েতের চলে যাওয়ার বিশ বছর পার হয়ে গেলেও ইসলামের কোন প্রচার প্রসার হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি কাউকে’। তখন সরাসরি সোভিয়েতের হস্তক্ষেপে চলত আর এখন চলে তাদের তৈরি করা কিছু গোলামের হস্তক্ষেপে।

আজিমভ আপ্লূত, যেন হৃদয়ে জমে থাকা সব ক্ষোভ কাউকে প্রকাশ করার জন্য উদগ্রীব ছিল এতদিন। আমি তাকে বলতে দিলাম। সে আরও বলল, ‘আমাদের দেশে মদের চেয়ে পানির দাম অনেক বেশী। আর মানুষজনকে এমনভাবে রাখা হয়েছে, তারা দামি পানির পরিবর্তে কম দামি মদ কিনতেই বেশী আগ্রহ দেখায়। আর মদ পান করতে করতে মানুষের অবস্থাও এমন দাঁড়িয়েছে এখন পানিতে যেন অরুচি ধরে গেছে। এটা শুধু আমাদের দেশের অবস্থা নয়, পুরো সেন্ট্রাল এশিয়া অঞ্চলের দেশ গুলোর মানুষদের সাধারণ চিত্র এটা।

আরও দু’বছর পরে স্বচক্ষ প্রত্যক্ষ করার পরে আজিমভের হৃদয়ের হাহাকার কিছুটা হলেও বুঝেছিলাম। সেবার বিদেশি ছাত্রদের নিয়ে আয়োজিত একটি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘গ্যালিপলি’ নামক স্থানে। তাবু খাঁটিয়ে এক সপ্তাহ রাখা হয়েছিল আমাদের। প্রতি তাবুতে তিনজন করে। ক্যাম্পটা হয়েছিল এমন এক জায়গায় যেখানে এক পাশে পাহাড় আর একপাশে সাগর। খেলাধুলাসহ মনোরম বিনোদনের সব ব্যবস্থা ছিল ওখানে। বিকেলে সবাই খেলাধুলা করে মাগরিবের নামাজে দাঁড়ালো। সালাম ফিরানোর পরে সবার দৃষ্টি একজনের দিকে নিবদ্ধ। আমার সাথে একই তাবু শেয়ার করা বুলগেরিয়ার বন্ধুটি। নাম তার রামন সংক্ষেপে রামো। হাফ প্যান্ট পড়ে নামাজে দাঁড়িয়েছে সে। প্যান্ট হাঁটুর অনেক উপরে। হাফ প্যান্ট না বলে অন্য কিছুও বলা চলে। বললাম এটা পড়ে নামাজ পড়তে আসলে যে? হাঁটুর উপরে হলেতো নামাজ হবেনা। সে সরলভাবে জবাব দিল আমিতো জানিনা। ছোটবেলা থেকে কোনদিন নামাজ পড়ার জন্য তাগিদ বা তালিম কোনটাই দেয়নি কেউ। আর আমাদের দেশে তখন ১৭ বছর না হওয়া পর্যন্ত জুমা বা ঈদের নামাজ পর্যন্ত পড়তে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল সরকারিভাবে। ইসলামী রেওয়াজ-রীতির কোন চর্চা কোনদিন হতে দেখিনি। খুব ব্যথিত হলাম আমরা তাঁর কথা শুনে। পরবর্তীতে তাঁর ইচ্ছায় একটা নামাজ শিক্ষা গিপ্ট করেছিলাম আমরা।

আসলে আজিমভ, রামনদের মত কত তরুণ যুবকই এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। তাদের মনের গভীরে ইসলামের প্রতি পরম মমতা থাকা স্বত্বেও অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেনা তারা।। না জানি এরকম গত আজিমভ সেন্ট্রাল এশিয়ার ঘরে ঘরে। সতের বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত যদি ইসলামী কোন জ্ঞান অর্জনের সুযোগ না থাকে তাহলে পরবর্তীতে কয়জন আর এ শিক্ষা গ্রহণ করে নিজের জীবনকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে পারে। হয়ত কেউ কেউ পারে আবার অনেকে পারেনা। যারা পারেনা তারা হারিয়ে যায় অতল তলে।। তাদের পাপকাজের জন্য কি আসলে তারা দায়ী??

--চলবে

বিষয়: বিবিধ

১০৬১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350141
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:০০
শেখের পোলা লিখেছেন : না সে একক ভাবে দায়ী নয়৷ ওলামা ও যারা ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে জানে অথচ এদের জানায়নি তারাও দায়ী হবে আর যথেষ্ট বয়স হওয়ার পরেও সে নিজে জানার চেষ্টা না করার কারণে সেও দায়ী হবে৷ এটি আমার ব্যক্তিগত মত৷ সঠিক নাও হতে পারে৷ এ দেখি আমাদের দেশের চেয়ে এরা বেশী অত্যাচারিত হয়েছে৷ ধন্যবাদ৷
১৮ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
290678
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : আসলে সব মানব শিশুর উপর পরিবেশের একটা বড় প্রভাব পড়ে, সে ছোটবেলা থেকে যা দেখে বড় হয়েছে, বড় হয়েও ওগুলোরই পুনরাবৃত্তি করে অধিকাংশ সময়।।
আল্লাহ তাদের সবাইকে হেফাজত করুক।। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই Good Luck
350174
১৮ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বসনিয়াতে ছিলেন এমন এক আর্মি অফিসার এর মুখে শুনেছি সেখানে একটি প্রজন্মে অনেকে রাসুল(সাঃ) এর নাম ও জানেনা। ইসলামের অন্য বিষয়গুলি দুরে থাক। কিন্তু শুধু নামে মুসলিম হওয়ার জন্যই শিকার হয়েছিল অত্যাচারের। আর তার ফলে তার পরবর্তি প্রজন্ম হয়ে উঠেছে ইসলামের সৈনিক।
১৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০২
290679
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : ঠিক বলেছেন ভাই।। ইসলামকে যেখানেই কোনঠাসা করে রাখার প্রয়াস চালানো হয়েছে, সেখানেই ইসলাম স্বমহিমায় তার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে।।

আল্লাহ পাক তাদের এবং আমাদের সবাইকে হেফাজত করে সিরাতুল মোস্তাকিমের উপর অটুট রাখুক, আমীন।। ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Good Luck
350954
২৩ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:২৩
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ।

ইসলামের শত্রউরা সব সময়ই মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাজ করে করে গেছে,তবু ইসলাম টিকে থাকবে।

জাযাকাল্লাহ খাইর।
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৪:২৯
298974
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : W salam wa rahmatullah sister, অবশ্যই, ইসলাম ধর্মের যিনি মালিক তিনিই এ ধর্মকে রক্ষা করবেন।।। Good Luck
353974
১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৩
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এক বোনের মন্তব্য, "ভাইয়া, আমার কাছে মনে হয়, এই ব্লগটা এখন অর্ধ মৃত"। তিনি যথার্থই বলেছেন, আপনাদের সম্মিলিত অনুস্পস্থিতি বিডিটুডের ভবিষ্যৎ নিয়ে পাঠকদের খুব ভাবাচ্ছে। আগের সেই সরগরম অবস্থা এখন আর নেই, এ আসেনা, ও আসেনা, সে আসেনা, তাই আমারও আসতে ভালো লাগে না, অতঃপর নিরুত্তাপ... এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৪:৩০
298975
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ আরো একটিভ থাকার চেষ্টা করব।। Good Luck
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৪:৩১
298976
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ আরো একটিভ থাকার চেষ্টা করব।। Good Luck ধন্যবাদ আপনাকে।।
360938
০১ মার্চ ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১৭
শরাফতুল্লাহ লিখেছেন : ভাইরে আরো একটিভ থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে একেবারে ডিএকটিভই হয়ে গেলেন?
১৬ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৪
303534
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : জীবনের কিছু বাস্তবতার কারণে নিয়মিত লিখা সম্ভব হয়ে উঠছেনা শত চেষ্টার পরেও
। দোয়া করবেন ভাই যেন সব কিছু যথাযথভাবে আন্জাম দিয়ে আবার লেখালেখিতে মনযোগ দিতে পারি,,,জাযাকুমুল্লাহ খাইরGood Luck
365830
১৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৩:৪৬
সাদাচোখে লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

মাশাআল্লাহ্‌ চমৎকার সাবলীল লিখা, সুখপঠ্য - সাথে অবগুন্ঠিত মধ্য এশিয়ার যেন সচিত্র প্রতিবেদন।
১৬ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:০৫
303535
মুহামমাদ সামি লিখেছেন : W salam wa rahmatullah। কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।। Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File